যুক্তরাষ্ট্রের কাছে চার খাতে অগ্রগতি দেখাতে হবে- জিএসপি বাতিল এড়ানো নিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে বৈঠক
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে অগ্রাধিকারমূলক প্রবেশাধিকার (জিএসপি) সুবিধা বাতিল এড়াতে চাইলে পোশাক খাতের শ্রমিকদের অধিকার দেওয়া ছাড়া আরও তিনটি খাতে অগ্রগতি থাকতে হবে। এগুলো হচ্ছে: চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ খাত, রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ অঞ্চল (ইপিজেড) এবং তৈরি পোশাক কারখানায় অগ্নিনিরাপত্তা।
এসব খাতে কী অগ্রগতি হয়েছে, আগামী তিন দিনের মধ্যে তা জানাতে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের নির্দেশ দিয়েছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। সচিবালয়ে গতকাল রোববার ‘জিএসপির আওতায় যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের সুবিধা বাতিল, স্থগিত বা সীমিতকরণ উদ্যোগের প্রেক্ষিতে করণীয় নির্ধারণ’ শীর্ষক বৈঠক শেষে বাণিজ্যসচিব মাহবুব আহমেদ সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। যথাসময়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধির (ইউএসটিআর) কাছে চারটি খাতে অগ্রগতির চিত্র তুলে ধরা হবে বলেও জানান সচিব।
বাংলাদেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) ২০০৭ সালে প্রথম ইউএসটিআরের কাছে অভিযোগ দেয়। এরপর দুই দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত জিএসপি-সুবিধা বাতিল করা হয়নি।
তবে এবার এএফএল-সিআইওর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) রন কার্ক বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের কাছে বাংলাদেশের দুর্বল শ্রম অধিকার-পরিস্থিতি নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর একটি চিঠি দেন। এর আগে ২৪ নভেম্বর তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক জীবনহানিতে উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে চিঠি দেন দেশটির সাতজন সিনেটর। একই বিষয়ে ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা সাক্ষাৎ করেন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
৩১ জানুয়ারির মধ্যে মতামত দেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশের উদ্দেশে গত সপ্তাহে একটি নোটিশ প্রকাশ করেছে ইউএসটিআর। জানা গেছে, ওই মতামতের ওপর ভিত্তি করে ইউএসটিআরে মার্চে অনুষ্ঠেয় তৃতীয় দফা শুনানিতে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি-সুবিধার ভাগ্য।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ নিট পোশাক মালিক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিএসপি বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) করার জন্য।’
এসব বিষয় নিয়ে ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি দেন বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের। চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যে সত্য নয়, বিষয়টি যুক্তিসংগত ও বাস্তব চিত্রসহ তুলে ধরতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি-সুবিধা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, পোশাকশিল্পের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ জিএসপি-সুবিধার আওতার বাইরে থাকলেও শ্রম অধিকারের প্রশ্নে তা বাতিল হলে রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সুবিধা বাতিল হলে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সম্ভাবনাময় অন্যান্য শিল্প খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কানাডায় বাংলাদেশের পণ্য জিএসপি-সুবিধা বাতিলের ঝুঁকিতে থাকবে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, শ্রম অধিকার-সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ টিকফা স্বাক্ষর করছে না। বাংলাদেশের দাবি হলো: শ্রমিকদের অধিকার দেওয়া হবে ক্রমান্বয়ে, এখনই নয়। যে কারণে বাংলাদেশ টিকফা স্বাক্ষরে অনীহা দেখাচ্ছে, তা প্রকারান্তরে তাদের উত্থাপিত অভিযোগগুলোকে সমর্থন করে বলে মনে হয়। এই মুহূর্তে টিকফা স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার প্রতিপালনে উদ্যোগী নয়—এ ধরনের ধারণা দূরীভূত করতে সহায়ক হবে। তবে, টিকফা হলেও যুক্তরাষ্ট্র যে জিএসপি-সুবিধা বাতিল করবে না, তা-ও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আবার এটা স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নাকচ করার গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি প্রমাণ করা কঠিন হবে।
এএফএল-সিআইওর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র না নিলেও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেশটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি দেখছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
চারটি খাত: জিএসপি-সুবিধা পেতে চাইলে আগামী মার্চের মধ্যে যে চারটি খাতে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো তৈরি পোশাক খাত। বলা হয়েছে, শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড তদন্তের অগ্রগতি দেখতে চায় তারা। অনেক শ্রমিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সেগুলোরও সমাধান চায়। শ্রমসংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সমস্যার নিরসন চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আরও চায়, শ্রমসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালনে শ্রম আইনজীবী নিয়োগ করা হোক।
যুক্তরাষ্ট্র আরও বলেছে, চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অশোভন শ্রম কার্যক্রম চলছে। তদন্ত করে এগুলোর সমাধান করতে হবে। ইপিজেডে রয়েছে শ্রমিক কালো তালিকাভুক্তি। অনেক তৈরি পোশাক কারখানা এখনো অগ্নি নিরাপত্তাহীন, তা রোধে শিগগির ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি বাতিল না হওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তার পরও যদি বাতিল বা স্থগিত হয়েই যায়, পোশাক খাতের ওপর আহামরি কোনো প্রভাব পড়বে না।’
বাংলাদেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়ে আমেরিকান ফেডারেশন অব লেবার-কংগ্রেস ফর ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন (এএফএল-সিআইও) ২০০৭ সালে প্রথম ইউএসটিআরের কাছে অভিযোগ দেয়। এরপর দুই দফা শুনানি অনুষ্ঠিত হলেও শেষ পর্যন্ত জিএসপি-সুবিধা বাতিল করা হয়নি।
তবে এবার এএফএল-সিআইওর আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধি (ইউএসটিআর) রন কার্ক বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদেরের কাছে বাংলাদেশের দুর্বল শ্রম অধিকার-পরিস্থিতি নিয়ে গত ২১ ডিসেম্বর একটি চিঠি দেন। এর আগে ২৪ নভেম্বর তাজরীনে অগ্নিকাণ্ডে মর্মান্তিক জীবনহানিতে উদ্বেগ জানিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার কাছে চিঠি দেন দেশটির সাতজন সিনেটর। একই বিষয়ে ৩ জানুয়ারি বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজীনা সাক্ষাৎ করেন বাণিজ্যমন্ত্রীর সঙ্গে।
৩১ জানুয়ারির মধ্যে মতামত দেওয়ার কথা বলে বাংলাদেশের উদ্দেশে গত সপ্তাহে একটি নোটিশ প্রকাশ করেছে ইউএসটিআর। জানা গেছে, ওই মতামতের ওপর ভিত্তি করে ইউএসটিআরে মার্চে অনুষ্ঠেয় তৃতীয় দফা শুনানিতে নির্ধারিত হবে বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি-সুবিধার ভাগ্য।
যোগাযোগ করা হলে বাংলাদেশ নিট পোশাক মালিক সমিতির (বিকেএমইএ) সহসভাপতি মোহাম্মদ হাতেম প্রথম আলোকে বলেন, ‘জিএসপি বাতিলের হুমকি দেওয়া হচ্ছে মূলত যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সহযোগিতা ফোরাম চুক্তি (টিকফা) করার জন্য।’
এসব বিষয় নিয়ে ৯ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি দেন বাণিজ্যমন্ত্রী গোলাম মোহাম্মদ কাদের। চিঠিতে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেছেন, বাংলাদেশের বিরুদ্ধে অভিযোগগুলো যে সত্য নয়, বিষয়টি যুক্তিসংগত ও বাস্তব চিত্রসহ তুলে ধরতে না পারলে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জিএসপি-সুবিধা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
বাণিজ্যমন্ত্রী আরও লিখেছেন, পোশাকশিল্পের প্রায় সম্পূর্ণ অংশ জিএসপি-সুবিধার আওতার বাইরে থাকলেও শ্রম অধিকারের প্রশ্নে তা বাতিল হলে রপ্তানি ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে। এই সুবিধা বাতিল হলে সুবিধাপ্রাপ্ত ও সম্ভাবনাময় অন্যান্য শিল্প খাত সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত ও বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হবে। আর যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাতিল করলে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন ও কানাডায় বাংলাদেশের পণ্য জিএসপি-সুবিধা বাতিলের ঝুঁকিতে থাকবে।
বাণিজ্যমন্ত্রীর চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, শ্রম অধিকার-সম্পর্কিত বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশ টিকফা স্বাক্ষর করছে না। বাংলাদেশের দাবি হলো: শ্রমিকদের অধিকার দেওয়া হবে ক্রমান্বয়ে, এখনই নয়। যে কারণে বাংলাদেশ টিকফা স্বাক্ষরে অনীহা দেখাচ্ছে, তা প্রকারান্তরে তাদের উত্থাপিত অভিযোগগুলোকে সমর্থন করে বলে মনে হয়। এই মুহূর্তে টিকফা স্বাক্ষর হলে বাংলাদেশ শ্রম অধিকার প্রতিপালনে উদ্যোগী নয়—এ ধরনের ধারণা দূরীভূত করতে সহায়ক হবে। তবে, টিকফা হলেও যুক্তরাষ্ট্র যে জিএসপি-সুবিধা বাতিল করবে না, তা-ও নিশ্চিতভাবে বলা যায় না। আবার এটা স্বাক্ষর না করলে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে উত্থাপিত অভিযোগ নাকচ করার গ্রহণযোগ্য বা বিশ্বাসযোগ্য যুক্তি প্রমাণ করা কঠিন হবে।
এএফএল-সিআইওর অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে এর আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো ব্যবস্থা যুক্তরাষ্ট্র না নিলেও সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় দেশটি অধিকতর গুরুত্ব দিয়ে বাংলাদেশে শ্রম অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি দেখছে বলে প্রধানমন্ত্রীকে জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।
চারটি খাত: জিএসপি-সুবিধা পেতে চাইলে আগামী মার্চের মধ্যে যে চারটি খাতে পদক্ষেপ নিতে হবে বলে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তার মধ্যে একটি হলো তৈরি পোশাক খাত। বলা হয়েছে, শ্রমিকনেতা আমিনুল ইসলাম হত্যাকাণ্ড তদন্তের অগ্রগতি দেখতে চায় তারা। অনেক শ্রমিকের বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে, সেগুলোরও সমাধান চায়। শ্রমসংশ্লিষ্ট বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন সমস্যার নিরসন চায় যুক্তরাষ্ট্র। দেশটি আরও চায়, শ্রমসংক্রান্ত সমস্যা সমাধানে সহায়ক ভূমিকা পালনে শ্রম আইনজীবী নিয়োগ করা হোক।
যুক্তরাষ্ট্র আরও বলেছে, চিংড়ি প্রক্রিয়াকরণ কারখানায় অশোভন শ্রম কার্যক্রম চলছে। তদন্ত করে এগুলোর সমাধান করতে হবে। ইপিজেডে রয়েছে শ্রমিক কালো তালিকাভুক্তি। অনেক তৈরি পোশাক কারখানা এখনো অগ্নি নিরাপত্তাহীন, তা রোধে শিগগির ব্যবস্থা নিতে হবে।
বাংলাদেশ তৈরি পোশাক প্রস্তুতকারক ও রপ্তানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্রের জিএসপি বাতিল না হওয়ার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ আমরা নিচ্ছি। তার পরও যদি বাতিল বা স্থগিত হয়েই যায়, পোশাক খাতের ওপর আহামরি কোনো প্রভাব পড়বে না।’
No comments