বিজয়ের মাস-একাত্তরের মুক্তি সংগ্রামে নারী by আবদুল মান্নান চৌধুরী
১৯৬৯ সালে মুক্তির সোপান নারীরা অতিক্রম শুরু করেন। সে সময়ে বেগম সুফিয়া কামাল, আজিজা ইদ্রিসের নেতৃত্বে নারীরা রাজপথে মিছিল করছে। এই মিছিলে বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন। ১৯৬৯ সালের গণআন্দোলন ও অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা ও তার বান্ধবীদের অংশগ্রহণ ছিল।
ছাত্রলীগভুক্ত মেয়েদের মধ্যে শেখ হাসিনা, নাসরিন আহমদ শিলু, হাসমত জাহান হাসু, নিলুফার পান্না, টুনটুনি, রানু, মাজেদা প্রমুখ তখন পাদপ্রদীপের আলোয় চলে আসেন। তাদের সঙ্গে আরও যুক্ত হন রাফিয়া আক্তার ডলি, মমতাজ বেগম, কাজী রোজী, সাবিনা ইয়াসমীন প্রমুখ। অংশগ্রহণ ছিল দ্বিধাবিভক্ত ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী মতিয়া চৌধুরী, মাহফুজা খানম। মালেকা বেগম, আয়েশা, মনিকা ও দীপা দত্তের একই সময়ে বেগম সুফিয়া কামাল, ড. নীলিমা ইব্রাহিম, বদরুন্নেসা আহম্মদ, সাজেদা চৌধুরী, আজিজা ইদ্রিস, মুশতারী শফি প্রমুখের মনে স্বাধীনতার চিন্তা স্থির অবস্থান নিতে থাকে। সুখের বিষয়, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের আগে ও মুক্তিযুদ্ধের সময়ে বদরুন্নেসা আহমদ, সাজেদা চৌধুরী, জোহরা তাজউদ্দীন, নূরজাহান মুরশিদ, আজিজা ইদ্রিস সপরিবারে অংশ নিয়েছেন। তবে স্বাধীনতার সূতিকাগার বলে পরিচিত ২১ ফেব্রুয়ারির নারী অংশগ্রহণকারীদের উপস্থিতি ও এসবে অংশগ্রহণ ছিল নেহাত প্রান্তিক।
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে বিশেষত ষাটের দশকের শেষভাগে এবং ১৯৭১ সালে অনেকটা বলতে গেলে আনুপাতিক হারে নারীরা প্রতিবাদ মিছিল ও সশস্ত্র ট্রেনিং নিতে শুরু করে। অস্ত্রের ট্রেনিং শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পরপরই। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার সামনে 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম_ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' ঘোষণা দিয়ে যার যা আছে তা নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
সশস্ত্র যুদ্ধের শুরুটা ছিল প্রতিরোধ যুদ্ধ দিয়ে। প্রতিরোধ যুদ্ধে পুরুষদের মতো নারীরা সশস্ত্র ও সহায়ক শক্তি হিসেবে লড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ঢাকা ও ক্ষেত্রভেদে ঢাকার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীরা বন্দুক হাতে ট্রেনিং নিয়েছেন। মু্িক্তযুদ্ধের আগে মেয়েরা সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়েছেন; যুদ্ধ শুরু হলে বিবিধ কারণে তারা অস্ত্র উঁচিয়ে ধরতে পারেননি', কিন্তু হাত গুটিয়ে বসেছিলেন না।
স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে একটি নারী বাহিনীর উল্লেখ আছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নূরজাহান মাযহার রচিত কথিকায় এর উল্লেখ আছে। মুক্তিযুদ্ধকালে কলেজ ও স্কুলপড়ূয়া নারীদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল। তারা সেবিকার দায়িত্ব ছাড়াও অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলন। মেজর জলিল এই বাহিনী গড়েছিলেন।
যুদ্ধকালে দেশের অভ্যন্তরে 'বীথিকা বিশ্বাস ও শিশির কণা গ্রেনেড চার্জ করে গানবোট উড়িয়ে দিয়েছিলেন'_ এই তথ্যের পক্ষে খুব জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়নি; বরং সিরাজ শিকদারের কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শোভা রানী মণ্ডল, মনিকা শিখা, রেবা, কৃষ্ণা নামের ৪-৫ জন নারী যোদ্ধা ছিলেন। শোভা রানী গ্রেনেড চার্জে পাকিস্তানিদের একটি গানবোট ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এবং জনতার সহায়তায় চারজন পাকিস্তানিকে হত্যা করেছিলেন। এই শোভা রানী দু'হাতে অস্ত্র চালাতে পারতেন। তার স্বামীকে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছিল বলে তার প্রতিশোধ স্পৃহা ছিল প্রবল। গরাঙ্গলে আমন্ত্রণ করেও তারা কিছু শত্রু খতম এবং সাইকাতে অপারেশন করে ৭-৮ পাকিস্তানিকে হত্যা করেন। গরাঙ্গল থেকে দশ মহলে গিয়ে সেখানে তারা আরও কিছু পাকিস্তানিকে হত্যা করে। তারপর গরাঙ্গলে ফিরে এসে শোভা ও মনিকা শত্রুর হাতে ধরা পড়ে ১৭ দিন জেলে ছিলেন। কৌশলে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তারা বেণী লাল দাশগুপ্ত ও ক্যাপ্টেন ওমরের সঙ্গে কাজ করেন।
মনিকা পরে ভারতে চলে গিয়ে সেবিকার দায়িত্ব পালন করেন; কিন্তু শোভা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশে থেকেই যুদ্ধ করেছেন। কয়েক বছর আগেও তিনি শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছেন বলে মুক্তিযুদ্ধ '৭১, 'নারী' গ্রন্থ থেকে জানা যায়। অবশ্য 'নারী' গ্রন্থে আরও বেশকিছু নারীর বিচিত্র ভূমিকার কথা পাওয়া গেছে।
দেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামাল কিংবা নীলিমা ইব্রাহিম বা শামসুন নাহার রোজ, সারা আরা মাহমুদ যে সাহসিকতা নিয়ে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে বিবিধ দায়িত্ব পালন করেছেন তা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য। সুফিয়া কামাল শুধু তার মেয়েদের যুদ্ধের জন্য ঠেলে দেননি, প্রচণ্ড চাপে থেকেও তিনি পাকিস্তানের সপক্ষে বিবৃতি দেননি। জাহানারা ইমাম যুদ্ধের জন্য স্বামী ও সন্তানকে সঁপে দেন। 'একাত্তরের দিনগুলি'তে তার অস্ত্র বহন, সংরক্ষণ, এমনকি ভণ্ডপীরের মাজারে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগসহ অনেক দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা আরা মাহমুদও অসামান্য সাহস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানে নিয়োজিত ছিলেন এবং ভণ্ডপীরের মাজারে তিনিও বিবিধ আদান-প্রদানের জন্য যেতেন; তার বোনেরা দেশের অভ্যন্তরে তেষ্টাতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে বিশ্রামগঞ্জে সেবিকার দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুন্নাহার রহমান রোজের বাবা আবদুল মতিন মুসলিম লীগের হয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন। সে সুবাদে পাকিস্তানিরা সে বাড়ির মুক্তিযুদ্ধপন্থি বিবিধ কর্মকাণ্ডের খবর রাখেনি। মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক হেন কাজটি নেই যা এ বাড়িতে সম্পাদিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে বিবি রাসেলের মা সকলের রোজবু তথ্য, অর্থ, ওষুধপত্র পাচারের জন্য প্রয়োজনে সীমান্তের এপার-ওপার করতেন।
ঢাকায় ক্র্যাক প্লাটুনের সঙ্গে সারা আরা মাহমুদ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, জাকিয়া সুলতানা ও মিনু আরা বেগমসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন। তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখতেন। পুরুষ যোদ্ধাদের সহযাত্রী হতেন। গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবর আদান-প্রদান করতেন। কাপড়-চোপড়, ওষুধ ও অর্থ হস্তান্তর করতেন।
যুদ্ধকালে সুনামগঞ্জে গঠিত হয়েছিল নারী মুক্তিফৌজ। এর সভানেত্রী ছিলেন প্রীতি রানী পুরকায়স্থ। এ সম্পর্কে নারী গ্রন্থে কিছু তথ্য আছে। সে সময় ভারতে নারীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল গোবরা ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে গোবরা ক্যাম্প ও বিএলএফ ক্যাম্প মিলিয়ে ৩০০ তরুণীকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া পদ্মপুকুর ও কল্যাণীতে সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং দেওয়া হতো। যুদ্ধের প্রশিক্ষণও চলত একসঙ্গে। তাদের রাজনীতির ক্লাস ছাড়াও দেশাত্মবোধে উদ্দীপিত করা হতো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাও তাদের কাজ ছিল। সাজেদা চৌধুরী অবশ্য তার কর্ম বিস্তৃতি ঘটান আগরতলা পর্যন্ত। তার কর্ম ছিল বহুমাত্রিক।
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব
বাংলাদেশের উপাচার্য
মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতিপর্বে বিশেষত ষাটের দশকের শেষভাগে এবং ১৯৭১ সালে অনেকটা বলতে গেলে আনুপাতিক হারে নারীরা প্রতিবাদ মিছিল ও সশস্ত্র ট্রেনিং নিতে শুরু করে। অস্ত্রের ট্রেনিং শুরু হয়েছিল ১৯৭১ সালের ৭ মার্চের পরপরই। ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধু লাখ লাখ জনতার সামনে 'এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম_ এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম' ঘোষণা দিয়ে যার যা আছে তা নিয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে প্রস্তুত থাকার আহ্বান জানান।
সশস্ত্র যুদ্ধের শুরুটা ছিল প্রতিরোধ যুদ্ধ দিয়ে। প্রতিরোধ যুদ্ধে পুরুষদের মতো নারীরা সশস্ত্র ও সহায়ক শক্তি হিসেবে লড়েছে। মুক্তিযুদ্ধের পূর্বে ঢাকা ও ক্ষেত্রভেদে ঢাকার বাইরে বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের ছাত্রীরা বন্দুক হাতে ট্রেনিং নিয়েছেন। মু্িক্তযুদ্ধের আগে মেয়েরা সশস্ত্র ট্রেনিং নিয়েছেন; যুদ্ধ শুরু হলে বিবিধ কারণে তারা অস্ত্র উঁচিয়ে ধরতে পারেননি', কিন্তু হাত গুটিয়ে বসেছিলেন না।
স্বাধীনতা যুদ্ধের দলিলপত্রে একটি নারী বাহিনীর উল্লেখ আছে। স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে নূরজাহান মাযহার রচিত কথিকায় এর উল্লেখ আছে। মুক্তিযুদ্ধকালে কলেজ ও স্কুলপড়ূয়া নারীদের নিয়ে এই বাহিনী গঠিত হয়েছিল। তারা সেবিকার দায়িত্ব ছাড়াও অস্ত্রের প্রশিক্ষণ নিয়েছিলন। মেজর জলিল এই বাহিনী গড়েছিলেন।
যুদ্ধকালে দেশের অভ্যন্তরে 'বীথিকা বিশ্বাস ও শিশির কণা গ্রেনেড চার্জ করে গানবোট উড়িয়ে দিয়েছিলেন'_ এই তথ্যের পক্ষে খুব জোরালো সমর্থন পাওয়া যায়নি; বরং সিরাজ শিকদারের কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শোভা রানী মণ্ডল, মনিকা শিখা, রেবা, কৃষ্ণা নামের ৪-৫ জন নারী যোদ্ধা ছিলেন। শোভা রানী গ্রেনেড চার্জে পাকিস্তানিদের একটি গানবোট ডুবিয়ে দিয়েছিলেন এবং জনতার সহায়তায় চারজন পাকিস্তানিকে হত্যা করেছিলেন। এই শোভা রানী দু'হাতে অস্ত্র চালাতে পারতেন। তার স্বামীকে পাকিস্তানিরা মেরে ফেলেছিল বলে তার প্রতিশোধ স্পৃহা ছিল প্রবল। গরাঙ্গলে আমন্ত্রণ করেও তারা কিছু শত্রু খতম এবং সাইকাতে অপারেশন করে ৭-৮ পাকিস্তানিকে হত্যা করেন। গরাঙ্গল থেকে দশ মহলে গিয়ে সেখানে তারা আরও কিছু পাকিস্তানিকে হত্যা করে। তারপর গরাঙ্গলে ফিরে এসে শোভা ও মনিকা শত্রুর হাতে ধরা পড়ে ১৭ দিন জেলে ছিলেন। কৌশলে জেল থেকে মুক্তি পেয়ে তারা বেণী লাল দাশগুপ্ত ও ক্যাপ্টেন ওমরের সঙ্গে কাজ করেন।
মনিকা পরে ভারতে চলে গিয়ে সেবিকার দায়িত্ব পালন করেন; কিন্তু শোভা শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত দেশে থেকেই যুদ্ধ করেছেন। কয়েক বছর আগেও তিনি শিক্ষিকার দায়িত্ব পালন করছেন বলে মুক্তিযুদ্ধ '৭১, 'নারী' গ্রন্থ থেকে জানা যায়। অবশ্য 'নারী' গ্রন্থে আরও বেশকিছু নারীর বিচিত্র ভূমিকার কথা পাওয়া গেছে।
দেশের অভ্যন্তরে বসবাসরত জাহানারা ইমাম, সুফিয়া কামাল কিংবা নীলিমা ইব্রাহিম বা শামসুন নাহার রোজ, সারা আরা মাহমুদ যে সাহসিকতা নিয়ে অবরুদ্ধ বাংলাদেশে বিবিধ দায়িত্ব পালন করেছেন তা অকল্পনীয় ও অবিশ্বাস্য। সুফিয়া কামাল শুধু তার মেয়েদের যুদ্ধের জন্য ঠেলে দেননি, প্রচণ্ড চাপে থেকেও তিনি পাকিস্তানের সপক্ষে বিবৃতি দেননি। জাহানারা ইমাম যুদ্ধের জন্য স্বামী ও সন্তানকে সঁপে দেন। 'একাত্তরের দিনগুলি'তে তার অস্ত্র বহন, সংরক্ষণ, এমনকি ভণ্ডপীরের মাজারে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ যোগাযোগসহ অনেক দুঃসাহসিক কাজ করেছেন। শহীদ আলতাফ মাহমুদের স্ত্রী সারা আরা মাহমুদও অসামান্য সাহস নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আদান-প্রদানে নিয়োজিত ছিলেন এবং ভণ্ডপীরের মাজারে তিনিও বিবিধ আদান-প্রদানের জন্য যেতেন; তার বোনেরা দেশের অভ্যন্তরে তেষ্টাতে না পেরে সীমান্ত অতিক্রম করে বিশ্রামগঞ্জে সেবিকার দায়িত্ব পালন করেন।
শামসুন্নাহার রহমান রোজের বাবা আবদুল মতিন মুসলিম লীগের হয়ে বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে নির্বাচন করেছিলেন। সে সুবাদে পাকিস্তানিরা সে বাড়ির মুক্তিযুদ্ধপন্থি বিবিধ কর্মকাণ্ডের খবর রাখেনি। মুক্তিযুদ্ধের সহায়ক হেন কাজটি নেই যা এ বাড়িতে সম্পাদিত হয়নি। মুক্তিযুদ্ধে বিবি রাসেলের মা সকলের রোজবু তথ্য, অর্থ, ওষুধপত্র পাচারের জন্য প্রয়োজনে সীমান্তের এপার-ওপার করতেন।
ঢাকায় ক্র্যাক প্লাটুনের সঙ্গে সারা আরা মাহমুদ, শহীদ জননী জাহানারা ইমাম, জাকিয়া সুলতানা ও মিনু আরা বেগমসহ আরও কয়েকজন জড়িত ছিলেন। তারা অস্ত্র, গোলাবারুদ লুকিয়ে রাখতেন। পুরুষ যোদ্ধাদের সহযাত্রী হতেন। গুরুত্বপূর্ণ খবরাখবর আদান-প্রদান করতেন। কাপড়-চোপড়, ওষুধ ও অর্থ হস্তান্তর করতেন।
যুদ্ধকালে সুনামগঞ্জে গঠিত হয়েছিল নারী মুক্তিফৌজ। এর সভানেত্রী ছিলেন প্রীতি রানী পুরকায়স্থ। এ সম্পর্কে নারী গ্রন্থে কিছু তথ্য আছে। সে সময় ভারতে নারীদের প্রশিক্ষণ ক্যাম্প ছিল গোবরা ক্যাম্প। এই ক্যাম্পের দায়িত্বে ছিলেন সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী। সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে গোবরা ক্যাম্প ও বিএলএফ ক্যাম্প মিলিয়ে ৩০০ তরুণীকে অস্ত্রের প্রশিক্ষণ দেয়। তাছাড়া পদ্মপুকুর ও কল্যাণীতে সিভিল ডিফেন্সের ট্রেনিং দেওয়া হতো। যুদ্ধের প্রশিক্ষণও চলত একসঙ্গে। তাদের রাজনীতির ক্লাস ছাড়াও দেশাত্মবোধে উদ্দীপিত করা হতো। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষাও তাদের কাজ ছিল। সাজেদা চৌধুরী অবশ্য তার কর্ম বিস্তৃতি ঘটান আগরতলা পর্যন্ত। তার কর্ম ছিল বহুমাত্রিক।
অধ্যাপক ড. আবদুল মান্নান চৌধুরী মুক্তিযোদ্ধা ও ওয়ার্ল্ড ইউনিভার্সিটি অব
বাংলাদেশের উপাচার্য
No comments