মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা- দেশের মানচিত্র বদলানোর ষড়যন্ত্র চলছেঃ খালেদা জিয়া by মান্নান মারুফ
বিএনপি আয়োজিত মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সরকারের কঠোর সমালোচনা করেছেন বিরোধী দলীয় নেতা ও বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া।
রাজধানীর মহানগর নাট্যমঞ্চে আয়োজিত এ বিশাল সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে অংশ নিয়ে নিজের ভাষণে তিনি বলেন, “দুই আবুলের বিরুদ্ধে মামলা হলে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়ন করবে, কিন্তু সরকার এই আবুলদের বিরুদ্ধে মামলা দিচ্ছে না কারণ, যেমন কান টানলে মাথা আসে তেমনি এই আবুলদের পাশাপাশি অন্য রাঘব বোয়ালদের নামও চলে আসবে।“সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ কর্তৃক সংঘটিত ধারাবাহিক হত্যাকাণ্ড, ফেলানি হত্যা, বিডিআর হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি প্রসঙ্গ উদ্ধৃত করে সরকারের বিরুদ্ধে দেশবিরোধী ষড়যন্ত্রে লিপ্ত থাকার অভিযোগ আনেন খালেদা জিয়া।
তিনি বলেন,“দেশের মানচিত্র আজ বদলে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। এ ষড়যন্ত্র মোকাবেলায় মুক্তিযোদ্ধাদের সজাগ থাকতে হবে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা, মানবাধিকার ও ভোটের অধিকারের দাবিতে আরেকবার ঝাঁপিয়ে পড়তে হবে দেশ রক্ষায়।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের বয়স হয়ে গেলেও আসন্ন সংগ্রামে তরুণ প্রজন্ম তাদের পাশেই থাকবে।”
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে মিথ্যাবাদী বলে উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, তার সরকারের মন্ত্রী উপদেষ্টারা সবাই এখন কেবল কমিশন নিয়ে ভাবছে। দেশের উন্নয়ন নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই। ‘এরা সবাই চোর’, বলেন খালেদা জিয়া।
আওয়ামী লীগ সরকারের পররাষ্ট্রনীতি নতজানু উল্লেখ করে তিনি বলেন “এ সরকার চিরস্থায়ীভাবে ক্ষমতায় থাকার জন্য প্রভু তৈরি করেছে, কিন্তু বিএনপি প্রভু নয় প্রতিবেশীদের সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক চায়, মাথা উচু করে বাঁচতে চায়।”
তিনি বলেন, “এই সরকার যতদিনই ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করুক তাদের সে চেষ্টা সফল হবে না।”
খালেদা জিয়া বলেন, “সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য না কাজ না করে আছে শুধু কমিশন খাওয়ার মতলবে।”
তিনি এ সময় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের বিরুদ্ধে সরকারের যে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্বাস দিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, “যদি আজকের সমাবেশে যোগ দেওয়ার কারণে সরকার কারও ভাতা বন্ধ করে দেয় কিংবা সনদ বাতিল করে, তবে বিএনপি ক্ষমতায় গিয়ে তাদের সব ভাতা ফেরত দেবে।”
পাশাপাশি মুক্তিযোদ্ধাদের ভাতা আরও বাড়িয়ে দেওয়ারও অঙ্গীকার করে তিনি বলেন, “আওয়ামী লীগ নয় আমিই মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণের জন্য প্রথম মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় করেছিলাম।”
তিনি বলেন, “ এই সরকার দুর্নীতিবাজ, লুটপাটকারীদের গ্রেফতার না করে উল্টো শীর্ষ সন্ত্রাসীদের ছেড়ে দিচ্ছে। মীর্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ আমার দেশ সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে মামলা দিয়ে হয়রানি করছে।
বিশ্বজিৎ হত্যাকাণ্ড প্রসঙ্গে তিনি প্রধানমন্ত্রীকে মিথ্যাবাদী আখ্যায়িত করে বলেন, “বিশ্বজিতকে হত্যা করেছে ছাত্রলীগ। প্রথমে অস্বীকার করলেও শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রীকে তা স্বীকার করতে হয়েছে।”
তিনি সরকারকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, “তাদের নির্দেশেই বিশ্বজিতকে হত্যা করা হয়েছে।” বিএনপি ক্ষমতায় এলে বিশ্বজিৎ, সিরাজ শিকদারসহ আওয়ামী লীগ শাসনামলে সংঘটিত অন্যান্য হত্যাকাণ্ডের বিচার করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
তিনি হলমার্ক, শেয়ার বাজার, কুইক রেন্টাল, ভিওওয়াইপি ইত্যাদি কেলেঙ্কারির কথা উল্লেখ করেন বলেন, “এ সরকার চোরদের বাঁচানোর চেষ্টা করছে। সরকারের দুর্নীতির কারণে পদ্মা সেতু আজ শেষ হয়ে গেছে, ডেসটিনি আর হলমার্ক আর কুইক রেন্টাল থেকে শুরু করে শেয়ারবাজার থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা তারা লুটপাট করেছে। আর এসব লুটপাটের সঙ্গে জড়িত প্রধানমন্ত্রীর আত্মীয় স্বজন।” এসব দুর্নীতির জবাব একদিন দিতে হবে বলে তিনি তার ভাষণে উল্লেখ করেন।
তিনি বলেন, “ দেশে গ্যাস নাই, পানি নাই, ঘরে ঘরে চাকরি নাই, বিদ্যুৎ নাই। কুইক রেন্টালের নামে সরকারি লুটপাট চলছে। কোনো বিনিয়োগ নেই। আছে শুধু গার্মেন্টসে আগুন আর লুটপাট। জনগণের দিকে সরকারের কোনো লক্ষ্য নেই, তারা ব্যস্ত আছে কমিশন আর লুটপাট নিয়ে।”
তিনি বলেন,“ সরকারের উপদেষ্টা, মন্ত্রী, এমপি থেকে শুরু করে সরকারের শীর্ষ ব্যক্তিদের আত্মীয় স্বজন সবাই চোর। দেশে বেকার বাড়ছে কিন্তু কোনো কাজ নেই। যেটুকু কাজ হয় তারও টেন্ডার না হয়ে যুবলীগ আ’লীগদের দিয়ে দেওয়া হয়।”
সংবর্ধনায় যোগ দেওয়া মুক্তিযোদ্ধাদের প্রকৃত রণাঙ্গনের মুক্তিযোদ্ধা উল্লেখ করে খালেদা জিয়া আওয়ামী লীগ সমর্থক মুক্তিযোদ্ধাদের অন্য দেশে পাড়ি দেওয়া মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে অভিহিত করেন।
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের দোহাই দিয়ে আওয়ামী লীগ স্বাধীনতার পর সাড়ে তিন বছর ক্ষমতায় ছিলো, তখন তারা কি করেছিলো দেশবাসী তা জানে। ওই সময় তারা হিন্দুদের ঘরবাড়ি লুটপাট থেকে শুরু করে ব্যাংক ডাকাতি পর্যন্ত করেছে।”
তিনি বলেন, “ওই সময় দেশের সম্পদ ভিনদেশীরা নিয়ে গেছে কিন্তু আ’লীগ তার প্রতিবাদ করেনি।”
আওয়ামী লীগের স্বাধীনতা পরবর্তী সাড়ে তিন বছরের শাসনামলে ৪০ হাজার মুক্তিযোদ্ধাকে হত্যা করা হয়েছিলো উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন, “একদিন এ সব হত্যাকাণ্ডেরও বিচার হবে।”
আ’লীগ মুক্তিযুদ্ধের পর দেশের মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ভাবেনি উল্লেখ করে খালেদা জিয়া বলেন,“ এজন্যই হেনরি কিসিঞ্জার দেশকে তলাবিহীন ঝুড়ি বলেছিলেন। শেখ মুজিব বলেছিলেন সবাই পায় সোনার খনি আমি পাই চোরের খনি।”
আ’লীগ পুনরায় দেশে বাকশাল কায়েমের চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন খালেদা জিয়া। তিনি বলেন,“ সরকার ক্ষমতায় এসেই আবারও একদলীয় শাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যস্ত হয়ে পড়ছে। তাদের মনে রাখা উচিত বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের পৈতৃক সম্পত্তি নয়।“
তিনি বলেন,“ তারা বিএনপিকে সভাসমাবেশ করতে দিচ্ছে না। মনে হয় বাংলাদেশ তাদের পৈতৃক সম্পত্তি।”
বুধবার দুপুর দুইটায় অনুষ্ঠিত হওয়া এ সংবর্ধনা সমাবেশের সভাপতিত্ব করেছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা ও মুক্তিযোদ্ধা সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজক কমিটির আহবায়ক ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর (বীর উত্তম)।
অনুষ্ঠানে খালেদা জিয়ার পাশাপাশি বক্তব্য রাখেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ, ব্যারিস্টার মওদুদ, তরিকুল ইসলাম, মীর্জা আব্বাস। এছাড়া সাদেক হোসেন খোকা, আব্দুল্লাহ আল নোমান, শাহ মোয়াজ্জেম, মেজর হাফিজ বীর বিক্রমসহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারাও অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন।
No comments