জবির সমস্যাগুলোর প্রতি নজর দিন
একটি বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসসি নেই_ ভাবতেই অবাক লাগে! ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর আশার কেন্দ্রবিন্দু জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়। ভর্তি পরীক্ষা নামক বস্তুটিকে সম্মুখযুদ্ধে পরাজিত করে তবে এখানে ভর্তি হওয়া। ছেলেকে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে গিয়ে কোনো বাবা তার একমাত্র জমিটুকু বিক্রি করেছেন, কেউবা একমাত্র দুধেল গাভীটি বিক্রি করেছেন, ভিটাবাড়িও গেছে অনেক বাবার। তবু সন্তান দেশের অন্যতম শ্রেষ্ঠ শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করছে_ মা-বাবার মুখে,
প্রিয়জনের মুখে এ আনন্দ-তৃপ্তি আর গর্ব। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের সব হলে ফ্রি ইন্টারনেটের ব্যবস্থা রয়েছে, ঢাবির পুরো এলাকাসহ ঢাকার বাইরের অধিকাংশ বিশ্ববিদ্যালয়ে রয়েছে ফ্রি ইন্টারনেট ব্যবহারের ব্যবস্থা। অথচ আমাদের ছোট্ট ক্যাম্পাসে এমন কোনো সুযোগ নেই। ফলে শিক্ষার্থীদের ইন্টারনেট ব্যবহারের জন্য গুনতে হচ্ছে একটা বিশাল অঙ্কের অর্থ।
হলের জন্য বিক্ষুব্ধ পুরো জবি। শিক্ষার্থীরা প্রায়ই অধিকার আদায়ের দাবিতে আন্দোলনে নামে। তারা সোচ্চার, তবে নির্বিকার প্রশাসন। গত ছয় বছরে জবির বেদখল থাকা ১২টি হলের একটিও উদ্ধার হয়নি, এমনকি উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি হয়নি এ ব্যাপারে। সাধারণ শিক্ষার্থীরা হলের দাবিতে আন্দোলন করতে চাইলে পুলিশ লেলিয়ে দেওয়া হচ্ছে। প্রশাসন পুলিশ দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঠ্যাঙ্গানোতে যতটা পারঙ্গম ঠিক ততটা অক্ষম বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন সাধনে। এত বছর পরও ১০১ একর জায়গায় জবির নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের কাজ শুরু হয়নি। আদৌ হওয়ার কোনো সম্ভাবনা নেই। উল্টো কর্তৃপক্ষ গত অর্থবছরে বিশ্ববিদ্যালয়ের আটতলা নতুন ভবনটি ১৬ তলা করার জন্য যে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ পেয়েছে তার কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি। এক অভিনব পদ্ধতিতে একটি ক্লাসরুমকে দুই ভাগে বিভক্ত করে ক্লাসরুম সংকট সমাধানের অদ্ভুত সমাধানের চেষ্টা করা হচ্ছে। কয়দিন পরপরই আমাদের গুনতে হচ্ছে নানা ফি। একে তো হলহীন জীবনে বাড়তি বাসাভাড়া আর খাওয়ার টাকার ঘানি টানা, তার ওপর নানা ফিয়ে আমাদের জীবন যায় যায়।
একটি ছাত্র সংগঠনের দু'গ্রুপের সংঘর্ষের জের ধরে গত মার্চে বন্ধ হয়ে যাওয়া একমাত্র ক্যান্টিনটি এখনও চালু করতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। পুরো ক্যাম্পাসে পানি সংকট ভয়াবহ, ঠিকমতো পানি সরবরাহ করতে পারছে না তারা। আমাদের ক্যাম্পাসে লোডশেডিং একটা নিয়মিত ব্যাপার। আলাদা কোনো ট্রান্সমিটার নেই জবির জন্য। শিক্ষার্থীরা অনেক সমস্যাকে বাধ্য হয়ে মেনে নিয়েছে। কিন্তু যেগুলোর সমাধান একটু আন্তরিক হলেই সম্ভব, সেগুলোর কী হবে?
আমাদের কেন্দ্রীয় লাইব্রেরিটি সমৃদ্ধ নয়। কোনো প্রয়োজনীয় বই লাইব্রেরিতে খুঁজে পাওয়া দায়। লাইব্রেরিতে নেই কোনো ফটোকপি মেশিন, ফিল্টারের ব্যবস্থা নেই সেখানে। বসার জায়গা অপ্রতুল। কর্তৃপক্ষ দীর্ঘদিন ধরে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসছে সমাধান হচ্ছে হচ্ছে বলে, কিন্তু বাস্তবে কিছুই নয়। জবিতে নতুন চালু হওয়া বিভাগগুলোর নিজস্ব কোনো সেমিনার রুম নেই। অফিস রুমের একটি অংশে চলছে জোড়াতালি দিয়ে সেমিনারের কাজ। ফলে দুর্ভোগ পোহাচ্ছে শিক্ষার্থীরা। আর মেডিকেল সেন্টারের অবস্থা তো আরও করুণ। একজন মাত্র ডাক্তার ২৫ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য।
জবির দুুটি গেটের মধ্যে দক্ষিণ গেটের সামনে গাড়ির স্টেশন আর গ্যারেজ। তাই গেটটি খোলা রাখলেও শিক্ষার্থীরা এ গেট দিয়ে আসা-যাওয়া করতে পারে না। আমাদের প্রশাসন পারেনি এ সমস্যার কোনো সমাধান করতে। তারা পারে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন দমন করতে; পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে রক্তাক্ত করতে জবির ধূসর ক্যাম্পাস।
কিন্তু আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা যাব কোথায়? এটা তো আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়, আমাদের মা। সাধারণ শিক্ষার্থীদের শ্রম আর ভালোবাসার ঘাম মিশে আছে জবির উড়ন্ত বালি আর শক্ত মাটিতে। তাই সাধারণ শিক্ষার্থীরা বসে থাকতে পারে না। পদ্মা পারের ধীবর পল্লীর অসহায় মাঝিদের মতো তারাও লড়ে যায় প্রশাসনের অন্যায় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে, রাষ্ট্রযন্ত্রের অবহেলা, বঞ্চনা আর বৈষম্যের বিরুদ্ধে। তারা কান ফাটানো চিৎকার দিয়ে জানানোর চেষ্টা করে তাদের ন্যায্য অধিকারের কথা। তবু এতদিনে একটি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে জবির তেমন উন্নয়ন হয়নি। অচিরেই হল সমস্যার সমাধান ও নতুন ক্যাম্পাস নির্মাণের কোনো বিকল্প নেই। আমরা সাধারণ শিক্ষার্থীরা মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী ও প্রধানমন্ত্রীর কাছে জবি সমস্যার আশু সমাধান কামনা করছি। আমরা আর বিভিন্ন দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে উত্তপ্ত জবি ক্যাম্পাস দেখতে চাই না, দেখতে চাই না বন্ধ ক্যাম্পাস।
হ জবিতে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীরা
No comments