পাঁচ কোটি টাকায় বিকাশের মুক্তি! by রেজোয়ান বিশ্বাস
পাঁচ কোটি টাকার বিনিময়ে সম্পন্ন হয় দেশের শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ কুমার বিশ্বাসের মুক্তির আয়োজন। পরিকল্পনা ছিল মুক্তির খবরটি পরোপুরি গোপন রাখার। নিয়ম আছে, সকাল ১০টা থেকে সূর্যাস্তের আগে বন্দি মুক্তির।
সে রীতি ভেঙে এ ক্ষেত্রে সকাল ৮টা ২০ মিনিটেই কাশিমপুর কারাগার থেকে বিকাশকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তবে গোল বাধে ভাগ-বাটোয়ারার বিরোধে। গোয়েন্দা সূত্র মতে, বিকাশের মুক্তির পাঁচ কোটি টাকার বিলি-বণ্টন হয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট কারা কর্তৃপক্ষের মধ্যে। তবে এ টাকার ভাগ না পাওয়ায় এক পক্ষ ঘটনাটি ফাঁস করে দেয়।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কাশিমপুরে পাশাপাশি দুটি কারাগার আছে। এর মধ্যে কাশিমপুর ২ নম্বর কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের একটি সেলে বন্দি ছিল বিকাশ। জানা গেছে, বিকাশ মুক্তির তহবিল থেকে বড় একটি অঙ্ক ঠিকই পৌঁছে যায় এ কারাগারের কর্মকর্তাদের কাছে। অন্যদিকে কোনো টাকাই পাননি কাশিমপুর ১ নম্বর কারাগারের কর্মকর্তারা। ফলে অতি গোপন খবরটি এখান থেকেই ফাঁস করে দেওয়া হয়।
রহস্য আরো আছে। গত শুক্রবার বিকাশের বেরিয়ে যাওয়ার সময় জেলগেটসহ রিসিপশন হলে বসানো সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য হাপিশ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দিন বিকাশকে কারা নিতে এসেছিলেন এবং কিভাবে কোন গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেসব দৃশ্যের রেকর্ড থাকার কথা। এখন সেসবের আর হদিস নেই বলে জানা গেছে। কারা কর্তৃপক্ষও রহস্যজনকভাবে বিষয়টি এড়িয়ে চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিমপুর-১ কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, বিকাশের মুক্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি গোপন রাখতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে কারাগারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা এসেছে। এ কারণেই কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীর বের হয়ে গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার দৃশ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে বিকাশের এই নির্বিঘ্ন মুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা চললেও এ ঘটনা তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে জামিন পাওয়ার পর ভয়ংকর অপরাধীদের ফের গ্রেপ্তারের আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কৌশলগত কারণেই সন্দেহজনক আইনে তা করে থাকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বরাবরই ঘটতে দেখা গেছে। তিন বছর আগে বিকাশ একই কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জয়দেবপুর থানার পুলিশ তাকে আবার গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু এবারের ঘটনায় মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষের অনেকে শামিল ছিলেন বলেই পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
দেশেই আছে বিকাশ : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত শুক্রবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ওই রাতে গুলশান এলাকায় একটি বহুতল ভবনে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করে বিকাশ। এরপর গভীর রাতে সহযোগীদের নিয়ে সে মগবাজার যায়। সেখানে একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষণ অবস্থান করে সে গোপন ডেরায় চলে যায়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বিকাশ এখনো দেশেই আছে। তার সম্ভাব্য গতিপথের দিকে নজরদারি বজায় রেখেছেন র্যাব ও ডিবির সদস্যরা। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিকাশকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। এর জন্য গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। এ ধরনের ভয়ংকর অপরাধী কারাগারের বাইরে থাকায় বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নও উঠেছে। বিকাশ এখনো দেশেই আছে বলে তাঁর কাছে তথ্য থাকার কথা জানান তিনি।
বিকাশের মুক্তির প্রক্রিয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের তথ্য তাঁর কানেও এসেছে। এ ঘটনায় কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা ও কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে সরকারের প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতার কারণেই কাশিমপুর কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ নির্বিঘ্নে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে।
বিকাশের মুক্তির খবর আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন জানানো হয়নি- এ প্রশ্নের জবাবে কাশিমপুর কারাগারের জেলার সুভাষ কুমার ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তাঁর আর কিছু বলার নেই। এ ঘটনায় মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাঁর কিছু জানা নেই।
মুক্তি নিয়ে নাটকীয়তা : বিকাশের মুক্তির প্রক্রিয়া ঘিরে ছিল প্রবল নাটকীয়তা ও রহস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশমতো কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে বিকাশকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ধরনের ভয়ংকর সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানানোর রীতি থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কাশিমপুর জেল গেটে শুক্রবার সকালে কালো গ্লাস লাগানো দামি গাড়িতে চড়ে বিকাশ যাদের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, তাদের পরিচয় সম্পর্কে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। এর মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে, ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাসহ কমপক্ষে সাতজন। ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী নেতা ও আরেক ব্যবসায়ীর ভাই বিকাশকে মুক্ত করার সব ব্যবস্থা করেন।
মামলা : বিকাশ ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হয়। এরপর গত ১৫ বছর বিভিন্ন মামলায় সে কারাগারে ছিল। ২০০৯ সালে সব মামলায় জামিন পেলেও ক্রসফায়ারের ভয়ে সে কারাগার থেকে বের হয়নি। ওই সময় পিচ্চি হান্নানসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই ক্রসফায়ারে নিহত হয়। গত বছরও একবার হাজতি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে বিকাশকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে আর তার জামিন হয়নি। সর্বশেষ তেজগাঁও থানার একটি মামলায় হাজতি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হলে সে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর আবারও বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিকাশ মুক্তি পেয়েছে। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে পুলিশের তিন বছর মেয়াদি কৃতকৌশল (স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান) প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আদালতের নির্দেশেই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বিকাশ জামিনে বের হয়েছে। এতে অন্য কারো হাত নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। বিকাশ ছাড়া পাওয়ার পর তার অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে।
গোয়েন্দা সূত্র জানায়, কাশিমপুরে পাশাপাশি দুটি কারাগার আছে। এর মধ্যে কাশিমপুর ২ নম্বর কারাগারের কর্ণফুলী ভবনের একটি সেলে বন্দি ছিল বিকাশ। জানা গেছে, বিকাশ মুক্তির তহবিল থেকে বড় একটি অঙ্ক ঠিকই পৌঁছে যায় এ কারাগারের কর্মকর্তাদের কাছে। অন্যদিকে কোনো টাকাই পাননি কাশিমপুর ১ নম্বর কারাগারের কর্মকর্তারা। ফলে অতি গোপন খবরটি এখান থেকেই ফাঁস করে দেওয়া হয়।
রহস্য আরো আছে। গত শুক্রবার বিকাশের বেরিয়ে যাওয়ার সময় জেলগেটসহ রিসিপশন হলে বসানো সিসি ক্যামেরায় ধারণ করা দৃশ্য হাপিশ করে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই দিন বিকাশকে কারা নিতে এসেছিলেন এবং কিভাবে কোন গাড়িতে করে তাকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে, সেসব দৃশ্যের রেকর্ড থাকার কথা। এখন সেসবের আর হদিস নেই বলে জানা গেছে। কারা কর্তৃপক্ষও রহস্যজনকভাবে বিষয়টি এড়িয়ে চলছে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাশিমপুর-১ কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, বিকাশের মুক্তিপ্রক্রিয়ার সঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কিছু কর্মকর্তা জড়িত থাকতে পারেন। বিষয়টি গোপন রাখতে প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের মাধ্যমে কারাগারের ঊর্ধ্বতন ব্যক্তিদের কাছে মোটা অঙ্কের টাকা এসেছে। এ কারণেই কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসীর বের হয়ে গাড়িতে ওঠা পর্যন্ত সিসি ক্যামেরার দৃশ্য সরিয়ে ফেলা হয়েছে। এদিকে বিকাশের এই নির্বিঘ্ন মুক্তির বিষয়ে রাজনৈতিক-অরাজনৈতিক বিভিন্ন মহলে তীব্র সমালোচনা চললেও এ ঘটনা তদন্তে এখন পর্যন্ত কোনো উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
অন্যদিকে জামিন পাওয়ার পর ভয়ংকর অপরাধীদের ফের গ্রেপ্তারের আইনগত বাধ্যবাধকতা না থাকলেও পুলিশ ও গোয়েন্দা সংস্থা কৌশলগত কারণেই সন্দেহজনক আইনে তা করে থাকে। রাষ্ট্রীয়ভাবে পুরস্কার ঘোষিত সন্ত্রাসীদের ক্ষেত্রে এ ধরনের ঘটনা বরাবরই ঘটতে দেখা গেছে। তিন বছর আগে বিকাশ একই কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর জয়দেবপুর থানার পুলিশ তাকে আবার গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু এবারের ঘটনায় মন্ত্রণালয়, পুলিশ ও জেল কর্তৃপক্ষের অনেকে শামিল ছিলেন বলেই পুরো বিষয়টি চেপে যাওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা ধারণা করছেন।
দেশেই আছে বিকাশ : গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গত শুক্রবার কারাগার থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ওই রাতে গুলশান এলাকায় একটি বহুতল ভবনে কয়েকজন রাজনৈতিক নেতার সঙ্গে বৈঠক করে বিকাশ। এরপর গভীর রাতে সহযোগীদের নিয়ে সে মগবাজার যায়। সেখানে একটি চায়নিজ রেস্টুরেন্টে কিছুক্ষণ অবস্থান করে সে গোপন ডেরায় চলে যায়। গোয়েন্দারা জানিয়েছেন, বিকাশ এখনো দেশেই আছে। তার সম্ভাব্য গতিপথের দিকে নজরদারি বজায় রেখেছেন র্যাব ও ডিবির সদস্যরা। তাকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে বলেও জানিয়েছেন র্যাবের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা।
র্যাবের গোয়েন্দা বিভাগের প্রধান লে. কর্নেল জিয়াউল আহসান কালের কণ্ঠকে বলেন, বিকাশকে গ্রেপ্তার করার চেষ্টা চলছে। এর জন্য গোয়েন্দা নজরদারি চলছে। এ ধরনের ভয়ংকর অপরাধী কারাগারের বাইরে থাকায় বিভিন্ন মহলে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে নানা ধরনের প্রশ্নও উঠেছে। বিকাশ এখনো দেশেই আছে বলে তাঁর কাছে তথ্য থাকার কথা জানান তিনি।
বিকাশের মুক্তির প্রক্রিয়ায় মোটা অঙ্কের টাকা লেনদেন হয়েছে কি না- এ প্রশ্নের জবাবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ঊর্ধ্বতন গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের তথ্য তাঁর কানেও এসেছে। এ ঘটনায় কিছুসংখ্যক রাজনৈতিক নেতা ও কারাগারের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশ রয়েছে বলে জানা গেছে। বিশেষ করে সরকারের প্রভাবশালী মহলের সহযোগিতার কারণেই কাশিমপুর কারাগার থেকে শীর্ষ সন্ত্রাসী বিকাশ নির্বিঘ্নে বেরিয়ে আসতে পেরেছে বলে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কাছে তথ্য রয়েছে।
বিকাশের মুক্তির খবর আগেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কেন জানানো হয়নি- এ প্রশ্নের জবাবে কাশিমপুর কারাগারের জেলার সুভাষ কুমার ঘোষ কালের কণ্ঠকে বলেন, আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী সব নিয়ম মেনে তাকে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে তাঁর আর কিছু বলার নেই। এ ঘটনায় মোটা অঙ্কের অর্থ লেনদেনের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, তাঁর কিছু জানা নেই।
মুক্তি নিয়ে নাটকীয়তা : বিকাশের মুক্তির প্রক্রিয়া ঘিরে ছিল প্রবল নাটকীয়তা ও রহস্য। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ পর্যায়ের অনেকেই বলছেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশমতো কঠোর গোপনীয়তার মধ্যে বিকাশকে কারাগার থেকে মুক্তি দেওয়া হয়। এ ধরনের ভয়ংকর সন্ত্রাসীকে ছেড়ে দেওয়ার আগে সংশ্লিষ্ট জেলা পুলিশকে বিষয়টি জানানোর রীতি থাকলেও এ ক্ষেত্রে তা মানা হয়নি। কাশিমপুর জেল গেটে শুক্রবার সকালে কালো গ্লাস লাগানো দামি গাড়িতে চড়ে বিকাশ যাদের সঙ্গে বেরিয়ে যায়, তাদের পরিচয় সম্পর্কে র্যাব-পুলিশ ও গোয়েন্দা কর্মকর্তারা এখন মোটামুটি নিশ্চিত। এর মধ্যে ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ভাগ্নে, ছাত্রলীগের শীর্ষ দুই নেতাসহ কমপক্ষে সাতজন। ক্ষমতাসীন দলের অনুসারী প্রভাবশালী এক ব্যবসায়ী নেতা ও আরেক ব্যবসায়ীর ভাই বিকাশকে মুক্ত করার সব ব্যবস্থা করেন।
মামলা : বিকাশ ১৯৯৭ সালে গ্রেপ্তার হয়। এরপর গত ১৫ বছর বিভিন্ন মামলায় সে কারাগারে ছিল। ২০০৯ সালে সব মামলায় জামিন পেলেও ক্রসফায়ারের ভয়ে সে কারাগার থেকে বের হয়নি। ওই সময় পিচ্চি হান্নানসহ শীর্ষ সন্ত্রাসীদের অনেকেই ক্রসফায়ারে নিহত হয়। গত বছরও একবার হাজতি পরোয়ানা প্রত্যাহার করে বিকাশকে ছাড়ার সিদ্ধান্ত হয়। পরে আর তার জামিন হয়নি। সর্বশেষ তেজগাঁও থানার একটি মামলায় হাজতি পরোয়ানা প্রত্যাহার করা হলে সে কারাগার থেকে বেরিয়ে যায়।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মহীউদ্দীন খান আলমগীর আবারও বলেছেন, আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই বিকাশ মুক্তি পেয়েছে। গতকাল ঢাকার একটি হোটেলে পুলিশের তিন বছর মেয়াদি কৃতকৌশল (স্ট্র্যাটেজিক প্ল্যান) প্রকাশের পর সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠান শেষে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাংবাদিকদের জানান, আদালতের নির্দেশেই তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী বিকাশ জামিনে বের হয়েছে। এতে অন্য কারো হাত নেই।
ঢাকা মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও গোয়েন্দা পুলিশের উপকমিশনার মনিরুল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে তাঁর কাছে কোনো তথ্য নেই। বিকাশ ছাড়া পাওয়ার পর তার অবস্থান ও কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জানার চেষ্টা চলছে।
No comments