বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে
স্বাধীন গবেষণা সংস্থা উন্নয়ন অন্বেষণের মতে, বাংলাদেশে কর সংগ্রহের পরিমাণ ক্রমাগত হারে বাড়লেও ধারাটি প্রয়োজনের তুলনায় মন্থরগতিতে এগোচ্ছে যা মধ্যমেয়াদি বাজেট পরিকল্পনা এবং রাজস্ব সংগ্রহের মধ্যে পার্থক্যকে বাড়িয়ে দিচ্ছে। ফলে বাজেট ঘাটতি বেড়ে যাচ্ছে এবং এই বাজেট ঘাটতি মোকাবেলার জন্য ও বৈদেশিক সাহায্য কমে যাওয়ার কারণে অভ্যন্তরীণ ঋণ গ্রহণের প্রবণতা বেড়ে যাচ্ছে। গবেষণা প্রতিষ্ঠানের নভেম্বর মাসের অর্থনৈতিক
পর্যালোচনায় আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বাংলাদেশের কর ব্যবস্থা কাঠামোগতভাবে সাধারণ মানুষের বিপরীতে অবস্থান করে। উন্নয়ন অন্বেষণের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে এবং বাজেট ঘাটতি মোকাবেলার জন্য রাজস্ব আয়ের গুরুত্বপূর্ণ অবদান রয়েছে। একটি দেশের অর্থনীতি যত শক্তিশালী, সে দেশের রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ তত বেশি। সরকারি ব্যয় নির্ধারণে অন্যান্য উপাদানের চেয়ে রাজস্ব সংগ্রহের ভূমিকা বেশি রয়েছে। ২০০২-০৩ অর্থবছরে বাংলাদেশে মোট রাজস্ব এবং দেশজ উৎপাদনের পরিমাণ ১০.২৯ থেকে বৃদ্ধি পেয়ে ২০১০-১১ অর্থবছরে ১২.৫০ শতাংশে দাঁড়ায়। যা ২০১১-১২ অর্থবছরে ১২.৭৬ শতাংশ প্রাক্কলন করা হয়েছে। করবহির্ভূত রাজস্বের চেয়ে কর রাজস্বের পরিমাণ বেশি। যেখানে এনবিআর বহির্ভূত কর রাজস্বের চেয়ে এনবিআর কর রাজস্বের অবদান অনেক বেশি। এর মধ্যে মূল্য সংযোজন কর ও আয়কর অন্যতম।
মধ্যমেয়াদি বাজেট পরিকল্পনা এবং বর্তমান ধারার মধ্যে পার্থক্য সামনের অর্থবছরগুলোতে খুব স্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ছিল ৯৮,৪৫৭ কোটি টাকা এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট পরিকল্পনায় রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯৫,১৮৯ কোটি টাকা। সুতরাং, পার্থক্য দাঁড়াল ৩,২৬৮ কোটি টাকা। এই পার্থক্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আরও বাড়তে পারে। এনবিআর কর রাজস্বের মধ্যে অন্যতম। ২০১১-১২ অর্থবছরে এর অবদান খুব বেশি বাড়ছে। এনবিআর রাজস্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান দুটি উপাদান হলো মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর। ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর মোট এনবিআর রাজস্বে যথাক্রমে ৩৮.১৮ এবং ২৮.৭১ শতাংশ অবদান রাখে। বাকি অন্যান্য উপাদান যেমন আমদানি শুল্ক (১৪.৬১ শতাংশ), সম্পূরক শুল্ক (১৭.৩২ শতাংশ) এবং রফতানি শুল্ক (০.০৪ শতাংশ) অবদান রাখে যার পরিমাণ খুবই সামান্য।
বাজেট অর্থায়ন এর জন্য সরকার রাজস্ব সংগ্রহের থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছিল। বর্তমান অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবরে সরকার ১১,০০০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে, যেখানে বর্তমান অর্থবছরে ব্যাংক থেকে মোট ঋণের পরিমাণ ধার্য করা হয়েছে ১৮,৯৫৭ কোটি টাকা। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩৫,১৫৫ কোটি টাকা। যেখানে ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ঋণ হবে ২৬,৮৮২ কোটি টাকা এবং প্রাক্কলিত রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ হবে ১,৪০,৮২৯ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ২,০৪,০৭২ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ সুদ বাবদ ব্যয় বেশি হারে বাড়ছে। এর প্রধান কারণ হলো অভ্যন্তরীণ ঋণ। সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে যার মধ্যে কৃষি এবং সামাজিক খাতে বেশি হওয়ার কথা।
কিন্তু বর্তমান বছরে ভিন্ন অবস্থা দেখা যায়। যদিও সামগ্রিকভাবে ভর্তুকির পরিমাণ বেশি, তবুও কৃষি এবং সামাজিক খাতে এর পরিমাণে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, বিদ্যুৎ খাতে পরিমাণ ক্রমাগত হারে বাড়ছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ খুব কম হারে বাড়বে যা দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব। সরকারি ব্যয় বাড়ছে কিন্তু সামাজিক খাতে এর পরিমাণ কমছে। কারণ সরকার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং কৃষি খাতে হ্রাসের কারণে মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে মূল্য সংযোজন কর থেকে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ভ্যাটের হার ছিল ১৫ শতাংশ। যেখানে ১২.৫ শতাংশ ভারতে, ১২ শতাংশ শ্রীলংকায়, ৫ শতাংশ জাপান এবং ইংল্যান্ডে এবং ১০.২৫ শতাংশ আমেরিকাতে। অন্যদিকে অত্যধিক হারে ভ্যাট বৃদ্ধি দরিদ্র লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। গরিবরা যে পরিমাণ ভ্যাট দেয় তার তুলনায় ধনী সম্প্রদায়রা খুব কম হারে কর দেয়।
ফলে এটি স্পষ্ট যে, আয়কর ব্যবস্থা দরিদ্রদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। বাংলাদেশে ধনীরা সাধারণ জনগণ থেকে তুলনামূলক কম হারে কর প্রদান করে। আবার ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর প্রদান করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। সুতরাং, বর্তমান কর ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষের শুধু বোঝাই বাড়ায়, প্রকারান্তরে ধনীরা কর পরিহার এবং প্রকৃত পরিমাণে কর না দেওয়ার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব খাতকে ধোঁকা দিচ্ছে।
মধ্যমেয়াদি বাজেট পরিকল্পনা এবং বর্তমান ধারার মধ্যে পার্থক্য সামনের অর্থবছরগুলোতে খুব স্পষ্টভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। ২০১০-১১ অর্থবছরে মোট রাজস্ব ছিল ৯৮,৪৫৭ কোটি টাকা এবং মধ্যমেয়াদি বাজেট পরিকল্পনায় রাজস্ব প্রাক্কলন করা হয়েছিল ৯৫,১৮৯ কোটি টাকা। সুতরাং, পার্থক্য দাঁড়াল ৩,২৬৮ কোটি টাকা। এই পার্থক্য ২০১৪-১৫ অর্থবছরে আরও বাড়তে পারে। এনবিআর কর রাজস্বের মধ্যে অন্যতম। ২০১১-১২ অর্থবছরে এর অবদান খুব বেশি বাড়ছে। এনবিআর রাজস্বের মধ্যে সবচেয়ে প্রধান দুটি উপাদান হলো মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর। ২০১০-১১ অর্থবছরে মূল্য সংযোজন কর এবং আয়কর মোট এনবিআর রাজস্বে যথাক্রমে ৩৮.১৮ এবং ২৮.৭১ শতাংশ অবদান রাখে। বাকি অন্যান্য উপাদান যেমন আমদানি শুল্ক (১৪.৬১ শতাংশ), সম্পূরক শুল্ক (১৭.৩২ শতাংশ) এবং রফতানি শুল্ক (০.০৪ শতাংশ) অবদান রাখে যার পরিমাণ খুবই সামান্য।
বাজেট অর্থায়ন এর জন্য সরকার রাজস্ব সংগ্রহের থেকে অভ্যন্তরীণ ঋণের ওপর বেশি নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে অভ্যন্তরীণ ঋণের ধারায় ব্যাপক পরিবর্তন হয়েছিল। বর্তমান অর্থবছরে জুলাই-অক্টোবরে সরকার ১১,০০০ কোটি টাকা ব্যাংক থেকে ঋণ গ্রহণ করেছে, যেখানে বর্তমান অর্থবছরে ব্যাংক থেকে মোট ঋণের পরিমাণ ধার্য করা হয়েছে ১৮,৯৫৭ কোটি টাকা। যদি এই ধারা অব্যাহত থাকে, তাহলে ২০১৪-১৫ অর্থবছরে নিট অভ্যন্তরীণ ঋণের পরিমাণ বেড়ে দাঁড়াবে ৩৫,১৫৫ কোটি টাকা। যেখানে ব্যাংক থেকে প্রাপ্ত ঋণ হবে ২৬,৮৮২ কোটি টাকা এবং প্রাক্কলিত রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ হবে ১,৪০,৮২৯ কোটি টাকা। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে ব্যয় বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়াবে ২,০৪,০৭২ কোটি টাকা।
অভ্যন্তরীণ সুদ বাবদ ব্যয় বেশি হারে বাড়ছে। এর প্রধান কারণ হলো অভ্যন্তরীণ ঋণ। সরকার বিভিন্ন খাতে ভর্তুকি দিয়ে থাকে যার মধ্যে কৃষি এবং সামাজিক খাতে বেশি হওয়ার কথা।
কিন্তু বর্তমান বছরে ভিন্ন অবস্থা দেখা যায়। যদিও সামগ্রিকভাবে ভর্তুকির পরিমাণ বেশি, তবুও কৃষি এবং সামাজিক খাতে এর পরিমাণে উল্লেখযোগ্য হারে কমে গেছে, বিদ্যুৎ খাতে পরিমাণ ক্রমাগত হারে বাড়ছে। বর্তমান ধারা অব্যাহত থাকলে সামাজিক খাতে সরকারি ব্যয়ের পরিমাণ খুব কম হারে বাড়বে যা দারিদ্র্য জনগোষ্ঠীর ওপর বিরূপ প্রভাব। সরকারি ব্যয় বাড়ছে কিন্তু সামাজিক খাতে এর পরিমাণ কমছে। কারণ সরকার বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি খাতে ভর্তুকি বৃদ্ধি এবং কৃষি খাতে হ্রাসের কারণে মধ্যবিত্ত ও গরিব মানুষের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলবে।
বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি রাজস্ব আসে মূল্য সংযোজন কর থেকে। ২০১১-১২ অর্থবছরে ভ্যাটের হার ছিল ১৫ শতাংশ। যেখানে ১২.৫ শতাংশ ভারতে, ১২ শতাংশ শ্রীলংকায়, ৫ শতাংশ জাপান এবং ইংল্যান্ডে এবং ১০.২৫ শতাংশ আমেরিকাতে। অন্যদিকে অত্যধিক হারে ভ্যাট বৃদ্ধি দরিদ্র লোকদের ক্ষতিগ্রস্ত করবে। গরিবরা যে পরিমাণ ভ্যাট দেয় তার তুলনায় ধনী সম্প্রদায়রা খুব কম হারে কর দেয়।
ফলে এটি স্পষ্ট যে, আয়কর ব্যবস্থা দরিদ্রদের প্রতি পক্ষপাতদুষ্ট। বাংলাদেশে ধনীরা সাধারণ জনগণ থেকে তুলনামূলক কম হারে কর প্রদান করে। আবার ১৫ শতাংশ হারে মূল্য সংযোজন কর প্রদান করা সবার জন্য বাধ্যতামূলক। সুতরাং, বর্তমান কর ব্যবস্থা দরিদ্র মানুষের শুধু বোঝাই বাড়ায়, প্রকারান্তরে ধনীরা কর পরিহার এবং প্রকৃত পরিমাণে কর না দেওয়ার মাধ্যমে দেশের রাজস্ব খাতকে ধোঁকা দিচ্ছে।
No comments