দশ হাজার তৃণমূল নেতাকমী যোগ দিচ্ছেন- আওয়ামী লীগের টার্গেট নতুন প্রজন্মকে দলে আনা আজ বর্ধিত সভা
এবার দলকে শক্তিশালী করার মিশনে নামছে আওয়ামী লীগ। টার্গেট_ দেশের নতুন-তরম্নণ প্রজন্মের ভোটারদের দলের পতাকাতলে আনা এবং তৃণমূল পর্যায়ে সংগঠনে তরম্নণ নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে দলে নতুনের প্রাণসঞ্চার করে আধুনিক-তারম্নণ্যনির্ভর করে দলকে গড়ে তোলা। নতুন বছরে এই দুই টার্গেট পূরণে আজ শনিবার বসছে আওয়ামী লীগের বিশেষ বর্ধিতসভা।
দলকে নতুন করে ঢেলে সাজাতে আজকের এই বর্ধিতসভা থেকেই শুরম্ন হবে দেশব্যাপী সদস্য নবায়ন ও সদস্য সংগ্রহ অভিযান। দলের সভানেত্রী ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজের সদস্য পদ নবায়নের মাধ্যমে সদস্য সংগ্রহ অভিযানের উদ্বোধন করবেন। আর এই বর্ধিতসভাকে ঘিরে ৰমতাসীন এই দলে ব্যাপক প্রাণচাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। সারাদেশ থেকে আসা তৃণমূল নেতাদের পদচারণায় মুখরিত হয়ে উঠেছে আওয়ামী লীগ কার্যালয়।সকাল ১১টায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারী বাসভবন শেরেবাংলা নগরের গণভবনে শুরম্ন হবে দিনব্যাপী এই বর্ধিতসভা। সারাদেশ থেকে আসা প্রায় ১০ হাজার তৃণমূল নেতা উপস্থিত থাকবেন সভায়। তবে বর্ধিতসভার শুরম্নর এক ঘণ্টা আগে সংসদ উপনেতা ও সভাপতিম-লীর সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরীর সভাপতিত্বে ধানম-ির কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় কমিটির জরম্নরীসভা অনুষ্ঠিত হবে। আর এ সভাতে তৃণমূল নেতাদের দেয়ার জন্য দলের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রের আনুষ্ঠানিক অনুমোদন দেয়া হবে। বর্ধিতসভার শুরম্নতেই সভানেত্রী শেখ হাসিনা উদ্বোধনী বক্তব্যের মাধ্যমে তৃণমূল নেতাদের বিশেষ দিক-নির্দেশনা দেবেন। এরপর দ্বিতীয় অধিবেশন হবে রম্নদ্ধদ্বার। এতে তৃণমূল নেতারা প্রাণখুলে কথা বলবেন প্রধানমন্ত্রীর সামনে, সাংগঠনিক ও সরকার পরিচালনায় ত্রম্নটি-বিচু্যতি ও এলাকার সমস্যাগুলো তুলে ধরবেন।
এই বর্ধিতসভার মূল উদ্দেশ্য সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও এলজিআরডি মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, এই বর্ধিতসভার পর তৃণমূল পর্যায় থেকে নেতৃত্ব নিয়ে আসা হবে এবং নতুন নেতৃত্ব আসবে। এতে দলে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। তিনি বলেন, আজকের বর্ধিতসভা থেকেই দেশব্যাপী দলের সদস্য নবায়ন ও নতুন সংগ্রহ অভিযান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি ইঙ্গিত দেন- দেশব্যাপী নতুন সদস্য সংগ্রহ অভিযান প্রধান টার্গেটই থাকবে দেশের তরম্নণ প্রজন্ম। তরম্নণদের পাশাপাশি মহিলাদেরও আওয়ামী লীগের পতাকাতলে আনার জন্য দেশব্যাপী ব্যাপক তৎপরতা চালানো হবে।
এবারকার বর্ধিতসভা হবে বর্তমান আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী কমিটির মেয়াদে প্রথম। দলটির সর্বশেষ বর্ধিতসভা হয়েছিল ২০০৮ সালের ২৬ মে। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তখন ছিলেন কারাগারে। প্রচ- বৈরী পরিস্থিতিতে অনুষ্ঠিত ওই বর্ধিত সভাতেই আওয়ামী লীগের রাজনীতি নতুন মোড় নিয়েছিল। জরম্নরী অবস্থার রক্তচৰুকে উপেৰা করে ওই বর্ধিতসভায় সারাদেশের তৃণমূল নেতারা তুলেছিলেন এক আওয়াজ- 'নো হাসিনা, নো ইলেকশন।' এমনকি বর্ধিতসভা চলাকালে কারাবন্দী দলের সভানেত্রীকে সম্মান জানিয়ে মঞ্চের একটি চেয়ার পর্যনত্ম খালি রাখা হয়েছিল। এর পরই রাজনীতির দৃশ্যপট পাল্টে যায়। জনতার দাবির মুখে মুক্তি পান শেখ হাসিনা। এরপর নির্বাচনে রেকর্ড তিন-চতুর্থাংশ সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন নিয়ে মহাবিজয় নিয়ে ৰমতায় এসে সরকারের এক বছর পূর্ণ করেছেন শেখ হাসিনা। তাই আজকের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী তৃণমূল নেতাদের এমন সাহসী ভূমিকার প্রশংসার পাশাপাশি তাঁদের যথাযথ মূল্যায়নের আশ্বাস দিতে পারেন বলে জানা গেছে।
ৰমতায় প্রথম বছরে চমকের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হলেও নানা প্রতিকূলতার কারণে আওয়ামী লীগ মোটা দাগের কোন সাংগঠনিক তৎপরতা শুরম্নই করতে পারেনি। ফলে গোটা দেশেই সরকার ও দলের মধ্যে ব্যবধান কমে গেছে। কিন্তু দ্বিতীয় বছরের শুরম্নতেই আজকের বর্ধিতসভার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নতুন কেন্দ্রীয় নেতাদের তৃণমূল নেতাদের পরিচয় করিয়ে দেবেন। সেই সঙ্গে এই বর্ধিতসভার পর থেকেই বিরামহীনভাবে তৃণমূল পর্যায় থেকে কেন্দ্র পর্যনত্ম দলকে শক্তিশালী ও নতুন করে ঢেলে সাজানোর প্রয়োজনীয় পরিকল্পনা ঘোষণা করবেন।
কীভাবে এবং কেমন হবে বর্ধিতসভা
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গণভবনে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনা জাতীয় পতাকা ও সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দলীয় পতাকা উত্তোলন করবেন। শুরম্নতেই নিজের সদস্য পদ নবায়নের মধ্য দিয়ে দেশজুড়ে সদস্য নবায়ন ও নতুন সদস্য পদ সংগ্রহ অভিযানের আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করবেন। এ সময় তিনি দিক-নির্দেশনামূলক উদ্বোধনী ভাষণ দেবেন। মধ্যাহ্নভোজের বিরতির পর রম্নদ্ধদ্বার সাংগঠনিক অধিবেশনে তৃণমূল নেতারা তাঁদের স্ব স্ব সাংগঠনিক জেলার লিখিত রিপোর্ট উপস্থাপন ও বক্তৃতা করবেন। সকাল থেকে শুরম্ন হয়ে বর্ধিতসভার স্থায়িত্ব সন্ধ্যা গড়িয়ে যেতে পারে বলে আয়োজকদের ধারণা।
বর্ধিতসভায় ৭২ সদস্যের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদ, ৭২টি সাংগঠনিক জেলা থেকে একজন করে জাতীয় পরিষদ সদস্য ও দলীয় সভানেত্রীর মনোনীত ২১ জন জাতীয় পরিষদ সদস্য, ১৯ সদস্যের উপদেষ্টা পরিষদ, ৬৮টি সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, নারায়ণগঞ্জ, কুমিলস্না-দণি, রংপুর ও বরিশাল মহানগরের আহবায়ক ও যুগ্ম আহবায়ক, উপজেলা ও পৌরসভার সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক; মন্ত্রিসভার সদস্য এবং দলীয় সংসদ সদস্যরা অংশ নেবেন। এ ছাড়াও বিশেষ আমন্ত্রণে দলের সকল সহযোগী সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকসহ ১৫ জন করে, ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ মিলিয়ে প্রায় ১০ হাজার প্রতিনিধি আজকের বর্ধিতসভায় উপস্থিত থাকবেন।
সূত্র জানায়, আগে সিদ্ধানত্ম ছিল ২১ সদস্যের উপদেষ্টাম-লী, মন্ত্রিসভা, দলীয় সংসদ সদস্য এবং বিশেষ আমন্ত্রিতরা গণতান্ত্রিক বিধান অনুযায়ী বর্ধিত সভার শেষ পর্বের রম্নদ্ধদ্বার বৈঠকে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন না। বঙ্গবন্ধুর হত্যার বিচারের রায় কার্যকরের পর বিশেষ পরিস্থিতিতে সিদ্ধানত্ম পরিবর্তন করে পাঁচ প্রভাবশালী নেতা আমির হোসেন আমু, আবদুর রাজ্জাক, তোফায়েল আহমেদ, আবদুল জলিল, সুরঞ্জিত সেনগুপ্তসহ উপদেষ্টাম-লী, মন্ত্রী ও দলীয় সংসদ সদস্যরা শেষ পর্বের রম্নদ্ধদ্বার সাংগঠনিক বৈঠকে উপস্থিত থাকার সুযোগ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে।
ইতোমধ্যে বর্ধিতসভার সকল প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। গণভবন চত্বরকে বর্ধিতসভার উপযোগী করে সাজিয়ে তোলা হয়েছে। সেখানে বিশাল শামিয়ানার নিচে মঞ্চ ও প্যান্ডেল নির্মাণ করা হয়েছে। মধ্যাহ্নভোজের জন্য আলাদা জায়গা ছাড়াও ৭টি বিভাগের জন্য আলাদা আলাদা ৭টি বুথ স্থাপন করা হয়েছে। এসব প্যান্ডেল থেকে বিভাগওয়ারি বর্ধিতসভার অফিসিয়াল কার্যক্রম চালানো হবে। এদিকে বর্ধিতসভা উপলৰে গণভবনের নিরাপত্তা ব্যবস্থাও জোরদার করা হয়েছে। জানা গেছে, বর্ধিতসভার মূল মঞ্চে সকল কেন্দ্রীয় নেতাকে নিয়ে বসবেন সভানেত্রী শেখ হাসিনা।
দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার এক বিবৃতিতে আমন্ত্রিত নেতাদের সকাল ৯টা থেকে গণভবনের ভেতরে স্থাপিত প্যান্ডেলে আসন গ্রহণের জন্য এবং সংশিস্নষ্টদের মোবাইল ফোন ও ব্যাগ সঙ্গে না আনার জন্য অনুরোধ জানিয়েছেন। দলের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী জানান, 'গণভবনে বর্ধিতসভার প্রথম অধিবেশনে সাংবাদিকদেরও প্রবেশাধিকার থাকবে। তবে পরিস্থিতি ভাল থাকলে এবং প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন পাওয়া গেলে পরবর্তী সাংগঠনিক অধিবেশনেও তাঁদের উপস্থিত থাকার সুযোগ দেয়া হতে পারে।'
জানা গেছে, আজকের বর্ধিতসভার পর পরই দেশজুড়ে কেন্দ্রীয় নেতাদের সাংগঠনিক সফর শুরম্ন হবে। সাত সাংগঠনিক সম্পাদকের সাংগঠনিক রিপোর্টের ভিত্তিতে এই সাংগঠনিক সফরের মাধ্যমে তৃণমূল পর্যায়ে দলকে শক্তিশালী, মেয়াদোত্তীর্ণ কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে পুনর্গঠন এবং বিদ্যমান দলীয় কোন্দল, দ্বন্দ্ব-বিবাদ নিরসনের চেষ্টা করা হবে। আর এই সদস্য সংগ্রহ অভিযানের প্রধান টার্গেটই রাখা হয়েছে দেশের ১৮ থেকে ৩০ বছরের তরম্নণ প্রজন্মের ভোটারদের।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম শুক্রবার কেন্দ্রীয় নেতাদের নিয়ে গণভবনে যান বর্ধিতসভার সর্বশেষ প্রস্তুতি দেখতে। পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে তিনি বলেন, সাত থেকে ১০ হাজার প্রতিনিধি বর্ধিতসভায় অংশ নিচ্ছেন। জাতির জন্য খুবই গুরম্নত্বপূর্ণ এই বর্ধিতসভায় অনেক গুরম্নত্বপূর্ণ সাংগঠনিক ও রাজনৈতিক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা ও সিদ্ধানত্ম নেয়া হবে। কেমন সিদ্ধানত্ম আসবে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'সিদ্ধানত্মের পর আপনাদের জানানো হবে।'
তিনি বলেন, বর্ধিতসভায় শুরম্ন হওয়া সদস্য সংগ্রহ অভিযানকে ঐতিহাসিক উলেস্নখ করে তিনি জানান, এর মাধ্যমে সংগঠনকে শক্তিশালী করার উদ্যোগ নেয়া হবে। সদস্য সংগ্রহের েেত্র নতুন প্রজন্মের ভোটার ও মহিলাদের অগ্রাধিকার দেয়া হবে। কেননা আওয়ামী লীগ মনে করে রূপকল্প-২০২১ বাসত্মবায়ন করতে হলে দলের মধ্যে নতুন প্রাণসঞ্চার করতে হবে। এ ছাড়া দলের সকল সত্মরের কমিটিতে ৩৩ শতাংশ মহিলা সদস্য অনত্মভর্ুক্তর বিষয়কে গুরম্নত্বের সঙ্গে বিবেচনা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ তৃণমূলের সংগঠন এবং এবারের বর্ধিতসভা হবে তৃণমূল নেতাদের মিলনমেলা। এ সভায় তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে বক্তব্য ও পরামর্শ দেবেন।
সৈয়দ আশরাফ আরও জানান, সদস্য সংগ্রহ অভিযান শেষে পর্যায়ক্রমে দলের ওয়ার্ড, ইউনিয়ন, থানা, উপজেলা, জেলা, মহানগর ও বিভাগীয় সম্মেলনগুলো করা হবে। এর মাধ্যমে তৃণমূল থেকে নতুন নেতৃত্ব সৃষ্টি হবে। আওয়ামী লীগকে নতুন করে প্রাণের সঞ্চার করা হবে। এরপর দলের জাতীয় সম্মেলনের বিষয়ে সিদ্ধানত্ম নেয়া হবে। এসব প্রক্রিয়া শেষ করতে কমপ েতিন বছর সময় লাগবে বলে মনত্মব্য করেন তিনি।
এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুব-উল-আলম হানিফ, নূহ-উল-আলম লেনিন, আহমদ হোসেন, বিএম মোজাম্মেল হক, আফম বাহাউদ্দিন নাছিম, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, এ্যাডভোকেট আফজাল হোসেন, মৃণাল কানত্মি দাশ, অসীম কুমার উকিল, একেএম রহমতউলস্নাহ, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
No comments