কূটনৈতিক শিষ্টাচার
বিশ্বে স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা ও আচরণকালে সর্বদা কূটনৈতিক শিষ্টাচার মেনে চলবে এটাই কাক্সিক্ষত। ছোট-বড়, ক্ষমতাবান বা দুর্বল,
ধনী কিংবা গরিব রাষ্ট্র নিজেদের মধ্যকার সম্পর্ক নির্ধারণ করতে গিয়ে একে অপরের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন করবে এবং একে অপরের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করবে না এসবই কূটনৈতিক শিষ্টাচারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে কূটনৈতিক নিয়মনীতি বলে একটি কথা আছে। স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রগুলোর কূটনৈতিক নিয়মনীতি মেনে চলা এক ধরনের বাধ্যবাধকতা। বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বেশিরভাগ রাষ্ট্র কূটনৈতিক নিয়মনীতি মেনে চলে। স্বাধীনতার পর থেকে আজ অবধি বাংলাদেশ কূটনৈতিক নিয়মনীতি লঙ্ঘন করেছে এমনটা কখনও শোনা যায়নি। কিন্তু কখনও কখনও আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে অনাকাক্সিক্ষত বিদেশী হস্তক্ষেপের কারণে বাংলাদেশ সরকার ও জনগণ বিব্রতকর অবস্থায় পড়েছে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সহযোগিতামূলক সম্পর্ক রয়েছে এমন কোন রাষ্ট্র যদি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করে তবে তা খুব বিব্রতকর ও অনাকাক্সিক্ষত। কিছু দিন আগে তুরস্ক সরকার বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া বিষয়ে এ ধরনের একটি অনাকাক্সিক্ষত আচরণ করেছে যা সম্পূর্ণরূপে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বহির্ভূত। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল যুদ্ধাপরাধী গোলাম আযমের বিচার সম্পর্কীয় বিষয়ে অনুরোধ জানিয়ে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতিকে একটি চিঠি পাঠিয়েছেন। ঠিক একই সময় ১৪ সদস্যবিশিষ্ট একটি তুর্কী এনজিও প্রতিনিধি দল বাংলাদেশে পাঁচদিনের সফরে এসেছিলেন। রাজধানীর শাহজালাল বিমানবন্দর থেকে তারা ‘অন এ্যারাইভাল ভিসা’ নিয়ে ঢাকায় কর্মব্যস্ত সময় অতিবাহিত করেন। তারা এ সময় বাংলাদেশের যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া সম্পর্কে খোঁজখবর নেন এবং আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল পরিদর্শন করেন। একটি বিদেশী রাষ্ট্রের এসব কর্মকা-ের প্রথম পর্যায়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় হতবাক হলেও পরবর্তীকালে তারা এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেয়।সবারই প্রত্যাশা, বাংলাদেশের সরকার ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় যদি সতর্ক থাকে, তবে কোন রাষ্ট্রের পক্ষেই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করা সম্ভব নয়। কারণ সমঅধিকারের ভিত্তিতে পৃথিবীতে রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক বজায় থাকে। সম্মানজনকভাবে এ সম্পর্ক বজায় রাখার দায়িত্ব সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রের। এরপর আশঙ্কা করা হয়েছিল, সৌদি আরবসহ আরও দু’একটি রাষ্ট্র বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে প্রভাব বিস্তর করতে পারে। তবে বাংলাদেশ সফররত সৌদি আরবের মসলিস এ শূরার স্পীকার ড. আবদুল্লাহ বিন মোহাম্মদ বিন ইব্রাহীম আল শেখের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর বাংলদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপু মনি সাংবাদিকদের বলেছেন, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধে বাংলাদেশের ওপর সৌদি সরকারের কোন চাপ নেই।
এ খবরই বাংলাদেশকে অনেকাংশেই ভারমুক্ত করেছে। কারণ সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যে লাখ লাখ প্রবাসী বাংলাদেশী কর্মরত রয়েছেন। এছাড়া অর্থনৈতিক ও ধর্মীয় দিক দিয়ে সৌদি আরবের সঙ্গে বাংলাদেশে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক বিদ্যমান। তবে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বন্ধের লক্ষ্যে জামায়াত ইসলামী যে সৌদি আরবসহ অন্য কিছু রাষ্ট্রে সঙ্গে যোগাযোগ করেছে তা পত্র পত্রিকায় এসেছে। আমরা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে একটি স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র। আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপের অধিকার কারও নেই। বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক বজায় রাখার ক্ষেত্রে প্রতিটি রাষ্ট্রকে কূটনৈতিক শিষ্টাচার বজায় রাখতে হবে।
No comments