বিচারের বাণী কাঁদে নীরবে by সোহায়েল হোসেন সোহেল

বিশ্বজিৎ মা-বাবার মুখে একটু হাসি ফোটাতে, সংসারকে সচ্ছল করতে পাড়ি দিয়েছিলেন ঢাকায়। তিলতিল করে গড়ে তোলা টেইলার্সের ব্যবসা সেই স্বপ্ন পূরণের পথও দেখাচ্ছিল। কিন্তু তার স্বপ্ন ভাঙতেও বেশি সময় লাগল না। আসলে তার সাজানো স্বপ্ন ভেঙে দেওয়া হলো।
তার সেই সুখ, তার সেই স্বপ্ন কেড়ে নিল জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়পড়ূয়া ছাত্ররা!
বিশ্বজিৎদের জীবন পুরনো কাগজের মতো। যেটা পড়া যায় না, নতুন করে লেখা যায় না। তাই বিশ্বজিৎ খুন হওয়ার পর তার হত্যাকারীদের গ্রেফতার ও দোষী সাব্যস্ত করে শাস্তির বদলে এ ঘটনার হোতাদের বাঁচাতে যে কাণ্ডকারখানা আমাদের মন্ত্রী, আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এবং সর্বশেষ চিকিৎসকরা করছেন বা এখনও করে যাচ্ছেন, তা চেয়ে চেয়ে দেখা ছাড়া আমাদের মতো সাধারণ জনগণ কীবা করতে পারে?
সাধারণ মানুষ যারা বিশ্বজিৎকে কুপিয়ে মারার দৃশ্য টেলিভিশনে দেখেছে, সংবাদপত্রে পড়েছে, তারা সবাই চায় খুনিরা যে দলেরই হোক না কেন, তাদের গ্রেফতার করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেওয়া হোক। তবে গণমাধ্যমের কল্যাণে সাধারণ জনগণ বুঝে গেছে_ নাহিদ, লিমন, রফিক, আল আমিন, শাওন, শাকিল, ওবায়দুল, আজিজ কোন দলের সঙ্গে জড়িত। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য_ বিশ্বজিতের খুনিরা ছাত্রলীগের কেউ নয়। তাদের বক্তব্য শুনে বোঝা গেছে, বিশ্বজিতের হত্যাকাণ্ডে জড়িতরা জামায়াত-শিবির অথবা ছাত্রদলের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। জনগণ যদি মেনে নেয়_ তারা ছাত্রলীগের কেউ নয়, তারা সবাই ছাত্রশিবিরের বা ছাত্রদলের; তবে বিশ্বজিৎকে যখন মারা হচ্ছিল তখন পাশেই তো পুলিশ দণ্ডায়মান ছিল। পুলিশ কেন চুপ করে ছিল? কেন পুলিশ ছাত্রশিবির বা ছাত্রদলের ওই গুণ্ডাদের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড করতে দেখেও তাদের গ্রেফতার করল না? নাহিদকে ছাত্রলীগের নেতাদের সঙ্গে ছাত্রলীগের ব্যানারে মিছিল করতে দেখা গেল কেন? লিমন, রফিক, শাওন, শাকিল, ওবায়দুল ও আজিজ ছাত্রলীগের নাম ভাঙিয়ে চাঁদাবাজি, ছিনতাই করত। তাদের নামে একাধিক মামলাও আছে। তারা যদি ছাত্রলীগের কেউ না-ই হবে, তবে কেন আগের মামলার পরিপ্রেক্ষিতে তাদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় নিয়ে আসা হলো না? জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ ছাত্রছাত্রীরা বলছেন, খুনিরা সবাই ছাত্রলীগ করত। ক্যাম্পাসে নানা ধরনের অপকর্ম করে বেড়াত। ক্যাম্পাসের সাধারণ ছেলেমেয়ে সবাই কি মিথ্যা কথা বলছেন?
বিশ্বজিৎকে কারা খুন করেছে_ গণমাধ্যমের কল্যাণে স্পষ্ট দেখা গেছে। আমাদের দেশের প্রশাসন তাদের গ্রেফতার করে আইনের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর পরিবর্তে তাদের নিয়ে মেতে উঠেছে রাজনীতির নোংরা খেলায়। যে কয়েকজনকে পুলিশ ধরেছে, তারা আদালতে স্বীকার করেছে বিশ্বজিৎকে তারা কী নৃশংসভাবে কুপিয়েছে, পিটিয়েছে! জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাদের নির্দেশেই তারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে_ এটাও স্বীকার করেছে। তাহলে বোঝাই যাচ্ছে, বিশ্বজিৎকে প্রকাশ্যে যারা কুপিয়েছিল, পিটিয়ে হত্যা করেছিল আর যারা তাদের নির্দেশ দিয়েছিল, তারা সবাই ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। অথচ আমাদের মন্ত্রীরা সংবাদ সম্মেলন করে দেশের কাছে প্রমাণ করতে চাইলেন_ তারা কেউ ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত নয়।
আমরা এখনও জানি না, বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের বিচার হবে কি-না। কারণ এ হত্যাকাণ্ডের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত যে আলামত আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাতে বিচার প্রক্রিয়া কতদূর এগোবে, আসামি সবাইকে গ্রেফতার করা হবে কি-না, ঠিক বোঝা যাচ্ছে না। বিশ্বজিৎকে চাপাতি দিয়ে কোপানোর কথা, রড দিয়ে পিটিয়ে মারার কথা শাকিল, নাহিদ আদালতে দাঁড়িয়ে স্বীকার করল। আর ময়নাতদন্তে চিকিৎসক রিপোর্ট দিলেন, বিশ্বজিতের শরীরে চাপাতির কোপের কোনো চিহ্ন নেই। সেলুকাস, কী বিচিত্র এই দেশ!
এভাবে বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত খুনিরা যদি পার পেয়ে যায়, তবে বিশ্বজিতের পরিবারের কাছে আমাদের দেশের সরকার, প্রশাসন, গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র দায়ী থেকে যাবে। তাই দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হওয়া জরুরি।
য়সোহায়েল হোসেন সোহেল :মাস্টার্স গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়
ংড়হধষরধশধংয৬৫০@মসধরষ.পড়স

No comments

Powered by Blogger.