চলে গেলেন রশীদ করীম by নওশাদ জামিল
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালির জাতির শ্রেষ্ঠতম অর্জন হলেও তা নিয়ে সার্থক উপন্যাস লেখা হয়নি বলে অনেকেরই আক্ষেপ রয়েছে। কথাশিল্পী রশীদ করীমের উপন্যাস 'আমার যত গ্লানি' এ আক্ষেপ দূর করতে পারে। এ উপন্যাসের এক জায়গায় এরফানকে জিজ্ঞেস করা হয়, 'আপনি কি ভিড়ে আটকা পড়ে গেছেন? কোথায় যাবেন?' এরফানের উত্তর, 'শেখ সাহেবের কাছে, স্বাধীনতার কাছে।' দেশভাগ কিংবা একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রথম দিকে যাঁরা উপন্যাস
লেখায় হাত দিয়েছিলেন, তিনি তাঁদের মধ্যে অন্যতম। বাংলা সাহিত্যে অমর সব সৃষ্টিসম্ভার রেখে চলে গেলেন বাংলাদেশের আধুনিক উপন্যাস ধারার অগ্রগণ্য কথাশিল্পী রশীদ করীম।
শুক্রবার রাত ৩টায় রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে রশীদ করীম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী সেলিমা মোর্শেদ ও একমাত্র মেয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নাবিলা মোর্শেদসহ বহু শুভ্যানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক থেকে গতকাল শনিবার সকালে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডির বাসভবনে। এরপর বাদ জোহর ধানমণ্ডির ৬ নম্বর মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ আসর বাংলা একাডেমীতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তথ্য, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এ লেখকের বন্ধু ছিলেন বরেণ্য সব লেখক-সাহিত্যিক। তাঁদেরই একজন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তাই বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ছিলেন শোকগ্রস্ত। রশীদ করীমকে নিয়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশ একজন বড় লেখক হারাল, আর আমি হারালাম একজন ভালো বন্ধু।' স্মৃতি হাতড়ে তিনি আরো বলেন, 'আমাদের বন্ধুত্ব বহুদিনের, তাঁর লেখার অনুরাগী পাঠকও ছিলাম আমি। আমার লেখালেখিতেও তিনি উৎসাহ দিতেন।'
কথাশিল্পী রশীদ করীমের সাহিত্যের জগৎ রক্ত-মাংসের মানুষ। দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ। দশকের পর দশক ধরে তিনি এঁকে গেছেন রক্ত-মাংসের মানুষের মুখচ্ছবি। তিনি বাংলার বিরল মানববাদী লেখকদের একজন, যিনি পাঠকের ওপর কোনো নির্দিষ্ট আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। মানুষের পাপী ও সৎ সত্তা, প্রেমী ও ভোগী অবয়ব_সব কিছুই সাদাসিধেভাবে জাজ্বল্য করেছেন। তাঁর 'উত্তম পুরুষ' (১৯৬১) উপন্যাসের প্রকাশনা এ বছর ৫০ বছরে পড়ল। সাহিত্যবোদ্ধারা মনে করেন, উপন্যাসটি আধুনিক বাংলা উপন্যাসের একটি মাইলফলক। এ ছাড়া তাঁর 'প্রসন্ন পাষাণ' (১৯৬৩), 'প্রেম একটি লাল গোলাপ' (১৯৭৮), 'মায়ের কাছে যাচ্ছি' (১৯৮৯) ইত্যাদি উপন্যাস তাঁকে লেখক হিসেবে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠান দিয়েছে।
কথাশিল্পী পরিচয়ের বাইরে তিনি আমাদের দেশের একজন শক্তিমান প্রাবন্ধিকও বটে। সমৃদ্ধ জীবনাভিজ্ঞতা, অনন্য ভাষাভঙ্গি এবং স্বকীয় গদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে রশীদ করীম বাংলা কথাসাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতবোদ্ধা ও ক্রিকেট অনুরাগী। তাঁর অগ্রজ আবু রুশদও ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক।
রশীদ করীমের মরদেহ গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হলে সেখানে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, 'তিনি ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক উপন্যাস নির্মাণকলার পথিকৃৎ শিল্পী।'
১৯৯২ সালে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি হওয়ার পর বলা যায়, একমাত্র রবীন্দ্রসংগীত শুনেই তাঁর সময় কাটত। সংগীতকেই তিনি যেন জীবনের শেষ আশ্রয় করেছিলেন।
রশীদ করীম ১৯২৫ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতাতেই। ১৯৪২ সালে সওগাত পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প 'আয়েশা' প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে নিজের চাকরিজীবন শুরু করেন। সর্বশেষ সেখানে তিনি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে তিনি চালাতে থাকেন নিজের সাহিত্যকর্ম। একে একে রচনা করেছেন কালজয়ী সব উপন্যাস। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিল তাঁর লেখার প্রিয় বিষয়। এসব বিষয় রশীদ করীমের সাহিত্যে উঠে এসেছে।
বাংলা সাহিত্যে অমূল্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রশীদ করীম ১৯৮৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান 'একুশে পদক' লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৬৯ সালে আদমজী পুরস্কার ও ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
শুক্রবার রাত ৩টায় রাজধানীর ইব্রাহিম কার্ডিয়াক হাসপাতালে রশীদ করীম শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৬ বছর। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন জটিলতায় ভুগছিলেন। তিনি স্ত্রী সেলিমা মোর্শেদ ও একমাত্র মেয়ে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ নাবিলা মোর্শেদসহ বহু শুভ্যানুধ্যায়ী রেখে গেছেন। ইব্রাহিম কার্ডিয়াক থেকে গতকাল শনিবার সকালে তাঁর মরদেহ নিয়ে যাওয়া হয় ধানমণ্ডির বাসভবনে। এরপর বাদ জোহর ধানমণ্ডির ৬ নম্বর মসজিদে তাঁর প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর বাদ আসর বাংলা একাডেমীতে তাঁর জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এখানে তথ্য, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও বাংলা একাডেমীর পক্ষ থেকে শ্রদ্ধা জানানো হয়। এরপর গতকাল সন্ধ্যায় মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে তাঁর লাশ দাফন করা হয়।
একুশে পদকপ্রাপ্ত এ লেখকের বন্ধু ছিলেন বরেণ্য সব লেখক-সাহিত্যিক। তাঁদেরই একজন অধ্যাপক জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী। তাই বন্ধুর মৃত্যুর খবর পেয়ে তিনি ছিলেন শোকগ্রস্ত। রশীদ করীমকে নিয়ে জিল্লুর রহমান সিদ্দিকী কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশ একজন বড় লেখক হারাল, আর আমি হারালাম একজন ভালো বন্ধু।' স্মৃতি হাতড়ে তিনি আরো বলেন, 'আমাদের বন্ধুত্ব বহুদিনের, তাঁর লেখার অনুরাগী পাঠকও ছিলাম আমি। আমার লেখালেখিতেও তিনি উৎসাহ দিতেন।'
কথাশিল্পী রশীদ করীমের সাহিত্যের জগৎ রক্ত-মাংসের মানুষ। দেশভাগ, মুক্তিযুদ্ধ। দশকের পর দশক ধরে তিনি এঁকে গেছেন রক্ত-মাংসের মানুষের মুখচ্ছবি। তিনি বাংলার বিরল মানববাদী লেখকদের একজন, যিনি পাঠকের ওপর কোনো নির্দিষ্ট আদর্শ চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেননি। মানুষের পাপী ও সৎ সত্তা, প্রেমী ও ভোগী অবয়ব_সব কিছুই সাদাসিধেভাবে জাজ্বল্য করেছেন। তাঁর 'উত্তম পুরুষ' (১৯৬১) উপন্যাসের প্রকাশনা এ বছর ৫০ বছরে পড়ল। সাহিত্যবোদ্ধারা মনে করেন, উপন্যাসটি আধুনিক বাংলা উপন্যাসের একটি মাইলফলক। এ ছাড়া তাঁর 'প্রসন্ন পাষাণ' (১৯৬৩), 'প্রেম একটি লাল গোলাপ' (১৯৭৮), 'মায়ের কাছে যাচ্ছি' (১৯৮৯) ইত্যাদি উপন্যাস তাঁকে লেখক হিসেবে অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠান দিয়েছে।
কথাশিল্পী পরিচয়ের বাইরে তিনি আমাদের দেশের একজন শক্তিমান প্রাবন্ধিকও বটে। সমৃদ্ধ জীবনাভিজ্ঞতা, অনন্য ভাষাভঙ্গি এবং স্বকীয় গদ্যশৈলীর মধ্য দিয়ে রশীদ করীম বাংলা কথাসাহিত্যকে ঋদ্ধ করেছেন। তিনি ছিলেন বিশিষ্ট রবীন্দ্রসংগীতবোদ্ধা ও ক্রিকেট অনুরাগী। তাঁর অগ্রজ আবু রুশদও ছিলেন একজন বিশিষ্ট লেখক।
রশীদ করীমের মরদেহ গতকাল বিকেলে বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে নিয়ে আসা হলে সেখানে নানা শ্রেণী-পেশার মানুষ শেষ শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন। এ সময় বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান বলেন, 'তিনি ছিলেন বাংলাদেশের আধুনিক উপন্যাস নির্মাণকলার পথিকৃৎ শিল্পী।'
১৯৯২ সালে পক্ষাঘাত রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি হওয়ার পর বলা যায়, একমাত্র রবীন্দ্রসংগীত শুনেই তাঁর সময় কাটত। সংগীতকেই তিনি যেন জীবনের শেষ আশ্রয় করেছিলেন।
রশীদ করীম ১৯২৫ সালের ১৪ আগস্ট কলকাতায় জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর ছেলেবেলা কেটেছে কলকাতাতেই। ১৯৪২ সালে সওগাত পত্রিকায় তাঁর প্রথম গল্প 'আয়েশা' প্রকাশিত হয়। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের সময় তিনি ঢাকায় চলে আসেন। এখানে এসে তিনি মেঘনা পেট্রোলিয়াম লিমিটেডে নিজের চাকরিজীবন শুরু করেন। সর্বশেষ সেখানে তিনি জেনারেল ম্যানেজার হিসেবে কর্মরত ছিলেন। চাকরির ফাঁকে ফাঁকে তিনি চালাতে থাকেন নিজের সাহিত্যকর্ম। একে একে রচনা করেছেন কালজয়ী সব উপন্যাস। বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ ও বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ছিল তাঁর লেখার প্রিয় বিষয়। এসব বিষয় রশীদ করীমের সাহিত্যে উঠে এসেছে।
বাংলা সাহিত্যে অমূল্য অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ রশীদ করীম ১৯৮৪ সালে দেশের সর্বোচ্চ সম্মান 'একুশে পদক' লাভ করেন। এ ছাড়া ১৯৬৯ সালে আদমজী পুরস্কার ও ১৯৭২ সালে বাংলা একাডেমী পুরস্কার লাভ করেন।
No comments