তেল-গ্যাস রক্ষা কমিটির মহাসমাবেশ-সব অসম চুক্তি বাতিলের দাবি অন্যথায় মন্ত্রণালয় ঘেরাও

দেশের স্বার্থ বিদেশি কম্পানির কাছে বিকিয়ে দিয়ে একের পর এক অসম চুক্তি, বিদ্যুতের সমাধানের নামে রেন্টাল পাওয়ারের ফলে বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধি এবং ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়ন না করার অভিযোগ এনে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের তীব্র সমালোচনা করেছে তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি। গতকাল শনিবার ঢাকায় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে মহাসমাবেশে কমিটির নেতারা বলেন, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ে বর্তমান


সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপ দেশের স্বার্থহানিকর।সমাবেশ দুপুর আড়াইটায় শুরু হয়ে শেষ হয় সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায়। সারা দেশ থেকে প্রায় ২০ হাজার কর্মী এ সমাবেশে যোগ দেন। সমাবেশে কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লা বলেন, অতীতের সরকারগুলোর মতো বর্তমান সরকারও খনিজ সম্পদ বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছে।
সাগরবক্ষের ১০ ও ১১ নম্বর ব্লকে মার্কিন কম্পানি কনোকো-ফিলিপসের সঙ্গে পিএসসি (উৎপাদন বণ্টন চুক্তি) বাতিল, সুনেত্র ও রশিদপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে অবিলম্বে বাপেঙ্কে দিয়ে গ্যাস উত্তোলন করা, ফুলবাড়ী চুক্তি বাস্তবায়নসহ সাত দফা দাবি তুলে ধরে কমিটি। সমাবেশে ঘোষণা করা হয়, আগামী ২৮ ডিসেম্বরের মধ্যে জাতীয় কমিটির সাত দফা মেনে না নেওয়া হলে ২৯ ডিসেম্বর জ্বালানি মন্ত্রণালয় ঘেরাও করা হবে। একই দিন সারা দেশে বিক্ষোভ কর্মসূচিও পালিত হবে।
সমাবেশে কমিটির সদস্যসচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বলেন, 'বর্তমান সরকার উন্মুক্ত কয়লাখনি করার যড়ন্ত্র করছে। সাগরের তেল-গ্যাস বিদেশিদের হাতে তুলে দিয়েছে গ্যাস সংকটের নামে। আর দেশীয় প্রতিষ্ঠান বাপেঙ্ ও পেট্রোবাংলাকে অথর্ব করে বসিয়ে রেখেছে।' জাতীয় সম্পদের ওপর জনগণের মালিকানা ও কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠার জন্য জাতীয় জাগরণ গড়ে তোলারও আহ্বান জানান তিনি।
ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেনন বলেন, 'বর্তমান সরকারের আমলে আমরা খনিজ সম্পদ রপ্তানি নিষিদ্ধকরণ বিল ২০০৯ এনেছিলাম। কিন্তু সংসদে তা পাস হয়নি। বিলটি ঝুলে আছে। যদি মাঠে তীব্র লড়াই গড়ে তোলা যায় তাহলে সংসদে এই বিল পাস করাতে সরকার বাধ্য হবে।'
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, 'দ্রুত বিদ্যুৎ সংকট সমাধানের নামে বিনা টেন্ডারে রেন্টাল বিদ্যুৎকেন্দ্রের অনুমতি দেওয়া হয়। তখনই এর বিরোধিতা করা হয়েছিল। এখন সেই রেন্টাল বিদ্যুতের জন্য জ্বালানি তেল কিনতে গিয়ে সরকার দেউলিয়া হয়ে যাচ্ছে।'
সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মনজুরুল আহসান খান, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা বিমল বিশ্বাস, বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সাধারণ সম্পাদক খালেকুজ্জামান ভঁূইয়া, জাতীয় গণফ্রন্টের সমন্বয়ক টিপু বিশ্বাস, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণতান্ত্রিক বিপ্লবী পার্টির সাধারণ সম্পাদক মোশরেফা মিশু, বাংলাদেশের কমিউনিস্ট লীগের সাধারণ সম্পাদক মোশারেফ হোসেন নান্নু, জাতীয় গণতান্ত্রিক গণমঞ্চের আহ্বায়ক মাসুদ খান, বুদ্ধিজীবী সৈয়দ আবুল মকসুদ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের অধ্যাপক ড. আকমল হোসেন, পানি বিশেষজ্ঞ ম. ইনামুল হক প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.