শিশুর বেড়ে উঠতে বাবা-মার অবদান
জন্মের পর ধীরে ধীরে মা এবং বাবা বাচ্চার সবচেয়ে কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। সব না জানা প্রশ্নের উত্তর, সমস্যার সমাধান বা উৎসাহে ঘাটতি দেখা দিলে সন্তান ছুটে আসে মা-বাবার কাছেই।
ফলে সন্তানকে সঠিকভাবে বড় করে তোলার জন্য প্রথমে তৈরি হতে হবে বড়দেরই। মা-বাবার মধ্যে পজিটিভ রোল মডেল খুঁজে পেলে ভাল-মন্দ, ন্যায়-অন্যায়বোধ গড়ে ওঠে সহজেই। এত অবধি তো শুনতে বেশ সহজই লাগল কিন্তু সন্তানের সামনে নিজেকে রোল মডেল হিসেবে তুলে ধরার ক্ষেত্রে আপনি কতটা কনফিডেন্ট এবং স্বচ্ছন্দ? সব সন্দেহ, দ্বিধা কাটাবার জন্য রইল কয়েকটি টিপস :হ শত ব্যস্ততার মধ্যেও বাচ্চার সঙ্গে কথা বলুন। বাচ্চারা বাবা-মায়ের গলার স্বর শুনলে আশ্বস্ত বোধ করে। বাড়িতে থাকার সময় রান্না করতে করতে বা টিভি দেখার সময় ওর সঙ্গে গল্প করুন। আপনি কী করছেন, কেন করছেন ওকে বুঝিয়ে বলুন। ও খুব ছোট হলেও ওর সাহায্য চান। কাজের শেষে বড়দের যেম করে ঞযধহশ ুড়ঁ, বলেন ওকেও সেভাবে কলুন। অফিসে কাজ করতে করতেও বাচ্চার সঙ্গে ৫ মিনিট গল্প করতে পারেন। শুধু পড়াশোনা, বা সেফটি সম্পর্কে ইন্সট্রাকশন না দিয়ে ওর স্কুল, টিচার বা বন্ধুদের নিয়ে একটু গল্প করুন। নিজের অফিসের কথাও বলুন। এইভাবে আপনি ওর মনের কাছাকাছি পৌঁছতে পারবেন। ফলে আপনাকে বোঝা এবং আপনার ব্যবহার অনুসরণ করা ওর পক্ষে অনেক সহজ হবে।
হ দাঁত মাজা, ব্যাগ গোছানো, জামা-কাপড় ভাঁজ করে রাখার মতো ছোট ছোট কাজ একসঙ্গে করুন। কাজগুলো একটু মজার করে তুললে বাচ্চাও উৎসাহ পাবে। মিউজিকের তালে তালে দু’বেলা দাঁত মাজা বা কে কত ভাল জামা ভাঁজ করার প্রতিযোগিতা শুরু করে দিল দেখবেন বাচ্চারা নিজেদের অপছন্দের কাজও হাসিমুখে করে ফেলছে। এইভাবেই বাচ্চার মধ্যে সুঅভ্যেস গড়ে তুলুন।
নিজের মন ও শরীরের যতœ নিন। হেলদি ফুড খাওয়া এড়িয়ে চলা, নিয়মিত হাঁটতে যাওয়া, বই পড়া, শিক্ষামূলক ব্যাপারে উৎসাহ দেখালে, বাচ্চাও আপনার দেখাদেখি এই সব ব্যাপারে কৌতূহলী হবে। বাইরে বেড়াতে গেলে চেষ্টা করুন সফট ড্রিঙ্কের বদলে ফ্রেশ ফ্রুট জুস খেতে। অবসরে টিভি না দেখে ওয়ার্ড মেকিং বা ম্যাথম্যাটিক পাজল সলভ করুন দু’জনে মিলে। ছুটির দিনে সবাই মিলে ছবির প্রদর্শনী, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, ছোটদের নাটক বা সিনেমা দেখতে যেতে পারেন। এই ছোট ছোট আচরণের মধ্য দিয়েই ওর সুঅভ্যেস এবং সুন্দর রুচি গড়ে উঠবে।
হ ছোট বেলা থেকেই বাচ্চাদের নানা বিষয়ে কৌতূহল দেখা দেয়। কেউ হয়ত একা একাই কথা বলে, কেউ ছোটাছুটি করে খেলতে ভালবাসে, আবার কেউ বা নাচগান নিয়ে মেতে থাকতে। আপনি ব্যস্ত বা ক্লান্ত বলে ওর উৎসাহে যেন বাধা না পড়ে সে দিকে বিশেষ নজর দিন। তা বলে হবি ক্লাসে ভর্তি করে দায়িত্ব সারবেন না। ওর পছন্দের বিষয় বা হবি নিয়ে ওকে আরও জানতে, বুঝতে সাহায্য করুন। বইপত্র বা ইন্টারনেট ঘেঁটে দু’জনে মিলে তথ্য সংগ্রহ করে বানাতে পারেন মজার পোস্টার, মডেল বা স্ক্র্যাপ বুক। শিশুদের মধ্যে সৃজনশীল সত্তা জাগিয়ে তোলার এর থেকে ভাল উপায় আর নেই। এর জন্যও আপনাকে সম্মান তো করবেই, তার সঙ্গে সঙ্গে নিজেদের মধ্যে চমৎকার একটা বন্ডিও গড়ে উঠবে। সন্তানকে প্রতিযোগিতায় অংশ নিতে উৎসাহ দিন কিন্তু ফলাফল নিয়ে উতলা হবেন না। ও যেটুকু পারে, যতটা পারে এই নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে শেখান। ‘না পারা’ টাও যে জীবনের অঙ্গ সেটা বুঝতে ওকে সাহায্য করুন। ভুল করে লজ্জিত না হয়ে সেই ভুল থেকে যাতে নতুন কিছু শিখতে পারে, সেই শিক্ষাই ওকে দিন। প্রতিযোগিতায় পুরস্কার না পেলেও আপনি ওর পছন্দের ছোট খাটো কোন গিফট কিনে ওকে উৎসাহিত করুন।
হ ছোট থেকেই সন্তানের একটা নিজস্ব পরিচিতি গড়ে তুলতে সাহায্য করুন। কথায় কথায় ওর সমবয়সীদের সঙ্গে তুলনা না করে ওকে নিজের মতো বেড়ে উঠতে দিন। পড়াশোনা, খেলাধুলা, হবি সব ব্যাপারেই উৎসাহ দিন। কিন্তু খেয়াল রাখুন ও কোনটা সবচেয়ে বেশি এনজয় করে নিজের পুরনো ধ্যান ধারণা বদলে ফেলে সন্তানকে এর নিজস্বতা গড়ে তুলতে সাহায্য করাই সুস্থ পেরেন্টিংয়ের প্রথম ধাপ। জীবনের নানা জটিলতার কারণে কোনটা ঠিক, কোনটা ভুল বড়দের পক্ষেও বুঝে ওঠা দুষ্কর। ছোটরা তো কোন ছাড় ডিসিশন মেকিংয়ের সময় দুর্বল ভ্যালু সিস্টেম সব সময়ই ছোটদের ভুল দিকেই ঠেলে দেয়। ছোটবেলা থেকেই ভাল এবং মন্দের বোধ সন্তানের মধ্যে গেঁথে দিন। এর সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি অবশ্য নিজেই নিজের শেখানো কথাগুলো মোটামুটি বজায় রাখা, নিজের সাধ্যের মধ্যে খরচ করা ইত্যাদি শিক্ষা আপনি মেনে চললে বাচ্চাও আপনার কথা শুনে চলতে দ্বিধা করবে না। পেরেন্টিংয়ের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ বাচ্চাকে সঠিক ডিসিপ্লিন শেখানো। তবে শাসন করা মানেই কিন্তু, শুধুমাত্র বকা বা মারা নয় বা ঠিক ভুল শেখানো নয়।
রাদিয়ার বয়স এখন সবেমাত্র ৫ বছর, তখন থেকেই ওর বাবা-মা ওকে নিয়ে রীতিমতো নাজেহাল। কোন কথা শুনতে চায় না খেতে বললে খায় না, পড়তে বসতে বললে চিৎকার করে কান্না জুড়ে দেয়। স্কুল থেকেও প্রায়ই ওর কা-কারখানার জন্য নালিশ আসে। বোঝাতে গেলেও বুঝতে চায় ন্ াএমনকি শাস্তি দিয়েও কোন ফল হয়নি, উল্টো আরও জেদি হয়ে গিয়েছে। আসলে বাড়িতে ছোট বাচ্চা থাকলে, সে দুষ্টুমি করবেই। বেশিরভাগ সময়েই আপনার কথা শুনতে চাইবে না। যা বলবেন তার উল্টোটা করবে, মুখে মুখে কথা বলবে। আর আপনি ভাববেন বাচ্চাকে সঠিক রাস্তায় আনার একমাত্র উপায় তাকে বকা, মারা বা শাস্তি দেয়া। কিন্তু ভেবে দেখুন তো এরকম তো কতবার হয়েছে যে বাচ্চা দুষ্টুমি করেছে আর আপনি হয়ত শাস্তিও দিয়েছেন, কিন্তু তাতে কি বাচ্চা শুধরে গিয়েছে? আপনার কথা অক্ষরে অক্ষরে পালন করা শুরু করেছে? মোটামুটি সব বাবা মায়েরাই এই প্রশ্নের উত্তরে নাই বলবেন আসলে বাচ্চাকে মেরে, বকে বা অন্য কোন রকম শাস্তি দিয়ে ভাল মন্দ শেখানো যায় না। বাচ্চার কী করা উচিত বা কী করা উচিত নয় জানানোই যথেষ্ট নয়। বাচ্চাকে ডিসিপ্লিনড করতে হলে প্রথমে তার টেম্পারামেন্ট বুঝতে হবে। সব বাচ্চাকে একই উপায়ে শাসন করা যায় না। আর সব থেকে বড় কথা হলো আপনি যদি বাচ্চাকে শুধুই শাসন করতে যান, বাচ্চার কিন্তু আপনার প্রতি নেগেটিভ মনোভাব তৈরি হয়ে যেতে পারে। শাসন নিশ্চয় করবেন তবে তার থেকেও জরুরী হলো বাচ্চাকে আদর করা। সে যেন কখনও মনে না করে যে, বাবা-মা তাকে ভালোবাসেন না। তবে মনে রাখবেন, কোন কিছু অতিরিক্ত ভাল নয়, না আদর, না শাসন। বাচ্চাকে ডিসিপ্লিনড করার মূল মন্ত্রই হলো আদর এবং শাসনের সঠিক ব্যালেন্স। বাচ্চার মধ্যে ভাল অভ্যেস গড়ে তোলার জন্য ডিসিপ্লিনড করে তোলার জন্য মৌখিক নির্দেশের থেকেও বেশি জরুরী বড়দের নিজেদের আচরণ। বাচ্চারা সাধারণত বাড়ির বড়দেন দেখেই কিছু শেখে। সে ক্ষেত্রে বাচ্চাদের কিছু শেখানোর আগে দেখে নিতে হবে যে নিজেদের ব্যবহারে কোন পরিবর্তন আনা প্রয়োজন কিনা। ছোট ছোট আচরণ যেমন সময়ের কাজ সময়ে করা, জামাকাপড় ছেড়ে ভাঁজ করে রাখা, ঘর থেকে বেরানোর আগে আলো, পাখা বন্ধ করা, খাবার নষ্ট না করা ইত্যাদি বাচ্চার সুঅভ্যেস গড়ে তুলতে সাহায্য করবে। বাচ্চাকে ডিসিপ্লিন শেখানোর বা শাসন করার কোন নির্দিষ্ট পদ্ধতি হয় না। আপনাকে প্রথমে বাচ্চার সঙ্গ্ েবন্ধুর মতো মিশতে হবে। ওর সমস্ত কথা মন দিয়ে শুনতে হবে। তবেই আপনি বাচ্চাকে পুরোপুরি বুঝতে পারবেন। আসর কথাটা হলো, বাচ্চাকে ভালমন্দ শেখানো। বাচ্চাকে তার দায়িত্ব বুঝতে দিন। অনেক সময় এরকম হয় যে, আপনি রেগে গিয়ে হয়ত বাচ্চাকে মেরে দেবেন বা নিজের ঘরে যেতে বলবেন। কিন্তু ভেবে দেখুন তো, এতে বাচ্চার কি কোন উপকার হবে। পরিবর্তে আপনি যদি বাচ্চাকে আপনার কাজে সাহায্য করতে বলেন তা হলে বাচ্চার প্রতি মনোযোগ দেয়াও হবে আর আপনার কাজ করতেও সুবিধে হবে। বাচ্চাকে বাড়ির বিভিন্ন কাজকর্মে ইনভলব করুন। ওর মতামত নিন। এতে ও নিজেকে গুরুত্বপূর্ণ মনে করবে এবং আপনার কথা শুনতে আপত্তি করবে না। বাচ্চাকে শাসন করার সময় মোটিভেট করা খুব জরুরী। যেমন ধরুন আপনার বাচ্চা হোমওয়ার্ক করতে চাইছে না। আপনি হয়ত অনেক বুঝিয়েও ওর সঙ্গে পেরে উঠছেন না। না বকে আপনি বলতেই পারেন, যে হোমওয়ার্ক না করলে ও কার্টুন দেখতে পারবে না বা বাইরে খেলতে যেতে পারবে না। ওর কাছে এটা মোটিভেশনের মতো কাজ করবে। দেখবেন এতে প্রথম দিকে কাজ না হলেও পরে ও নিজেই হোমওয়ার্ক করার জন্যে আগ্রহ দেখাবে। বাচ্চাকে এই সময় উৎসাহ দিন। আপনি হোমাওয়ার্ক শুরু করতে সাহায্য করুন। মাঝে মধ্যে গিয়ে দেখুন বাচ্চার কোন অসুবিধে হচ্ছে কিনা। ও যা কাজ করছে তার প্রশংসা করুন। এইভাবে ওর নিজের কাজের প্রতি সচেতনতা গড়ে তুলুন। বাচ্চারা অনেক সময় এমন সব কথা বলে ফেলে, যা একদমই বলা উচিত নয়। আপনার খারাপ লাগা স্বাভাবিক কিন্তু এই সময় বকে কোও কাজ হবে না। অনেকে বাচ্চার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেন এই ভেবে যে, বাচ্চা এতে নিজের ভুল বুঝতে পারবে। বাচ্চারা কিন্তু এই রিভার্স সাইকোলজি বোঝে না। আপনাকে বাচ্চাকে কাছে টেনে নিতে হবে। শান্ত থেকে পরিস্থিতি সামলান। রাগ করা খুব স্বাভাবিক কিন্তু তাতে বাচ্চা আপনাকে আরও ভুল বুঝতে পারে। আপনার সঙ্গে আরও অভদ্র ব্যবহার করতে পারে। আবেগপ্রবণ হয়ে পড়াটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু মনে রাখবেন ইমোশন অনেক সময় যুক্তিকে ছাড়িয়ে যায় ফলে আপনি হয়ত এমনভাবে রিয়্যাক্ট করে ফেলবেন যা সমস্যাকে আরও বাড়িয়ে তুলবে। কাজেই রাগ না করে পরে বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন আর ভবিষ্যতে এরকম ব্যবহার করবে না। শাসন করার আরেকটা গুরুত্বপূর্ণ অংশ বাচ্চার নেগেটিভ ব্যবহারকে উপেক্ষা করা। আপনি হয়ত ওর জন্য চকোলেট ওকে পুরোটাই দিতে হবে। আপনি অশান্তি এড়াতে হয়ত ওর জেদ মেনেও নেবেন। এতে কিন্তু আপনার বাচ্চারই ক্ষতি হবে। ও কোন দিনও কিছু শেয়ার করতে শিখবে না। বাচ্চা হয়ত চিৎকার করবে হাত-পা ছুড়বে, প্রবল কান্নাকাটি জুড়ে দেবে। একদম বিচলিত হবেন ন্ াআপনি যদি মনোযোগ দেন, তা হলে কিন্তু ও উৎসাহ পেয়ে যাবে। বাচ্চার দিকে না তাকিয়ে নিজের কাজকর্মে মন দিন। বাচ্চা যদি দেখে যে আপনি ওর ব্যবহারে কোনও তাপ-উত্তাপ দেখাচ্ছেন না, তা হলে নিজেই থেমে যাবে এবং পরবর্তীকালে এই রকম ব্যবহার করার আগে অন্তত ২ বার ভাববে। ঠিক তেমনই বাচ্চা যদি একেবারে আপনার কথা শুনে নেয়, কোন আপত্তি না করে, তাহলে পজিটিভ রিইনফোর্সমেন্ট দিন। তার মানে এই নয় যে, আপনাকে বাচ্চাকে কোন উপহার দিতে হবে। ১০ মিনিট বেশি টিভি দেখার অনুমতি দিতে পারেন। তবে খেয়াল রাখবেন বাচ্চা কোন কিছুর লোভে পড়ে যেন আপনার কথা না শোনে। তা হলে কিন্তু এটা ওর অভ্যেসে পরিণত হয়ে যাবে। বাচ্চাকে শাসন করতে গিয়ে ওর সূক্ষ্ম অনুভূতিগুলো উপেক্ষা করা কিন্তু ঠিক হবে না। যদি কোন কাজ করতে ওর সত্যি কোন সমস্যা থাকে, তা হলে জোর করে করাতে যাবেন না। অনেক সময় বাচ্চারা একদম স্নান করতে চায় না, কাঁদতে শুরু করে। সে ক্ষেত্রে জোর করতে যাবেন না। বললে বলতে পারেন যে আপনারও একদম স্নান করতে ভাল লাগে না। তাই আপনারা দু’জন মিলে স্নান করবেন। এতে বাচ্চা মজা পাবে আর স্নান করার আপত্তি করবে না। যখন বাচ্চা কোন কিছু করতে চাইবে না। ওর মনোযোগ অন্যদিকে ঘোরাবার চেষ্টা করুন। ধরুন স্কুল যাওয়ার সময় বাচ্চা কিছুতেই তৈরি হতে চাইছে না। হাত-পা ছুড়ছে। জবরদস্তি করার পরিবর্তে, ওকে ওর বন্ধুদের কথা জিজ্ঞেস করুন। এমন বিষয়ে কথা বলার চেষ্টা করুন যা বাচ্চার কাছে ইন্টারেস্টিং। দেখবেন বাচ্চা কথা বলায় এত মত্ত হয়ে যাবে যে, আপনি অনায়াসে আপনার কাজ হাসিল করে নিতে পারবেন। সব শেষে মনে রাখা দরকার যে কোন জিনিস মানুষ সময়ের সঙ্গে এবং অভিজ্ঞতা থেকে শেখে। বাচ্চাকে জোর করে কিছু শেখাতে যাবেন না। তাদের ভালমন্দ বোঝার সুযোগ দিন। বাচ্চা যদি কিছু ভুল করে তা হলে ভুল থেকে শেখার অবকাশ দিন। আগেই যদি আপনি বাধা দিয়ে ফেলেন তাহলে বাচ্চা কোন দিন নিজের ভুল বুঝতে পারবে না। তবে সব সময় বাচ্চার পাশে থাকুন যাতে তারা নিজেদের উপেক্ষিত না মনে করে। একটু বিচক্ষণতা, ভালবাসা, সাপোর্ট এবং ধৈর্য আপনার বাচ্চার ব্যবহার পরিবর্তন আনতে বাধ্য।
অনেক সময় বাবা-মায়েরা শাসন করতে গিয়ে বাচ্চার সঙ্গে অতিরিক্ত কঠোর হয়ে পড়ে। তাঁদের মনে রাখতে হবে শাসন করা মানেই কিন্তু কঠোর মনোভাব পোষণ করতে হবে তার কোন মানে নেই। উল্টো যদি আপনি আদর করে ওকে ঠিক ভুলটা মনে নেই। উলটো যদি আপনি আদর করে ওকে ঠিক ভুলটা শেখান, তা হলে বাচ্চা অনেক তাড়াতাড়ি বুঝে যাবে। তবে আবার নরম হতে গিয়ে বাচ্চার সব জেদ মেনে নেবেন না। বাচ্চাকে সব সময় বকাবকি করবেন না। ডিসিপ্লিন শেখাতে গিয়ে বাবা-মায়েরা অনেক সময় প্রয়োজনের বেশি রুক্ষ হয়ে পড়েন। এতে বাচ্চা ভাবতে পারে যে, আপনারা ওকে ভালবাসেন না। যা ওর ডেভেলপমেন্টের পক্ষে খুব ক্ষতিকর। সুতরাং অকারণ বাচ্চার ওপর রাগারাগি করবেন না। বাচ্চার সঙ্গে খোলাখুলি কথাবার্তা বলুন। তবে দেখবেন যেন, একতরফা কমিউনিকেশন না হয়ে যায়। মানে আপনি শুধুই বলে যাচ্ছেন যে ওর কী করা উচিত আর কী নয়। কিন্তু ওর বক্তব্য শোনার চেষ্টা করছেন না। এরকম হলে বাচ্চা হয়ত ধরে নেবে যে, আপনি ওর কথা শোনার প্রয়োজন বোধ করেন না এবং ভবিষ্যতেও আপনার সঙ্গে কোন কথা শেয়ার করতে চাইবে না। মনে রাখুন, যে সমালোচনা কাউকে সাহায্যে করেন না। সমালোচনা আসলে এক ধরনের নেগেটিভ ডিসিপ্লিন টেকনিক। সব সময় সমালোচনা করলে বাচ্চার নিজের প্রতি বিশ্বাস হারিয়ে যেতে পারে সুতরাং পজিটিভ ডিসিপ্লিন টেকনিকের ওপর জোর দিন। বাচ্চাকে কখনওই বাচ্চাদের সঙ্গে তুলনা করবেন না। এতে বাচ্চা অসহায় মনে করে নিজেকে। সেক্ষেত্রে কোন কাজই বাচ্চা আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে করতে পারবে না। বদলে বাচ্চার অ্যাচিভমেন্টকে স্বীকৃতি দিন। তাদের কাজে সন্তুষ্টি প্রকাশ করুন। নিদির্ষ্ট লিমিট সেট করুন তবে সে খানেই শেষ নয়। বাচ্চাকে বুঝিয়ে বলুন। কেন এই নিয়মগুলো মানা প্রয়োজন। না হলে নিয়ম বানানোর কোন মানেই হয় না। বাচ্চাকে নিয়ম মানতে বাধ্য করবেন না । ওকে নিজেকে নিয়মের প্রয়োজনীয়তা বুঝতে দিন। না হলে ও ভিতর থেকে নিয়মগুলো মানতে পারবে না আর বাচ্চার নিজের উন্নতির জন্য নিয়মগুরোকে আত্মস্থ করা খুব জরুরী। ডিসিপ্লিনের ধরন নিয়ে বাবা-মায়ের মধ্যে মতবিরোধ থাকলে চলবে না। বাবা যদি একরম ভাবে এবং মা যদি আরেকরকমভাবে শাসন করতে চান তা হলে বাচ্চা কনফিউশড হয়ে যেতে পারে। সেক্ষেত্রে ওর ওপর কোন ভাল প্রভাব পড়বে না।
শামিমা আক্তার রিমা
No comments