গাছ কাটার মচ্ছব- শোকসভা হবে না?
কবীর সুমন একদা গেয়েছিলেন, 'আমি চাই গাছ কাটা হলে শোকসভা হবে বিধানসভায়/ আমি চাই প্রতিবাদ হবে রক্তপলাশে, রক্তজবায়।' সুমনের গানের কথা সত্য প্রমাণ করে গাছ কাটার শোকে কোনো দেশের সংসদে শোকসভা হওয়ার কোনো রেওয়াজ আমাদের সামনে নেই।
তবে প্রতিবাদ এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি হয়। রক্তপলাশে, রক্তজবায় প্রতিবাদ হয়। গাছ কাটার প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ নানা ধরনের প্রতিবাদেরও দেখা মেলে। কিন্তু এসব প্রতিবাদে বিশেষ লাভ হয় কি-না সে প্রশ্ন উঠতেই পারে। কেননা শত প্রতিবাদ সত্ত্বেও গাছ কাটা বন্ধ হওয়ার কোনো নজির দেখা যাচ্ছে না। মূল্যবান প্রাকৃতিক সম্পদের বিনাশ করে চলেছে অর্থলোভী মানুষেরা। শুক্রবারের সমকালে দেশের বিভিন্ন স্থানে গাছ কাটার যেসব খবর প্রকাশিত হয়েছে তাতে মনে হতে পারে দেশে গাছ কাটার মচ্ছব লেগেছে। যে যেভাবে পারে গাছ কেটে নিচ্ছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি দখল করে সে জমির গাছ কেটে নেওয়া হচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান জমি কিনে নিয়ে সে জমির গাছ কেটে বিক্রি করে দিচ্ছে। কোথাও-বা সরকারি কর্মকর্তারা রাস্তার পাশের বা সরকারি জমির গাছ নিলামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। সর্বত্রই মুনাফালোভীদের অবাধ কারবার চলছে। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন উঠবে, এসব কীভাবে সম্ভব হচ্ছে? দৃশ্যমানভাবে আমাদের সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো পরিবেশবান্ধব বলেই মনে হয়। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে উল্টো ফলই দেখতে পাওয়া যায়। একটি গাছ বড় করে তোলার কোনো পরিশ্রম অনেকেই করতে রাজি নন। নতুন গাছ লাগিয়ে বনায়ন করার দিকেও ঝোঁক নেই। কিন্তু পুরাতন, বড় গাছ কাটার দিকে মনোযোগ বেশ। কেননা এসব গাছের কাঠ থেকে মোটা অঙ্কের অর্থযোগ হয়। গাছ কাটার এই মচ্ছব দেখে মনে হয়, গাছ কাটার বিরুদ্ধে সত্যিই সংসদে আলোচনা ওঠা উচিত। ঐতিহ্যবাহী বড় গাছ কাটার জন্য উপযুক্ত কর্তৃপক্ষের অনুমতির ব্যবস্থা করা হোক। কেউ যাতে মনের খেয়ালে যখন-তখন গাছ কেটে ফেলতে না পারে সে জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া খুব জরুরি। কারণ এভাবে গাছ কাটার মচ্ছব চলতে থাকলে খুব শিগগিরই বাংলাদেশ বৃক্ষহীন, ছায়াহীন ভূমিতে পরিণত হবে। সে পরিণতি আমরা কেউই চাই না।
No comments