অপরাধ গুরুতর বৈকি by আসিফ আহমেদ

রিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজেই হোক, আর ঢাকা কিংবা রাজশাহী বা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজে হোক_ ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে উত্তীর্ণ হতে হলে অসাধারণ মেধাবী হতেই হবে। এ পরীক্ষায় নকলের সুযোগ নেই, চেষ্টা-তদবির করে সিরিয়াল ওলটপালট করা চলে না। দু'একজন হয়তো টুকটাক সুবিধা পায়, তবে বেশিরভাগকেই স্থান করে নিতে হয় তীব্র প্রতিযোগিতার মাধ্যমে। বহু বছর ধরেই চিকিৎসা শিক্ষা ব্যয়বহুল।


কেবল ধনবান পরিবারের সন্তানরাই ডাক্তার হওয়ার জন্য খরচ চালানোর কথা ভাবতে পারে। বলা যায়, ভালো ছাত্র বা ছাত্রী যেমন হতে হবে তেমনি থাকা চাই অর্থ। বেসরকারিভাবেও এখন অনেক মেডিকেল শিক্ষার প্রতিষ্ঠান চালু রয়েছে। তবে এগুলোতে ভর্তির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো মেধা হয়তো না হলেও চলে, কিন্তু অর্থের জোর থাকা চাই-ই।
বরিশাল শহরের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ সরকারি অর্থে পরিচালিত। ছাত্রছাত্রীরা শিক্ষা ব্যয়ের একটি অংশ বহন করে বটে, তবে মোট ব্যয়ের তুলনায় তা সামান্য। বাকিটা সরকারের ভর্তুকি। আর সরকারের ভর্তুকি মানেই হচ্ছে দেশের সব মানুষের ট্যাক্স থেকে তার জোগান দেওয়া।
এ কলেজটি সম্পর্কে শনিবার সমকালে 'বরিশালে ছাত্রলীগের দু'পক্ষে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া' শিরোনামে একটি খবর বের হয়েছে। কলেজের ৩৬তম ব্যাচের শিক্ষার্থীদের বিদায় অনুষ্ঠানের এক আয়োজনে ৪০তম ব্যাচের ছাত্র মোঃ হারুনকে কেন আমন্ত্রণ জানানো হয়নি তা নিয়ে বিরোধের সূত্রপাত। ৩৬তম ব্যাচ হচ্ছে সিনিয়র এবং ৪০তম ব্যাচ তাদের অনেক জুনিয়র। ৩৬তম ব্যাচের বিদায় সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে ৪০তম ব্যাচের কারও আমন্ত্রণ পাওয়ার কথা নয়। কিন্তু মোঃ হারুন নামের মেধাবী তরুণটি এ আমন্ত্রণ পেতে চেয়েছে। স্বাভাবিকভাবে আমন্ত্রণ পাওয়ার যোগ্যতা তার নেই, এটা বোধগম্য। তবুও হাজির থাকতে চায় এবং ধরে নেওয়া যায় সে ছাত্রলীগের কেউকেটা একজন হবে। আর দেশের সর্বত্রই আমরা এখন দেখছি, এ ধরনের কেউকেটারা নিজের 'অধিকার' প্রতিষ্ঠা করতে ক্ষমতাসীন দলের দাপট-দৌরাত্ম্য দেখাতে বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করে না। ক্ষমতাসীন দলের লোক তো, এমন আচরণ সে করতেই পারে। দেশের সর্বত্রই তো আমরা এমনটি দেখছি। তারা অন্যায় আবদার করবে, যাকে খুশি তাকে হেনস্তা-হয়রানি করবে, কিন্তু কেউ টুঁ-শব্দটি করতে পারবে না।
তবে বরিশাল শেরেবাংলা কলেজে তাদের প্রতিপক্ষে সাধারণ ছাত্রছাত্রীদের পাশাপাশি ছাত্রলীগের কেউকেটাদেরও কেউ কেউ হয়তো ছিল এবং এ কারণেই মোকাবেলার ঘটনা আমরা দেখতে পেলাম। তবে কপাল ভালো বলতে হবে, ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়াতেই ঘটনার আপাতত ইতি ঘটেছে। এ ঘটনায় কেউ আহত হলে দেখা যেত যে তাদের জামাই আদরে কলেজসংলগ্ন হাসপাতালের ভিআইপি কেবিনে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে এবং তাদের দেখতে ছুটে গেছেন কলেজের প্রিন্সিপাল থেকে ক্ষমতাসীন দলের স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। আরেক পক্ষ হয়তো মিছিল নিয়ে নেমে পড়ত '... ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে...'।
এমনটি আমরা জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলের আমলেও দেখেছি, অর্থাৎ তাদের দল বিএনপি যখন ক্ষমতায়। অপরাধ করাকে তারা অধিকার মনে করত। সাধারণ শিক্ষার্থীরা তাদের কাছে হয়ে থাকত অসহায়। তাদের মূল দলের নেতারা সভ্যভব্য হয়ে চলার শিক্ষা দেননি। এখন তারা কোণঠাসা। অনেক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্রলীগের নেতারা তাদের এমনকি প্রবেশ করতেও দেয় না। তবে অপেক্ষা সুদিনের, যদি দল ক্ষমতায় আসে দেখিয়ে দেবে যে কত ধানে কত চাল...। সুদে-আসলে সব উসুল করায় দৃঢ়পণ তারা।
হায়রে মেধা! হায়রে ধনবান পরিবারের সন্তান! এরাই নাকি চিকিৎসক হবে। তাদের হাতে রোগী পড়লে কী যে পরিণতি হবে, কে জানে!
বরিশাল মেডিকেল কলেজ
ৃকর্তৃপক্ষ কি অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারবে?

No comments

Powered by Blogger.