বিএনপি : ঝালকাঠি-১ আসন-শাহজাহান ও জামাল দুজন দুই দিকে

রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া দুটি উপজেলা নিয়ে গঠিত ঝালকাঠি-১ আসন। ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী বিজয়ী হওয়ার পর থেকে থমকে গেছে বিএনপির কর্মকাণ্ড। এ আসনে বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম চলছে এক স্থবির সময়ের মধ্যে। এ জন্য কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি নিয়ে রাজাপুর-কাঁঠালিয়ার বিএনপিতে তেমন কোনো সাড়া নেই। সাংগঠনিক এমন নিষ্ক্রিয়তার জন্য দলীয় কোন্দলকেই দায়ী করেছেন নেতা-কর্মীরা। দুই ধারায় বিভক্তি নিয়েই চলছে এখানকার বিএনপি।


বিএনপির এক পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন সাবেক সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম এবং অন্য পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন রফিকুল ইসলাম জামাল। ওয়ান-ইলেভেনের পর এ আসনে বিএনপিদলীয় সাবেক সংসদ সদস্য শাহজাহান ওমর এলাকায় না থাকার সুযোগে ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপি থেকে মনোনয়ন পান শাহজাহান ওমরের একসময়ের ব্যবসায়িক পার্টনার রফিকুল ইসলাম জামাল। নির্বাচনে তিনি হেরে যান। আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর শাহজাহান ওমর আবার এলাকায় ফিরে আসেন। শুরু হয় শাহজাহান ওমর ও জামাল সমর্থকদের মধ্যে কোন্দল। একসময় উভয়ের মধ্য সুসম্পর্ক থাকলেও এখন এ দুই নেতার পথ দুই দিকে বেঁকে গেছে। কেউ কারো ছায়া পর্যন্ত মাড়ান না। সময়ের কারণে দুজন দুই শিবিরে বিভক্ত। ওই বিভক্তি দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যেও তৈরি করেছে বৈরীভাব। আগামী সংসদ নির্বাচনে দুজনই দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী। তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা জানান, এখানে কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন আর সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড ঠিকমতো হয় না দুই নেতার বিরোধের কারণে। গত সংসদ নির্বাচনের পর শুধু ২০১০ সালের ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষে রাজাপুর উপজেলা বিএনপির উদ্যোগে একটি বিজয় শোভাযাত্রা বের করেছিল শাহজাহান ওমর গ্রুপ। ওই শোভাযাত্রায় আওয়ামী লীগ হামলা চালালে ২০ জন নেতা-কর্মী আহত হন। এর পর থেকে কেন্দ্র ঘোষিত কোনো কর্মসূচি রাজাপুর বিএনপির পালন করতে পারেনি। কাঁঠালিয়া বিএনপিতেও একই অবস্থা। পৌনে তিন বছরে কাঁঠালিয়া বিএনপি রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রামে কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি।
কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি রফিকুল ইসলাম মিরন সিকদার দীর্ঘদিন জামাল গ্রুপের নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। সম্প্রতি শাহজাহান ওমর এলাকায় ফিরে এলে মিরন সিকদার তাঁর গ্রুপে যোগদান করেন। যুবদল, শ্রমিক দল ও ছাত্রদলের বড় একটি অংশ রয়েছে শাহজাহান ওমরের সঙ্গে। শাহজাহান ওমর গ্রুপ কাঁঠালিয়ায় ভালো অবস্থানে থাকলেও দলীয় কোন্দল টিকিয়ে রাখতে জামাল গ্রুপের নেতৃত্ব দিচ্ছে উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শামীম আকন। তাঁর সঙ্গে রয়েছে যুবদল ও ছাত্রদলের একাংশ। রাজাপুর ও কাঁঠালিয়া বিএনপি ঐক্যবদ্ধ না থাকায় ২০০৮ সালের নির্বাচনে একসময়ের বিএনপির দুর্গখ্যাত ঝালকাঠি-১ আসন হাতছাড়া হয়ে যায়। দলীয় কোন্দল অব্যাহত থাকলে ভবিষ্যতে এ আসন বিএনপির ফিরে আসবে কি না, তা নিয়েও নেতা-কর্মীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে সন্দেহ। স্থানীয় বিএনপির একাধিক নেতা-কর্মীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আগামী সংসদ নির্বাচনে দলের প্রার্থী হিসেবে দুজনই মনোয়নয়নপ্রত্যাশী। তাই বিরোধ চলবে মনোনয়ন চূড়ান্ত না হওয়া পর্যন্ত। তবে মনোয়ন চূড়ান্ত হলে স্থানীয় বিএনপিতে দুই পক্ষের মতবিরোধ থাকবে না বলে অনেক নেতা-কর্মী দাবি করেন।
রাজাপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল ওয়াহেদ মৃধা কালের কণ্ঠকে বলেন, 'অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই বললেই চলে। আমরা শাহজাহান ওমরের অনুসারী। তাঁর নেতৃত্বেই রাজাপুর বিএনপির নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধ রয়েছেন। শাহজাহান ওমরের অবর্তমানে বিএনপি থেকে গত নির্বাচনে রফিকুল ইসলাম জামালকে মনোনয়ন দেওয়া হয়েছিল। নির্বাচনে তিনি পরাজিত হয়েছেন। এতেই প্রমাণিত হয় নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের কাছে তাঁর গ্রহণযোগ্যতা নেই। তিনি এলাকায় এলে কিছু লোক নগদ টাকা-পয়সা পেতে তাঁর কাছে যেতে পারে। অভ্যন্তরীণ কোন্দল নয়, আওয়ামী লীগের হামলা-মামলার কারণে আমরা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করতে পারছি না।'
উপজেলা যুবদল সভাপতি নাসিম আকন বলেন, 'গত সংসদ নির্বাচনে বিএনপির হয়ে আমি দুই উপজেলার প্রধান সমন্বয়কারী ছিলাম। নির্বাচনে পরাজিত হওয়ার পর থেকে জামাল কোনো নেতা-কর্মীর সঙ্গে যোগাযোগ রাখেন না। সম্প্রতি তিনি একটি পারিবারিক অনুষ্ঠানে রাজাপুরের পিংড়িগ্রামে এসেছিলেন। তাঁর সঙ্গে ঝালকাঠির স্থানীয় বিএনপির কিছু লোকজন রয়েছে, এ ছাড়া দলে তাঁর কোনো অবস্থান নেই।
কাঁঠালিয়া উপজেলার আমুয়া ইউনিয়ন বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও ইউপি চেয়ারম্যান নিজাম কালের কণ্ঠকে বলেন, '২০০৮ সালের নির্বাচনে খালেদা জিয়া রফিকুল ইসলাম জামালকে এই আসনে মনোনয়ন দিয়েছেন। পরবর্তী নির্বাচনে কাউকে মনোনয়ন না দেওয়া পর্যন্ত তিনিই আমাদের প্রতিনিধি। আমরা তাঁরই নেতৃত্বে এখনো ঐক্যবদ্ধ আছি। অনেকে প্রকাশ্যে না থাকলেও জামালের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে। বিএনপির অভ্যন্তরীণ বিরোধ থাকায় প্রকাশ্যে রাজপথে নামা সম্ভব হচ্ছে না, এর পরও খালেদা জিয়ার ঘোষিত কর্মসূচি আগামী জানুয়ারি থেকে আমরা পালন করব।'
উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শামীম আকন জানান, জামাল দলের তৃণমূল নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করে আসছেন। অন্য কোনো নেতার তৃণমূলে যোগাযোগ নেই। বিএনপির একটি প্রতিপক্ষ গ্রুপ তিনি এলাকায় এলে বাধার সৃষ্টি করে।
কাঁঠালিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মিরন সিকদার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'শাহজাহান ওমরের সঙ্গে আমার ব্যক্তিগত মনোমালিন্য ছিল। তা নিরসন হয়েছে। এখন আর কোনো গ্রুপিং নেই।'
রফিকুল ইসলাম জামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'নির্বাচনে হেরে গেলেও আমি ঝালকাঠির সব নেতা-কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করছি। শাহজাহান ওমর দলের সিনিয়র নেতা। বিএনপির নেতা-কর্মীদের শাহজাহান ওমরের লোকজন আমার কাছে আসতে বাধা দিচ্ছে। এতে দলের ক্ষতি হচ্ছে। আমি চাই কোনো দ্বন্দ্ব না থাকুক। আমরা ঐক্যবদ্ধ হয়ে রাজনীতি করতে চাই।'
ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর বীর-উত্তম কালের কণ্ঠকে বলেন, 'ঝালকাঠি-১ আসনে বর্তমানে কোনো গ্রুপিং নেই। দলীয় যে কর্মসূচি হয় , তা আমার নেতৃত্বেই হয়। অন্য যারা দলের পরিচয় দিচ্ছে তারা কেন কেন্দ্র ঘোষিত কর্মসূচি পালন করে না!'

No comments

Powered by Blogger.