বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার ঐতিহাসিক রায় বাংলায় রূপান্তর : by এনামুল হক
রাষ্ট্রপরে ৪০ নং সাী বলেন যে, প্রাসঙ্গিক সময়ে তিনি ল্যান্সার ইউনিটের লেফটেন্যান্ট ছিলেন এবং ফারুক রহমান ছিলেন সেই ইউনিটের কমান্ডার। তিনি নৈশ প্যারেডে যোগ দিয়েছিলেন এবং প্যারেডটি মহিউদ্দীনের (ল্যান্সার) কাছে হস্তান্তর করেছিলেন।
মহিউদ্দীন এরপর তা ফারুক রহমানের কাছে হস্তান্তর করেন। প্যারেড ২/২-৩০টা পর্যন্ত চলেছিল, যদিও তা শেষ হবার কথা ছিল রাত ১২টায়। ফারুক রহমান তাকে রেজিমেন্টের দিকে খেয়াল রাখতে ও গেট বন্ধ করে দিতে বলেন। তার (সাীর) প্রশ্নের জবাবে ফারুক রহমান তাকে আরও বলেন যে, তারা স্বৈরাচারী সরকারকে অপসারণ করতে যাচ্ছেন। রাষ্ট্রপরে ৫৩ নং সাী বলেন, তিনি আর্টিলারি ইউনিটের সুবেদার মেজর ছিলেন। ফারুক রহমান তাদের কমান্ডিং অফিসার মেজর রশিদের অফিসে আসতেন। ১৯৭৫ সালের আগস্ট মাসে তিনি বহুবার তার সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি আরও বলেন যে, মেজর রশিদ আগস্টের নৈশ ট্রেনিং কর্মসূচীর আয়োজন করেছিলেন এবং কর্মসূচী অনুযায়ী ১৪ আগস্টের রাতটা এ কাজের জন্য ধার্য করা হয়।উপরোক্ত সা্যপ্রমাণ থেকে দেখা যায় যে, পরস্পরের ঘনিষ্ঠ আত্মীয় মেজর রশিদ ও ফারুক রহমান তাদের ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের ল্যে ১৪ আগস্টে নৈশ প্যারেডের আয়োজন করেছিলেন এবং সেটা ১৫ আগস্ট ভোর পর্যন্ত টেনে নিয়ে গিয়েছিলেন। তারা প্যারেডে অংশগ্রহণকারী সেনা অফিসারদের সরিয়ে নেন। এরপর অফিসাররা মহিউদ্দীনের (ল্যান্সার) অফিসরুমে গোপনে কথাবার্তা বলেন। ফারুক রহমান, বজলুল হুদা, মহিউদ্দীন (ল্যান্সার) তাদের ভাষণে এসব কথা বলে জওয়ানদের উত্তেজিত করে তোলেন যে রীবাহিনী তাদের আক্রমণ করবে, রাজতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করা হবে এবং তাদের নির্দেশানুযায়ী জওয়ানরা ভারি অস্ত্রশস্ত্র ও গোলাবারুদ বের করে নেয়, যা কেবল যুদ্ধের সময়ই ব্যবহার করা যেতে পারত। অপরাধজনক ষড়যন্ত্রটি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, আসামিরা ও তাদের সৈন্যরা প্যারেড ময়দান থেকে গুরুত্বপূর্ণ অবস্থানগুলোর দিকে অগ্রসর হয়েছিল, আর্টিলারিসহ সৈন্য মোতায়েন করে সেই অবস্থানগুলোর নিয়ন্ত্রণ গ্রহণ করেছিল এবং তারপর তাদের ল্য বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। যদিও তারা বলেছিল যে, তারা স্বৈরাচারী সরকারকে উৎখাত করতে যাচ্ছে কিন্তু সরকার উৎখাতের পরিবর্তে তারা রাষ্ট্রপতি ও তার পরিবার পরিজনকে হত্যা করে। মামলার রেকর্ডপত্র, সাীদের প্রদত্ত সা্যপ্রমাণ ও পারিপাশ্বর্িক অবস্থা_সবকিছু বিচার করলে প্রমাণিত হয় যে আসামিরা এ হত্যাকাণ্ড ঘটানোর জন্য অপরাধজনক ষড়যন্ত্র করেছিল।
সা্যপ্রমাণাদি ও উপরের আলোচিত আইনের নীতিমালা সার্বিকভাবে বিচার বিবেচনা করে আমি হাইকোর্ট বিভাগের এ সিদ্ধান্তের সঙ্গে একমত যে, আপীলকারীরা ও অন্যান্য দোষী সাব্যস্ত ব্যক্তিরা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তার পরিবার পরিজনকে হত্যার ষড়যন্ত্র এঁটেছিল এবং তাদের ও নিরাপত্তা বাহিনীর আরও তিন সদস্যকে হত্যা করে তারা তাদের ল্য হাসিল করে। সে মামলায় এমন একটা কার্য সম্পাদনের জন্য মতৈক্য হয়েছে যে কাজটাই হলো একটা অপরাধ, যেখানে রাষ্ট্রপ যদি ষড়যন্ত্রকারীদের প্রত্যেকের কৃত প্রকাশ্য কাজের প্রমাণ দিতে ব্যর্থ হয় তাহলে ঐ মতৈক্যের প্রমাণ দিয়ে অপরাধজনক বা দণ্ডনীয় ষড়যন্ত্রের অস্তিত্ব প্রতিপন্ন করা হয়। সেেেত্র অভিযুক্ত সকলের প্রকাশ্য কাজের প্রমাণ দেয়ার দরকার হবে না। অন্য কথায়, এমন পরিস্থিতিতে ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত প্রত্যেক অভিযুক্তকে ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কোন না কোন প্রকাশ্য কাজ করতেই হবে এমন কোন কথা নেই। এ মামলায় ষড়যন্ত্র অনুযায়ী যদিও হত্যাপরাধ সংঘটিত হয়েছে, তথাপি ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে ষড়যন্ত্রকারীদের দায়দায়িত্ব মুছে যেতে পারে না। অভিযুক্তদের অভিন্ন অভিপ্রায় দেখিয়ে প্রত্যেক অভিযুক্তের কৃত সুনির্দিষ্ট ভূমিকা প্রমাণিত হওয়ায় সেগুলো অপর প্রতিটি অভিযুক্তের বিরুদ্ধে গ্রহণযোগ্য। রেকর্ডভুক্ত সা্যপ্রমাণ ও উপরে আলোচিত আইনের নীতিমালা বিবেচনা করে আমি মনে করি যে, দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ও ১২০খ ধারার পরিবর্তে দণ্ডবিধির ১২০খ ও ৩৪ ধারার সঙ্গে পঠিত ৩০২ ধারায় আপীলকারী লে. কর্নেল সৈয়দ ফারুক রহমান, লে. কর্নেল মহিউদ্দীন আহমেদ (আর্টিলারি), মেজর একেএম মহিউদ্দীন আহমেদ ও মেজর বজলুল হুদাকে যথাযথভাবে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে আর লে. কর্নেল সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খানকে দোষী সাব্যস্ত করা যেতে পারে দণ্ডবিধির ৩০২/১২০খ ধারায়। তদনুযায়ী তাদের দোষী সাব্যস্তকরণ সংশোধন করা হলো।
দণ্ডাদেশ অনুমোদন
বলা হয়েছে যে, আপীলকারীরা দীর্ঘদিন ধরে ফাঁসির আসামির সেলে থাকায় তাদের প্রদত্ত দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়া হলে তাদের প্রতি সুবিচার করা হবে। এ প্রসঙ্গে আসামিপরে বিজ্ঞ কেঁৗসুলি খান সাইফুর রহমান একটি মামলার উল্লেখ করেছেন। বিজ্ঞ কেঁৗসুলি আবদুল্লাহ আল মামুন তার বক্তব্যের সঙ্গে যোগ করে বলেছেন, মৃতু্যদণ্ড প্রদান করার পর সেই দণ্ডাদেশ কার্যকর করতে এত সুদীর্ঘ বিলম্ব অমানুষিক শাস্তি ও নির্যাতনের সমতুল্য এবং সংবিধানে ৩৫ (৫) অনুচ্ছেদে যে মৌলিক অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান করা হয়েছে তার লঙ্ঘন। বিজ্ঞ কেঁৗসুলির মতে, এ বিধানবলে কোন ব্যক্তিকে নির্যাতন করা কিংবা নিষ্ঠুর, অমানবিক বা অবমাননাকর শাস্তি দেয়া বা সে জাতীয় আচরণ করা যাবে না এবং তারা যে দুর্ভোগ ও কষ্টভোগ করেছে তা বিবেচনায় নিলে এ আপীলকারীদের মৃতু্যদণ্ড লাঘব হবার ও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড লাভ করার যোগ্য। এ বক্তব্যের সমর্থনে বিজ্ঞ কেঁৗসুলি জ্যামাইকা ও বাহামার দুটি মামলার কথা উল্লেখ করেন।
মামলাসমূহের রায়ে সেসব নীতির কথা বলা হয়েছে সেগুলো আমাদের আদালতগুলোর েেত্র প্রযোজ্য নয়। ওসব আদালত যে মান স্থাপন করেছে সেটা আমাদের আইনকানুন, অর্থর্নৈতিক, সামাজিক অবস্থা ও মূল্যবোধের সতর্ক মূল্যায়ন ছাড়া আমাদের আদালতগুলোর েেত্র প্রয়োগ করা যেতে পারে না। দ্বিতীয়ত আমাদের উচ্চতর আদালতগুলো অভিন্ন সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে যে, স্রেফ বিলম্বের ব্যাপারটা মৃতু্যদণ্ড লাঘবের আইনগত ভিত্তি নয়।
আমরা আইনের নির্দেশ অনুযায়ী অপরাধের শাস্তি দিয়ে থাকি। এ মৃতু্যদণ্ডকে ব্যতিক্রম বলা যেতে পারে না। কারণ সেই প্রাচীনকাল থেকে এ ধরনের শাস্তি আমাদের মধ্যে প্রচলিত আছে। আমাদের সংবিধানে আইন অনুযায়ী এ শাস্তিকে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে।
বিজ্ঞ এ্যাটর্নি জেনারেল বলেন যে, আপীলের শুনানি সম্পন্ন করতে বিলম্বটা রাষ্ট্রের অবহেলা বা অযথা গড়মসির কারণে হয়নি বরং বস্তুতপ েঅভিযুক্ত আপীলকারীদের অযথা গড়িমসির কারণে হয়েছে। আরও বলা হয়েছে যে, দুই আপীলকারীসহ অভিযুক্ত ব্যক্তিদের অধিকাংশই বিচারকার্যের গোটা অধ্যায়জুড়ে পলাতক ছিলেন এবং হাইকোর্ট ডিভিশনে দণ্ডাদেশ অনুমোদন এবং তার পরিণতিতে আসামির অনুপস্থিতিতে রেফারেন্স শুনানির দীর্ঘ প্রলম্বিত পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। রেকর্ডপত্র পুক্মখানুপুক্মখরূপে পরীা করে আমি দেখতে পেয়েছি যে, হাইকোর্ট বিভাগে আপীল ও রেফারেন্স নি্#৬৩৭৪৩;ত্তির জন্য আপীলকারীদের দিক থেকে কখনও কোন উদ্যোগই নেয়া হয়নি। এ আদালতে যথাশীঘ্র শুনানি অনুষ্ঠানের ব্যাপারে কোন পদপেও তারা নেয়নি। রাষ্ট্রই এ বিষয়গুলোর শুনানি ধার্য করার জন্য ঘন ঘন প্রার্থনা জানিয়েছিল এবং রাষ্ট্রের প্রার্থনাক্রমেই আপীলগুলোর শুনানির জন্য একটি বেঞ্চে গঠন করা হয়েছিল। আদালতের চৌহদ্দির মধ্যে যে বিলম্ব সেটা রাষ্ট্রের দিক থেকে অযথা গড়িমসির কারণে হয়নি। মৃতু্যদণ্ডপ্রাপ্ত বন্দীরা যেহেতু কোন সময়েই ডেথ রেফারেন্স ও তাদের আপীলের শুনানির জন্য কোন পদপে নেয়নি তাই তারা দাবি করতে পারে না মৃতু্যদণ্ড কার্যকর করতে বিলম্বের ফলে তারা "নির্যাতন বা নিষ্ঠুর, অমানবিক কিংবা অবমাননাকর শাস্তি বা আচরণেরঃ শিকার হয়েছে। অতএব আমি বিজ্ঞ কেঁৗসুলিদের বক্তব্যের মধ্যে কোন সারবত্তা খুঁজে পাই না।
সচরাচর এ আদালত দণ্ডাদেশ প্রশ্নে হাইকোর্ট বিভাগের নিজস্ব বিবেচনা প্রয়োগের ব্যাপারে হস্তপে করে না যদি না দেখানো হয় যে হাইকোর্ট বিভাগ দণ্ডাদেশ আরোপের েেত্র স্বীকৃত নীতিমালার অবমাননা করেছে এবং ন্যায়বিচার প্রয়োগে ব্যর্থতার পরিচয় দেয়া হয়েছে। বিজ্ঞ দায়রা জজ মৃতু্যদণ্ড প্রদানের কারণ দেখিয়েছেন। ল্য করা গেছে যে, ঘটনার পর অভিযুক্ত আপীলকারীরা দেশে-বিদেশে প্রকাশ্যে ঘোষণা করেছিল যে তারাই বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবারের অপর সদস্যদের হত্যা করেছে। এটা ছিল এক বর্বরোচিত ঘটনা। তারা দুই নববিবাহিত মহিলা, ১০ বছর কম বয়সী এক শিশু এবং রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে যিনি কোনভাবে জড়িত ছিলেন না বঙ্গবন্ধুর সেই স্ত্রীকে নির্মমভাবে হত্যা করেছিল। তারা মানবতার বিরুদ্ধে হত্যার মতো অপরাধ করেছিল। এ হত্যাকাণ্ডে কোন ব্যক্তির তি হয়নি বরং জাতির তি হয়েছে। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা পরিণতির কথা জেনেশুনে সুপরিকল্পিত উপায়ে এ জঘন্য অপরাধ করেছিল। যার জন্য তারা এ দণ্ডাদেশ দেয়ার েেত্র বিশেষ কোন সহানুভূতি দাবি করে না।
বিজ্ঞ দায়রা জজ আইনের বিধানসমূহ বিবেচনায় নিয়েছেন এবং দণ্ড দেয়ার েেত্র সঠিকভাবেই নিজের বিচার-বিবেচনা প্রয়োগ করেছেন। দ্বিতীয় বিজ্ঞ জজ দণ্ডাদেশ বহাল রাখতে গিয়ে মন্তব্য করেছেন : এ মামলায় ১১ জন নিরপরাধ ব্যক্তিকে নিষ্ঠুরভাবে ও নারকীয় পৈশাচিকতায় হত্যা করা হয়েছিল। বাংলাদেশের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান এক ঘৃণ্য চক্রান্তের শিকার হয়ে গুটিকয়েক বিুব্ধ সেনা অফিসারের হাতে প্রাণ হারান, যাদের কয়েকজনকে ইতোপূর্বে বরখাস্ত করা হয়েছিল। তাঁর সঙ্গে তিন মহিলা ও এক শিশুসহ আরও ১০ জনও নিহত হয়। যেরূপ নিষ্ঠুর ও নির্দর্য়ভাবে তাদের হত্যা করা হয়েছিল তাতে দণ্ডাদেশ লাঘবের কোন বিবেচনাই ঠাঁই পেতে পারে না। সেই কারণে অভিযুক্তদের কেউই দণ্ডাদেশ লাঘবের বিষয় কোন ধরনের সহানুভূতি পাওয়ার যোগ্যতা রাখে না।ঃ মনে হয় বিজ্ঞ জজ আইনের প্রয়োজন সম্পর্কে সচেতন এবং আইনের প্রয়োজন অনুযায়ী কারণসমূহ উল্লেখ করে দণ্ডাদেশ বহাল রেখেছেন।
এখন আমাদের মৃতু্যদণ্ড প্রদানের েেত্র আইনের বিধানসমুহ বিবেচনা করা যাক। দণ্ড বিধির ৩৬৭ (৫) ধারায় সনি্নবেশিত বিধানটি নিম্নরূপ :
"(৫) অভিযুক্ত যদি এমন অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হয় যার শাস্তি মৃতু্যদণ্ড কিংবা বিকল্প হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড অথবা কয়েক বছর মেয়াদের কারাদণ্ড, সেেেত্র আদালত তার রায়ে এ দণ্ড প্রদানের কারণসমূহ উল্লেখ করবেন।ঃ
এ বিধানে দেখা গেছে যে, প্রতিটি মামলার বাস্তব অবস্থাবলীর ভিত্তিতে আসামিকে মৃতু্যদণ্ড বা লঘুতর দণ্ড দেয়ার বিষয়টি আদালতের নিজস্ব বিবেচনার ওপর ছেড়ে দেয়া হয়েছে এবং দণ্ডাদেশ প্রদানকালে আদালতকে তার কারণ নির্দেশ করতে হবে। আদালতসমূহ তদন্তাধীন অপরাধের বাস্তব ঘটনা ও পরিস্থিতিই প্রধানত বিবেচনা করে দেখেন এবং মৃতু্যদণ্ড বা যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিলে অপরাধ পরিস্থিতির অবনতি হবে নাকি লাঘব হবে সেদিকে খেয়াল রাখেন। এ সত্যটি অস্বীকার করার উপায় নেই যে আপীলকারীরা ও অপর অভিযুক্ত ব্যক্তিরা দেশের মতাসীন রাষ্ট্রপতিকেই শুধু হত্যা করেনি, তাঁর পরিবারের সবাইকে হত্যা করেছে। এ নির্মম হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি তিনি জনগণের জন্য তাঁর জীবনকে উৎসর্গ করেছিলেন। দেশের জনগণের ন্যায়সঙ্গত ও গণতান্ত্রিক অধিকারের জন্য তাঁর সংগ্রামের প্রেরণা হিসেবে কাজ করেছিল অসাধারণ দেশাত্মবোধ। পাকিস্তানের লুটেরা সামরিক শাসকগোষ্ঠীর বিশ্বাসঘাতকতাপূর্ণ দখলদারী থেকে মুক্ত সবার জন্য বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম ছিল দেশপ্রেমের এক বিরল দৃষ্টান্ত। বঙ্গবন্ধুর নির্দেশে ঘরে-বাইরের মানুষ সেই সংগ্রাম চালিয়েছিল। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ এক ঐতিহাসিক জনসভায় বঙ্গবন্ধু সুস্পষ্টভাবে এ সংগ্রামের ডাক দিয়েছিলেন। এ ঐতিহাসিক ভাষণে সংগ্রামের পথনির্দেশনাই শুধু ঘোষিত হয়নি; উপরন্তু স্বাধীনতার লড়াইয়ের ব্যাপারে জনগণকে গভীরভাবে সঙ্কল্পবদ্ধ ছিলেন এবং ছয় দফা দাবিনামার মধ্য দিয়ে কৌশলগতভাবে এগিয়ে গিয়েছিলেন। ছয় দফা পরবতর্ীকালে পরিণত হয় এক দফায়- স্বাধীনতা। সেখান থেকে বঙ্গবন্ধু আর পিছনে ফিরেননি। এরই পরিণতিতে আমরা স্বাধীনতা র্অজন করেছি। অভিযুক্ত ব্যক্তিরা নির্মমভাবে হত্যা করেছে এমন এক নেতাকে যিনি আর কেউ নন- জাতির জনক। তারা রাষ্ট্রপতির শিশুপুত্রটিকেও রেহাই দেয়নি, যার বয়স ছিল দশ বছরের কম। তারা এত নিষ্ঠুরভাবে তাঁকে হত্যা করেছিল যে, গোটা জাতি শোকে স্তব্ধ ও হতবিহ্বল হয়ে গিয়েছিল। তিন মহিলাকে তারা কেন হত্যা করেছিল তার কোন ব্যাখ্যা নেই। একটা শিশু ও তিনজন নির্দোষ নিরস্ত্র মহিলাকে হত্যা করে তারা মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধ করেছে। তারা এ বাড়িটিতে পাওয়া প্রায় গোটা পরিবারটিকে নিশ্চিহ্ন করে দিয়েছিল। এসব নিরীহ ব্যক্তিকে তারা কেন হত্যা করেছিল তার কোন ব্যাখ্যা অভিযুক্তদের তরফ থেকে পাওয়া যায়নি। অভিযুক্তদের কার্যকলাপ এত বর্বরতাপূর্ণ ছিল যে শুধু উচ্ছৃক্মখল-উন্মত্ততার সঙ্গেই তার তুলনা চলতে পারে। অভিযুক্তরা তাদের বর্বরোচিত কাজের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করেছিল যে তাদের ষড়যন্ত্রের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রপতিকে মতা থেকে উৎখাত করা নয়, বরং গোটা পরিবারটিকে নিশ্চিহ্ন করে দেয়া। আসামিদের দিক থেকে এটা ছিল এক ব্যতিক্রমী ধরনের জঘন্য কাজ। যার সমকতা এদেশে সংঘটিত অপরাধের ইতিহাসে নেই। লোমহর্ষক এ হত্যাযজ্ঞে আসামিদের সকলের প্রত্য অংশগ্রহণের কোন সা্যপ্রমাণ না থাকলেও মনে রাখতে হবে যে মতাসীন রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করার জন্য আসামিদের সবাই তাদের ল্য অর্জনে ভিন্ন ভিন্ন ভূমিকা পালন করেছিল। যৌথভাবে এক ঐকতানে কাজ না করলে ঐ অপরাধজনক উদ্দেশ্যটি হাসিল করা যেতে পারত না। সকলের সমর্থন ছাড়া এ অপরাধজনক উদ্দেশ্যের ফল অর্জন করা সম্ভব ছিল না। বিষয়টির এ প্রোপট বিচারে বলা যায় যে, আসামিদের যারা প্রকৃতপ েঅপরাধকর্মে অংশ নিয়েছিল এবং অপরাধ ঘটিয়েছিল দণ্ডদানের েেত্র তারা কেউই কোন ধরনের সহানুভূতি বা করুণা লাভের যোগ্য নয়। অপরাধটি যেরূপ নিষ্ঠুরতার সঙ্গে ঘটানো হয়েছে সেদিকটি বিচার করলে আপীলকারীরা ও সহ-আসামিরা দণ্ডাদেশের েেত্র কোনরকম দয়া বা করুণা পাওয়ার দাবি রাখে না। আপীলকারীরা দণ্ড লাঘব করার প েযুক্তিসঙ্গত কারণ প্রদর্শন করতে ব্যর্থ হয়েছে। আপীলকারীদের যে দণ্ড প্রদান করা হয়েছে তাতে এ আদালতের হস্তপে করার কোন প্রয়োজন পড়ে না। তদনুযায়ী আমি তাদের দণ্ডাদেশ অনুমোদন করলাম।
(সমাপ্ত)
No comments