বাউল আশ্রমে হামলা-কারো ধর্মাচারে আঘাত করা যায় না

মাদের সংবিধানে সবার ধর্ম ও ধর্মীয় আচার-অনুষ্ঠান পালনের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হয়েছে। সেই সুবাদে যেকোনো নাগরিক তার বিশ্বাস অনুযায়ী ধর্ম পালন করতে পারে। এ ক্ষেত্রে রাষ্ট্র কারো কাজে বাধা দিতে পারে না কিংবা কোনো নাগরিকও অন্য নাগরিকের কাজে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করতে পারে না। এই মৌলিক নির্দেশনাকে অমান্য করে কারো মত ও বিশ্বাসের ওপর আঘাত করা হলে তাকে অবশ্যই সংবিধান লঙ্ঘন হিসেবে গণ্য করতে হবে। তেমনি


সংবিধান লঙ্ঘনের অভিযোগ আনা যায় চুয়াডাঙ্গা বাউল আশ্রমের ওপর হামলাটিকে। দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর বেলে মাঠে বাউলের আশ্রমে হামলা চালিয়ে সেখানে আগুন জ্বালিয়ে দিয়েছে কিছু দুর্বৃত্ত। বাউলদের সেখান থেকে সাময়িক উচ্ছেদ করে দিয়ে দেশের সব আইনকানুনকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে তারা। প্রশাসনের নেওয়া পদক্ষেপগুলো সম্পর্কেও সমালোচনা করা যায় সহজেই। প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী যারা হামলা চালিয়েছে, তারা চিহ্নিত ব্যক্তি। তাদের সঙ্গে জঙ্গিদের আদর্শগত যোগসূত্র রয়েছে। সঙ্গত কারণেই মনে করা যায়, এই হামলার পেছনে দীর্ঘ পরিকল্পনা কার্যকর। প্রশাসন এই ঘটনার আভাস আগেই পেয়েছে কিন্তু বাউলদের নিরাপত্তা বিধানের কোনো চেষ্টা করেনি। বরং হামলা হওয়ার পর পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলেও সংবাদ প্রকাশ হয়েছে। সংবাদটি সত্য হলে তা হবে দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে অন্যতম একটি প্রতিবন্ধকতা। তাই এই তথ্যটি যাচাই করা এখন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য জরুরি হয়ে পড়েছে। বাউলদের আখড়ায় হামলাকারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের আখড়া ছেড়ে দিতে পূর্বাহ্নে কেন পুলিশ পরামর্শ দিয়েছে, তাও তলিয়ে দেখতে হবে। আগুন লাগানোর আগে পুলিশের এই পরামর্শ এবং আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার পর মামলা গ্রহণ না করার মধ্যে যোগসূত্র আছে বলে স্বাভাবিকভাবেই মনে করা যায়। বাউলদের মধ্যে কেউ যদি আইন অমান্য করে থাকে কিংবা গর্হিত কোনো কাজ করে থাকে, তাহলে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু এভাবে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়ার মতো হিংসাত্মক ঘটনাকে মেনে নেওয়া যায় না। বাউলদের বক্তব্য অনুযায়ী হামলাকারীরা জেএমবি নেতার অনুসারী। অন্যদিকে মৌলবাদী জঙ্গিরাই বাউলদের স্বীকৃতি দেয় না কিংবা ধর্মীয়ভাবে তাদের শত্রুশ্রেণীর বলে মনে করে। অন্যদিকে বাউলদের অভিযোগও জেএমবির দিকেই। সুতরাং সরকারকে বিষয়টি নিয়ে অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করতে হবে। এখন দেখতে হবে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে জঙ্গি নেই বলে যে প্রচার করা হয়, তা সঠিক কি না। বাউল আখড়ায় আক্রমণ করার পেছনে জঙ্গি তৎপরতার কোনো যোগসূত্র থাকলে সরকারকে অবশ্যই অবিলম্বে সে ব্যাপারে কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। দোষীদের চিহ্নিত করে তাদের পাকড়াও করে আইন অনুযায়ী দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.