গ্রিনল্যান্ড নিয়ে উত্তেজনা দখলে নেবে যুক্তরাষ্ট্র?

গ্রিনল্যান্ডকে নিয়ে উত্তেজনা বাড়ছে। সম্প্রতি বার বার ডেনমার্কের অধীনে স্বায়ত্তশাসিত গ্রিনল্যান্ডকে কিনে যুক্তরাষ্ট্রের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার খায়েশ প্রকাশ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। সর্বশেষ দুই সপ্তাহ আগে তিনি এমন আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। তা নিয়ে গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে কড়া জবাব দেন। তিনি বলেন, গ্রিনল্যান্ড আমরা বিক্রি করবো না। আমরা বিক্রির জন্য নই। গ্রিনল্যান্ডের মালিক এই দ্বীপের অধিবাসীরা। ট্রাম্পের ওই দাবির প্রায় দুই সপ্তাহ পর গ্রিনল্যান্ড সফরে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন ট্রাম্পের ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র। তবে তিনি একদিনের জন্য এই সফরে যাবেন এবং তা হবে একদিনের সফর। এ সময়ে তিনি একটি পডকাস্টের জন্য ভিডিও ফুটেজ রেকর্ড করার পরিকল্পনা নিয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্রের মিডিয়াকে উদ্ধৃত করে এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ডিসেম্বরে গ্রিনল্যান্ডকে কেন্দ্র করে বিতর্ক উস্কে দেন ট্রাম্প নিজে। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য গ্রিনল্যান্ডের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণ অত্যাবশ্যক। এর আগেও তিনি প্রথম মেয়াদে যখন প্রেসিডেন্ট ছিলেন তখনো আর্কটিক অঞ্চলে অবস্থিত এই দ্বীপটি কিনে নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন। কিন্তু দুটি সময়েই তার বিরুদ্ধে কড়া বার্তা দিয়েছেন গ্রিনল্যান্ডের নেতারা। সোমবার নিজের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে দেয়া এক পোস্টে ট্রাম্প তার ছেলের সফর পরিকল্পনা নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ডনাল্ড জুনিয়র এবং বেশ কিছু প্রতিনিধি গ্রিনল্যান্ড সফরে যাবে। তারা সবচেয়ে চমৎকার সব এলাকা ও দৃষ্টিনন্দন দৃশ্যগুলো অবলোকন করবে। ট্রাম্প আরও বলেন, যদি এই দ্বীপটি আমাদের দেশের অংশ হয় তাহলে এর জনগণ ব্যাপক সুবিধা পাবে। বাইরের বিশ্ব থেকে আমরা এটার সুরক্ষা দেবো। এর উন্নতি হবে। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প তার পোস্টে একটি ভিডিও-ও পোস্ট করেছেন। তাতে গ্রিনল্যান্ডের অজ্ঞাত একজন ব্যক্তিকে দেখা যাচ্ছে। তিনি ‘মেক আমেরিকা গ্রেট এগেইন’ লেখা হ্যাট পরেছেন মাথায়। তিনি গ্রিনল্যান্ডকে কিনে নিতে অনুরোধ করছেন ট্রাম্পের প্রতি। একই সঙ্গে বলছেন, গ্রিনল্যান্ডকে একটি কলোনি বানিয়ে রেখেছে ডেনমার্ক। তাদের কব্জা থেকে মুক্ত করারও অনুরোধ জানান তিনি।

উল্লেখ্য, উত্তর আমেরিকা থেকে ইউরোপ সফরের সবচেয়ে কম দূরত্বের রুটে অবস্থিত গ্রিনল্যান্ড। ফলে দ্বীপটি যুক্তরাষ্ট্রের কাছে কৌশলগত দিক দিয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া এ দ্বীপে আছে যুক্তরাষ্ট্রের মহাকাশ বিষয়ক একটি বিশাল স্থাপনা। ট্রাম্পের বড় ছেলে ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তাকে বিভিন্ন র‌্যালিতে ঘন ঘন দেখা যায়। নির্বাচনে বড় দায়িত্ব পালন করলেও তিনি গ্রিনল্যান্ডে তার পিতার পরিকল্পনার পক্ষে সফর করবেন না বলে জানিয়েছে ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বিবিসিকে বলেছে, ডনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র গ্রিনল্যান্ড সফরে আসার পরিকল্পনা সম্পর্কে আমরা জানি। এটা মার্কিন কর্মকর্তা হিসেবে কোনো আনুষ্ঠানিক সফর নয়। এ জন্য তা নিয়ে বাড়তি কোনো মন্তব্য করবে না মন্ত্রণালয়। ওদিকে গ্রিনল্যান্ডে ট্রাম্পের সর্বশেষ হস্তক্ষেপের কয়েক ঘণ্টা পরেই ডেনমার্ক সরকার দ্বীপটির প্রতিরক্ষা খাতে ব্যয় বিপুল পরিমাণে বৃদ্ধি করেছে। ডেনমার্কের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ট্রোয়েল লান্ড পলসেন এই ব্যয় বৃদ্ধির সময়কে ভাগ্যের নির্মম পরিহাস বলে উল্লেখ করেছেন। সোমবার ডেনমার্কের রাজা দশম ফ্রেডেরিক রয়েল কোট অব আর্মস পরিবর্তন করে গ্রিনল্যান্ড ও ফারো আইল্যান্ডের বৈশিষ্ট্যকে তুলে ধরেছেন। ট্রাম্পের ঘোষণাকে অনেকে তিরস্কার হিসেবেও দেখছেন। কিন্তু এটা হতে পারে গ্রিনল্যান্ডের স্বাধীনতা আন্দোলনের বিতর্কিত ইস্যু। নতুন বছরের ভাষণে রাজা ফ্রেডেরিক গ্রিনল্যান্ডের বিষয়ে দেশবাসীকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়েছেন। কিন্তু গ্রিনল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিউট এগেদে নববর্ষের ভাষণে ডেনমার্ক থেকে গ্রিনল্যান্ডকে স্বাধীন করার দিকে এগিয়ে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, এই দ্বীপকে অবশ্যই ঔপনিবেশিকতার শেকলমুক্ত করতে হবে।
এখানে উল্লেখ্য, গ্রিনল্যান্ডকে কিনতে চাওয়া প্রথম কোনো মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পই নন। প্রথমে এই ধারণা ১৮৬০-এর দশকে মাথায় আসে যুক্তরাষ্ট্রের ১৭তম প্রেসিডেন্ট অ্যানড্রু জনসনের। ওদিকে আলাদা এক বক্তব্যে ট্রাম্প সম্প্রতি বিশ্বের অন্যতম সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পানিপথ পানামা ক্যানালকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। অভিযোগ করেছেন, এই খাল ব্যবহার করার ক্ষেত্রে অতিরিক্ত ফি নেয়া হচ্ছে।

mzamin

No comments

Powered by Blogger.