হলিউড- জ্যাক কেরুয়াকের অন দ্য রোড
ছিলেন বিট প্রজন্মের অন্যতম পুরোধা। গত শতাব্দীর পঞ্চাশের দশকে এই প্রজন্ম আমেরিকান সংস্কৃতিতে ক্ষণস্থায়ী হলেও একটা ঢেউ তুলেছিল। বোহেমিয়ান জীবনকে বেছে নিয়েছিলেন আদর্শ হিসেবে। জীবনের আসল রূপ খুঁজতে নেমে পড়েছিলেন পথে। জ্যাক কেরুয়াকও চষে বেড়িয়েছেন পুরো আমেরিকা।
জ্যাক কেরুয়াকের সেই অভিজ্ঞতার ফসল অন দ্য রোড নামের অসামান্য এক উপন্যাস। সেই উপন্যাসই রুপালি পর্দায় তুলে এনেছেন পরিচালক ওয়াল্টার স্যালেস। বৃত্ত ভাঙার সেই গল্পে অন্যতম চরিত্র হিসেবে আছেন কারস্টেন স্টুয়ার্ট, টোয়ালাইটের বেলা চরিত্রটির বৃত্ত থেকে যিনি বেরিয়ে আসতে চাইছেন নিজেও।
স্টুয়ার্টের চরিত্রটির নাম ম্যারিলু। তরুণ লেখক স্যাল প্যারাডাইসের প্রেমিকা। প্যারাডাইসের জীবনস্বর্গ তছনছ হয়ে যায় ডিন মরিয়ার্টি নামের এক ব্যক্তির আগমনে। মরিয়ার্টির জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিই আলাদা। সেখানে সুখের সংজ্ঞা আর ১০ জনের সঙ্গে মেলে না। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ সে ভাঙতে চায়। শিকড়স্বভাবের মানুষ সে নয়। থিতু হয় না কোথাও। যেন অ্যাডভেঞ্চারই তার প্রেমিকা।
মরিয়ার্টি ভীষণভাবে প্রভাবিত করে প্যারাডাইসকে। দুজন মিলে বেরিয়ে পড়ে আসল আমেরিকা আবিষ্কারের উদ্দেশে। সঙ্গে থাকে প্যারাডাইসের প্রেমিকা। এই যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে মেশে কার্লো মার্ক্সের মতো তরুণেরা, চিন্তাধারায় যারা অভিন্ন এক সুতোয় বাঁধা।
প্যারাডাইস চরিত্রটির আড়ালে আছেন কেরুয়াক নিজে। মরিয়ার্টি হচ্ছেন নিয়াল কাসাডি। কার্লো মার্ক্স হচ্ছেন বিট প্রজন্মের আরেক পুরোধা অ্যালেন গিনসবার্গ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়ে লেখা বিখ্যাত ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’-এর রচয়িতা।
আধা শতাব্দী আগে প্রকাশিত কেরুয়াকের এই উপন্যাসের আবেদন এখনো কমেনি, বরং তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করার সময় এসে গেছে বলে মনে করেন পরিচালক স্যালেস। আর এ কারণেই তিনি বানিয়েছেন ছবিটি। গত কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়েছে ছবিটির। অবশ্য প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। সেপ্টেম্বরের টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে অবশ্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছে ছবিটি। গত অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে মুক্তি দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রে অন দ্য রোড মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল।
হুট করে যেন কেরুয়াকের পুনর্জন্ম হচ্ছে। কারণ, একই সময় তাঁকে নিয়ে এলে আরও দুটি ছবি তৈরি হয়েছে। অন দ্য রোড-এর অনেকটা সিক্যুয়েল উপন্যাস বিগ সার নিয়ে বানানো হয়েছে আরেকটি ছবি। এ ছাড়া ১৯৪৪ সালে নিউইয়র্কে বিট প্রজন্ম যখন একই ছাতার নিচে সমবেত হলো, সেই সময়কার গল্প নিয়ে কিল ইওর ডার্লিংস।
অন দ্য রোড-এ ডিন মরিয়ার্টির চরিত্রে অভিনয় করা গ্যারেট হেডলান্ড বলছেন, ‘এখন সময়টা তাঁরই। অন দ্য রোড প্রকাশিত হওয়ার ৫০ বছর পর এসে জ্যাক কেরুয়াক তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতিটা পাচ্ছেন।’ কেরুয়াক বেঁচে থাকলে হয়তো এই ‘স্বীকৃতি’ শব্দটায় ভীষণ আপত্তি করতেন। চিরকালই প্রথা ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী ছিলেন। স্বীকৃতির তোয়াক্কা কোনো কালেও করেননি। অবশ্য কেরুয়াকের আত্মীয় জন সামপাস বলছেন, ‘জ্যাক হয়তো এসব ভালোই বাসত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে এখন আর আমাদের মধ্যে নেই।’ জীবনের সঙ্গে চরম অনাচার করা কেরুয়াক ১৯৬৯ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে লিভারের অসুখে মারা যান।
পরিচালক স্যালেস অবশ্য দাবি করছেন, কেরুয়াককে আবার এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার সময় এসে গেছে। কারণ, দীর্ঘদিনের ভোগবাদী সমাজ একটা অচলায়তন তৈরি করে রেখেছে। এই সময় বিট প্রজন্মের মতো খ্যাপা মানুষের প্রয়োজন, ‘কিছু কিছু লেখক তাঁদের সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকেন। কিন্তু একটা প্রশ্নচিহ্ন সব সময়ই থাকবে, কেন কিছু কিছু সুরকার বা কবির সৃষ্টি বহু বছর পর আমরা নতুন করে আবার আবিষ্কার করি?’
সময় এসেছে কেরুয়াককে নতুন করে আবিষ্কার করার।
রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে
স্টুয়ার্টের চরিত্রটির নাম ম্যারিলু। তরুণ লেখক স্যাল প্যারাডাইসের প্রেমিকা। প্যারাডাইসের জীবনস্বর্গ তছনছ হয়ে যায় ডিন মরিয়ার্টি নামের এক ব্যক্তির আগমনে। মরিয়ার্টির জীবনকে দেখার দৃষ্টিভঙ্গিই আলাদা। সেখানে সুখের সংজ্ঞা আর ১০ জনের সঙ্গে মেলে না। জীবনের স্বাভাবিক ছন্দ সে ভাঙতে চায়। শিকড়স্বভাবের মানুষ সে নয়। থিতু হয় না কোথাও। যেন অ্যাডভেঞ্চারই তার প্রেমিকা।
মরিয়ার্টি ভীষণভাবে প্রভাবিত করে প্যারাডাইসকে। দুজন মিলে বেরিয়ে পড়ে আসল আমেরিকা আবিষ্কারের উদ্দেশে। সঙ্গে থাকে প্যারাডাইসের প্রেমিকা। এই যাত্রাপথে তাদের সঙ্গে মেশে কার্লো মার্ক্সের মতো তরুণেরা, চিন্তাধারায় যারা অভিন্ন এক সুতোয় বাঁধা।
প্যারাডাইস চরিত্রটির আড়ালে আছেন কেরুয়াক নিজে। মরিয়ার্টি হচ্ছেন নিয়াল কাসাডি। কার্লো মার্ক্স হচ্ছেন বিট প্রজন্মের আরেক পুরোধা অ্যালেন গিনসবার্গ, আমাদের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় নিয়ে লেখা বিখ্যাত ‘সেপ্টেম্বর অন যশোর রোড’-এর রচয়িতা।
আধা শতাব্দী আগে প্রকাশিত কেরুয়াকের এই উপন্যাসের আবেদন এখনো কমেনি, বরং তাঁকে নতুন করে আবিষ্কার করার সময় এসে গেছে বলে মনে করেন পরিচালক স্যালেস। আর এ কারণেই তিনি বানিয়েছেন ছবিটি। গত কান চলচ্চিত্র উৎসবে প্রিমিয়ার হয়েছে ছবিটির। অবশ্য প্রতিক্রিয়া ছিল মিশ্র। সেপ্টেম্বরের টরন্টো চলচ্চিত্র উৎসবে অবশ্য বেশ সুনাম কুড়িয়েছে ছবিটি। গত অক্টোবরে যুক্তরাজ্যে মুক্তি দেওয়া হলেও যুক্তরাষ্ট্রে অন দ্য রোড মুক্তি পাচ্ছে আগামীকাল।
হুট করে যেন কেরুয়াকের পুনর্জন্ম হচ্ছে। কারণ, একই সময় তাঁকে নিয়ে এলে আরও দুটি ছবি তৈরি হয়েছে। অন দ্য রোড-এর অনেকটা সিক্যুয়েল উপন্যাস বিগ সার নিয়ে বানানো হয়েছে আরেকটি ছবি। এ ছাড়া ১৯৪৪ সালে নিউইয়র্কে বিট প্রজন্ম যখন একই ছাতার নিচে সমবেত হলো, সেই সময়কার গল্প নিয়ে কিল ইওর ডার্লিংস।
অন দ্য রোড-এ ডিন মরিয়ার্টির চরিত্রে অভিনয় করা গ্যারেট হেডলান্ড বলছেন, ‘এখন সময়টা তাঁরই। অন দ্য রোড প্রকাশিত হওয়ার ৫০ বছর পর এসে জ্যাক কেরুয়াক তাঁর প্রাপ্য স্বীকৃতিটা পাচ্ছেন।’ কেরুয়াক বেঁচে থাকলে হয়তো এই ‘স্বীকৃতি’ শব্দটায় ভীষণ আপত্তি করতেন। চিরকালই প্রথা ও প্রতিষ্ঠানবিরোধী ছিলেন। স্বীকৃতির তোয়াক্কা কোনো কালেও করেননি। অবশ্য কেরুয়াকের আত্মীয় জন সামপাস বলছেন, ‘জ্যাক হয়তো এসব ভালোই বাসত। দুর্ভাগ্যজনকভাবে সে এখন আর আমাদের মধ্যে নেই।’ জীবনের সঙ্গে চরম অনাচার করা কেরুয়াক ১৯৬৯ সালে মাত্র ৪৭ বছর বয়সে লিভারের অসুখে মারা যান।
পরিচালক স্যালেস অবশ্য দাবি করছেন, কেরুয়াককে আবার এই প্রজন্মের কাছে তুলে ধরার সময় এসে গেছে। কারণ, দীর্ঘদিনের ভোগবাদী সমাজ একটা অচলায়তন তৈরি করে রেখেছে। এই সময় বিট প্রজন্মের মতো খ্যাপা মানুষের প্রয়োজন, ‘কিছু কিছু লেখক তাঁদের সময়ের তুলনায় অনেক এগিয়ে থাকেন। কিন্তু একটা প্রশ্নচিহ্ন সব সময়ই থাকবে, কেন কিছু কিছু সুরকার বা কবির সৃষ্টি বহু বছর পর আমরা নতুন করে আবার আবিষ্কার করি?’
সময় এসেছে কেরুয়াককে নতুন করে আবিষ্কার করার।
রাজীব হাসান
এলএ টাইমস ও হলিউড রিপোর্টার অবলম্বনে
No comments