নিয়োগ বাণিজ্- দেড় শ' কোটির
* স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে চলছে এ বাণিজ্য * টাকার জোরে জামায়াত-বিএনপির অযোগ্যরাও সুযোগ পাচ্ছে * লিখিত পরীক্ষায় পাস করেনি তারাও টিকে যা নিখিল মানখিন স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ নিয়ে চলছে প্রায় দেড় শ' কোটি টাকার রমরমা বাণিজ্য।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকা পাঠানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই আওয়ামী চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও। লিখিত পরীক্ষার আগেই সম্পন্ন হয়ে আছে আর্থিক চুক্তি। সিন্ডিকেট সদস্যদের তালিকানুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে নম্বর বণ্টন করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আর্থিক লেনদেন না করাতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি হাজার হাজার মেধাবীমুখ। আর টাকার জোরে টিকে গেছে অনেক ছাত্রদল ও শিবিরকর্মী। উচ্চ মহলের ভরসায় টাকা গ্রহণ করে বিপাকে পড়েছে মধ্যস্থতাকারী অনেক দালাল। মৌখিক পরীক্ষার পর লেনদেন নিয়ে টাকা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। লিখিত পরীক্ষার নম্বর পরিবর্তনসহ সব খেলাই হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। সব পরীক্ষার্থীকে নম্বর জানার সুযোগ দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা পাঠানো হয়েছে জেলা সিভিল সার্জনদের হাতে। আর চলছে লোকদেখানো মৌখিক পরীক্ষা।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. শাহ মনির হোসেন রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। সব কিছুই চলছে বিভিন্ন কমিটির দ্বারা। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আমার কাছে এ পর্যন্ত আসেনি। তবে এ ধরনের অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে দেখব আমরা। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির ২ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর ১০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা যাবে বলে আশা করছি।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান তালিকা পাঠানোর বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। রবিবার তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এ ব্যাপারে কোন তালিকা তৈরি করিনি আমরা। সুযোগসন্ধানীরা চাকরি দেয়ার নামে কোন সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে প্রার্থীদের। তাদের বুঝতে হবে যে, টাকা দিয়ে নয়, মেধা দিয়ে চাকরি পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, আমার কাছেও এ কাজের সুপারিশের তদ্বির এসেছে। কিন্তু আমি তাদের সরাসরিভাবে আমার অপারগতার বিষয়টি জানিয়ে বিদায় করেছি। আর এ ব্যাপারে কারও কথায় কান না দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছি।
দেশে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর রয়েছে তীব্র সঙ্কট। স্বাস্থ্য সেক্টরকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসাবে ৬ হাজার ৩৯১ পদে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে হাত দেয় বর্তমান সরকার। ১৫ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ১শ' নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ৫ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। মৌখিক পরীক্ষার জন্য শূন্যপদের মাত্র তিন গুণ অর্থাৎ ১৯ হাজার ১৭৩ জন অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ৮০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষার বিশ নম্বর মোট ১শ' নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরধারীরাই চাকরি পাবে। ৬৪ জেলায় সুষ্ঠুভাবে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৭টি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ১৭ জেলার জন্য ৫, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলার জন্য ৩, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলার জন্য ৪, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ২, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জন্য ২ ও সিলেট বিভাগের ৪ জেলার জন্য ১টি কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অনুসন্ধান চালিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আর্থিক লেনদেনে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক প্রার্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জনকণ্ঠকে দিয়েছে টাকা লেনদেনের নানা তথ্য। তাদের অভিযোগ, গড়ে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। কেউ ইতোমধ্যে দাবিকৃত টাকার অর্ধেকটা, কেউবা দিয়েছে পুরো টাকা। ভাল পরীক্ষা দিয়েও টাকার কারণে উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলে অভিযোগ তুলেছে অনেক প্রার্থী। তাদের একজন শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানাধীন বারোয়ামারি গ্রামের বাসিন্দা সলোমন ম্রং। তার লিখিত পরীক্ষার রোল নম্বর ১০১৬৮২। ঢাকা নটর ডেম কলেজ থেকে বিএ (পাস) পাস করে সে। সে অভিযোগ করে, ৮০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬৬টি উত্তর সঠিক হওয়ার ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। টাকার মাধ্যমে করানোর বেশ কয়েকটি অফার পেয়েছিলাম। টাকা দিতে না পারাতে তার মেধা উপেক্ষিত হয়েছে বলে সে অভিযোগ করে। সলোমন ম্রংয়ের মতো আরও অনেক প্রার্থী একই অভিযোগ তুলেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সবকিছু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করলেও তালিকা পাঠিয়েছে বিভিন্ন মহল। নিজ নিজ তালিকা বাসত্মবায়নে তৎপর রয়েছে অনেক সংসদ সদস্যও। আওয়ামী চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও পৃথক পৃথক তালিকা তৈরি করে জমা দেয় উচ্চ মহলে। তবে বেশি সুবিধা ভোগ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ লোকজন। দলীয় তালিকা আনত্মরিক বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। এ বাণিজ্যে দলীয় লোকজন ও মেধাবী মুখ হচ্ছে উপেক্ষিত। প্রাধান্য পাচ্ছে টাকা। মৌখিক পরীক্ষার জন্য শূন্যপদের তিন গুণ অর্থাৎ ১৯ হাজার ১৭৩ জন অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। অর্থাৎ একজনের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় রাখা হয়েছে তিন জন। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিন ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণদের তালিকা তৈরি করা হয়। লেনদেনকারী প্রার্থীদের (অগ্রাধিকার) কাউকে লিখিত পরীক্ষার ফলে ৭০ নম্বরের নিচে দেয়া হয়নি। বাকি দু'ক্যাটাগরির প্রার্থীদের নম্বর নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ৫০ নম্বরের মধ্যে। এভাবে তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি করে জেলা পর্যায়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। অগ্রাধিকার প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় কমপক্ষে ৭০ নম্বর দিয়ে রাখার কারণে মৌখিক পরীক্ষায় পুরো ২০ নম্বর পেলেও লিখিত পরীক্ষায় ৫০ নম্বর প্রাপ্তদের টিকে যাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা থাকে না। সূক্ষ্ম কৌশলে বিষয়টি সম্পন্ন করা হয়েছে। এমন কারসাজির পর মৌখিক পরীক্ষার নামে চলছে লোক দেখানো খেলা। তদ্বিরবাজের তালিকায় উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ড্রাইভার আব্দুল মালেকের নাম। তিনি ইতোমধ্যে অধিদফতর এলাকায় 'ডিজি মালেক' নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। শুধু এ ক্ষেত্রে নয়, অধিদফতরের যে কোন নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনি জোরালো প্রভাব রাখছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকেন্দ্রিক গড়ে ওঠা সিন্ডিকেট এ বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। তালিকা পাঠানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই আওয়ামী চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতারাও। লিখিত পরীক্ষার আগেই সম্পন্ন হয়ে আছে আর্থিক চুক্তি। সিন্ডিকেট সদস্যদের তালিকানুযায়ী তিন ক্যাটাগরিতে নম্বর বণ্টন করে মৌখিক পরীক্ষার জন্য প্রার্থী নির্ধারণ করা হয়েছে। এতে আর্থিক লেনদেন না করাতে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হতে পারেনি হাজার হাজার মেধাবীমুখ। আর টাকার জোরে টিকে গেছে অনেক ছাত্রদল ও শিবিরকর্মী। উচ্চ মহলের ভরসায় টাকা গ্রহণ করে বিপাকে পড়েছে মধ্যস্থতাকারী অনেক দালাল। মৌখিক পরীক্ষার পর লেনদেন নিয়ে টাকা গ্রহণকারী ও প্রদানকারীদের মধ্যে অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে। লিখিত পরীক্ষার নম্বর পরিবর্তনসহ সব খেলাই হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদফতরে। সব পরীক্ষার্থীকে নম্বর জানার সুযোগ দেয়া হয়নি। শুধুমাত্র লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণদের তালিকা পাঠানো হয়েছে জেলা সিভিল সার্জনদের হাতে। আর চলছে লোকদেখানো মৌখিক পরীক্ষা।
এ ব্যাপারে জানতে চাওয়া হলে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক ডা. শাহ মনির হোসেন রবিবার জনকণ্ঠকে জানান, স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে আর্থিক লেনদেনের কোন সুযোগ রাখা হয়নি। সব কিছুই চলছে বিভিন্ন কমিটির দ্বারা। আর্থিক লেনদেনের অভিযোগ আমার কাছে এ পর্যন্ত আসেনি। তবে এ ধরনের অভিযোগ এলে তা তদন্ত করে দেখব আমরা। তিনি বলেন, ফেব্রুয়ারির ২ থেকে ৩ তারিখের মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে। আর ১০ থেকে ১৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে চূড়ান্ত ফল প্রকাশ করা যাবে বলে আশা করছি।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) মহাসচিব অধ্যাপক ডা. ইকবাল আর্সলান তালিকা পাঠানোর বিষয়টি সম্পূর্ণভাবে অস্বীকার করেছেন। রবিবার তিনি জনকণ্ঠকে জানান, এ ব্যাপারে কোন তালিকা তৈরি করিনি আমরা। সুযোগসন্ধানীরা চাকরি দেয়ার নামে কোন সংগঠনের নাম ভাঙ্গিয়ে নিজেদের স্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করতে পারে। এ ক্ষেত্রে সজাগ থাকতে হবে প্রার্থীদের। তাদের বুঝতে হবে যে, টাকা দিয়ে নয়, মেধা দিয়ে চাকরি পাওয়া সম্ভব। তিনি বলেন, আমার কাছেও এ কাজের সুপারিশের তদ্বির এসেছে। কিন্তু আমি তাদের সরাসরিভাবে আমার অপারগতার বিষয়টি জানিয়ে বিদায় করেছি। আর এ ব্যাপারে কারও কথায় কান না দেয়ারও পরামর্শ দিয়েছি।
দেশে চিকিৎসকসহ স্বাস্থ্যকর্মীর রয়েছে তীব্র সঙ্কট। স্বাস্থ্য সেক্টরকে ঢেলে সাজানোর অংশ হিসাবে ৬ হাজার ৩৯১ পদে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগে হাত দেয় বর্তমান সরকার। ১৫ জানুয়ারি লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হয়। ১শ' নম্বরের লিখিত পরীক্ষায় ৫ লক্ষাধিক পরীক্ষার্থী অংশ নেয়। মৌখিক পরীক্ষার জন্য শূন্যপদের মাত্র তিন গুণ অর্থাৎ ১৯ হাজার ১৭৩ জন অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। লিখিত পরীক্ষার ৮০ নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত নম্বর ও মৌখিক পরীক্ষার বিশ নম্বর মোট ১শ' নম্বরের মধ্যে প্রাপ্ত সর্বোচ্চ নম্বরধারীরাই চাকরি পাবে। ৬৪ জেলায় সুষ্ঠুভাবে মৌখিক পরীক্ষা গ্রহণের লক্ষ্যে ১৭টি কমিটি গঠিত হয়েছে। প্রতিটি কমিটিতে পরিচালক, উপ-পরিচালক, সহকারী পরিচালক, জেলা সিভিল সার্জন ও জেলা প্রশাসকের প্রতিনিধি রাখা হয়েছে। ঢাকা বিভাগের ১৭ জেলার জন্য ৫, চট্টগ্রাম বিভাগের ৮ জেলার জন্য ৩, রাজশাহী বিভাগের ১৬ জেলার জন্য ৪, খুলনা বিভাগের ১০ জেলায় ২, বরিশাল বিভাগের ৬ জেলার জন্য ২ ও সিলেট বিভাগের ৪ জেলার জন্য ১টি কমিটি গঠিত হয়েছে। জেলা পর্যায়ে নেয়া হচ্ছে মৌখিক পরীক্ষা। আগামী ২ ফেব্রুয়ারির মধ্যে মৌখিক পরীক্ষা শেষ হওয়ার কথা রয়েছে।
অনুসন্ধান চালিয়ে স্বাস্থ্য সহকারী নিয়োগ কার্যক্রমের ওপর পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য । অনুসন্ধানে দেখা গেছে, আর্থিক লেনদেনে লিখিত পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে অনেক প্রার্থী। নাম প্রকাশ না করার শর্তে তারা জনকণ্ঠকে দিয়েছে টাকা লেনদেনের নানা তথ্য। তাদের অভিযোগ, গড়ে প্রত্যেক প্রার্থীর কাছ থেকে ২ থেকে ৩ লাখ টাকা দাবি করা হয়েছে। কেউ ইতোমধ্যে দাবিকৃত টাকার অর্ধেকটা, কেউবা দিয়েছে পুরো টাকা। ভাল পরীক্ষা দিয়েও টাকার কারণে উত্তীর্ণ হতে পারেনি বলে অভিযোগ তুলেছে অনেক প্রার্থী। তাদের একজন শেরপুর জেলার ঝিনাইগাতী থানাধীন বারোয়ামারি গ্রামের বাসিন্দা সলোমন ম্রং। তার লিখিত পরীক্ষার রোল নম্বর ১০১৬৮২। ঢাকা নটর ডেম কলেজ থেকে বিএ (পাস) পাস করে সে। সে অভিযোগ করে, ৮০ নম্বরের পরীক্ষায় ৬৬টি উত্তর সঠিক হওয়ার ব্যাপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। টাকার মাধ্যমে করানোর বেশ কয়েকটি অফার পেয়েছিলাম। টাকা দিতে না পারাতে তার মেধা উপেক্ষিত হয়েছে বলে সে অভিযোগ করে। সলোমন ম্রংয়ের মতো আরও অনেক প্রার্থী একই অভিযোগ তুলেছে।
অভিযোগ উঠেছে, সবকিছু স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও স্বাস্থ্য অধিদফতরকেন্দ্রিক সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ করলেও তালিকা পাঠিয়েছে বিভিন্ন মহল। নিজ নিজ তালিকা বাসত্মবায়নে তৎপর রয়েছে অনেক সংসদ সদস্যও। আওয়ামী চেতনায় বিশ্বাসী বিভিন্ন সংগঠনের নেতৃবৃন্দও পৃথক পৃথক তালিকা তৈরি করে জমা দেয় উচ্চ মহলে। তবে বেশি সুবিধা ভোগ করছে স্বাস্থ্য অধিদফতর ও মন্ত্রণালয়ের ঘনিষ্ঠ লোকজন। দলীয় তালিকা আনত্মরিক বিবেচনায় আনা হচ্ছে না। এ বাণিজ্যে দলীয় লোকজন ও মেধাবী মুখ হচ্ছে উপেক্ষিত। প্রাধান্য পাচ্ছে টাকা। মৌখিক পরীক্ষার জন্য শূন্যপদের তিন গুণ অর্থাৎ ১৯ হাজার ১৭৩ জন অংশগ্রহণের সুযোগ পেয়েছে। অর্থাৎ একজনের বিপরীতে মৌখিক পরীক্ষায় রাখা হয়েছে তিন জন। লিখিত পরীক্ষার ফল প্রকাশিত হওয়ার আগেই তিন ক্যাটাগরিতে উত্তীর্ণদের তালিকা তৈরি করা হয়। লেনদেনকারী প্রার্থীদের (অগ্রাধিকার) কাউকে লিখিত পরীক্ষার ফলে ৭০ নম্বরের নিচে দেয়া হয়নি। বাকি দু'ক্যাটাগরির প্রার্থীদের নম্বর নির্ধারণ করা হয় সর্বোচ্চ ৫০ নম্বরের মধ্যে। এভাবে তিন ক্যাটাগরিতে তালিকা তৈরি করে জেলা পর্যায়ে মৌখিক পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। অগ্রাধিকার প্রার্থীদের লিখিত পরীক্ষায় কমপক্ষে ৭০ নম্বর দিয়ে রাখার কারণে মৌখিক পরীক্ষায় পুরো ২০ নম্বর পেলেও লিখিত পরীক্ষায় ৫০ নম্বর প্রাপ্তদের টিকে যাওয়ার আর কোন সম্ভাবনা থাকে না। সূক্ষ্ম কৌশলে বিষয়টি সম্পন্ন করা হয়েছে। এমন কারসাজির পর মৌখিক পরীক্ষার নামে চলছে লোক দেখানো খেলা। তদ্বিরবাজের তালিকায় উঠে এসেছে স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালকের ড্রাইভার আব্দুল মালেকের নাম। তিনি ইতোমধ্যে অধিদফতর এলাকায় 'ডিজি মালেক' নামে বেশ পরিচিতি পেয়েছেন। শুধু এ ক্ষেত্রে নয়, অধিদফতরের যে কোন নিয়োগ, বদলি ও পদোন্নতির ক্ষেত্রে তিনি জোরালো প্রভাব রাখছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
No comments