১২তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব- মুক্ত চলচ্চিত্রের খোঁজে...
জাতীয় গণগ্রন্থাগার মিলনায়তন থেকে বাংলাদেশের তরুণ নির্মাতা শাহরিয়ার শাওন নির্মিত ফ্রিডম অব শ্যাডো দেখে বের হচ্ছিলেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী জোহরা বিনতে জামান। ভালো লাগার অনুভূতি চোখজুড়ে। এবার সেই অনুভূতি মুখেও প্রকাশ করলেন।
পাশের বন্ধুকে বললেন, ছায়াচিত্রের মাধ্যমে স্বাধীনতার ঘটনাগুলো দেখানো হলো—ছবিটা চমৎকার না! বোঝা গেল দর্শক হিসেবে প্রবল মুগ্ধতায় আচ্ছন্ন তিনি।
অন্যদিকে পুশান এশিয়ান স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় এশিয়ান ফিল্ম একাডেমি ফান্ড পাওয়া বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দ্য কনটেইনার-এর নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেই ছুটে এসেছেন গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর দ্য কনটেইনার। উচ্ছ্বাস তাই নির্মাতার চোখেমুখে। বললেন, ‘একসময় এই উৎসবে কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। এখন আমার ছবি দেখানো হলো—কী যে ভালো লাগছে, বোঝাতে পারব না!’
প্রথম ভালো লাগাটি দর্শকের, দ্বিতীয়টি নির্মাতার। দর্শক ও নির্মাতার মধ্যে এ রকম অসংখ্য ‘ভালো লাগা’ জন্ম দিয়ে গতকাল ১৯ ডিসেম্বর শেষ হলো ‘১২তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব’। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে ১৯৮৮ সাল থেকে দ্বিবার্ষিক ভিত্তিতে আয়োজিত এবারের উৎসবের শিরোনাম ছিল ‘ফ্রি সিনেমা, ফ্রি এক্সপ্রেশন।’
১৩ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধনে শুরু হওয়া সাত দিনব্যাপী উৎসবটি চলেছে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মূল ভেন্যু জাতীয় গণগ্রন্থাগার ছাড়াও জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ব্রিটিশ কাউন্সিল—উৎসব উপলক্ষে গত সাত দিন এই প্রাঙ্গণগুলো ছিল জমজমাট। এখানে বাংলাদেশসহ মোট ২৭টি দেশের প্রায় ২০০ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়গণগ্রন্থাগারে দেখানো হয় অনূর্ধ্ব ৬০ মিনিট ব্যাপ্তির প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলে সিলেকটেড ইউরোপিয়ান শটস ও শিল্পকলা একাডেমীতে মূলত এশিয়ান ইনডিপেনডেন্ট সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে।
এশীয় স্বল্প ও বিকল্পধারার সিনেমার সর্ববৃহৎ আয়োজন
এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, জাপান, তাইওয়ান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর—এশিয়ার এই ১১টি দেশের সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন তরুণ নির্মাতা ও চলচ্চিত্রকর্মীরা। ‘ট্র্যাভেলিং ফিল্ম সাউথ এশিয়া’ শিরোনামে নেপালের ফিল্ম সাউথ এশিয়া প্রামাণ্যচিত্র উৎসবের সর্বশেষ আয়োজনের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী ও কর্মশালা ছিল এ উৎসবের অন্যতম আর্কষণ। এ ছাড়া উৎসবে এবার আলমগীর কবির স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল, ‘এশিয়ার ইনডিপেনডেন্ট সিনেমার সাম্প্রতিক প্রবণতা।’ এখানে মূল বক্তা ছিলেন ফিলিপাইনের সিনেমালয়া চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক নেস্টর জার্ডিন। ফলে সবকিছু মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এশীয় স্বল্প ও বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের সর্ববৃহৎ আয়োজন। পাশাপাশি এখানে নাসির উদ্দীন ইউসুফের গেরিলা, মোরশেদুল ইসলামের আমার বন্ধু রাশেদ, তানভীর মোকাম্মেলের ১৯৭১ ও আবু সাঈদের অপেক্ষা— বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসমূহ প্রদর্শিত হয়।
তারেক মাসুদকে স্মরণ
১৯৮৮ সালে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের উৎসব পরিচালক ছিলেন তারেক মাসুদ। তাঁর মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত হলো ১২তম এই উৎসব। এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছিল তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে তারেক মাসুদের মুক্তির গান, মাটির ময়না, অর্ন্তযাত্রা ও রানওয়ে—এই চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এই উৎসব থেকে তারেক মাসুদের নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো এটি পেয়েছেন পোল্যান্ডের নির্মাতা মার্তা মিনরোভিচ। পিস অব সামার চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এই পুরষ্কার পান।
নানা দেশের সিনেমা ও সেমিনার
উৎসবে আফ্রিকান সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী ‘ফোকাস অন আফ্রিকান সিনেমা’, সম্প্রতি প্রয়াত তিন চলচ্চিত্রকার—ফ্রান্সের ক্রিস মার্কার, ভারতের মনি কাউল ও গ্রিক নির্মাতা থিও এনজেলোপেলাসের নির্বাচিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ফলে তাঁদের চলচ্চিত্রসহ নানা দেশের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ ঘটেছে দর্শকদের। এছাড়া সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রটিও এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।
সেমিনারের মধ্যে ‘এশিয়ার চলচ্চিত্রে নারীর উপস্থাপন’ শীর্ষক সেমিনার, জাতীয় সেমিনারসহ—নানা কারণেই এবারের উৎসবটি হয়ে উঠেছিল বৈচিত্র্যময়। উৎসবের অতিথি তালিকাও ছিল যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ—নেস্টর জার্ডিন ছাড়াও এসেছিলেন ফ্রান্সের আরনন্ড মাগন্দাগ্যারেন, ইংল্যান্ডের আফরিন ইকবাল, রাশিয়ার আইনুর আশকারভ, ভারতের দীক্ষা শর্মা, অম্লান দত্ত, সোহিনী ঘোষ, নেপালের রাজেশ গঙ্গাজু প্রমুখ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
পুরস্কার ও সম্মাননা
দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বড় বৈশিষ্ট্য, নতুন নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে এখানে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে এবার তারেক শাহরিয়ার ইনডিপেনডেন্ট শর্টসের পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের ইশতিয়াক জিকো। ৭২০ ডিগ্রি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এই পুরষ্কার পান। আর আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ও প্রামান্যচিত্র হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে ক্রোয়েশিয়ান পরিচালক জুরাজ লেরোটিক পরিচালিত দেন আই সি টানজা এবং ডেনমার্কের নির্মাতা ওলে বেন্ডজেনের প্রামাণ্যচিত্র ফুটবল ইজ গড।
এছাড়া এবারের উৎসবে ‘জুরিস স্পেশাল মেনশন’ লাভ করেছে বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র নাস্তি বিটার সুইট। নির্মাতা এ্যালিস ডি ভেসেল।
মুক্ত চলচ্চিত্র ও মুক্ত প্রকাশের এই উৎসব অন্যবারের চেয়ে এবার আরও বর্ণিল হয়ে উঠেছিল নানা বৈচিত্র্যময়তায়। উৎসবকে কেন্দ্র করে ভেন্যুগুলোতে প্রতিদিন সমাগম ঘটেছে নানা বয়সের চলচ্চিত্রকর্মী ও নির্মাতাদের। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরু এখানে যেমন আড্ডা জমিয়েছেন; মোরশেদুল ইসলাম, কাওসার চৌধুরীরা প্রতিদিনের আড্ডায় যেমন মেলে ধরেছেন স্মৃতির পসরা, তেমনই সারাক্ষণ নতুন নির্মাতাদের মুঠো মুঠো স্বপ্নে ১২তম স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের এই ব্যাপক আয়োজন যেন মুক্ত সিনেমার খোঁজে নিয়ে এসেছে নতুন দিনের ডাক।
অন্যদিকে পুশান এশিয়ান স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র প্রতিযোগিতায় এশিয়ান ফিল্ম একাডেমি ফান্ড পাওয়া বাংলাদেশি চলচ্চিত্র দ্য কনটেইনার-এর নির্মাতা আবু শাহেদ ইমন দক্ষিণ কোরিয়া থেকে বাংলাদেশে পৌঁছেই ছুটে এসেছেন গণগ্রন্থাগার প্রাঙ্গণে, স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবে। উৎসবের উদ্বোধনী দিনে প্রদর্শিত হয়েছে তাঁর দ্য কনটেইনার। উচ্ছ্বাস তাই নির্মাতার চোখেমুখে। বললেন, ‘একসময় এই উৎসবে কর্মী হিসেবে কাজ করেছি। এখন আমার ছবি দেখানো হলো—কী যে ভালো লাগছে, বোঝাতে পারব না!’
প্রথম ভালো লাগাটি দর্শকের, দ্বিতীয়টি নির্মাতার। দর্শক ও নির্মাতার মধ্যে এ রকম অসংখ্য ‘ভালো লাগা’ জন্ম দিয়ে গতকাল ১৯ ডিসেম্বর শেষ হলো ‘১২তম আন্তর্জাতিক স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসব’। বাংলাদেশ শর্ট ফিল্ম ফোরামের উদ্যোগে ১৯৮৮ সাল থেকে দ্বিবার্ষিক ভিত্তিতে আয়োজিত এবারের উৎসবের শিরোনাম ছিল ‘ফ্রি সিনেমা, ফ্রি এক্সপ্রেশন।’
১৩ ডিসেম্বর অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উদ্বোধনে শুরু হওয়া সাত দিনব্যাপী উৎসবটি চলেছে ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত। মূল ভেন্যু জাতীয় গণগ্রন্থাগার ছাড়াও জাতীয় জাদুঘর, বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমী ও ব্রিটিশ কাউন্সিল—উৎসব উপলক্ষে গত সাত দিন এই প্রাঙ্গণগুলো ছিল জমজমাট। এখানে বাংলাদেশসহ মোট ২৭টি দেশের প্রায় ২০০ চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এর মধ্যে জাতীয়গণগ্রন্থাগারে দেখানো হয় অনূর্ধ্ব ৬০ মিনিট ব্যাপ্তির প্রামাণ্যচিত্র ও স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র এবং জাতীয় জাদুঘরে প্রদর্শিত হয় পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রগুলো। এ ছাড়া ব্রিটিশ কাউন্সিলে সিলেকটেড ইউরোপিয়ান শটস ও শিল্পকলা একাডেমীতে মূলত এশিয়ান ইনডিপেনডেন্ট সিনেমা প্রদর্শিত হয়েছে।
এশীয় স্বল্প ও বিকল্পধারার সিনেমার সর্ববৃহৎ আয়োজন
এবারের উৎসবে বাংলাদেশসহ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নেপাল, জাপান, তাইওয়ান, আফগানিস্তান, দক্ষিণ কোরিয়া, থাইল্যান্ড ও সিঙ্গাপুর—এশিয়ার এই ১১টি দেশের সাম্প্রতিক সময়ের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়েছে। এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে এসেছেন তরুণ নির্মাতা ও চলচ্চিত্রকর্মীরা। ‘ট্র্যাভেলিং ফিল্ম সাউথ এশিয়া’ শিরোনামে নেপালের ফিল্ম সাউথ এশিয়া প্রামাণ্যচিত্র উৎসবের সর্বশেষ আয়োজনের নির্বাচিত চলচ্চিত্রের বিশেষ প্রদর্শনী ও কর্মশালা ছিল এ উৎসবের অন্যতম আর্কষণ। এ ছাড়া উৎসবে এবার আলমগীর কবির স্মারক বক্তৃতার বিষয় ছিল, ‘এশিয়ার ইনডিপেনডেন্ট সিনেমার সাম্প্রতিক প্রবণতা।’ এখানে মূল বক্তা ছিলেন ফিলিপাইনের সিনেমালয়া চলচ্চিত্র উৎসবের পরিচালক নেস্টর জার্ডিন। ফলে সবকিছু মিলিয়ে এটি হয়ে উঠেছে এশীয় স্বল্প ও বিকল্পধারার চলচ্চিত্রের সর্ববৃহৎ আয়োজন। পাশাপাশি এখানে নাসির উদ্দীন ইউসুফের গেরিলা, মোরশেদুল ইসলামের আমার বন্ধু রাশেদ, তানভীর মোকাম্মেলের ১৯৭১ ও আবু সাঈদের অপেক্ষা— বাংলাদেশের সাম্প্রতিক পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্রসমূহ প্রদর্শিত হয়।
তারেক মাসুদকে স্মরণ
১৯৮৮ সালে প্রথম স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র উৎসবের উৎসব পরিচালক ছিলেন তারেক মাসুদ। তাঁর মৃত্যুর পর অনুষ্ঠিত হলো ১২তম এই উৎসব। এবারের উৎসবটি উৎসর্গ করা হয়েছিল তারেক মাসুদ ও মিশুক মুনীরকে। ১৬ ডিসেম্বর জাতীয় জাদুঘরের মূল মিলনায়তনে তারেক মাসুদের মুক্তির গান, মাটির ময়না, অর্ন্তযাত্রা ও রানওয়ে—এই চারটি চলচ্চিত্র প্রদর্শিত হয়। এই উৎসব থেকে তারেক মাসুদের নামে একটি পুরস্কার প্রবর্তিত হয়েছে। এ বছর প্রথমবারের মতো এটি পেয়েছেন পোল্যান্ডের নির্মাতা মার্তা মিনরোভিচ। পিস অব সামার চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এই পুরষ্কার পান।
নানা দেশের সিনেমা ও সেমিনার
উৎসবে আফ্রিকান সিনেমার বিশেষ প্রদর্শনী ‘ফোকাস অন আফ্রিকান সিনেমা’, সম্প্রতি প্রয়াত তিন চলচ্চিত্রকার—ফ্রান্সের ক্রিস মার্কার, ভারতের মনি কাউল ও গ্রিক নির্মাতা থিও এনজেলোপেলাসের নির্বাচিত চলচ্চিত্র প্রদর্শনীর ফলে তাঁদের চলচ্চিত্রসহ নানা দেশের চলচ্চিত্র দেখার সুযোগ ঘটেছে দর্শকদের। এছাড়া সদ্য প্রয়াত বাংলাদেশী চলচ্চিত্রকার সুভাষ দত্তের অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী চলচ্চিত্রটিও এখানে প্রদর্শিত হয়েছে।
সেমিনারের মধ্যে ‘এশিয়ার চলচ্চিত্রে নারীর উপস্থাপন’ শীর্ষক সেমিনার, জাতীয় সেমিনারসহ—নানা কারণেই এবারের উৎসবটি হয়ে উঠেছিল বৈচিত্র্যময়। উৎসবের অতিথি তালিকাও ছিল যথেষ্ট বৈচিত্র্যপূর্ণ—নেস্টর জার্ডিন ছাড়াও এসেছিলেন ফ্রান্সের আরনন্ড মাগন্দাগ্যারেন, ইংল্যান্ডের আফরিন ইকবাল, রাশিয়ার আইনুর আশকারভ, ভারতের দীক্ষা শর্মা, অম্লান দত্ত, সোহিনী ঘোষ, নেপালের রাজেশ গঙ্গাজু প্রমুখ চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্ব।
পুরস্কার ও সম্মাননা
দুই বছর পর পর অনুষ্ঠিত স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের একটি বড় বৈশিষ্ট্য, নতুন নির্মাতাদের উৎসাহিত করতে এখানে দেওয়া হয় বেশ কয়েকটি পুরস্কার ও সম্মাননা। এর মধ্যে এবার তারেক শাহরিয়ার ইনডিপেনডেন্ট শর্টসের পুরস্কার জিতেছেন বাংলাদেশের ইশতিয়াক জিকো। ৭২০ ডিগ্রি চলচ্চিত্রের জন্য তিনি এই পুরষ্কার পান। আর আন্তর্জাতিক শ্রেষ্ঠ স্বল্পদৈর্ঘ্য কাহিনিচিত্র ও প্রামান্যচিত্র হিসেবে পুরস্কার পেয়েছে যথাক্রমে ক্রোয়েশিয়ান পরিচালক জুরাজ লেরোটিক পরিচালিত দেন আই সি টানজা এবং ডেনমার্কের নির্মাতা ওলে বেন্ডজেনের প্রামাণ্যচিত্র ফুটবল ইজ গড।
এছাড়া এবারের উৎসবে ‘জুরিস স্পেশাল মেনশন’ লাভ করেছে বেলজিয়ামের চলচ্চিত্র নাস্তি বিটার সুইট। নির্মাতা এ্যালিস ডি ভেসেল।
মুক্ত চলচ্চিত্র ও মুক্ত প্রকাশের এই উৎসব অন্যবারের চেয়ে এবার আরও বর্ণিল হয়ে উঠেছিল নানা বৈচিত্র্যময়তায়। উৎসবকে কেন্দ্র করে ভেন্যুগুলোতে প্রতিদিন সমাগম ঘটেছে নানা বয়সের চলচ্চিত্রকর্মী ও নির্মাতাদের। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের পুরোধা মুহম্মদ খসরু এখানে যেমন আড্ডা জমিয়েছেন; মোরশেদুল ইসলাম, কাওসার চৌধুরীরা প্রতিদিনের আড্ডায় যেমন মেলে ধরেছেন স্মৃতির পসরা, তেমনই সারাক্ষণ নতুন নির্মাতাদের মুঠো মুঠো স্বপ্নে ১২তম স্বল্পদৈর্ঘ্য ও মুক্ত চলচ্চিত্র উৎসবের এই ব্যাপক আয়োজন যেন মুক্ত সিনেমার খোঁজে নিয়ে এসেছে নতুন দিনের ডাক।
No comments