এইচএমপিভি কতোটা আতঙ্কের by ফরিদ উদ্দিন আহমেদ

করোনার পর এর মধ্যেই আবারো বিশ্বে হুমকি হয়ে  উঠছে নতুন মহামারির। পুরনো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) নতুন করে ছড়াচ্ছে দেশে দেশে। দেশের বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। তবে মহামারি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি আছে। এক্ষেত্রে স্বাস্থ্য বিভাগকে সক্ষমতা বাড়ানোর উপর জোর দেয়ার তাগিদ দিয়েছেন জনস্বাস্থ্যবিদরা।

হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস কতোটুকুও আতঙ্কের- এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার  সাবেক পরিচালক অধ্যাপক ডা.  বে-নজির আহমেদ মানবজমিনকে বলেন,  এই ভাইরাস নতুন কিছু নয়। তবে মহামারি হওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তাই সতর্ক দৃষ্টি আছে। এই জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ আরও বলেন, আমাদের সক্ষমতার ঘাটতি আছে। তথ্য প্রকাশ করতে দ্বিধা করি। লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করি। বরং লুকিয়ে রাখলে মানুষ  ভ্রান্তিতে ভোগে। অজানা আতঙ্কে থাকেন। তিনি বলেন, এখন দেশে বহু মানুষ শ্বাসনালির সমস্যায় আছেন।  তাদের শনাক্ত করা কঠিন কিছুই না। করোনার সময় তো আমরা করেছি। এটা  স্বাস্থ্য বিভাগের উদ্যোগ নিতে হবে। সার্ভিলেন্স চালু করার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, নিয়মিত পরীক্ষা-নিরীক্ষা করলে বোঝা যাবে এই রোগী কোন ভাইরাসে ভুগছেন। ভাইরাসটি নিয়ে একটু উদ্বেগের মধ্যে আছেন বলেও তিনি জানিয়েছেন।

দেশের খ্যাতিমান ভাইরোলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল  বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, দেশে নানা ভাইরাস আছে। হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি) করোনার মতোই ছড়ায়। এগুলো নাক, মুখ, হাত দিয়ে ছড়ায়। তাই আমাদেরকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকতে হবে। সতর্ক থাকতে হবে। এই ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছুই নেই। এসব ভাইরাস চীনে যেভাবে ছড়ায় অন্যদেশে সেভাবে ছড়ায় না। কোভিড-১৯ জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির অন্যতম এই সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম পরামর্শ দিয়ে বলেন, করোনার মতোই আমাদেরকে মাস্ক পরতে হবে।

করোনায় মৃত্যু-আক্রান্ত-আতঙ্ক ছড়িয়েছিল প্রায় সব দেশেই। সেই মহামারি কাটিয়ে স্বাভাবিক হয়েছে বিশ্ব। এর মধ্যেই আবারো হুমকি হয়ে উঠছে নতুন মহামারি। সামনের দিনগুলোতে আবারো এমন মহামারি বা সংক্রামক রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞ ভাইরোলজিস্টরা। এ অবস্থায় চীন-জাপানে নতুন আতঙ্ক দ্য হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাসের (এইচএমপিভি) প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। চীন-জাপান ছাড়িয়ে মালয়েশিয়া ও ভারতেও এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী পাওয়া গেছে। তবে বিশেষজ্ঞরা জানিয়েছেন, এটা নতুন কোনো রোগ নয়। এর ভয়াবহতার ঝুঁকিও কম। এ বিষয়ে বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। এটি পুরনো রোগ, নতুন কিছু না বলেও জানিয়েছেন তারা।

সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) পরিচালক ডা. তাহমিনা শিরীন এ ব্যাপারে মানবজমিনকে বলেন, এইচএমপিভি ভাইরাস এর আগেও বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এটি নতুন কোনো ভাইরাস নয়। মানুষের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে এবছর এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে এই ভাইরাস শনাক্ত হয়নি বলে তিনি জানিয়েছেন।
দেশের ভাইরোলজিস্টরা বলেন, এ ভাইরাস নিয়ে অতিরিক্ত ভয়ের কিছু নেই। এতে বড় ধরনের হুমকি নেই। এর আগেও দেশে এই ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়েছিল। এই ভাইরাসে আক্রান্তদের ইনফ্লুয়েঞ্জা ও করোনা ভাইরাসের মতোই সিম্পটম (উপসর্গ) দেখা দিতে পারে। তবে এতে বড় সমস্যা হওয়ার কথা নয়। এই রোগের আলাদা ভ্যাকসিন নেই। তবে প্রচলিত চিকিৎসায় এই রোগ ভালো হয়। স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখা সূত্র জানায়, ২০১৭ সাল থেকেই আমাদের দেশে এইচএমপিভি ভাইরাসে আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়ে আসছিল।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া চীনের কিছু ভিডিওতে দেখা যায়, হাসপাতালগুলোতে করোনা ভাইরাসের সময়ের মতোই ভিড়। এ ছাড়া জাপানেও একই অবস্থা দেখা যায়। দেশগুলোতে এই রোগ নিয়ে সতর্ক অবস্থানেও যেতে দেখা যাচ্ছে। তবে এই রোগের প্রাদুর্ভাব বাড়লেও এখন পর্যন্ত বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও) কিংবা দেশগুলোর সরকার সতর্কতা জারি করেনি। আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের তথ্যে জানা যায়, চীনে এই রোগে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিরা। বিশেষ করে আগে যাদের শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা ছিল, তারা নতুন এই ভাইরাসের আক্রমণে নাজুক অবস্থায় আছেন। এইচএমপিভি ভাইরাস নিয়ে বিশ্বের অন্য দেশগুলোকে উদ্বিগ্ন না হওয়ার জন্য বলেছে চীন। তারা জানায়, এটি মৌসুমি অর্থাৎ শীতকালীন সংক্রমণ মাত্র। চীন, জাপান ও মালয়েশিয়ার পর ভারতেও শনাক্ত হলো হিউম্যান মেটানিউমোভাইরাস (এইচএমপিভি)।  ৬ই জানুয়ারি দেশটির কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী বেঙ্গালুরুতে দুটি শিশুর শরীরে এইচএমপিভি শনাক্ত হয়।

প্রায় দুই দশক আগে প্রথমবারের মতো এইচএমপিভি’র উপস্থিতি জানান দিলেও এখন পর্যন্ত এর টিকা আবিষ্কার হয়নি। চিকিৎসকরা বলছেন, করোনা মোকাবিলায় যেসব সতর্কতা নেয়া হয়েছিল, একই পদক্ষেপে এই ভাইরাসও প্রতিরোধ করা সম্ভব। টানা ২০ সেকেন্ড ধরে সাবান ও পানি দিয়ে হাত ধোয়া, অপরিষ্কার হাতে নাক-মুখ স্পর্শ না করা এবং আক্রান্ত ব্যক্তিদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখার মধ্যদিয়ে এইচএমপিভি থেকে নিরাপদ থাকার পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।

mzamin


No comments

Powered by Blogger.