অমর একুশে বইমেলা আজ শুরু, উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী
বছর ঘুরে আবার এসেছে বাঙালীর আবেগ স্পন্দিত ফেব্রুয়ারি। বাঙালীর হাজার বছরের চেতনাসিক্ত সি্নগ্ধ আলোকরশ্মি ফেব্রম্নয়ারি। 'আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো।' ভাষা আন্দোলনের চেতনায় ভাস্বর এই ফেব্রুয়ারির প্রথম দিন আজ।
হাজারো প্রাণের উচ্ছলতায় মুখরিত হয়ে উঠবে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণ। শুরম্ন হচ্ছে একুশে বইমেলা। বাঙালীর প্রাণের উৎসব। একদিন চিত্তরঞ্জন সাহার হাত ধরে ৰুদ্র পরিসরে শুরম্ন হয়েছিল যে মেলা, আজ তা পরিণত হয়েছে মহামিলন ৰেত্রে। এ মেলা অন্য দশটি মেলা থেকে সম্পূর্ণ আলাদা। এ কেবল একটি মেলাই নয়, এর সঙ্গে যুক্ত হয়ে আছে একুশের চেতনা ও মানবিক মূল্যবোধ। এর মর্মে যে অলিখিত বাণী প্রোথিত তা মানবতা ও আধুনিক মনস্ক। এ জন্য এ মেলা এত গুরম্নত্বপূর্ণ এবং এর জন্য সারা বছর অধীর আগ্রহে অপেৰা করে বাঙালী। সৃজনশীলতা, মনন ও মুক্তচিনত্মার অনন্য প্রতীক হয়ে ওঠা মাসব্যাপী অমর একুশের বইমেলা শুরম্ন হচ্ছে আজ সোমবার। বিকেল তিনটায় এ মেলার উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি একই সঙ্গে একাডেমীর বর্ধমান হাউসে প্রতিষ্ঠিত ভাষা-আন্দোলন জাদুঘরেরও উদ্বোধন করবেন। বাঙালীর সাংস্কৃতিক উৎসবে পরিণত এবারের একুশের বইমেলায় একাডেমী ৩৫৬ প্রতিষ্ঠানকে ৫০৫টি স্টল বরাদ্দ দিয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। তিনি আরও বলেন, এর মধ্যে প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ছাড়াও স্বেচ্ছাসেবী সংস্থাসহ সরকারী-বেসরকারী, সামাজিক-সাংস্কৃতিক, সেবামূলক এবং গণমাধ্যম রয়েছে। আরও থাকছে লিটল ম্যাগাজিনের ২৬ স্টল। ুদ্র প্রকাশনা সংস্থা এবং ব্যক্তি উদ্যোগে যাঁরা বই প্রকাশ করছেন তাঁদের বই বিক্রির জন্য জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের স্টলে ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। গ্রন্থমেলায় বাংলা একাডেমী প্রকাশিত বই একাডেমীর প্রচলিত কমিশনে এবং অংশগ্রহণকারী অন্যান্য প্রতিষ্ঠান ২৫% কমিশনে বই বিক্রি করবে।তিনি আরও বলেন, অমর একুশে বইমেলা চত্বরকে অন্যান্য বছরের চেয়ে নতুনভাবে বিন্যসত্ম করা হয়েছে। ভাষাশহীদ এবং বরেণ্য লেখক, সাহিত্যিক, কবি ও বুদ্ধিজীবীদের নামে মেলা প্রাঙ্গণকে ভাগ করা হয়েছে নয়টি চত্বরে। এগুলো হলো- ভাষা শহীদ চত্বর, রবীন্দ্র চত্বর, ড. মুহম্মদ শহীদুলস্নাহ্ চত্বর, নজরম্নল চত্বর, সাহিত্য বিশারদ চত্বর, সুফিয়া কামাল চত্বর, ধীরেন্দ্রনাথ চত্বর, সোমেন চন্দ চত্বর ও রোকেয়া চত্বর। প্রতিবারের মতো এবারও নতুন বইয়ের মোড়ক উন্মোচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা থাকবে নজরম্নল মঞ্চে। প্রচার কার্যক্রমের জন্য তথ্যকেন্দ্র থাকবে বর্ধমান ভবনের পশ্চিম বেদীতে। সাংবাদিকদের জন্য মিডিয়া সেন্টার থাকবে তথ্যকেন্দ্রের উত্তর পাশে। তাৎণিকভাবে মেলা সংক্রানত্ম তথ্য সরবরাহের জন্য ফ্যাক্সসহ ই-মেইল সুবিধা থাকবে মিডিয়া সেন্টারে। বাংলালায়ন কমিউনিকেশনস লিমিটেড ওয়াইম্যাক্স প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মেলা প্রাঙ্গণকে ওয়াইফাই জোনে রূপানত্মরিত করবে। এর ফলে মেলা প্রাঙ্গণে বসানো কিয়ক্সের মাধ্যমে অথবা ল্যাপটপে মেলায় আগত কম্পিউটার ব্যবহারকারীরা ফ্রি ব্রাউজিংয়ের সুবিধা পাবেন।
তিনি আরও বলেন, মেলার উদ্বোধন অনুষ্ঠান সরাসরি সমপ্রচার করবে বাংলাদেশ টেলিভিশন ও বাংলাদেশ বেতার। এ ছাড়া মেলা প্রাঙ্গণ থেকে চ্যানেল আই 'বইমেলা প্রতিদিন' শীর্ষক অনুষ্ঠান এবং রেডিও ফুর্তি, রেডিও টুডে ও চায়না রেডিও ইন্টারন্যাশনাল (সিআরআই) মেলার খবরাখবর প্রতিদিন সরাসরি সমপ্রচার করবে। গ্রন্থমেলার খবরাখবর নিয়ে বিএসবি ও আনন্দ আলো 'বইমেলা প্রতিদিন' নামে প্রতিদিন দু'টি বুলেটিন প্রকাশ করবে। ওয়েবসাইটের মাধ্যমে িি.িনধহমষধধপধফবসু.ড়ৎম.নফ/,িি.িবশঁংযবৎনড়র.পড়স, িি.িনড়রধিষধ.পড়স, যঃঃঢ়://িি.িনফহবংি২৪.পড়স/, ও িি.িংধিঢ়হবৎংযরৎর.পড়স প্রতিদিন মেলার তথ্য প্রচার করবে। মেলায় প্রবেশ করার জন্য পুষ্টি ভবনের সামনে এবং আণবিক শক্তি কমিশনের সামনে প্রবেশপথ থাকবে। প্রতিটি প্রবেশপথে তিনটি করে আর্চওয়ে দিয়ে মেলায় প্রবেশের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। মেলার সার্বিক নিরাপত্তার দায়িত্ব পালন করবে আইনশৃঙ্খলা রাকারী বাহিনী। নিরাপত্তা ব্যবস্থা সংহত করার জন্য মেলায় ১৫ সিসিটিভি স্থাপন করা হয়েছে। মেলায় টাস্কফোর্স সদস্যরা থাকবেন, তাঁরা নিয়মিত মেলা পরিদর্শন করবেন। কোন স্টলে নোটবই, পাইরেটকৃত বই কিংবা বেআইনীভাবে প্রকাশিত বই পাওয়া গেলে টাস্কফোর্স কতর্ৃক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে। মেলা থাকবে সম্পূর্ণ পলিথিন ও ধূমপানমুক্ত।
তিনি আরও বলেন, এ বছর থেকে আমরা 'চিত্তরঞ্জন সাহা স্মৃতি পুরস্কার' প্রদানের উদ্যোগ নিয়েছি। পুরস্কারটি পাবেন প্রকাশকরা। ২০০৯ সালে প্রকাশিত গ্রন্থের মধ্য থেকে গুণগতমান বিচারে সেরা গ্রন্থের জন্য প্রকাশককে এ পুরস্কার প্রদান করা হবে। এ ছাড়া পয়লা থেকে ২৭ ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম প্রতিদিন বিকেল ৪টায় বইমেলার মূল মঞ্চে সেমিনার হবে। সেমিনারের বিষয় 'ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস কথা : ১৯৪৭-১৯৫৩।' তা ছাড়া মাসব্যাপী প্রতিদিন সন্ধ্যায় থাকবে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
মেলায় বলাকা পাবলিকেশন্সের ৮৮ নম্বর স্টলটি বাংলায়ন দখল করে নেয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে মহাপরিচালক বলেন, এমন অভিযোগ আমাদের কাছে আসেনি। এবার খুব সুষ্ঠুভাবেই স্টল বরাদ্দের লটারী হয়েছে ।
ব্র্যাক ব্যাংক লিমিটেডের আর্থিক সহযোগিতায় স্টেপ মিডিয়া মেলার অবকাঠামো নির্মাণ ও সাজসজ্জার যাবতীয় কাজে বাংলা একাডেমীকে সহায়তা প্রদান করছে। পয়লা থেকে ২৮ ফেব্রম্নয়ারি পর্যনত্ম ছুটির দিন ব্যতীত প্রতিদিন বিকেল ৩টা থেকে রাত ৯টা পর্যনত্ম খোলা থাকবে মেলা প্রাঙ্গণ। ছুটির দিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৯টা এবং ২১ ফেব্রম্নয়ারি সকাল ৮টা থেকে রাত ১০টা পর্যনত্ম চলবে মেলা।
No comments