বিচারপতি মুহাম্মদ হাবিবুর রহমান-আত্মমর্যাদাসম্পন্ন কোনো জাতি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা মানবে না

বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেছেন, 'সুষ্ঠু ও অবাধ নির্বাচনের জন্য আমরাই একসময় সংবিধান সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করেছিলাম। তবে আমাদের প্রবর্তিত এ পদ্ধতি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন অন্য কোনো জাতি সমর্থন করবে না।' ১৯৯৬ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এ প্রধান বিচারপতি আরো বলেন, 'আমাদের নির্বাচিত কোনো সরকারই নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করেনি। এমনকি এ


বিষয়ে তারা কোনো আগ্রহও দেখায়নি।'গতকাল শনিবার রাজধানীর ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ে 'বাংলাদেশের ৪০ বছর : অতীত পর্যালোচনা এবং ভবিষ্যৎ অগ্রগতি' শীর্ষক সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। তিনি বলেন, 'গণতন্ত্র আর সুশাসনের জন্য প্রয়োজনীয় ধর্মনিরপেক্ষ সংবিধান এখন আমাদের আছে।' দেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতি বিষয়ে তিনি বলেন, 'ব্রিটেনের লেবার পার্টি গত ৩৫ বছরে সাতবার তাদের দলীয় প্রধান পরিবর্তন করেছে; কিন্তু আমরা যথাক্রমে ৩০ ও ২৭ বছর ধরে দুজন দলীয় প্রধানের কোনো পরিবর্তন করতে পারিনি।'
দেশের শাসনব্যবস্থায় 'পরিদর্শন' বলে কিছু নেই উল্লেখ করে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, নিয়মিত পরিদর্শন যেকোনো দপ্তরের কর্মকর্তাদের নিজ কাজে দায়িত্বশীল হতে উদ্বুদ্ধ করে। প্রশাসনে স্বজনপ্রীতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে নিজের মানুষকে বসিয়ে আমরা প্রশাসনকে অস্থির করে তুলেছি; কিছু অপছন্দের কর্মকর্তাকে আমরা বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা করে দূরে সরিয়ে রাখি, আবার বিশেষ মর্যাদা দিয়ে অবসরপ্রাপ্তদের চুক্তিভিত্তিক চাকরি দেই।' ক্ষমতার অপব্যবহার বিষয়ে তিনি বলেন, 'ক্ষমতায় থাকতে অন্যদের নামে মামলা করে এবং নিজেদের মামলা প্রত্যাহারের মাধ্যমে বিচারব্যবস্থাকে ক্ষতিগ্রস্ত করার পাশাপাশি অন্যান্য অপরাধ ও দুর্নীতিকে প্রশ্রয় দিচ্ছি।'
বিচারপতি হাবিবুর রহমান আরো বলেন, দেশের বিভিন্ন খাতে অগ্রগতি হয়েছে। গত ৪০ বছরে ধর্মীয় গোঁড়ামি, সামপ্রদায়িকতা, নারীর প্রতি সহিংসতা, ফতোয়া যেমন কমেছে তেমনি বিভিন্ন ক্ষেত্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। তবে এখনো কিছু বিষয়ে সুশাসনের অভাব প্রকট মন্তব্য করে হাবিবুর রহমান বলেন, সময়মতো নজরদারি ও সুশাসন না থাকায় খাসজমিসহ রেলওয়ের জমি, নদী ও নদীর তীর দখল হয়ে গেছে। তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর রচিত সংবিধানে নিবৃত্তিমূলক আটক (প্রিভেনটিভ ডিটেনশন), জরুরি অবস্থা ও গণহত্যার অপরাধের ব্যাপারে কিছু বলা হয়নি। তবে এর পরও বিভিন্ন সময়ে সামরিক শাসনজনিত কারণেও সংবিধান সংশোধন হয়। সর্বশেষ চলতি বছর হওয়া সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনীকে বিস্ময়কর উল্লেখ করে বিচারপতি হাবিবুর রহমান বলেন, এর মধ্য দিয়ে সংবিধানে সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতাকে একসঙ্গে স্থান দেওয়া হয়েছে।
ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি গোলাম সামদানি ফকিরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে আরো বক্তব্য দেন প্রধানমন্ত্রীর আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা ড. গওহর রিজভী, ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব বাথের আন্তর্জাতিক উন্নয়ন দলের প্রধান ড. জো ডিভাইন, ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স স্টাডিজের পরিচালক ড. রিজওয়ান খায়ের, গবেষণাপ্রধান ড. ইপ্সিতা বসু প্রমুখ।
ড. গওহর রিজভী বলেন, 'তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থার চেয়ে জরুরি নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী করা। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরেও গণতন্ত্রের ধারাকে শক্তিশালী করতে না পারা জাতি হিসেবে আমাদের ব্যর্থতার মধ্যেই পড়ে।' তিনি আরো বলেন, 'নির্বাচন কমিশনকে দুর্বল রেখে স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কিভাবে হতে পারে, সে বিষয়ে আমি যথেষ্ট সন্দিহান। তাই সবার আগে প্রয়োজন একটি স্বাধীন ও শক্তিশালী নির্বাচন কমিশন।'
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, স্বাধীনতার ৪০ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা ও পর্যালোচনার জন্য দুই দিনের সম্মেলন আয়োজন করেছে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের আইজিএস ও ব্রিটেনের ইউনিভার্সিটি অব বাথ। আজ রবিবার ও আগামীকাল সোমবার গাজীপুরে এ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।

No comments

Powered by Blogger.