কোটা ব্যবস্থা-বাংলাদেশ এখন অনিশ্চয়তা ও গুজবের দেশ by বদরুদ্দীন উমর
একটা দেশে যখন নানা রকম গুজব ছড়াতে থাকে তখন বুঝতে হবে যে, সে দেশের অবস্থা ভালো নয়। বাংলাদেশের অবস্থা যে ভালো নয় এটা বোঝার জন্য গুজবের কোনো প্রয়োজন নেই। তবু গুজব যখন ছড়াচ্ছে তখন এর তাৎপর্য অগ্রাহ্য করা যায় না।
যখনই কোনো গুজব ছড়ায় তখন অবস্থা খারাপ হওয়ার কারণেই সেটা দেখা যায়। দ্বিতীয়ত, গুজবের অন্য একটি দিক হলো, অবস্থা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য বা সত্য জানার উপায় না থাকা। এ কারণে গুজব ছড়ানো বন্ধ করার সব থেকে কার্যকর উপায় হচ্ছে কোনো অবস্থা বা ঘটনা সম্পর্কে প্রকৃত তথ্য জনসমক্ষে উপস্থাপিত করা। বাংলাদেশের কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়েই এটা দেখা যায় না। কাজেই নানা ধরনের গুজব বাংলাদেশে প্রায় সবসময়ই দেখা যায়।
বাংলাদেশ এখন পরিণত হয়েছে চক্রান্তের এক উর্বর ক্ষেত্রে। রাজনীতি, শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতিচর্চা পর্যন্ত প্রত্যেকটি এলাকাতেই এখন এত রকম চক্রান্ত চলছে, যাতে কোনো প্রক্রিয়াই তার স্বাভাবিক গতিতে অগ্রসর হতে পারছে না। তাছাড়া চক্রান্তের বিষয়টি এত বহুল পরিচিত ও প্রচারিত যে, যে কোনো বিষয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হলেই সরকার, বিরোধী দল চক্রান্তের চিন্তা করে এবং অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে চক্রান্তের কথা বলে।
এ কাজটিই এখন করা হচ্ছে তাজরীন গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লেগে কয়েকশ' শ্রমিক হতাহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। সরকারি এক তদন্ত কমিটি তার রিপোর্টে বলেছে যে, এই অগি্নকাণ্ড একটি পরিকল্পিত অন্তর্ঘাতমূলক ব্যাপার। কেন তারা এটা বলছে, তার কিছু প্রমাণও তারা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কারা এ কাজ করেছে তার হদিস বের করা তাদের পক্ষে তদন্তের মাধ্যমে সম্ভব হয়নি। তদন্ত রিপোর্টে কারখানা মালিকের কিছু গাফিলতির কথা বলা হলেও তাকে মূল কারণ হিসেবে না বলে তারা বলছেন, এই গাফিলতি একটা ব্যাপার হলেও এটা ঘটার পেছনে অন্তর্ঘাতমূলক চক্রান্ত আছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, এমন এক শক্তি এই কাজ চক্রান্তমূলকভাবে করছে যারা বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজেরা লাভবান হতে চাইছে। এর থেকে এটা বোঝা যায় যে, প্রধানমন্ত্রী এই অন্তর্ঘাতমূলক কাজকে মালিক পক্ষের কাজ না বলে অন্য কোনো স্বার্থের প্রতি ইঙ্গিত করছেন। কিন্তু এই স্বার্থ কার এর কোনো হদিস তার বক্তব্য থেকেও পাওয়া যায় না।
তাজরীন গার্মেন্ট কারখানায় অগি্নকাণ্ডের জন্য যে মালিকদের সর্বোচ্চ মুনাফার তাগিদ দায়ী এবং এই তাগিদের কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো খরচ না করা ও ব্যবস্থা না রাখাই যে এর মূল কারণ, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কমিটির লোকেরা বিবেচনা করলে অন্তর্ঘাতমূলক চক্রান্ত নিয়ে তাদের মাথা ঘামাতে হতো না। কিন্তু এই সত্যটি যথাসম্ভব আড়াল রাখার চেষ্টার কারণেই নাশকতার বা অন্তর্ঘাতের কথা বলে এ বিষয়ে তারা নানা গুজবের শর্ত তৈরি করেছেন। এ পর্যন্ত যা প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে তাজরীন গার্মেন্ট কারখানার মালিককে গ্রেফতার করে তার বিচারের ব্যবস্থা করলে বাংলাদেশের শুধু গার্মেন্ট কারখানায় নয়, সাধারণভাবে শিল্পের ইতিহাসে সব থেকে ধ্বংসাত্মক অগি্নকাণ্ড নিয়ে এত রকম কথাবার্তা ও গুজবের সৃষ্টি হতো না। সত্য ঘটনা এভাবে ধামাচাপা পড়ত না।
এ তো গেল নানা চলতি গুজবের মধ্যে একটি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও গুজবের শেষ নেই। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, সমগ্র পরিস্থিতির মধ্যে এখন এক বিরাট অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে এবং এ ধরনের অনিশ্চয়তা হলো গুজবের জন্মভূমি। আওয়ামী লীগ বলেই যাচ্ছে যে, আগামী নির্বাচন তাদের সরকারের অধীনেই হবে। অন্যদিকে বিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোট বলে যাচ্ছে যে, কোনো একদলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করতে দেবে না। নির্বাচন করতে হবে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, যে নামেই সে সরকারকে অভিহিত করা হোক। এ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের যুদ্ধংদেহী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন সম্পর্কেই সংশয় দেখা দিয়েছে এবং এই সংশয় থেকে জন্ম নিচ্ছে হরেক রকম গুজব। এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০০৭ সালের মতো আবার একটি বেনামি সরকারের কথা। গতবার আমলা ধরনের লোকজন সামনে রেখে সরকার গঠন করলেও এবার রাজনৈতিক লোক দিয়েই এই সরকার গঠনের গুজব ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের বাইরে অবস্থিত কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গ্রুপ যেভাবে এখন নতুন জোট তৈরির কাজে নিযুক্ত হয়েছে তার থেকে এই গুজব আরও জোরদার হচ্ছে। রাজনৈতিক লোকদের সামনে রেখে যদি সামরিক কর্তৃপক্ষ বেনামি শাসন চালাতে পারে, তাহলে সেটাই তাদের পক্ষে সব থেকে সুবিধাজনক।
কিন্তু এ ব্যাপারে এটাই একমাত্র গুজব নয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির শত্রুতামূলক সম্পর্ক সত্ত্বেও এবং স্বেচ্ছায় তারা কোনো সমঝোতায় উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও মার্কিনসহ অন্য কয়েকটি দেশের চাপের মুখে বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে একটা সমঝোতা সরকারের ব্যাপারেও গুজব আছে। আবার গুজব আছে কোনো ধরনের সমাধান না হওয়ার এবং সে পরিস্থিতিতে দেশের অরাজক পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করে জনজীবন বিপজ্জনকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন দেশি-বিদেশি এত প্রকার চক্রান্ত চলছে যাতে ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রায় এক অসম্ভব ব্যাপার।
এই চক্রান্ত যে কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা আজ ১৮ ডিসেম্বর বামপন্থিদের ডাকা এক হরতাল থেকেও বোঝা যায়। বাহ্যত এই হরতাল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ইত্যাদির বিরুদ্ধে হলেও এটা যে আসলে একটি সরকারি হরতাল এতে সন্দেহ নেই। সরকারের নৌচলাচল মন্ত্রী ও নৌশ্রমিকদের এক সরকারি সংগঠনের সভাপতি এই হরতালে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন। তাছাড়া এটা সফল করার জন্য সরকারও বিআরটিসির কোনো বাস আজ রাস্তায় নামায়নি। পুলিশও হরতাল সফল করার জন্য তৎপর রয়েছে। তারা নিজেরাই ব্যারিকেড দিয়ে এবং অন্যান্য উপায়ে চলমান গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এই 'বিজয়ের মাসে' শুধু বিরোধী দলই হরতাল করছে না, সরকার নিজেও বেনামিতে হরতাল ডেকে এটা সফল করার জন্য সব রকম কলকাঠিই নাড়ছে। এই হরতাল বেশ ভালোভাবেই সরকারের সঙ্গে কিছু তথাকথিত বামপন্থির চক্রান্তমূলক যোগাযোগের বিষয়টিও বেশ ভালোভাবেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এর থেকেও যে নানা প্রকার গুজব জন্মলাভ করবে এতে আর সন্দেহ কী?
১৮.১২.২০১২
বদরুদ্দীন উমর :সভাপতি
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
বাংলাদেশ এখন পরিণত হয়েছে চক্রান্তের এক উর্বর ক্ষেত্রে। রাজনীতি, শিল্প-বাণিজ্য, শিক্ষা, স্বাস্থ্য থেকে নিয়ে সংস্কৃতিচর্চা পর্যন্ত প্রত্যেকটি এলাকাতেই এখন এত রকম চক্রান্ত চলছে, যাতে কোনো প্রক্রিয়াই তার স্বাভাবিক গতিতে অগ্রসর হতে পারছে না। তাছাড়া চক্রান্তের বিষয়টি এত বহুল পরিচিত ও প্রচারিত যে, যে কোনো বিষয়ে অসুবিধার সম্মুখীন হলেই সরকার, বিরোধী দল চক্রান্তের চিন্তা করে এবং অনেক সময় উদ্দেশ্যমূলকভাবে চক্রান্তের কথা বলে।
এ কাজটিই এখন করা হচ্ছে তাজরীন গার্মেন্ট কারখানায় আগুন লেগে কয়েকশ' শ্রমিক হতাহত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে। সরকারি এক তদন্ত কমিটি তার রিপোর্টে বলেছে যে, এই অগি্নকাণ্ড একটি পরিকল্পিত অন্তর্ঘাতমূলক ব্যাপার। কেন তারা এটা বলছে, তার কিছু প্রমাণও তারা উল্লেখ করেছেন। কিন্তু কারা এ কাজ করেছে তার হদিস বের করা তাদের পক্ষে তদন্তের মাধ্যমে সম্ভব হয়নি। তদন্ত রিপোর্টে কারখানা মালিকের কিছু গাফিলতির কথা বলা হলেও তাকে মূল কারণ হিসেবে না বলে তারা বলছেন, এই গাফিলতি একটা ব্যাপার হলেও এটা ঘটার পেছনে অন্তর্ঘাতমূলক চক্রান্ত আছে। প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেছেন, এমন এক শক্তি এই কাজ চক্রান্তমূলকভাবে করছে যারা বাংলাদেশের গার্মেন্ট শিল্পকে ক্ষতিগ্রস্ত করে নিজেরা লাভবান হতে চাইছে। এর থেকে এটা বোঝা যায় যে, প্রধানমন্ত্রী এই অন্তর্ঘাতমূলক কাজকে মালিক পক্ষের কাজ না বলে অন্য কোনো স্বার্থের প্রতি ইঙ্গিত করছেন। কিন্তু এই স্বার্থ কার এর কোনো হদিস তার বক্তব্য থেকেও পাওয়া যায় না।
তাজরীন গার্মেন্ট কারখানায় অগি্নকাণ্ডের জন্য যে মালিকদের সর্বোচ্চ মুনাফার তাগিদ দায়ী এবং এই তাগিদের কারণে শ্রমিকদের নিরাপত্তার জন্য কোনো খরচ না করা ও ব্যবস্থা না রাখাই যে এর মূল কারণ, এ বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত কমিটির লোকেরা বিবেচনা করলে অন্তর্ঘাতমূলক চক্রান্ত নিয়ে তাদের মাথা ঘামাতে হতো না। কিন্তু এই সত্যটি যথাসম্ভব আড়াল রাখার চেষ্টার কারণেই নাশকতার বা অন্তর্ঘাতের কথা বলে এ বিষয়ে তারা নানা গুজবের শর্ত তৈরি করেছেন। এ পর্যন্ত যা প্রমাণ পাওয়া গেছে তাতে তাজরীন গার্মেন্ট কারখানার মালিককে গ্রেফতার করে তার বিচারের ব্যবস্থা করলে বাংলাদেশের শুধু গার্মেন্ট কারখানায় নয়, সাধারণভাবে শিল্পের ইতিহাসে সব থেকে ধ্বংসাত্মক অগি্নকাণ্ড নিয়ে এত রকম কথাবার্তা ও গুজবের সৃষ্টি হতো না। সত্য ঘটনা এভাবে ধামাচাপা পড়ত না।
এ তো গেল নানা চলতি গুজবের মধ্যে একটি। বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়েও গুজবের শেষ নেই। এটা অস্বীকার করার কিছু নেই যে, সমগ্র পরিস্থিতির মধ্যে এখন এক বিরাট অনিশ্চয়তা বিরাজ করছে এবং এ ধরনের অনিশ্চয়তা হলো গুজবের জন্মভূমি। আওয়ামী লীগ বলেই যাচ্ছে যে, আগামী নির্বাচন তাদের সরকারের অধীনেই হবে। অন্যদিকে বিরোধী বিএনপি-জামায়াত জোট বলে যাচ্ছে যে, কোনো একদলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচন করতে দেবে না। নির্বাচন করতে হবে একটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে, যে নামেই সে সরকারকে অভিহিত করা হোক। এ পরিস্থিতিতে উভয় পক্ষের যুদ্ধংদেহী অবস্থানের পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন সম্পর্কেই সংশয় দেখা দিয়েছে এবং এই সংশয় থেকে জন্ম নিচ্ছে হরেক রকম গুজব। এর মধ্যে সব থেকে উল্লেখযোগ্য হলো, ২০০৭ সালের মতো আবার একটি বেনামি সরকারের কথা। গতবার আমলা ধরনের লোকজন সামনে রেখে সরকার গঠন করলেও এবার রাজনৈতিক লোক দিয়েই এই সরকার গঠনের গুজব ছড়াচ্ছে। আওয়ামী লীগের বাইরে অবস্থিত কিছু রাজনৈতিক ব্যক্তি ও গ্রুপ যেভাবে এখন নতুন জোট তৈরির কাজে নিযুক্ত হয়েছে তার থেকে এই গুজব আরও জোরদার হচ্ছে। রাজনৈতিক লোকদের সামনে রেখে যদি সামরিক কর্তৃপক্ষ বেনামি শাসন চালাতে পারে, তাহলে সেটাই তাদের পক্ষে সব থেকে সুবিধাজনক।
কিন্তু এ ব্যাপারে এটাই একমাত্র গুজব নয়। আওয়ামী লীগ-বিএনপির শত্রুতামূলক সম্পর্ক সত্ত্বেও এবং স্বেচ্ছায় তারা কোনো সমঝোতায় উপনীত হওয়ার সম্ভাবনা না থাকলেও মার্কিনসহ অন্য কয়েকটি দেশের চাপের মুখে বিদ্যমান অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে একটা সমঝোতা সরকারের ব্যাপারেও গুজব আছে। আবার গুজব আছে কোনো ধরনের সমাধান না হওয়ার এবং সে পরিস্থিতিতে দেশের অরাজক পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করে জনজীবন বিপজ্জনকভাবে বিপর্যস্ত হওয়ার। আসলে বাংলাদেশের রাজনীতিতে এখন দেশি-বিদেশি এত প্রকার চক্রান্ত চলছে যাতে ভবিষ্যতে কী হতে যাচ্ছে সে বিষয়ে পর্যালোচনা, বিশ্লেষণ ইত্যাদির মাধ্যমে কোনো স্থির সিদ্ধান্তে উপনীত হওয়া প্রায় এক অসম্ভব ব্যাপার।
এই চক্রান্ত যে কোন পর্যায়ে এসে দাঁড়িয়েছে সেটা আজ ১৮ ডিসেম্বর বামপন্থিদের ডাকা এক হরতাল থেকেও বোঝা যায়। বাহ্যত এই হরতাল জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবির নিষিদ্ধ করা এবং যুদ্ধাপরাধীদের বিচার বানচাল ইত্যাদির বিরুদ্ধে হলেও এটা যে আসলে একটি সরকারি হরতাল এতে সন্দেহ নেই। সরকারের নৌচলাচল মন্ত্রী ও নৌশ্রমিকদের এক সরকারি সংগঠনের সভাপতি এই হরতালে প্রকাশ্য সমর্থন দিয়েছেন। তাছাড়া এটা সফল করার জন্য সরকারও বিআরটিসির কোনো বাস আজ রাস্তায় নামায়নি। পুলিশও হরতাল সফল করার জন্য তৎপর রয়েছে। তারা নিজেরাই ব্যারিকেড দিয়ে এবং অন্যান্য উপায়ে চলমান গাড়ি ঘুরিয়ে দিচ্ছে। কাজেই এই 'বিজয়ের মাসে' শুধু বিরোধী দলই হরতাল করছে না, সরকার নিজেও বেনামিতে হরতাল ডেকে এটা সফল করার জন্য সব রকম কলকাঠিই নাড়ছে। এই হরতাল বেশ ভালোভাবেই সরকারের সঙ্গে কিছু তথাকথিত বামপন্থির চক্রান্তমূলক যোগাযোগের বিষয়টিও বেশ ভালোভাবেই চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছে। এর থেকেও যে নানা প্রকার গুজব জন্মলাভ করবে এতে আর সন্দেহ কী?
১৮.১২.২০১২
বদরুদ্দীন উমর :সভাপতি
জাতীয় মুক্তি কাউন্সিল
No comments