নাটকীয়তায় অবিশ্বাস্য ড্র

দিনের শুরুতে যে ম্যাচটাকে মনে হচ্ছিল মরা, শেষ বিকেলে তাতেই শ্বাসরুদ্ধকর নাটক_এ না হলে আর টেস্ট ক্রিকেট! মুম্বাই টেস্টে কাল জিততে পারত ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়টাও অসম্ভব ছিল না; কিন্তু শেষ পর্যন্ত জেতেনি কোনো দলই, জয় হয়েছে টেস্ট ক্রিকেটের। শেষ বলে রবিচন্দ্রন অশ্বিনের রান আউটে দুই দলের স্কোর হয়ে যায় সমান, তবু 'টাই' হয়নি ম্যাচটা, কারণ দ্বিতীয় ইনিংসে ২৪৩ রানের টার্গেট নিয়ে ব্যাট করতে নামা স্বাগতিকরা যে অল আউট হয়নি! শেষ দিনে ১৭ উইকেট পড়লেও ম্যাচটা তাই ড্র।


শেষ ওভারটা যখন শুরু হয়, তখন অবশ্য ভারতের দিকেই খানিকটা হেলে ছিল ম্যাচের পাল্লা। দুই উইকেট হাতে নিয়ে দরকার ছিল মোটে তিন রানের। তবে স্ট্রাইকিং প্রান্তে ১০ নম্বর ব্যাটসম্যান বরুণ অ্যারন ছিলেন বলে আশা ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজের, আর সেই ক্ষীণ আশাটাকেই কাজে লাগিয়েছেন ফিদেল এডওয়ার্ডস। প্রথম তিনটি বল ডট রেখেছেন তিনি। চতুর্থ বলে অ্যারন একটি সিঙ্গেল নিলে শেষ ২ বল থেকে প্রয়োজন পড়ে ২ রানের। স্ট্রাইকে তখন প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরিয়ান অশ্বিন। কিন্তু পঞ্চম বলে তাঁকেও কাঁপিয়ে দেন এডওয়ার্ডস। জোরালো এলবিডাবি্লউ আবেদন থেকে অশ্বিন বেঁচে যান বল ব্যাটের কানায় লাগায়। শেষ বলটাকে কোনোমতে লংঅনে ঠেলে দিয়ে দৌড় দেন অশ্বিন, কিন্তু ২ রান নিতে পারবেন এমনটা মনে হয়নি একবারও। দুই ইনিংস মিলিয়ে ৯ উইকেট শিকার, সঙ্গে প্রথম ইনিংসের সেঞ্চুরি_সুবাদে এ ম্যাচের সেরা, অভিষেক সিরিজেও সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কার জয়ের পরও মুম্বাই টেস্টটা তাই হতাশার নামই হয়ে থাকবে এ তরুণের স্মৃতিতে।
সকালে কিন্তু ম্যাচটা জমিয়ে তুলেছিলেন এ অশ্বিন আর প্রজ্ঞান ওঝা মিলেই। সঙ্গে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের দায়িত্বহীন শট খেলাও অবশ্য ভূমিকা রেখেছে খানিকটা। আগের দিনের ২ উইকেটে ৮১ রান নিয়ে খেলতে নেমে মাত্র ২৩.২ ওভার ব্যাট করে, আর মাত্র ৫৩ রান যোগ করেই অল আউট হয়ে যায় সফরকারীরা। ৪৭ রানে ৬ উইকেট নেন ওঝা, আর অশ্বিনের শিকার ৩৪ রানে চারটি। অভিষেক সিরিজে এ নিয়ে ২২টি উইকেট পেলেন অশ্বিন, তিন টেস্টে ২০ উইকেট নিয়ে কম যাননি ওঝাও। ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের হতাশ করা ব্যাটিং প্রথম ইনিংসে ১০৮ রানে পিছিয়ে থাকা ভারতকে অসাধারণ এক জয়ের স্বপ্ন দেখাচ্ছিল। সেই স্বপ্নটাকে আরো উজ্জ্বল করে তুলেছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানদের ক্যাচ ফেলার মিছিল, আর তিনবার জীবন পেয়ে বীরেন্দর শেবাগের ৬৫ বলে ৬০ রানের ইনিংস। রাহুল দ্রাবিড়ের (৩৩) সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে তাঁর ৮২ রানের জুটিটা ভাঙার পর কিন্তু হঠাৎ করেই আবার জমে ওঠে ম্যাচ। এবার শুরু ভারতের ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা। ১২ রানের মধ্যে শেবাগ, দ্রাবিড় আর টেন্ডুলকারেরও (৩) বিদায়ে জাগা শঙ্কা অনেকটাই দূর হয়ে যায় ভিভিএস লক্ষ্মণ (৩১) আর বিরাট কোহলির (৬৩) ৫২ রানের জুটিতে। এক পর্যায়ে তো ৬ উইকেটে ২২৪ পর্যন্ত পেঁৗছে গিয়েছিল তারা, তবে তিন ওভারের মধ্যে কোহলি আর ঈশান্ত শর্মাকে তুলে নিয়ে আবার ম্যাচটাকে জমিয়ে তোলেন ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান বোলাররা। নেতৃত্বে ছিলেন রবি রামপাল (৩/৫৬), তাঁকে যোগ্য সঙ্গত দিয়েছেন লেগস্পিনার দেবেন্দ্র বিশু (২/৬৫) আর পার্টটাইম স্পিনার মারলন স্যামুয়েলস (২/৯৩)। বল হাতে নেওয়া চার ওয়েস্ট ইন্ডিয়ানের মধ্যে সবচেয়ে কম একটি উইকেট পেয়েছেন এডওয়ার্ডস, তবে শেষ ওভারটা তাঁকেই এনে দিয়েছে হোয়াইটওয়াশের লজ্জা এড়ানোর 'নায়ক'-এর সম্মান! ক্রিকইনফো

সংক্ষিপ্ত স্কোর
ওয়েস্ট ইন্ডিজ : ৫৯০ ও ১৩৪ (ব্রাভো ৪৮, ব্র্যাথওয়েট ৩৫, এডওয়ার্ডস ১৭, পাওয়েল ১১, স্যামি ১০; ওঝা ৬/৪৭, অশ্বিন ৪/৩৪)। ভারত : ৪৮২ ও ২৪২/৯ (কোহলি ৬৩, শেবাগ ৬০, দ্রাবিড় ৩৩, লক্ষ্মণ ৩১; রামপাল ৩/৫৬, বিশু ২/৬৫, স্যামুয়েলস ২/৯৩)।
ফল : ম্যাচ ড্র।

No comments

Powered by Blogger.