পবিত্র কোরআনের আলো-নূহ (আ.)-এর অবাধ্য পুত্র কিনআন শেষ পর্যন্তও সুপথের সন্ধান পেল না
৪০. হ্বাত্তা- ইযা- জা-আ আমরুনা- ওয়া ফা-রাত্তান্নূরু ক্বুলনা ইহ্মিল্ ফীহা মিন কুল্লিন যাওজাইনিছ্ নাইনি ওয়া আহ্লাকা ইল্লা মান ছাবাক্বা আ'লাইহিল ক্বাওলু ওয়া মান আ-মানা; ওয়া মা- আ-মানা মাআ'হূ ইল্লা- ক্বালীল; ৪১. ওয়া ক্বা-লার্কাবূ ফীহা বিছ্মিল্লা-হি মাজরি-হা- ওয়া মুরছা-হা; ইন্না রাব্বী লাগাফূরুর্ রাহীম।
৪২. ওয়া হিয়া তাজরী বিহিম ফী মাওজিন কালজিবা-লি ওয়া না-তা- নূহুব্নাহূ ওয়া কা-না ফী মা'যিলিন ইয়্যা-বুনাইয়্যার্কাম্ মাআ'না- ওয়া লা- তাকুম্ মাআ'ল কা-ফিরীন।
৪৩. ক্বা-লা ছা-ওয়ী ইলা- জাবালিন ইয়্যা'ছি্বমুনী মিনাল মা-য়ি; ক্বা-লা লা- আ'-ছি্বমাল ইয়াওমা মিন আম্রিল্লা-হি ইল্লা- মার্ রাহি্বমা ওয়া হ্বা-লা বাইনাহুমাল মাওজু ফাকা-না মিনাল মুগ্রাক্বীন।
[সুরা : হুদ, আয়াত : ৪০-৪৩]
অনুবাদ : ৪০. অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুল্লি ফেটে পড়ল, তখন আমি নূহকে বললাম, এই নৌকায় সব ধরনের প্রাণী থেকে এক যুগল (নারী-পুরুষ) বা এক জোড়া করে তুলে নিন আর আপনার পরিবারবর্গকে তুলুন। অবশ্য যাদের সম্পর্কে আগে বলা হলো, অর্থাৎ যারা অবাধ্যতার কারণে ডুবে মরবে তারা ছাড়া অন্যদের তুলুন এবং যারা ইমান এনেছে তাদের (সবাইকে) তুলুন। বস্তুত অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সঙ্গে ইমান এনেছিল।
৪১. নবী নূহ বললেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে এ নৌকায় আরোহণ করো। এটা চালাও এবং নোঙর করাও। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৪২. সে নৌকা পাহাড় সমান তরঙ্গরাশির মধ্যে তাদের নিয়ে বয়ে চলছিল। নূহ তাঁর যে পুত্র পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তাকে ডেকে বললেন, বৎস! আমাদের সঙ্গে এসে নৌকায় আরোহণ করো। কাফিরদের সঙ্গে থেকো না। ৪৩. নূহের সেই অবাধ্য পুত্র বলল, আমি এখনই এমন এক পাহাড়ে অবস্থান নেব, যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। নূহ বললেন, আজ আল্লাহর হুকুম থেকে কাউকে রক্ষা করার কেউ নেই কেবল সেই ব্যক্তি ছাড়া, যার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন। এরপর ঢেউ এসে তাদের (পিতার কাছ থেকে পুত্রকে) বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সেও নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
ব্যাখ্যা : ৪০ নম্বর আয়াতে প্লাবনের সূচনা কিভাবে হলো সে প্রসঙ্গে তান্নুর ফেটে পড়ার কথা বলা হয়েছে। আরবি ভাষায় তান্নুর ভূপৃষ্ঠকেও বলা হয় এবং রুটি তৈরির চুলাকেও বলা হয়। অনেক তাফসিরকারের মতে, প্লাবনের সূচনা হয়েছিল এভাবে যে তান্নুুর ফেটে সবেগে পানি বের হতে লাগল, এরপর আর কিছুতেই তা বন্ধ হলো না। কোনো কোনো তাফসিরকার আবার তান্নুুরের অন্য অর্থ গ্রহণ করেছেন। তাঁরা ব্যাখ্যা করে বলেন যে ভূপৃষ্ঠ ফেটে পানি বের হতে শুরু করল এবং অতি দ্রুত তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। সেই সঙ্গে আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হতে থাকল। এই আয়াতেই সব ধরনের প্রাণী থেকে এক যুগল তথা নারী-পুরুষ এক জোড়া করে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে সম্ভবত গৃহপালিত জীবজন্তু বা পশুপাখির কথাই বলা হয়েছে। পৃথিবীর সব জীবজন্তু ও পশুপাখি এখানে আলোচনার বিষয় নয়। তা ছাড়া নূহ (আ.)-এর আমলের যে প্লাবনের কথা এখানে বলা হয়েছে তা-ও নয়। কারণ হজরত নূহ (আ.) তাঁর কওমের নবী ছিলেন, সমগ্র মানবজাতির নবী ছিলেন না। আয়াতগুলোতে তাঁর কওমের নবী বলেই বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং তাঁর কওম অধ্যুষিত অঞ্চলের মধ্যেই এই প্লাবন সীমাবদ্ধ থাকার কথা। যারা নূহ (আ.)-এর হেদায়েতের আহ্বান পায়নি বা তা সরাসরি অস্বীকার করেনি, তাদের ওপর আল্লাহর আম-শাস্তি আল্লাহর বিধান দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
৪২ নম্বর আয়াতে নূহ (আ.)-এর এক অবাধ্য পুত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তাঁর মুমিন ও অনুগত পুত্র-পরিজনসহ নৌকায় সওয়ার হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এক পুত্র 'কিনআন' ছিল ভেতরে ভেতরে কাফিরদের দলভুক্ত। নূহ (আ.) তাকে নৌকায় ওঠার জন্য আহ্বান জানালেন এবং কাফিরদের সঙ্গ পরিত্যাগ করতে বললেন। তিনি আশা করেছিলেন, তাঁর সেই পুত্র শেষ পর্যন্ত ইমান আনবে এবং আল্লাহ তাকে ইমানদার হিসেবে কবুল করে নেবেন। কিন্তু অবাধ্য 'কিনআন' নিজেই নৌকায় উঠতে অস্বীকৃতি জানাল এই ভেবে যে এ প্লাবন তেমন কিছু নয়। এভাবেই সে কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে থাকল এবং তাদের সঙ্গে ডুবে মরল। অবাধ্য পুত্রকে সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য পিতার যে আকুতি, তা এখানে ফুটে উঠেছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
৪৩. ক্বা-লা ছা-ওয়ী ইলা- জাবালিন ইয়্যা'ছি্বমুনী মিনাল মা-য়ি; ক্বা-লা লা- আ'-ছি্বমাল ইয়াওমা মিন আম্রিল্লা-হি ইল্লা- মার্ রাহি্বমা ওয়া হ্বা-লা বাইনাহুমাল মাওজু ফাকা-না মিনাল মুগ্রাক্বীন।
[সুরা : হুদ, আয়াত : ৪০-৪৩]
অনুবাদ : ৪০. অবশেষে যখন আমার হুকুম এসে গেল এবং চুল্লি ফেটে পড়ল, তখন আমি নূহকে বললাম, এই নৌকায় সব ধরনের প্রাণী থেকে এক যুগল (নারী-পুরুষ) বা এক জোড়া করে তুলে নিন আর আপনার পরিবারবর্গকে তুলুন। অবশ্য যাদের সম্পর্কে আগে বলা হলো, অর্থাৎ যারা অবাধ্যতার কারণে ডুবে মরবে তারা ছাড়া অন্যদের তুলুন এবং যারা ইমান এনেছে তাদের (সবাইকে) তুলুন। বস্তুত অল্পসংখ্যক লোকই তাঁর সঙ্গে ইমান এনেছিল।
৪১. নবী নূহ বললেন, তোমরা আল্লাহর নাম নিয়ে এ নৌকায় আরোহণ করো। এটা চালাও এবং নোঙর করাও। নিশ্চয়ই আমার প্রতিপালক অতি ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।
৪২. সে নৌকা পাহাড় সমান তরঙ্গরাশির মধ্যে তাদের নিয়ে বয়ে চলছিল। নূহ তাঁর যে পুত্র পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল, তাকে ডেকে বললেন, বৎস! আমাদের সঙ্গে এসে নৌকায় আরোহণ করো। কাফিরদের সঙ্গে থেকো না। ৪৩. নূহের সেই অবাধ্য পুত্র বলল, আমি এখনই এমন এক পাহাড়ে অবস্থান নেব, যা আমাকে পানি থেকে রক্ষা করবে। নূহ বললেন, আজ আল্লাহর হুকুম থেকে কাউকে রক্ষা করার কেউ নেই কেবল সেই ব্যক্তি ছাড়া, যার প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন। এরপর ঢেউ এসে তাদের (পিতার কাছ থেকে পুত্রকে) বিচ্ছিন্ন করে দিল এবং সেও নিমজ্জিতদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে গেল।
ব্যাখ্যা : ৪০ নম্বর আয়াতে প্লাবনের সূচনা কিভাবে হলো সে প্রসঙ্গে তান্নুর ফেটে পড়ার কথা বলা হয়েছে। আরবি ভাষায় তান্নুর ভূপৃষ্ঠকেও বলা হয় এবং রুটি তৈরির চুলাকেও বলা হয়। অনেক তাফসিরকারের মতে, প্লাবনের সূচনা হয়েছিল এভাবে যে তান্নুুর ফেটে সবেগে পানি বের হতে লাগল, এরপর আর কিছুতেই তা বন্ধ হলো না। কোনো কোনো তাফসিরকার আবার তান্নুুরের অন্য অর্থ গ্রহণ করেছেন। তাঁরা ব্যাখ্যা করে বলেন যে ভূপৃষ্ঠ ফেটে পানি বের হতে শুরু করল এবং অতি দ্রুত তা সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ল। সেই সঙ্গে আকাশ থেকে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হতে থাকল। এই আয়াতেই সব ধরনের প্রাণী থেকে এক যুগল তথা নারী-পুরুষ এক জোড়া করে তুলে নেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এখানে সম্ভবত গৃহপালিত জীবজন্তু বা পশুপাখির কথাই বলা হয়েছে। পৃথিবীর সব জীবজন্তু ও পশুপাখি এখানে আলোচনার বিষয় নয়। তা ছাড়া নূহ (আ.)-এর আমলের যে প্লাবনের কথা এখানে বলা হয়েছে তা-ও নয়। কারণ হজরত নূহ (আ.) তাঁর কওমের নবী ছিলেন, সমগ্র মানবজাতির নবী ছিলেন না। আয়াতগুলোতে তাঁর কওমের নবী বলেই বারবার উল্লেখ করা হয়েছে। সুতরাং তাঁর কওম অধ্যুষিত অঞ্চলের মধ্যেই এই প্লাবন সীমাবদ্ধ থাকার কথা। যারা নূহ (আ.)-এর হেদায়েতের আহ্বান পায়নি বা তা সরাসরি অস্বীকার করেনি, তাদের ওপর আল্লাহর আম-শাস্তি আল্লাহর বিধান দ্বারা ব্যাখ্যা করা যায় না।
৪২ নম্বর আয়াতে নূহ (আ.)-এর এক অবাধ্য পুত্রের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। তিনি তাঁর মুমিন ও অনুগত পুত্র-পরিজনসহ নৌকায় সওয়ার হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর এক পুত্র 'কিনআন' ছিল ভেতরে ভেতরে কাফিরদের দলভুক্ত। নূহ (আ.) তাকে নৌকায় ওঠার জন্য আহ্বান জানালেন এবং কাফিরদের সঙ্গ পরিত্যাগ করতে বললেন। তিনি আশা করেছিলেন, তাঁর সেই পুত্র শেষ পর্যন্ত ইমান আনবে এবং আল্লাহ তাকে ইমানদার হিসেবে কবুল করে নেবেন। কিন্তু অবাধ্য 'কিনআন' নিজেই নৌকায় উঠতে অস্বীকৃতি জানাল এই ভেবে যে এ প্লাবন তেমন কিছু নয়। এভাবেই সে কাফিরদের দলভুক্ত হয়ে থাকল এবং তাদের সঙ্গে ডুবে মরল। অবাধ্য পুত্রকে সুপথে ফিরিয়ে আনার জন্য পিতার যে আকুতি, তা এখানে ফুটে উঠেছে।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments