পুলিশে নতুন পদ-নিয়োগ যেন রাজনৈতিক না হয়
পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তন নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা হচ্ছিল। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর পুলিশের জনবল বৃদ্ধির জন্য নতুন নিয়োগের প্রতিশ্রুতিও দেওয়া হয়েছিল। এরই মধ্যে প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পুলিশের জনবল কিছুটা বাড়ানো হয়েছে। আরো বাড়ানো হবে। পুলিশের কাজে গতিশীলতা আনার জন্য পুলিশের সাংগঠনিক কাঠামো পরিবর্তনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এই বিভাগে নতুন করে সৃষ্টি করা হবে পাঁচ শতাধিক নতুন পদ।
পুলিশের জনবল বৃদ্ধির ক্ষেত্রে বেশ কিছু নতুন পদ সৃষ্টির সুপারিশ করা হয়েছে। সরকারের এক উচ্চপর্যায়ের বৈঠকে সদর দপ্তরের উপ-মহাপুলিশ পরিদর্শকসহ পর্যটন পুলিশ, পুলিশ ট্রেনিং সেন্টার, ৩০টি ইনসার্ভিস ট্রেনিং সেন্টারের জন্য বিভিন্ন পদমর্যাদার এসব পদ অনুমোদন করা হয় বলে প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে। এসব পদের মধ্যে ডিআইজি ছাড়াও অতিরিক্ত ডিআইজি, এসপি, অতিরিক্ত এসপিসহ কনস্টেবল পদ রয়েছে। এরই মধ্যে ৭৮টি ক্যাডার পদসহ ১৬ হাজার ৮৮৬টি পদের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। সব পদ পূরণ করা হলে পুলিশ বিভাগ নতুন করে ইতিবাচক ভূমিকা নিতে পারবে বলে মনে করা যেতে পারে। পুলিশ সম্পর্কে সাধারণ মানুষের মনে এক ধরনের নেতিবাচক ধারণা রয়েছে। এটাও ঠিক যে পুলিশ বাহিনীর সব সদস্যই বিতর্কের ঊধর্ে্ব নন। কিন্তু একটি সুসজ্জিত বাহিনী সুদীর্ঘকাল ধরে মানুষের কল্যাণে কাজ করছে। এই বাহিনীর সব সদস্যকে এক কাতারে ফেলা যাবে না। এটাও মানতে হবে যে আমাদের পুলিশ বাহিনী আধুনিক বিশ্বের পুলিশ বাহিনীর মতো সুশিক্ষিত নয়। আমাদের পুলিশ বাহিনীকে আধুনিক বিশ্বের উপযোগী করে গড়ে তুলতে হবে। এর জন্য সবার আগে প্রয়োজন পুলিশের মানসিকতা পরিবর্তন। পুলিশ বাহিনীর সদস্যদের যে একটি মানসিকতা তৈরি হয়ে যায়, সেটা দূর করতে হবে। বলা হয়ে থাকে, পুলিশ জনগণের বন্ধু। কিন্তু পুলিশ কী আসলেই জনগণের বন্ধু হতে পেরেছে? পুলিশের সব সদস্য কী জনগণের সত্যিকারের বন্ধু? এ প্রশ্নটা স্বাভাবিকভাবেই আসে এ কারণেই যে পুলিশের অনুষ্ঠানাদিতে এই বিভাগের শীর্ষ কর্মকর্তাদেরও বলতে শোনা যায়, 'পুলিশকে জনগণের আস্থা অর্জন করতে হবে।' অর্থাৎ জনমনে পুলিশ সম্পর্কে এক ধরনের আস্থাহীনতা আছে। আস্থার সংকট আছে বলেই আস্থা অর্জনের কথা বলতে হয়।
পুলিশ বাহিনীর আধুনিকায়নের জন্য প্রথম যে কাজটি করতে হবে, তা হলো মানসিকতার পরিবর্তন এবং ইতিবাচক মনোভাব নিয়ে কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করা। সে জন্য জনসংখ্যা ও অপরাধ বৃদ্ধির অনুপাতে পুলিশের সংখ্যা বাড়াতে হবে। একজন পুলিশকে ১৬ ঘণ্টা কাজ করতে হলে তার পক্ষে 'বন্ধুসুলভ' মানসিকতা প্রদর্শন করা অনেকাংশেই কঠিন। আবার পুলিশ এমন একটি বিভাগ, যে বিভাগটি জনগণের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত। স্বাভাবিকভাবেই জনসম্পৃক্ত এই বিভাগটিকে গণমুখী করতে হবে। পুলিশের কাঠামো শুধু নয়, বেতন কাঠামোতেও পরিবর্তন আনা দরকার। বাংলাদেশের পুলিশ যে বেতন কাঠামোয় কাজ করে যে সেবা দিচ্ছে, সেটাও কম পাওয়া নয়। পুলিশ বিভাগের বেতন কাঠামো এমন মানের হতে হবে, যাতে পুলিশের সব সদস্য এই বেতন কাঠামোয় উৎসাহিত হন। পুলিশকে যে ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হয়, অন্য কোনো বিভাগকে এভাবে ঝুঁকি নিতে হয় না। এসব দিক বিবেচনায় রাখতে হবে। দেশের থানাগুলোর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের পদগুলোও নতুন কাঠামোয় বদলে ফেলা যায় কি না সেটাও বিবেচনায় রাখা দরকার। থানা পর্যায়ে নতুন পদ সৃষ্টি করা যেতে পারে। অনেক পুরনো পদ বদলে ফেলা যেতে পারে। এভাবে আধুনিকতার ছোঁয়ায় বদলে ফেলা যেতে পারে দেশের পুলিশ বাহিনীকে। এর ভেতর দিয়েই এ বাহিনীকে করে তোলা যেতে পারে দায়িত্বশীল ও নিবেদিতপ্রাণ। মানসিকতার পরিবর্তন হলে এমনিতেই সব কিছু বদলে যাবে। কিন্তু দৃষ্টিভঙ্গির পরিবর্তনটাই হচ্ছে আসল।
পুলিশকে ঢেলে সাজাতে হবে_এটাই হচ্ছে শেষ কথা। একটি সুশিক্ষিত বাহিনী গড়ে তোলার জন্য সম্ভব সব কিছুই করতে হবে সরকারকে।
No comments