পাঠ্যবইয়ের ই-সংস্করণ-যুগোপযোগী উদ্যোগ
ডিজিটাল পৃথিবীতে ইলেকট্রনিক বই বা ই-বুক একটি যুগান্তকারী উদ্যোগ হিসেবে স্বীকৃত। নতুন পৃথিবীর মানুষের কাছে ই-বুক ধারণাটি শুধু বইকে সহজলভ্য করে তোলেনি। বইকে জনপ্রিয় করে তোলার পেছনে ই-বুকের বিশেষ ভূমিকা রয়েছে।
বলা হয়ে থাকে, ই-বুকের উত্থান গত কয়েক দশকের পাঠাভ্যাসের ক্ষেত্রে একটি দৃশ্যমান পরিবর্তন নিয়ে এসেছে। প্রযুক্তিনির্ভর ব্যস্ত সময়ে বহনযোগ্য যন্ত্রের সাহায্যে ই-বুক পড়ার সংস্কৃতি সারা পৃথিবীতেই নতুন এক পাঠক গোষ্ঠী তৈরি করেছে। ১৯৭১ সালে প্রজেক্ট গুটেনবার্গের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক বই বা ই-বুকের যাত্রা শুরু হলেও আমাদের দেশে ই-বুক ধারণাটি ততটা জনপ্রিয়তা লাভ করেনি। এর পেছনে কয়েকটি কারণ আছে। প্রথমত, এ দেশে এখনও দ্রুতগতির ইন্টারনেট ও কম্পিউটার সুবিধা সহজলভ্য হয়নি। দ্বিতীয়ত, কম্পিউটার ছাড়া অন্য যেসব মাধ্যমে ই-বুক পাঠ করা সম্ভব তেমন যন্ত্রগুলোও সহজলভ্য নয়। তৃতীয়ত, যে ব্যবহারকারীরা ইতিমধ্যে ইন্টারনেট ব্যবহার করেন তাদের জন্য সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগে ই-বুক সরবরাহের সংগঠিত উদ্যোগ এ যাবৎ আসেনি। চতুর্থত, দেশে কোনো স্বীকৃত অনলাইন লেনদেনের ব্যবস্থা না থাকায় বাণিজ্যিক উদ্যোগে ই-বুক সরবরাহের বাণিজ্যিক উদ্যোগও আসেনি। বস্তুত, তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেট সেবা ব্যবহারের ক্ষেত্রে আমাদের পশ্চাৎপদ ও রক্ষণশীল ধ্যান-ধারণা আমাদের এক্ষেত্রে অনেক পিছিয়ে দিয়েছে। এমন একটি বাস্তবতায় খোদ সরকারি উদ্যোগে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত পাঠ্যবইগুলোর ই-সংস্করণ প্রকাশের উদ্যোগ সবাইকে আশান্বিত ও উৎসাহিত করে তুলেছে। শিক্ষার্থীদের জন্য পাঠ্যবই সহজলভ্য করার এ উদ্যোগটি শিক্ষাক্ষেত্রে সুদূরপ্রসারী প্রভাব ফেলবে। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ কার্যক্রমের উদ্বোধন করেছেন, এ সম্পর্কে চমৎকার বক্তব্য দিয়েছেন। সরকারের এ উদ্যোগের ফলে ই-বুক জনপ্রিয় হবে। সরকারের প্রতিশ্রুত ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠনের উদ্যোগে এটি একটি উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ হিসেবে বিবেচিত হবে। তবে ই-বুকের উদ্যোগ পাঠ্যবইয়েই সীমাবদ্ধ থাকা উচিত নয়। গুটেনবার্গ, অ্যামাজন, গুগলসহ ই-বুক প্রস্তুত, বিতরণ ও বিক্রয়কারী সংস্থাগুলো ইতিমধ্যে লাখ লাখ ই-বুক তৈরি করেছে। বিশ্বের বড় বড় লাইব্রেরি ই-বুক কার্যক্রমের আওতায় তাদের সব সংগ্রহকে ই-বুকে পরিণত করেছে। ই-বুকের এ বিপুল সম্ভারে বাংলা বই নেই বললেই চলে। ডিজিটাল পৃথিবীতে বাংলা বইয়ের সংস্থান বাড়াতে বাংলাদেশ সরকারের অনেক করণীয় আছে। সরকার উদ্যোগ নিলে এখানকার গুরুত্বপূর্ণ বইগুলোর ই-সংস্করণ অনলাইনে প্রচার হতে পারে। প্রাথমিকভাবে সরকার পাঠ্যবইয়ের সহায়ক বইগুলোকেও অনলাইনে প্রকাশের উদ্যোগ নিতে পারে। দেশের সমৃদ্ধ লাইব্রেরির মূল্যবান বইগুলোকেও পাঠকের কাছে সহজলভ্য করার উদ্যোগ আসতে পারে। শুধু তা-ই নয়, সরকারের সমর্থন থাকলে বেসরকারি উদ্যোগও এক্ষেত্রে উৎসাহিত হতে পারে। বেসরকারি উদ্যোগে ই-বুক প্রস্তুত ও বিক্রির ব্যবস্থা করতে হলে দেশে স্বীকৃত অনলাইন ক্রয়-বিক্রয়ের ব্যবস্থা চালু হওয়া দরকার। শুধু ই-বুকের জন্যই নয়, আউট সোর্সিংসহ অনলাইন বাণিজ্য বাড়াতে হলে এর বিকল্প নেই। সরকার ই-বুক নিয়ে যে ইতিবাচক পদক্ষেপ নিল তা একটি শুভ সূচনা। আমরা মনে করি, একটি বইনির্ভর ও পাঠাভ্যাসে অভ্যস্ত নতুন প্রজন্ম তৈরিতে এ উদ্যোগটি আগামীতে বিস্তৃত হবে। শিখব যে কোনো স্থানে, যে কোনো সময়_ স্লোগান নিয়ে যে কার্যক্রমের সূচনা হলো তা সফল হোক, এটাই প্রত্যাশা সবার।
No comments