মুক্তিযোদ্ধার বাঁচার লড়াই -দেশমাতৃকার জন্য যাঁরা যুদ্ধে নেমেছিলেন তাঁদের অনেকেই আজ লড়ছেন দুবেলা দুমুঠো খাবারের জন্য। তাঁদের জীবনচিত্র নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন-ঘের পাহারা দিয়ে সংসার চলে সন্তোষের by গৌরাঙ্গ নন্দী
একাত্তরে যে হাতে অস্ত্র তুলে যুদ্ধ করেছেন, স্বাধীন দেশে সেই হাতেই ধরতে হয়েছে রিকশাভ্যানের হাতল। দীর্ঘদিন ভ্যানগাড়ি চালিয়েই সংসারের জন্য প্রয়োজনীয় অর্থ জোগাড় করেছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা। এখন ভ্যানগাড়ি চালানোর সামর্থ্যও নেই। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছেন।
তা সত্ত্বেও সংসারের চাহিদা মেটাতে মাঝেমধ্যে দিনমজুরি করতে হয় তাঁকে। দিনমজুরির কাজও সব সময় জোটে না। এ কারণে রাতের বেলায় অন্যের মাছের ঘের পাহারা দেন তিনি।
একাত্তরের সাহসী সৈনিক সন্তোষ রাহার স্ত্রী মলিনা রাহা বাক্প্রতিবন্ধী। সরকারের দেওয়া দুই হাজার টাকা সম্মানী ভাতা আর রাতের বেলা ঘের পাহারা দিয়ে পাওয়া ৫০০ টাকায় কোনো রকমে চলেন স্বামী-স্ত্রী।
সন্তোষ রাহা থাকেন ডুমুরিয়ার বান্দা গ্রামের ঘোনা তালতলা খালপাড়ে খাসজমিতে একটি নামমাত্র দোচালা ছাউনি দেওয়া ঘরে। বাইরে থেকে ডাক দিতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সন্তোষ রাহার স্ত্রী মলিনা রাহা। সন্তোষ রাহার কথা জানতে চাইলে হাত নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি কথা বলতে পারেন না। হাত ও মুখের ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করেন। বাড়িতে নেই এটুকু বোঝা গেল। তিনি ঘরের মধ্যে গিয়ে এক টুকরা কাগজ নিয়ে এসে সেটি মেলে ধরেন। মোবাইল ফোন দেখিয়ে কী যেন বোঝানোর চেষ্টা করেন। ওই কাগজে নিজের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর লিখে দিলে খুশিতে তাঁর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হাত ধরে টেনে নিয়ে ঘরের মধ্যে বসান। নামেই ঘর, বাঁশের চটার বেড়া। ঘরের ভেতর থেকে বাইরের সবকিছু দেখা যায়। একদিকে একটি চৌকি পাতা। দড়িতে ঝোলানো গুটিকয়েক কাপড়। ঘরের এক পাশে চুলা, তাতে কিছু একটা রান্না করা হচ্ছিল। ভাত রান্না হয়নি। ঘরে চাল নেই। মনে হয়, চাল জোগাড় করার জন্যই বেরিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে চলে আসি।
বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা নিজেই ফোন করেন। কি অবস্থায় আছেন তিনি তা জানতে চাইলে কণ্ঠটি যেন তাঁর কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন, 'আগে শরীর ভালো ছিল। শক্তি ছিল। ভ্যান চালাতে পারতাম। কিন্তু বছরখানেক আগে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ভ্যান চালাতে পারি না। অন্য কোনো ভারি কাজও করতে পারি না। বান্দা গ্রামের কালু বৈরাগীর মাছের ঘেরে মাসে ৫০০ টাকা বেতনে রাতে পাহারা দেওয়ার কাজ করি।'
মলিনা রাহা সন্তোষ রাহার দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁদের কোনো সন্তান নেই। প্রথম স্ত্রী অনেক আগেই সন্তোষ রাহাকে ফেলে চলে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন একমাত্র কন্যাকেও। বর্তমানে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। বছর চারেক আগে বাক্প্রতিবন্ধী মলিনা রাহাকে তিনি বিয়ে করেন। সেই থেকে তাঁরা সুখে-দুখে একসঙ্গে আছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা জানান, যে ১০ শতাংশ জায়গায় তিনি বসবাস করেন, সেটি খাসজমি। এই খাসজমিটুকু গত বছর বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের সহায়তায় তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে এর সামান্য অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করতে পেরেছেন। টাকার অভাব ও শরীরে শক্তি না থাকায় অবশিষ্ট জমিতে মাটি ভরাটের কাজ করতে পারেননি।
বর্তমানে তাঁর সংসার চালানোর বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সারা মাস মুদি দোকানির কাছ থেকে বাকিতে পণ্য কেনেন। টাকা পেয়েই তা পরিশোধ করেন। তবে সমস্যায় পড়েন যখন নিজের বা স্ত্রীর জন্য কাপড় কিনতে হয়। অসুখ-বিসুখ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করাতে পারেন না। পরামর্শ নিতে হয় গ্রাম্য ডাক্তারের। জরুরি প্রয়োজনে ধারদেনাও করতে হয়। সবসময় তাও মেলে না। ফলে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নেন। তবে বিপাকে পড়েন কিস্তি পরিশোধের সময়। ঘরে খাবার থাকুক বা না থাকুক কিস্তি পরিশোধ করতেই হয়। অন্যথায় এনজিও কর্মকর্তারা বকাঝকা করেন। তখন সন্তোষ রাহার দুঃখ হয়। তিনি বলেন, 'স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা নয়, স্বাধীনতাবিরোধীরাই অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি- সব দিক দিয়েই ভালো আছে। এই কী চাওয়া ছিল!'
একাত্তরের সাহসী সৈনিক সন্তোষ রাহার স্ত্রী মলিনা রাহা বাক্প্রতিবন্ধী। সরকারের দেওয়া দুই হাজার টাকা সম্মানী ভাতা আর রাতের বেলা ঘের পাহারা দিয়ে পাওয়া ৫০০ টাকায় কোনো রকমে চলেন স্বামী-স্ত্রী।
সন্তোষ রাহা থাকেন ডুমুরিয়ার বান্দা গ্রামের ঘোনা তালতলা খালপাড়ে খাসজমিতে একটি নামমাত্র দোচালা ছাউনি দেওয়া ঘরে। বাইরে থেকে ডাক দিতেই ঘর থেকে বেরিয়ে আসেন সন্তোষ রাহার স্ত্রী মলিনা রাহা। সন্তোষ রাহার কথা জানতে চাইলে হাত নেড়ে বোঝানোর চেষ্টা করেন যে তিনি কথা বলতে পারেন না। হাত ও মুখের ইশারায় কথা বলার চেষ্টা করেন। বাড়িতে নেই এটুকু বোঝা গেল। তিনি ঘরের মধ্যে গিয়ে এক টুকরা কাগজ নিয়ে এসে সেটি মেলে ধরেন। মোবাইল ফোন দেখিয়ে কী যেন বোঝানোর চেষ্টা করেন। ওই কাগজে নিজের নাম ও মোবাইল ফোন নম্বর লিখে দিলে খুশিতে তাঁর চোখ-মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। হাত ধরে টেনে নিয়ে ঘরের মধ্যে বসান। নামেই ঘর, বাঁশের চটার বেড়া। ঘরের ভেতর থেকে বাইরের সবকিছু দেখা যায়। একদিকে একটি চৌকি পাতা। দড়িতে ঝোলানো গুটিকয়েক কাপড়। ঘরের এক পাশে চুলা, তাতে কিছু একটা রান্না করা হচ্ছিল। ভাত রান্না হয়নি। ঘরে চাল নেই। মনে হয়, চাল জোগাড় করার জন্যই বেরিয়েছেন মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা। কিছুক্ষণ সেখানে থেকে চলে আসি।
বিকেলে মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা নিজেই ফোন করেন। কি অবস্থায় আছেন তিনি তা জানতে চাইলে কণ্ঠটি যেন তাঁর কেঁপে ওঠে। তিনি বলেন, 'আগে শরীর ভালো ছিল। শক্তি ছিল। ভ্যান চালাতে পারতাম। কিন্তু বছরখানেক আগে অসুস্থ হওয়ার পর থেকে ভ্যান চালাতে পারি না। অন্য কোনো ভারি কাজও করতে পারি না। বান্দা গ্রামের কালু বৈরাগীর মাছের ঘেরে মাসে ৫০০ টাকা বেতনে রাতে পাহারা দেওয়ার কাজ করি।'
মলিনা রাহা সন্তোষ রাহার দ্বিতীয় স্ত্রী। তাঁদের কোনো সন্তান নেই। প্রথম স্ত্রী অনেক আগেই সন্তোষ রাহাকে ফেলে চলে গেছেন। সঙ্গে নিয়ে গেছেন একমাত্র কন্যাকেও। বর্তমানে তাঁদের সঙ্গে কোনো যোগাযোগ নেই। বছর চারেক আগে বাক্প্রতিবন্ধী মলিনা রাহাকে তিনি বিয়ে করেন। সেই থেকে তাঁরা সুখে-দুখে একসঙ্গে আছেন।
মুক্তিযোদ্ধা সন্তোষ রাহা জানান, যে ১০ শতাংশ জায়গায় তিনি বসবাস করেন, সেটি খাসজমি। এই খাসজমিটুকু গত বছর বেসরকারি সংস্থা উত্তরণের সহায়তায় তিনি বরাদ্দ পেয়েছেন। তবে এর সামান্য অংশ মাটি দিয়ে ভরাট করতে পেরেছেন। টাকার অভাব ও শরীরে শক্তি না থাকায় অবশিষ্ট জমিতে মাটি ভরাটের কাজ করতে পারেননি।
বর্তমানে তাঁর সংসার চালানোর বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, সারা মাস মুদি দোকানির কাছ থেকে বাকিতে পণ্য কেনেন। টাকা পেয়েই তা পরিশোধ করেন। তবে সমস্যায় পড়েন যখন নিজের বা স্ত্রীর জন্য কাপড় কিনতে হয়। অসুখ-বিসুখ হলে প্রয়োজনীয় চিকিৎসাও করাতে পারেন না। পরামর্শ নিতে হয় গ্রাম্য ডাক্তারের। জরুরি প্রয়োজনে ধারদেনাও করতে হয়। সবসময় তাও মেলে না। ফলে এনজিওর কাছ থেকে ঋণ নেন। তবে বিপাকে পড়েন কিস্তি পরিশোধের সময়। ঘরে খাবার থাকুক বা না থাকুক কিস্তি পরিশোধ করতেই হয়। অন্যথায় এনজিও কর্মকর্তারা বকাঝকা করেন। তখন সন্তোষ রাহার দুঃখ হয়। তিনি বলেন, 'স্বাধীন দেশে মুক্তিযোদ্ধারা নয়, স্বাধীনতাবিরোধীরাই অর্থ-বিত্ত, প্রভাব-প্রতিপত্তি- সব দিক দিয়েই ভালো আছে। এই কী চাওয়া ছিল!'
No comments