লেভেল ক্রসিং-মৃত্যু নয়, জীবনে গতি আনুক

তি ব্যাহত না করেও স্থল পরিবহনের দুই মাধ্যম রেল ও সড়ক কীভাবে সমান্তরাল চালু থাকতে পারে, লেভেল ক্রসিং হচ্ছে তারই বিশ্বস্বীকৃত ব্যবস্থা। কিন্তু আমাদের সেগুলো কীভাবে মৃত্যুফাঁদে পরিণত হয়েছে, চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ট্রেন-জিপ সংঘর্ষে পাঁচজনের মৃত্যুর মধ্য দিয়ে তা আরেকবার প্রমাণ হলো। অবশ্য এই মর্মান্তিক প্রাণহানির জন্য কেবল অরক্ষিত লেভেল ক্রসিংই নয়; জিপচালকের অবিমৃষ্যকারিতাও যে সমান দায়ী, তা অস্বীকার করা যাবে না।


বস্তুত রেল ও সড়কপথের সংযোগস্থলে এসব মৃত্যুফাঁদ নিয়ে আমাদের বহুপাক্ষিক ও দুর্ভাগ্যজনক নির্লিপ্ততাই দায়ী। জানা যাচ্ছে, দুর্ঘটনাস্থল লেভেল ক্রসিংটিতে গেটম্যানদের কেউ উপস্থিত ছিল না। তারা গেট বন্ধ করে দিলে এতগুলো মূল্যবান প্রাণহানি নিঃসন্দেহে এড়ানো সম্ভব ছিল। আবার জিপের চালকও যদি দেখেশুনে পার হতেন বিপত্তি ঘটত না। কিন্তু সবচেয়ে বেশি দুর্ভাগ্যজনক সম্ভবত লেভেল ক্রসিং নিয়ে আমাদের মৌসুমি উদ্বেগ। আমরা দেখছি, এক একটি দুর্ঘটনার পরই কেবল এগুলোর ব্যাপারে কথাবার্তা লেখালেখি হয়। তদন্ত কমিটি গঠিত হয়। সংবাদমাধ্যমে আলোচনা হয়। কিন্তু কিছুদিন পর আবার সব নিস্তরঙ্গ হয়ে পড়ে; পথে ওঁৎ পেতে থাকে মৃত্যুদূত। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে তদন্ত কমিটির সুপারিশ বাস্তবায়ন দূরে থাক, সময়মতো পেশ ও প্রকাশের গরজও দেখা যায় না। বিভিন্ন সময় লেভেল ক্রসিংয়ে দুর্ঘটনায় গঠিত তদন্ত রিপোর্ট বিশেল্গষণ করে দেখা গেছে, দুর্ঘটনার জন্য কয়েকটি সুনির্দিষ্ট কারণ রয়েছে। এর একটি হচ্ছে গেটম্যান না থাকা। আবার গেটম্যান থাকলেও তাদের দায়িত্ব পালনে গাফিলতির কারণে দুর্ঘটনা ঘটে। সীতাকুণ্ডের লেভেল ক্রসিংয়েও তাই ঘটেছে। লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যানের উপস্থিতি নিশ্চিত করা গেলে প্রাণহানি নিঃসন্দেহে কমে আসবে। কিন্তু সমকালের একটি প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে ভয়ানক চিত্র। সারাদেশে আড়াই হাজারের বেশি লেভেল ক্রসিংয়ে গেটম্যান রয়েছে মাত্র ৪১২টিতে। দুই হাজার অরক্ষিত! বেশ কিছু লেভেল ক্রসিং আবার অবৈধ। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়াই স্থানীয়রা বা অন্য কোনো সরকারি সংস্থা ক্রসিং তৈরি করেছে। নাগরিকের মূল্যবান প্রাণ বাঁচাতে হলে এই নৈরাজ্য বন্ধ করতেই হবে। লেভেল ক্রসিংয়ের আধুনিক নানা ব্যবস্থা বিশ্বে প্রচলিত রয়েছে। আমরা কেন মান্ধাতার গেটম্যাননির্ভর পদ্ধতিতে পড়ে আছি, সে প্রশ্নও তোলা যেতে পারে। জনজীবনের গতি অক্ষুণ্ন রাখার স্বার্থে তৈরি লেভেল ক্রসিংগুলো যেন জীবন থামিয়ে না দেয়, সে জন্য সংশ্লিষ্ট সবার আন্তরিকতা কাম্য।
 

No comments

Powered by Blogger.