খাদ্য মন্ত্রণালয়ে দুর্নীতি-দ্রুত পরিশুদ্ধি প্রয়োজন
খাদ্য মন্ত্রণালয় যেন আকণ্ঠ দুর্নীতিতে নিমজ্জিত একটি প্রতিষ্ঠান। নিয়োগ, ক্রয় কিংবা সেবা_সবখানেই দুর্নীতির ক্লেদাক্ত স্পর্শ। মন্ত্রণালয় থেকে দুর্নীতির কথা অস্বীকার করা হলেও তথ্য উদ্ঘাটন হয়েছে উদ্বেগজনক। নিয়োগ নিয়ে অভিযোগ উঠেছে ঘুষ নেওয়ার। প্রতিবেদনে ছাপা হয়েছে, গ্রাম থেকে ঘুষ প্রদানকারী চাকরিপ্রার্থী আসছে নিয়োগের খবর নেওয়ার জন্য। লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে নিয়োগ কর্তৃপক্ষ চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে।
এদিকে রাজনৈতিক চাপও তৈরি হয়েছে মন্ত্রণালয়ের ওপর। এমপিরাও তালিকা পাঠিয়েছেন তাঁদের নিজস্ব লোকদের চাকরি দেওয়ার জন্য। এখন যোগ্য প্রার্থীদের চাকরি পাওয়ার সুযোগ হারানোর বিষয়টি প্রায় নিশ্চিত। এ পরিস্থিতিতে প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে টাকা দেওয়ার। যে যত বেশি টাকা দেবে, সে তত নিশ্চিত হবে চাকরি পাওয়ার ব্যাপারে। একদিকে ঘুষের প্রতিযোগিতা, অন্যদিকে দলীয় প্রতিযোগিতা_এই দুইয়ের মাঝখানে পড়ে যোগ্য প্রার্থীরা সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। টিআর-কাবিখা বিষয় নিয়ে অভিযোগের সীমা নেই। এ দুটি খাতের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই অভিযোগ আছে। এটা সব সরকারের আমলেই যেন স্বাভাবিক ব্যাপার। গরিব মানুষের মুখের গ্রাস কেড়ে নেওয়ার কাজটি করেন গরিবের ভোটে নির্বাচিত নেতা, তাঁদের ক্যাডার এবং গরিব মানুষের ট্যাঙ্রে পয়সায় লালিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীরা যোগসাজশের মাধ্যমে। দুর্নীতি আজ যেন প্রতিযোগিতার বিষয়। যন্ত্র ও যন্ত্রাংশ ক্রয়ের দুর্নীতি উদ্ঘাটন করতে গিয়ে যা পাওয়া গেছে, তা পড়েও থমকে দাঁড়াতে হয়। চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দরে জাহাজ থেকে চাল-গম আনলোড করার ক্রয়সংক্রান্ত দুর্নীতির বিষয়টিও নিশ্চয়ই সরকারের অজানা নয়। কারণ জার্মানি থেকে আমদানি করা যন্ত্র হওয়ার কথা থাকলেও কোন কারণে ভারতীয় যন্ত্রাংশ ব্যবহৃত হয়েছে, তার ব্যাখ্যা চাওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে এক বছরের ওয়ারেন্টি থাকার পরও কোন কারণে মেরামত বাবদ ৫০ লাখ টাকা খরচ করতে হয়, সেটিও তদন্তের মাধ্যমে মীমাংসা হওয়া প্রয়োজন। গ্যাসপ্রুফ শিট ক্রয়ের ক্ষেত্রেও জালিয়াতির অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। একই সঙ্গে শুল্ক ফাঁকি দেওয়ার কথাও জানা গেছে। এমন পরিস্থিতিতে সরকারের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হওয়ার চেয়েও বড় কথা হচ্ছে, দেশের সাধারণ গরিব মানুষ তার ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের যে পরিকল্পনা সরকারের রয়েছে, তা-ও ব্যাহত হচ্ছে। ডিলার নিয়োগে অনিয়মও যেন খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সেই পুরনো রোগের মতো। প্রতিটি সরকারের আমলেই সেখানে রাজনৈতিক স্বার্থরক্ষার বিষয়টিকে গুরুত্ব প্রদান করা হয়। এ পরিস্থিতি থেকে মন্ত্রণালয়কে মুক্ত করা সরকারের নিজের ও দেশের স্বার্থে প্রয়োজন। সর্বোপরি মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি নিয়ে যে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, তা সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে প্রকৃত দোষীদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে_এটাই দেশবাসীর প্রত্যাশা।
No comments