স্বপ্ন এবার আসল বিশ্বকাপ নিয়ে...

সে এক দেখার মতো দৃশ্য! ছোটখাটো মেয়েটি রানআপের শেষ প্রান্তে গিয়ে দেন বিশাল এক লাফ। দুই হাত উপরে তুলে যেন আকাশ ছোঁয়ার চেষ্টা। এরপর যেন বাতাস থেকে জাদু টেনে নিয়ে বল ছুড়ে দেওয়া। বিচিত্র এই বোলিং অ্যাকশনেই কাল ক্যারিবীয় অফস্পিনার আনিসা মোহাম্মদ ধসিয়ে দিলেন পাকিস্তানকে। ৮.৩-১-১৪-৭ এই তাঁর জাদুকরী বোলিং ফিগারে। মহিলা বিশ্বকাপ বাছাই পর্বের শিরোপা জয়ে পাদপ্রদীপের আলোয় তো আনিসাই থাকবেন।


সংবাদ সম্মেলনে বোলিং অ্যাকশন নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই হেসে কুটিকুটি এই ত্রিনিদাদিয়ান। সামলে নিয়ে এটুকু কেবল বলতে পারলেন, 'আমার উচ্চতা খুব বেশি না তো। তাই লাফ দিয়ে আমি মোমেন্টাম গ্যাদার করি।' সেটি করে যে ফাইনালের মহামঞ্চে ৭ উইকেট শিকার করবেন, তা কি ভাবতে পেরেছিলেন? এবারও হাসি থামে না আনিসার, 'সাত ঠিক না, ভেবেছিলাম হয়তো পাঁচ উইকেট পাব।'
ক্যারিবীয়-কন্যাদের কাল ছিল এমন হাসিরই দিন। খুশির উপলক্ষ। হোক না এটি বাছাই পর্ব, তার পরও এ শিরোপার মূল্য কম কী! পাশাপাশি বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্নপূরণও তো হলো। সব মিলিয়ে প্রত্যাশার সঙ্গে প্রাপ্তির মেলবন্ধে উচ্ছ্বসিত অধিনায়ক ম্যারিসা অ্যাগুইলেরা, 'দেশ থেকে আসার সময়ই আমরা লক্ষ্য ঠিক করেছিলাম, ৬ ম্যাচের ৬টিতেই জিততে হবে। সেটি পেরেছি। বিশ্বকাপ খেলার লক্ষ্যও অর্জিত হয়েছে। আমরা তাই ভীষণ খুশি।' অবশ্য এ টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় তারকা স্টেফানি টেলর আনন্দিত হতে পারছেন না। ব্যাটিংয়ে ৩২৫ রান করে এবং বোলিংয়ে ১০ উইকেট নিয়ে টুর্নামেন্টের সেরা ক্রিকেটার হওয়ার পরও না। 'আমার ব্যক্তিগত লক্ষ্য ছিল এ টুর্নামেন্টে ৫০০ রান করা। দেশে ফিরে আমার তাই আরো অনেক পরিশ্রম করতে হবে'_সিরিয়াস মুখে সংবাদ সম্মেলনে বলে গেলেন টেলর।
ফাইনালটা প্রতিশ্রুতি দিচ্ছিল হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের। ২৫১ রানের লক্ষ্যে নেমে পাকিস্তানের শুরুটা খারাপ হয়নি। কিন্তু হঠাৎই কক্ষচ্যুত হয়ে যায় পাকিস্তান। কৃতিত্বটা নিজ দলের বোলারদের দিচ্ছেন ক্যারিবীয় অধিনায়ক, '২০০ রানের বেশি সব সময়ই নির্ভর করার মতো স্কোর। ওদের শুরুটা দারুণ হওয়ার পরও জানতাম, একটি ব্রেক থ্রু আমাদের ম্যাচে ফিরিয়ে আনতে পারে। বোলারদের ওপর আমার সেই আস্থা ছিল। তার প্রতিফলন দেখা গেছে ম্যাচে।' দুই দলের পার্থক্যের কথা বলতে গিয়ে দুই অধিনায়কই বলছেন ধারাবাহিকতার কথা। পাকিস্তানের সানা মীর যেমন বলেছেন, 'আসলে আমরা ওয়েস্ট ইন্ডিজের মতো ধারাবাহিক ক্রিকেট খেলতে পারিনি। ফাইনালে সেটিই পার্থক্য গড়ে দিয়েছে। আর সত্যিকারের পাকিস্তানকে দেখা যায়নি এ ম্যাচে।'
বাছাই পর্ব শেষ, এবার লক্ষ্য মূল বিশ্বকাপ। বছর দুয়েক পরের সেই টুর্নামেন্টে জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজ কক্ষপথে আছে বলেই বিশ্বাস বছর চারেক ধরে দলটির কোচের ভূমিকায় থাকা শেরউইন ক্যাম্পবেলের, 'সব ম্যাচ জিতেছি মানে হলো, বাছাই পর্বের অন্য দলগুলোর চেয়ে আমরা এগিয়ে। কিন্তু যেহেতু বাছাই পর্ব খেলতে হলো, সে কারণে মনে হয়, যাদের এ টুর্নামেন্ট খেলতে হয়নি, তাদের চেয়ে আমরা পিছিয়ে। তবে এখানে যেভাবে খেললাম, সেটি ধরে রাখতে পারলে আমাদের পক্ষে বিশ্বকাপ জয় অবশ্যই সম্ভব।' কী আশ্চর্য, একই কথা তো বলছেন পাকিস্তানের অধিনায়ক সানা মীরও, 'বিশ্বকাপ এখনো দুই বছর বাকি। যদি ঠিকমতো অনুশীলন করতে পারি, তাহলে বিশ্বকাপ জেতার ক্ষমতা এ দলটির আছে বলে আমার বিশ্বাস।'
দেখাই যাক না, বছর দুয়েক পর কী হয়!

No comments

Powered by Blogger.