বাফুফের ‘অভিনব’ চুক্তি
সামির শাকির চলে যান কাঠমান্ডু বিমানবন্দর থেকে। ১৯৯৯ সাফ গেমসে সোনা জিতিয়ে ইরাকি কোচ আর ঢাকায় ফেরেননি। রবার্ট রুবচিচ রাতের আঁধারে ঢাকা ছাড়েন।
ক্রোয়েশিয়ান কোচ যেন ‘পালিয়ে’ বেঁচেছেন! দুটি ছোট উদাহরণ। কিন্তু এতেই বেরিয়ে পড়ছে বিদেশি ফুটবল কোচদের সঙ্গে বাফুফের অপেশাদার চুক্তির আসল চেহারা। এত দিন বিদেশি কোচরা ঢাকায় এসেই পরদিন চুক্তি করে ফেলতেন। দু-একজন বাদে অন্যরা এখানে কাজ পেয়েই যেন বর্তে যেতেন। এভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত কোচের সঙ্গে বাফুফের সম্পর্কটা তেতো হয়ে উঠত।সেই অভিজ্ঞতা আর ফিরে আসার সম্ভাবনা নেই। পরশু দুই ডাচ কোচ আর বাফুফের মধ্যে হওয়া সমঝোতা স্মারকে সবই লিখিতভাবে বলা আছে। ফিফার নিয়ম-কানুন মেনেই হয়েছে এই চুক্তি। এটাই এ যুগের নিয়ম। বাফুফে এত দিন এর সঙ্গে পরিচিত ছিল না। সেই পরিচয়টাই এবার করিয়ে দিলেন লোডভিক ডি ক্রুইফ ও রেনে কোস্টার।
চুক্তিতে এমন কিছু ধারা আছে, যা বাফুফের মতো একটা অসচ্ছল এবং অনগ্রসর ফেডারেশনের জন্য বিরাট ঝুঁকিরও। জেনেবুঝেই সেই ঝুঁকিটা নিয়েছেন বাফুফের সভাপতি কাজী সালাউদ্দিন এবং তাঁর সহকর্মীরা। যেমন চুক্তিতে আছে কোচকে যদি অগ্রহণযোগ্য কারণে বরখাস্ত করে বাফুফে, তাহলে দুই বছর মেয়াদের বাকি সময়টার বেতন দিতে বাধ্য থাকবে ফেডারেশন। তবে বরখাস্ত করার কারণটা গ্রহণযোগ্য হলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। প্রশ্ন হচ্ছে কারণটা গ্রহণযোগ্য না অগ্রহণযোগ্য, কে ঠিক করবে? উত্তর—কোচ অভিযোগ করলে এর সমাধান আসবে ফিফা থেকে।
আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ধারা—কোচ মেয়াদ শেষের এক দিন আগেও হল্যান্ডের বাইরে অন্য কোথাও চাকরি নিলে বাফুফেকে প্রায় এক কোটি টাকা দিয়ে যেতে বাধ্য থাকবেন। তবে যেকোনো সময়ই বাংলাদেশের চাকরি ছেড়ে হল্যান্ডে চাকরি নিলে ক্ষতিপূরণ দিতে হবে না। এটা কেন? বাফুফের জাতীয় দল কমিটির প্রধান কাজী নাবিল আহমেদ বলছেন, ‘আমরা মনে করি না এখান থেকে চাকরি ছেড়ে কোচ হল্যান্ডে চাকরি নেবেন। কারণ, হল্যান্ডের চেয়ে বেশি অর্থই পাচ্ছেন এখানে। কাজেই এখান থেকে অন্যত্র গেলে সেটা হল্যান্ডের বাইরেই হবে। সে ক্ষেত্রে আমরা বড় অঙ্কের ক্ষতিপূরণ পাব।’
এটি তাই অসম চুক্তি নয়। কোচকে বাফুফে শুধু দিয়েই যাবে, কিছু আদায় করতে পারবে না, তা হচ্ছে না এবার। আগে কোচের চাহিদা মেটানোর ব্যাপারটাই মূল আলোচনায় থাকত। অন্য পক্ষ মানে ফেডারেশন কী পাবে তা দেখা হয়নি। এই চুক্তি সেদিক থেকেও পুরোপুরি ব্যতিক্রম।
নাবিলের ভাষায়, ‘আমরা একটা অভিনব চুক্তিই করেছি।’ জাতীয় দল কমিটির সদস্য আনোয়ারুল হকের (হেলাল) কণ্ঠেও উচ্ছ্বাস, ‘দারুণ চুক্তি হয়েছে। সব আগেই ঠিক। পরে আর ঝামেলার সুযোগ নেই।’ আগে বিদেশি কোচদের সঙ্গে চুক্তিতে সবকিছু লেখা থাকত না। এবার প্রতিটি দাঁড়ি-কমা দুই পক্ষ জেনেবুঝে বসিয়েছে।
এরই মধ্যে হয়েছে দর-কষাকষি। কোচ থাকার জন্য বাড়ি চেয়েছিলেন, বাফুফে দিচ্ছে ফ্ল্যাট। তাঁর চাওয়া দামি গাড়ি, বাফুফে দামি গাড়ি দেবে না। সন্তানদের স্কুলের বেতন চেয়েছেন, বাফুফে তাতেও রাজি হয়নি। তবে কোচের পুরো পরিবারকে স্বাস্থ্যবিমা দেওয়া হচ্ছে। প্রথমে পাবেন পাঁচটি বিমান টিকিট, এরপর বছরে আরও ছয়টি। অন্যদিকে কোচের জন্য থাকছে বড় নিষেধাজ্ঞা। ফেডারেশনের বিরুদ্ধে কিছু বললে তা হবে শাস্তিযোগ্য। চাইলেই সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলতে পারবেন না। ফেডারেশনের অনুমতি লাগবে।
চুক্তি করার ধকলটা তো সামলানো গেছে। এরপর? এই কোচদ্বয়ের সঙ্গে জীবনের অন্যতম কঠিন এক ‘ম্যাচ’ খেলার পর সালাউদ্দিন বলছেন, ‘আসল চ্যালেঞ্জটা তো সামনে।’ এটাই আসলে সব কথার শেষ কথা।
No comments