স্মরণ-সেলিম আল দীন by আনন্দ কুমার ভৌমিক
কলাগাছের খোলের মধ্যে খেজুর কাঁটা বসিয়ে ভয়ংকর সব জিনিস বানিয়ে বন্ধুদের ভয় দেখানোর কাজটা গ্রামবাংলার কোনো দুরন্ত ছেলেকে মানায়। এমন দুরন্ত ছেলের মানসপটে একটু একটু করে লেখক হওয়ার বীজের অঙ্কুরোদগম হয়ে ক্রমে তা বৃক্ষে পরিণত হয়েছে।
প্রথমে কবিতা লেখার প্রতি প্রচণ্ড ঝোঁক ছিল, কিন্তু বিধি বাম। তাঁর কবি হওয়ার ইচ্ছায় যখন বারবার ধাক্কা লাগছিল, তখন নিজেকে প্রমাণ করলেন বিখ্যাত নাট্যকার হিসেবে। তিনি নাটকের পৃথিবীর উজ্জ্বল নক্ষত্র, আমাদের সেলিম আল দীন। ছাত্রজীবন থেকে তিনি নিয়মিত নাটক, প্রবন্ধ, কবিতা লিখতেন। ১৯৬৮ সালে দৈনিক পাকিস্তানের সাময়িকীতে তাঁর প্রথম বাংলা প্রবন্ধ 'নিগ্রো সাহিত্য' প্রকাশিত হয়। ১৯৭১ সালের যুদ্ধের ভয়াবহতা। পাল্টে যায় তাঁর সব চিন্তাধারা। পরিস্থিতি তাঁকে নতুন করে ভাবতে শেখায়। নাটক শুধু যে তাঁর মনের খোরাক, সম্মানের বিষয়- এমন আত্মকেন্দ্রিক চিন্তাধারার নাট্যকার তিনি নন। নাটককে তিনি দেশ রক্ষার হাতিয়ার হিসেবে উপস্থাপন করেছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তাঁর নাট্যচর্চা থেমে থাকেনি। 'সর্প বিষয়ক গল্প ও অন্যান্য'সহ (১৯৭৩) আরো কিছু নাটকে তার প্রমাণ মেলে। স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের নাট্য আন্দোলনে রয়েছে তাঁর অপরিসীম ভূমিকা। সেলিম আল দীন 'মুনতাসির ফ্যান্টাসি' নাটকে হাস্যরস দিয়ে দেখিয়েছেন, সেনা ও স্বৈরশাসকরা কিভাবে দেশের প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে সঙ্গে শুভবোধ ও সংস্কৃতিকে ধ্বংস করে। বাংলাদেশের আঞ্চলিক ভাষার মধ্যে যে বিরাট সম্ভাবনা রয়েছে, তাঁর নাটক 'হাত হদাই' এর একটা উদাহরণ। এই নাটকে নোয়াখালী অঞ্চলের এক গ্রামের মৌলবির মুখের আঞ্চলিক ভাষাও যে কতটা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠতে পারে, সে কথা প্রতিষ্ঠিত। তাঁর 'নিমজ্জন' নাটকের ব্যাপ্তি ছিল আট ঘণ্টা, যাতে মঞ্চ নাটকে একটি নতুন ইতিহাস সৃষ্টি হয়। 'গ্রাম থিয়েটার' প্রথমে পুরো নাটকটাই মঞ্চস্থ করার কথা চিন্তা করেছিল, পরে তা দুই ঘণ্টায় নামিয়ে আনা হয়।
তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, নাট্যসংগঠন 'গ্রাম থিয়েটার' এবং গানের দল 'কথাকহন'।
আনন্দ কুমার ভৌমিক
তাঁর হাত ধরেই প্রতিষ্ঠা পায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ, নাট্যসংগঠন 'গ্রাম থিয়েটার' এবং গানের দল 'কথাকহন'।
আনন্দ কুমার ভৌমিক
No comments