নতুন ধানের গল্প by কাউছার খোকন

হেমন্তের রূপে আকৃষ্ট হয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর লিখেছেন_ 'আজি হেমন্তের শান্তি ব্যাপ্ত চরাচরে/ জনশূন্য ক্ষেত্র মাঝে দীপ্ত দ্বিপ্রহরে / শব্দহীন গতিহীন স্তব্ধতা উদার / রয়েছে পড়িয়া শ্রান্ত দিগন্ত প্রসার / স্বর্ণশ্যাম ডানা মেলি।' এ ঋতুতে দেখা যায় সোনারোদের ঝিলিক। সকালের শিশিরভেজা সকাল, দুপুরের রোদের সি্নগ্ধতা, সন্ধ্যায় বাঁশঝাড়ে পাখির কলকাকলি ভিন্নমাত্রিক দ্যোতনা সৃষ্টি করে। রাতে মেঘমুক্ত আকাশে জ্যোৎস্নার আলো যেন অন্য সময়ের চেয়ে একটু


বেশি চোখে পড়ে। ফসল কাটাকে কেন্দ্র করেই নবান্ন উৎসবের সূচনা। একে ঘিরে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের। সারিবদ্ধ কৃষক কাঁধে করে বাড়িতে ধান নিয়ে আসে। বাড়ির আঙিনায় ধান মাড়াই আর সি্নগ্ধ বাতাসে তা উড়িয়ে ধান সংগ্রহ করে পরিবারের সবাই। এরপর ঘরে নতুন ধানের চিড়া-মুড়ি, পিঠা-পায়েস তৈরিতে মহিলারা ব্যস্ত হয়ে ওঠে। ভাপাপিঠার গা বেয়ে ওঠা ধোঁয়ার দৃশ্য কারও দৃষ্টির অগোচর হতে পারে না। দিনের বেলা বাতাসের দুলুনিতে গাছের পাতাঝরার লগ্ন শুরু হয়ে যায়। শীতের আগমনী গান যেন হেমন্তেই শুরু হয়ে যায়। সন্ধ্যার পর হেমন্তের সি্নগ্ধ রাতে কিষাণ-কিষানী আঙিনায় বসে আগামীর কথা চিন্তা করে সুখস্বপ্নে বিভোর হয়ে যায়। এ সময় রাতের আকাশে হালকা আলোর চাদর এমনভাবে ছেয়ে যায় যে, চাঁদের অনুপস্থিতি বুঝতে দেয় না অমাবস্যা। আকাশে মায়াবী চাঁদের সঙ্গে প্রকৃতির এমন রূপের মধুময়তায় গা ভাসিয়ে দেয় যেন লোকালয় জুড়ে শুধু আলোর খেলা। বিকেল, গোধূলি, সন্ধ্যা সবই যেন নিসর্গের নিজ হাতে বোনা নকশিকাঁথা। লাল সূর্য দিগন্তে ডুব দিলে হিমেল নীল কুয়াশা ছেয়ে যায় ন্যাড়া মাঠের কোনায় কোনায়। শীত আর শরতের মাখামাখি এ হেমন্ত। বাংলার কোল জুড়ে নতুন ফসলের ডাক দিয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.