গামবারে নিপ্পন-অকৃতজ্ঞ নয় জাপান প্রবাসীরা by কাজী ইনসানুল হক
বিশ্বব্যাপী যেখানেই কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে সবার আগে জাপান সেখানে জরুরি সাহায্য ও সহযোগিতার ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়। অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের এই সহযোগিতা হয় মানবিক। আমেরিকা-ব্রিটেন-রাশিয়া বা চীনের মতো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকে না তাদের এই সাহায্যের আড়ালে।
আর তাই জাপানের এই মহাবিপর্যয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ জাপানের প্রতি তাদের সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। হতদরিদ্র অনেক দেশও সাহায্য পাঠায়। একটু দেরিতে হলেও বাংলাদেশ বিমানভর্তি সাহায্য পাঠায়, যা প্রশংসিত হয়
১১ মার্চ, ২০১১। প্রায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আর স্মরণকালের ভয়ঙ্কর সুনামিতে বিধ্বস্ত জাপান। ভূমিকম্পের আফটার শক আর 'আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে' সতর্কতা এবং অনিশ্চিত ট্রেন চলাচলের ঝুঁকি নিয়েও প্রবাসীরা ১৩ মার্চ দুপুরে দূতাবাসের কনফারেন্স রুমে সমবেত হন। দল-মত নির্বিশেষে কী করা যায়, কী করতে হবে তা জানতে আর জানাতে কমিউনিটির প্রতিনিধিরা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়ান। বিধ্বস্ত অঞ্চলে প্রবাসীরা বেঁচে আছেন কি-না সেটা জানা জরুরি। দূতাবাসে ইমারজেন্সি সেল খোলা হয়। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করা হয় দূতাবাসে সংরক্ষিত তথ্য ও অন্যান্য সোর্স নিয়ে। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দূতাবাসের সঙ্গে কমিউনিটির প্রতিনিধি মিলে জরুরি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মিয়াগি অঞ্চলে যাওয়া হবে এবং আটকেপড়া প্রবাসীদের টোকিওতে নিয়ে আসা হবে। পরদিনই কমিউনিটির পক্ষে মাসুদুর রহমান মাসুদ ও দেলওয়ার হোসেন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান ও নাজমুল হুদা বড় একটি বাস ও দুটি সিডান কার নিয়ে রওনা দেন। এশিয়ান গার্ডেনের প্রধানও সে যাত্রায় সহযোগী হিসেবে এ দলে ছিলেন। সেদিন রাতেই শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রায় ষাটজন প্রবাসীকে তারা টোকিওতে নিয়ে আসেন। আতঙ্কিত এসব পরিবারের সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। সাবের ভাই, নান্নু ভাই, বিপ্লব মলি্লক, দেলওয়ারসহ অনেকেই তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। দু'রুমের বাসায় থাকেন_ এমন অনেকেই তার একটি রুম ছেড়ে দেন এই স্বজনদের জন্য। মসজিদগুলোতেও তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
দুই-তিন দিন পরই মানুষ জানতে পারে, এই মহাবিপর্যয়ে সুনামিতে ভেসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দু'দশ জন নয়, হাজার হাজার। প্রাথমিকভাবে জাপান সরকার কেবল 'ডগ স্কোয়াড'সহ উদ্ধারকর্মী ছাড়া বহির্বিশ্বের কোনো সাহায্য গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে যখন ত্রাণ ও অর্থসাহায্য গ্রহণে সম্মতি দেয়, তখনই প্রবাসীরা নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। ব্যক্তিগতভাবে সম্মিলিতভাবে অনেকেই ছুটে যান দুর্গত অঞ্চলে। ব্যবসায়ীরা, কমিউনিটির সংগঠন, আঞ্চলিক সংগঠন, ইসলামিক মিশন, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি_ সবাই সাধ্যমতো দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান। রুচি, পদ্মা রেস্টুরেন্ট খাবার নিয়ে দুর্গত অঞ্চলে যায়। টোকিওর ব্যবসায়ী ছাড়াও ওসাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অর্থ সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। ফুকুওকা, নাগাসাকি, হোক্কাইডোসহ বহু অঞ্চলের প্রবাসীরা ও ছাত্ররা বিভিন্নভাবে নানা আয়োজনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দান করেন। উত্তরণ, স্বরলিপিসহ সাংস্কৃতিক দলগুলো বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দান করে।
পূর্বঘোষিত একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র 'থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার' প্রদর্শনের অনুষ্ঠানটি সুনামিদুর্গত জাপানিদের উৎসর্গ করা হয়। কমিউনিটির সবার সহযোগিতায় সংগৃহীত অর্থ জাপান রেডক্রসকে প্রদান করা হয়। প্রবাসীদের প্রাণের মেলা 'টোকিও বৈশাখী মেলা'। এই মেলাকে জাপানের দুর্গত মানষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সহমর্মিতার মেলা হিসেবে ঘোষণা এবং সংগৃহীত অর্থ তসিমাকুর মাধ্যমে জাপান রেডক্রসকে প্রদান করা হয়।
১৮-১৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের থিম হচ্ছে 'গা-ম-বা-রে নিপ্পন'। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে চলো জাপান_ এই আশাবাদ জাপানের প্রতি বাংলাদেশের। আর্থিক ঝুঁকি নিয়েও এই মেলার আয়োজকরা এই ফেস্টিভ্যালটিকে জাপানি দুর্গত মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রবাস প্রজন্ম আয়োজিত দুই প্রজন্মের মিলনমেলা শীর্ষক প্রবাসী শিশুদের অনুষ্ঠানটিও জাপানের প্রতি বাংলাদেশের সহমর্মিতার আয়োজন।
জাপান প্রবাসীদের ওয়েব পোর্টালগুলোর ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। 'দেশ-বিদেশ ওয়েব ডটকম' প্রতিদিন, প্রতিবেলায় আপটেড করত। কী হচ্ছে, কী করা উচিত_ এই ভাবনায় আতঙ্কিত প্রবাসীরা এই পোর্টাল নিয়মিত দেখতেন। 'বিডি স্কাই নেট'_ ভিন্নমাত্রার এ তথ্য উপস্থাপনা প্রবাসীদের সঠিক তথ্য জানতে সহায়ক ছিল। 'বাংলাদেশ টাইগার্স ডটকম' ভূমিকম্প-সুনামি-পরবর্তী জরুরি মিডিয়া নিউজগুলো নিয়মিত ছাপাত। 'বিবেকবার্তা ডটকম' নিয়মিত আপডেট ছিল।
বিশ্বব্যাপী যেখানেই কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে সবার আগে জাপান সেখানে জরুরি সাহায্য ও সহযোগিতার ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়। অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের এই সহযোগিতা হয় মানবিক। আমেরিকা-ব্রিটেন-রাশিয়া বা চীনের মতো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকে না তাদের এই সাহায্যের আড়ালে। আর তাই জাপানের এই মহাবিপর্যয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ জাপানের প্রতি তাদের সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
হতদরিদ্র অনেক দেশও সাহায্য পাঠায়। একটু দেরিতে হলেও বাংলাদেশ বিমানভর্তি সাহায্য পাঠায়, যা প্রশংসিত হয় এবং পাশাপাশি সর্বপ্রথম 'বাংলাদেশ দূতাবাস'কে টোকিও থেকে সরিয়ে ফেলার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিন্দিত হয়। প্রবাসীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত মনজুরুল হকের 'দূতাবাস বন্ধে আমরাই প্রথম' শিরোনামের লেখাটি পড়ে দেশে ও বিদেশে শত শত পাঠক মর্মাহত। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছিল, জাপানের এই মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় জাপান পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত সহযোগিতার অঙ্ক হয়তো নাও দিতে পারে। কিন্তু সম্প্রতি জাপান সেই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।
আগামীতে পদ্মা সেতুর কাজ হবে এবং একসময় সেতুটি চালু হবে। যোগাযোগমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, সেতু উদ্বোধনের দিন জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী আসুন বা না আসুন, জাপান সরকারের যিনি উপস্থিত থাকবেন, তিনি কি মনে করার চেষ্টা করবেন যে, ১১ মার্চ ২০১১ সালে জাপানের ভূমিকম্প ও সুনামিতে ভেসে যাওয়া জাপানের সংকটময় সময়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ দূতাবাস টোকিও থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল_ টোকিওকে পারমাণবিক বিকিরণে বসবাসের অযোগ্য রাজধানী শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল? নাকি জাপানিরা তাদের স্বভাব উদারতা দিয়ে সেটি মনেও রাখবেন না?
কাজী ইনসানুল হক :জাপানের বাংলা কাগজ 'পরবাস' সম্পাদক
Kaziensan@gmail.com
১১ মার্চ, ২০১১। প্রায় ৯ মাত্রার ভূমিকম্প আর স্মরণকালের ভয়ঙ্কর সুনামিতে বিধ্বস্ত জাপান। ভূমিকম্পের আফটার শক আর 'আরও বড় মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে' সতর্কতা এবং অনিশ্চিত ট্রেন চলাচলের ঝুঁকি নিয়েও প্রবাসীরা ১৩ মার্চ দুপুরে দূতাবাসের কনফারেন্স রুমে সমবেত হন। দল-মত নির্বিশেষে কী করা যায়, কী করতে হবে তা জানতে আর জানাতে কমিউনিটির প্রতিনিধিরা দূতাবাসের কর্মকর্তাদের পাশে দাঁড়ান। বিধ্বস্ত অঞ্চলে প্রবাসীরা বেঁচে আছেন কি-না সেটা জানা জরুরি। দূতাবাসে ইমারজেন্সি সেল খোলা হয়। সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করা হয় দূতাবাসে সংরক্ষিত তথ্য ও অন্যান্য সোর্স নিয়ে। সেদিনই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, দূতাবাসের সঙ্গে কমিউনিটির প্রতিনিধি মিলে জরুরি খাদ্যসামগ্রী নিয়ে মিয়াগি অঞ্চলে যাওয়া হবে এবং আটকেপড়া প্রবাসীদের টোকিওতে নিয়ে আসা হবে। পরদিনই কমিউনিটির পক্ষে মাসুদুর রহমান মাসুদ ও দেলওয়ার হোসেন এবং দূতাবাসের কর্মকর্তা মাসুদুর রহমান ও নাজমুল হুদা বড় একটি বাস ও দুটি সিডান কার নিয়ে রওনা দেন। এশিয়ান গার্ডেনের প্রধানও সে যাত্রায় সহযোগী হিসেবে এ দলে ছিলেন। সেদিন রাতেই শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে প্রায় ষাটজন প্রবাসীকে তারা টোকিওতে নিয়ে আসেন। আতঙ্কিত এসব পরিবারের সদস্যদের থাকার ব্যবস্থা করেন প্রবাসী ব্যবসায়ীরা। সাবের ভাই, নান্নু ভাই, বিপ্লব মলি্লক, দেলওয়ারসহ অনেকেই তাদের থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করেন। দু'রুমের বাসায় থাকেন_ এমন অনেকেই তার একটি রুম ছেড়ে দেন এই স্বজনদের জন্য। মসজিদগুলোতেও তাদের থাকার ব্যবস্থা করা হয়।
দুই-তিন দিন পরই মানুষ জানতে পারে, এই মহাবিপর্যয়ে সুনামিতে ভেসে যাওয়া মানুষের সংখ্যা দু'দশ জন নয়, হাজার হাজার। প্রাথমিকভাবে জাপান সরকার কেবল 'ডগ স্কোয়াড'সহ উদ্ধারকর্মী ছাড়া বহির্বিশ্বের কোনো সাহায্য গ্রহণে অনীহা প্রকাশ করে। পরবর্তী সময়ে যখন ত্রাণ ও অর্থসাহায্য গ্রহণে সম্মতি দেয়, তখনই প্রবাসীরা নানাভাবে সাহায্য ও সহযোগিতার হাত প্রসারিত করেন। ব্যক্তিগতভাবে সম্মিলিতভাবে অনেকেই ছুটে যান দুর্গত অঞ্চলে। ব্যবসায়ীরা, কমিউনিটির সংগঠন, আঞ্চলিক সংগঠন, ইসলামিক মিশন, বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ, বিএনপি_ সবাই সাধ্যমতো দুর্গতদের পাশে দাঁড়ান। রুচি, পদ্মা রেস্টুরেন্ট খাবার নিয়ে দুর্গত অঞ্চলে যায়। টোকিওর ব্যবসায়ী ছাড়াও ওসাকা ও অন্যান্য অঞ্চলে ব্যবসায়ীরা অর্থ সহযোগিতায় এগিয়ে আসেন। ফুকুওকা, নাগাসাকি, হোক্কাইডোসহ বহু অঞ্চলের প্রবাসীরা ও ছাত্ররা বিভিন্নভাবে নানা আয়োজনের মাধ্যমে অর্থ সংগ্রহ করে দান করেন। উত্তরণ, স্বরলিপিসহ সাংস্কৃতিক দলগুলো বিভিন্ন ইভেন্টের মাধ্যমে সংগৃহীত অর্থ দান করে।
পূর্বঘোষিত একটি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের চলচ্চিত্র 'থার্ড পার্সন সিঙ্গুলার নাম্বার' প্রদর্শনের অনুষ্ঠানটি সুনামিদুর্গত জাপানিদের উৎসর্গ করা হয়। কমিউনিটির সবার সহযোগিতায় সংগৃহীত অর্থ জাপান রেডক্রসকে প্রদান করা হয়। প্রবাসীদের প্রাণের মেলা 'টোকিও বৈশাখী মেলা'। এই মেলাকে জাপানের দুর্গত মানষের সঙ্গে বাংলাদেশের মানুষের সহমর্মিতার মেলা হিসেবে ঘোষণা এবং সংগৃহীত অর্থ তসিমাকুর মাধ্যমে জাপান রেডক্রসকে প্রদান করা হয়।
১৮-১৯ জুন অনুষ্ঠিতব্য বাংলাদেশ ফেস্টিভ্যালের থিম হচ্ছে 'গা-ম-বা-রে নিপ্পন'। শত বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে এগিয়ে চলো জাপান_ এই আশাবাদ জাপানের প্রতি বাংলাদেশের। আর্থিক ঝুঁকি নিয়েও এই মেলার আয়োজকরা এই ফেস্টিভ্যালটিকে জাপানি দুর্গত মানুষের জন্য উৎসর্গ করেছেন। নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য প্রবাস প্রজন্ম আয়োজিত দুই প্রজন্মের মিলনমেলা শীর্ষক প্রবাসী শিশুদের অনুষ্ঠানটিও জাপানের প্রতি বাংলাদেশের সহমর্মিতার আয়োজন।
জাপান প্রবাসীদের ওয়েব পোর্টালগুলোর ভূমিকাও ছিল উল্লেখযোগ্য। 'দেশ-বিদেশ ওয়েব ডটকম' প্রতিদিন, প্রতিবেলায় আপটেড করত। কী হচ্ছে, কী করা উচিত_ এই ভাবনায় আতঙ্কিত প্রবাসীরা এই পোর্টাল নিয়মিত দেখতেন। 'বিডি স্কাই নেট'_ ভিন্নমাত্রার এ তথ্য উপস্থাপনা প্রবাসীদের সঠিক তথ্য জানতে সহায়ক ছিল। 'বাংলাদেশ টাইগার্স ডটকম' ভূমিকম্প-সুনামি-পরবর্তী জরুরি মিডিয়া নিউজগুলো নিয়মিত ছাপাত। 'বিবেকবার্তা ডটকম' নিয়মিত আপডেট ছিল।
বিশ্বব্যাপী যেখানেই কোনো প্রাকৃতিক বিপর্যয় ঘটে সবার আগে জাপান সেখানে জরুরি সাহায্য ও সহযোগিতার ভাণ্ডার নিয়ে হাজির হয়। অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের এই সহযোগিতা হয় মানবিক। আমেরিকা-ব্রিটেন-রাশিয়া বা চীনের মতো রাজনৈতিক হিসাব-নিকাশ থাকে না তাদের এই সাহায্যের আড়ালে। আর তাই জাপানের এই মহাবিপর্যয়ে সারা পৃথিবীর মানুষ জাপানের প্রতি তাদের সহমর্মিতার হাত বাড়িয়ে দেয়।
হতদরিদ্র অনেক দেশও সাহায্য পাঠায়। একটু দেরিতে হলেও বাংলাদেশ বিমানভর্তি সাহায্য পাঠায়, যা প্রশংসিত হয় এবং পাশাপাশি সর্বপ্রথম 'বাংলাদেশ দূতাবাস'কে টোকিও থেকে সরিয়ে ফেলার মতো হঠকারী সিদ্ধান্ত নিন্দিত হয়। প্রবাসীরা এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদ করেন। প্রথম আলোতে প্রকাশিত মনজুরুল হকের 'দূতাবাস বন্ধে আমরাই প্রথম' শিরোনামের লেখাটি পড়ে দেশে ও বিদেশে শত শত পাঠক মর্মাহত। বাংলাদেশের পত্রপত্রিকায় লেখা হয়েছিল, জাপানের এই মারাত্মক অর্থনৈতিক বিপর্যয়ের সময় জাপান পদ্মা সেতুর জন্য প্রতিশ্রুত সহযোগিতার অঙ্ক হয়তো নাও দিতে পারে। কিন্তু সম্প্রতি জাপান সেই চুক্তিপত্রে স্বাক্ষর করে প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছে।
আগামীতে পদ্মা সেতুর কাজ হবে এবং একসময় সেতুটি চালু হবে। যোগাযোগমন্ত্রী আশা প্রকাশ করেছেন, সেতু উদ্বোধনের দিন জাপানের প্রধানমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হবে। প্রধানমন্ত্রী আসুন বা না আসুন, জাপান সরকারের যিনি উপস্থিত থাকবেন, তিনি কি মনে করার চেষ্টা করবেন যে, ১১ মার্চ ২০১১ সালে জাপানের ভূমিকম্প ও সুনামিতে ভেসে যাওয়া জাপানের সংকটময় সময়ে সর্বপ্রথম বাংলাদেশ দূতাবাস টোকিও থেকে তাদের দূতাবাস সরিয়ে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছিল_ টোকিওকে পারমাণবিক বিকিরণে বসবাসের অযোগ্য রাজধানী শহর হিসেবে চিহ্নিত করেছিল? নাকি জাপানিরা তাদের স্বভাব উদারতা দিয়ে সেটি মনেও রাখবেন না?
কাজী ইনসানুল হক :জাপানের বাংলা কাগজ 'পরবাস' সম্পাদক
Kaziensan@gmail.com
No comments