গানের কনা by নয়ন হক
বেইলি রোড থেকে তাঁর সাদা গাড়িটি চলছে বেগুনবাড়ি লেকের দিকে। গাড়ির ভেতরে এফএম রেডিওতে বাজছে ফুয়াদের ‘একটাই আমার তুমি কেন বোঝ না’ গান।
আলাপের ফাঁকে গান শুনতে শুনতে ওই গানের খানিকটা নিজেও গেয়ে উঠলেন, হাজার হোক শিল্পী তো, তাই অন্যের গান তাঁর গলায় উঠে এল নির্ভুলভাবে। আর এই অবসরে তাঁর পাশে বসে আমরাও যেন দেখে নিতে পারলাম সেই ছোট্ট মেয়েটিকে; একসময় যে মেয়ে রঙিন টেলিভিশনের সামনে বসে থাকত রুনা লায়লার গানের জন্য। রুনা লায়লা সে সময় টেলিভিশনে ‘নদীর মাঝি বলে এসো নবীন’, ‘সুখ তুমি কী বড় জানতে ইচ্ছে করে’—এসব গান শুধু পরিবেশনই করতেন না, এর সঙ্গে নিজস্ব শৈলীতে পারফরম্যান্সও করতেন। মেয়েটি মুগ্ধ হয়ে দেখত সেই সব, আর ভাবত, একদিন সেও...।
এই হলো এ সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনার শৈশবজীবনের স্বপ্ন। শিল্পী রুনা লায়লার অন্ধভক্ত তিনি। ‘এখনো তাঁর সামনাসামনি পড়লে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় আমার।’ নিজের বেড়ে ওঠার কথা বলতে গিয়ে কনা যখন এসব বলছিলেন তখন আমরা বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয়। এ সময় আলোকচিত্রী খালেদ সরকার ছবি তোলার জন্য কনাকে পুষ্পশোভিত বেগুনবাড়ি লেকের পাশের রাস্তায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তৎক্ষণাত রাজি। ফলে কনার গাড়িতে আমাদের এই বেইলি রোড টু বেগুনবাড়ির শর্টকাট ভ্রমণ। সম্প্রতি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিম্পলি কনা অ্যালবামের নয়টি গান নিয়ে মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি। কথার শুরুতে অবধারিতভাবে চলে এল সেই প্রসঙ্গ। বললেন, ‘আমি প্রতিনিয়ত আপডেট করি আমাকে। গান তো এখন শুধু শোনার বিষয় নয়, দেখারও। আগে আমাদের দেশে কোনো মিউজিক চ্যানেল ছিল না। এখন হয়েছে। আর অন্যান্য দেশে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের দেশে এর চল ছিল না। তা আমিই না হয় শুরু করলাম। কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে।’
এক দমে বলে যাওয়ার মধ্যে এতক্ষণ একটুও থামেননি কনা। খানিক থেমে শুরু করলেন আবারও, ‘মিউজিক ভিডিও নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন, বলেছেন, এত টাকা খরচা করে এটা বানানোর কী দরকার...। আমি বলতে চাই, দেড় বছর সময় নিয়ে ধীরে ধীরে এটি তৈরি করেছি আমি। তাই টাকাটা তেমন গায়ে লাগেনি। মিউজিক ভিডিওটির পৃষ্ঠপোষক মাল্টি সোর্সিং নামে একটি কোম্পানি। আসলে এই মিউজিক ভিডিওর মধ্য দিয়ে নিজের গানের একটা আর্কাইভ তৈরি করতে চেয়েছি আমি।’
এবার তাঁর কাছে জানতে চাই, মিউজিক ভিডিও নির্মাণের চিন্তাটি কীভাবে এল? বললেন, তাঁর ‘বরষা’ ও ‘ধীম তানানা’ গানের মিউজিক ভিডিওর কথা। এই দুটি গানের মিউজিক ভিডিওর পর দর্শক-শ্রোতার ব্যাপক সাড়া তাঁকে সাহস জুগিয়েছে। সিম্পলি কনা কনার তৃতীয় একক অ্যালবাম, বেরিয়েছিল ২০১১ সালে। এর আগে ২০০৬ সালে জ্যামিতিক ভালোবাসা এবং ২০০৮ সালে বের হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ফুয়াদ ফিচারিং কনা। তো, তৃতীয় অ্যালবাম প্রকাশ ও মিউজিক ভিডিও নির্মাণের মাঝখানের সময়টায় কি হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলেন একসময়কার অ্যাঞ্জেল ফোর ব্যান্ডের এই সদস্য? প্রশ্ন শুনে কনার না সূচক মাথা দুলনিতেই বোঝা গেল বেকার বসে থাকার বান্দা নন তিনি। বললেন, ‘সিনেমায় তো নিয়মিতই প্লেব্যাক করেছি। গান করেছি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেল দিয়েছি—ও হ্যাঁ, জিঙ্গেলের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে ভয়েস ওভারও (কণ্ঠ দেওয়া) দিই আমি। সিলন চায়ের বিজ্ঞাপনে মডেল রাখির কণ্ঠে “কী পাখি, নাম বলতে পারে?” এই ভয়েস আমার দেওয়া।’ নিজের গাড়িতে বসে কনা যখন গোপন কথার মতো করে বলে যাচ্ছেন এসব, এর একটু পরই আরেকটি বিজ্ঞাপনে ভয়েস ওভার দেওয়ার জন্য তাঁকে ছুটতে হবে নিকেতনে। তারপর আরেকটি অনুষ্ঠান শেষ করেও ফুরোবে না গানের ব্যস্ততা।
কনা বললেন, ‘প্রতিদিনই এমন নানা ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। তবে আমার সবটুকু ব্যস্ততা কেবল গানের জন্য। সুপারস্টার নয়, ভালো শিল্পী হতে চাই আমি।’ নজরুল একাডেমীতে নয় বছর গান শিখেছেন। সিম্পলি কনা অ্যালবামে ‘প্রিয় যায় যায় বোলো না’—নজরুলের এই গানটি আছে। ভবিষ্যতে নজরুলসংগীতের একটি অ্যালবাম বের করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। আরও কত রকম যে ইচ্ছে আছে—সেসবের কোনো লেখাজোখা নেই! একসময় পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়তেন শীর্ষেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দূরবীন। পড়তে গিয়ে ওই উপন্যাসের নায়ক ধ্রুবর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন...।
এভাবে গাড়িতে বসে সেদিন তাঁর গল্প শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, দিলসাদ নাহার নামের এই মেয়েটির ডাক নাম কনা হলেও কনার ইতিহাস নেহাত কণা পরিমাণ নয়!
এই হলো এ সময়ের জনপ্রিয় কণ্ঠশিল্পী কনার শৈশবজীবনের স্বপ্ন। শিল্পী রুনা লায়লার অন্ধভক্ত তিনি। ‘এখনো তাঁর সামনাসামনি পড়লে হাত-পা ঠান্ডা হয়ে যায় আমার।’ নিজের বেড়ে ওঠার কথা বলতে গিয়ে কনা যখন এসব বলছিলেন তখন আমরা বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁয়। এ সময় আলোকচিত্রী খালেদ সরকার ছবি তোলার জন্য কনাকে পুষ্পশোভিত বেগুনবাড়ি লেকের পাশের রাস্তায় যাওয়ার প্রস্তাব দিলে তিনি তৎক্ষণাত রাজি। ফলে কনার গাড়িতে আমাদের এই বেইলি রোড টু বেগুনবাড়ির শর্টকাট ভ্রমণ। সম্প্রতি প্রায় ৩০ লাখ টাকা ব্যয়ে সিম্পলি কনা অ্যালবামের নয়টি গান নিয়ে মিউজিক ভিডিও তৈরি করেছেন তিনি। কথার শুরুতে অবধারিতভাবে চলে এল সেই প্রসঙ্গ। বললেন, ‘আমি প্রতিনিয়ত আপডেট করি আমাকে। গান তো এখন শুধু শোনার বিষয় নয়, দেখারও। আগে আমাদের দেশে কোনো মিউজিক চ্যানেল ছিল না। এখন হয়েছে। আর অন্যান্য দেশে মিউজিক ভিডিও নির্মাণ খুবই স্বাভাবিক ঘটনা। আমাদের দেশে এর চল ছিল না। তা আমিই না হয় শুরু করলাম। কাউকে না কাউকে তো শুরু করতে হবে।’
এক দমে বলে যাওয়ার মধ্যে এতক্ষণ একটুও থামেননি কনা। খানিক থেমে শুরু করলেন আবারও, ‘মিউজিক ভিডিও নিয়ে কেউ কেউ সমালোচনা করছেন, বলেছেন, এত টাকা খরচা করে এটা বানানোর কী দরকার...। আমি বলতে চাই, দেড় বছর সময় নিয়ে ধীরে ধীরে এটি তৈরি করেছি আমি। তাই টাকাটা তেমন গায়ে লাগেনি। মিউজিক ভিডিওটির পৃষ্ঠপোষক মাল্টি সোর্সিং নামে একটি কোম্পানি। আসলে এই মিউজিক ভিডিওর মধ্য দিয়ে নিজের গানের একটা আর্কাইভ তৈরি করতে চেয়েছি আমি।’
এবার তাঁর কাছে জানতে চাই, মিউজিক ভিডিও নির্মাণের চিন্তাটি কীভাবে এল? বললেন, তাঁর ‘বরষা’ ও ‘ধীম তানানা’ গানের মিউজিক ভিডিওর কথা। এই দুটি গানের মিউজিক ভিডিওর পর দর্শক-শ্রোতার ব্যাপক সাড়া তাঁকে সাহস জুগিয়েছে। সিম্পলি কনা কনার তৃতীয় একক অ্যালবাম, বেরিয়েছিল ২০১১ সালে। এর আগে ২০০৬ সালে জ্যামিতিক ভালোবাসা এবং ২০০৮ সালে বের হয় দ্বিতীয় একক অ্যালবাম ফুয়াদ ফিচারিং কনা। তো, তৃতীয় অ্যালবাম প্রকাশ ও মিউজিক ভিডিও নির্মাণের মাঝখানের সময়টায় কি হাত-পা গুটিয়ে বসেছিলেন একসময়কার অ্যাঞ্জেল ফোর ব্যান্ডের এই সদস্য? প্রশ্ন শুনে কনার না সূচক মাথা দুলনিতেই বোঝা গেল বেকার বসে থাকার বান্দা নন তিনি। বললেন, ‘সিনেমায় তো নিয়মিতই প্লেব্যাক করেছি। গান করেছি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে। বিজ্ঞাপনে জিঙ্গেল দিয়েছি—ও হ্যাঁ, জিঙ্গেলের পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে ভয়েস ওভারও (কণ্ঠ দেওয়া) দিই আমি। সিলন চায়ের বিজ্ঞাপনে মডেল রাখির কণ্ঠে “কী পাখি, নাম বলতে পারে?” এই ভয়েস আমার দেওয়া।’ নিজের গাড়িতে বসে কনা যখন গোপন কথার মতো করে বলে যাচ্ছেন এসব, এর একটু পরই আরেকটি বিজ্ঞাপনে ভয়েস ওভার দেওয়ার জন্য তাঁকে ছুটতে হবে নিকেতনে। তারপর আরেকটি অনুষ্ঠান শেষ করেও ফুরোবে না গানের ব্যস্ততা।
কনা বললেন, ‘প্রতিদিনই এমন নানা ব্যস্ততায় কেটে যায় সময়। তবে আমার সবটুকু ব্যস্ততা কেবল গানের জন্য। সুপারস্টার নয়, ভালো শিল্পী হতে চাই আমি।’ নজরুল একাডেমীতে নয় বছর গান শিখেছেন। সিম্পলি কনা অ্যালবামে ‘প্রিয় যায় যায় বোলো না’—নজরুলের এই গানটি আছে। ভবিষ্যতে নজরুলসংগীতের একটি অ্যালবাম বের করার ইচ্ছা রয়েছে তাঁর। আরও কত রকম যে ইচ্ছে আছে—সেসবের কোনো লেখাজোখা নেই! একসময় পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের মধ্যে লুকিয়ে পড়তেন শীর্ষেন্দু চট্টোপাধ্যায়ের দূরবীন। পড়তে গিয়ে ওই উপন্যাসের নায়ক ধ্রুবর প্রেমে হাবুডুবু খেয়েছিলেন...।
এভাবে গাড়িতে বসে সেদিন তাঁর গল্প শুনতে শুনতে মনে হচ্ছিল, দিলসাদ নাহার নামের এই মেয়েটির ডাক নাম কনা হলেও কনার ইতিহাস নেহাত কণা পরিমাণ নয়!
No comments