চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি by মোহন লাল শীল
প্রতিটি দিনের শুরু হয় যে পানীয় দ্বারা, তা হচ্ছে চা। যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চা উৎপাদন করে, তারা কম মজুরি পাওয়া অসহায়, লাঞ্ছিত ও অধিকারবঞ্চিত প্রান্তিক জনগোষ্ঠী। দেশব্যাপী দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে যেখানে মধ্যবিত্ত-নিম্নবিত্ত সবাই জীবনযাপনে হিমশিম খাচ্ছে, সেখানে চা শ্রমিকরা দৈনিক ৪৮ টাকা মজুরিতে কীভাবে চলছে তা বোধগম্য নয়। সারাদেশে যত ধরনের শ্রমিক রয়েছে, আমার মনে হয় না চা শ্রমিকদের মতো এত কম মজুরি আর কেউ
পেয়ে থাকে। বর্তমান বাজার ব্যবস্থা যে রকম অস্থিতিশীল ও অসহনীয় হয়ে পড়েছে_ প্রতি কেজি চাল যেখানে ৩২-৩৫ টাকা, প্রতি কেজি ডাল ১০০-১২০ টাকা, সেখানে মাত্র ৪৮ টাকায় কীভাবে বাঁচবে আমাদের দেশের এই চা শ্রমিকরা? সেই ছোটবেলা থেকে শুনে আসছি প্রতি দুই বছর অন্তর চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায় মাত্র ২-৩ টাকা। দেশ স্বাধীনের পর অর্থাৎ ১৯৭১ থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত তাদের মজুরি বৃদ্ধি পেয়ে ৪৮ টাকায় উন্নীত হয়েছে। প্রতি দুই বছর পরপর বাংলাদেশ চা বোর্ড ও চা শ্রমিক প্রতিনিধিদের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পায়, তবে তার গতি এত ধীর যে, তা বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশে চা শিল্পে জড়িত প্রায় ৯০ হাজারেরও বেশি শ্রমিক। দীর্ঘ দেড়শ' বছরের বেশি সময় ধরে বংশপরম্পরায় এই শিল্পের সঙ্গে তারা জড়িত। শিক্ষা, চিকিৎসা, বাসস্থান সংকটসহ নানা কুসংস্কারের আবর্তে পড়ে তারা মানবেতর জীবনযাপন করে আসছে। সরকার আসে, সরকার যায়_ চা শ্রমিকদের ভাগ্যে কোনো পরিবর্তন আসে না। এত অভাব-অভিযোগ, তারপরও এই জনগোষ্ঠী আজও সংগঠিত হতে পারেনি। না আছে তাদের নিজস্ব বাড়িঘর, না আছে জোরালো সংগঠন বা সুযোগ্য নেতৃত্ব। তাদের সর্বশেষ বেতন বৃদ্ধি পেয়েছে ২০০৯ সালে। এ বছর অর্থাৎ ২০১১ সালে চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধি পাবে কি? বাড়লেও কত বাড়বে কিংবা কাদের মাধ্যমে বাড়বে সে বিষয়ে চা শ্রমিকরা এখনও অনিশ্চিত। তাই শ্রম ও কর্মসংস্থানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ চা বোর্ডের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলতে চাই_ এ বছর চা শ্রমিকদের মজুরি কমপক্ষে ১০০ টাকায় উন্নীত করা হোক। আমরা প্রত্যাশা করি, চা শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির বিষয়টি সরকার গুরুত্ব সহকারে দেখবে এবং মানবিক সুরক্ষা দেওয়ার মাধ্যমে চা শ্রমিকদের বেঁচে থাকার অধিকারটুকু নিশ্চিত করবে।
হ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
হ শ্রীমঙ্গল, মৌলভীবাজার
No comments