ভবের হাট বসেছে আখড়াবাড়িতে
‘আর
কি হবে এমন জনম’ বাউল সম্রাট লালন ফকিরের এই বাণী প্রতিপাদ্য করে
কুষ্টিয়ার ছেঁউড়িয়ায় সাঁইজির আখড়াবাড়িতে শুরু হয়েছে তিন দিনের ঐতিহাসিক
লালন স্মরণোৎসব। অনুষ্ঠানের মধ্যে রয়েছে আলোচনা, লালনমেলা ও লালন সঙ্গীত।
লালন একাডেমির আয়োজনে এবং সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতায় শনিবার
রাতে সঙ্গীত অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে শুরু হয় বাউল ফকির লালন ভক্তদের দোল
পূর্ণিমা উৎসব। শনিবার রাত ৯টায় ভারপ্রাপ্ত খুলনা বিভাগীয় কমিশনার মোহাম্মদ
ফারুক হোসেন এ উৎসবের উদ্বোধন করেন। এ উপলক্ষে লালন একাডেমির মূল মঞ্চে
আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন তিনি। লালন একাডেমির সভাপতি ও
জেলা প্রশাসক জহির রায়হানের সভাপতিত্বে লালন দর্শনের আলোকে মুখ্য আলোচনা
করেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী।
বিশেষ অতিথির বক্তব্য রাখেন অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার সুবাস চন্দ্র সাহা,
কুষ্টিয়া পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান, কুষ্টিয়া জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান
হাজী রবিউল ইসলাম,
জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সদর উদ্দিন খান, সাধারণ
সম্পাদক আজগর আলী, পিপি অ্যাডভোকেট অনুপ কুমার নন্দী। এ সময় উপস্থিত ছিলেন
কুমারখালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাহেলা আক্তার, লালন মাজারের প্রধান
খাদেম মোহাম্মদ আলী, লালন একাডেমির ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক সেলিম হক
প্রমুখ। আলোচনা শেষে মূল মঞ্চে একাডেমির শিল্পীরা লালন ফকিরের আধ্যাত্মিক
গান পরিবেশন করেন। এ উৎসব উপলক্ষে মরা কালি নদীর তীরে লালন আখড়ায় সমবেত
হয়েছেন মরমি সাধক ফকির লালন শাহের অসংখ্য ভক্ত-অনুসারী। লালন আখড়াবাড়িতে
বসেছে ভবের হাট। লালন স্মরণোৎসব উপলক্ষে ভক্তরা দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে
এসেছেন আত্মিক নানা বাসনা নিয়ে। সরল সহজভাবে জীবন অনুসন্ধানের প্রত্যয়
নিয়েও এসেছেন অনেকেই। দীর্ঘকাল তাদের এখানে আসা যাওয়ার মধ্য দিয়ে বাউল
সম্রাটের ‘মানুষ ভজলে মানুষ হবি, নইলে পরে কূল হারাবি’- এ কথার যথার্থতা
খুঁজে পেয়েছেন ভক্তরা। সেখানে গুরু-শিষ্যের ভাবের আদান প্রদান যেমন চলছে,
তেমনি চলছে জীবনের তিরোধান, ভাব সাধন, আর দেহতত্ত্ব নিয়ে অপূর্ব সুর
মূর্ছনা।
সাধু-ভক্তদের পাশাপাশি বাউল সম্রাটের মাজারের টানেও আসছেন ঝাঁক
ঝাঁক পর্যটকের দল। আসছেন দেশী-বিদেশী গবেষকরাও। বাউল সম্রাট লালন শাহের
পুণ্যভূমি কুমারখালীর ছেঁউড়িয়ার কালী নদীর তীরে বিশাল মাঠে এ স্মরণোৎসব
উপলক্ষে বসানো হয়েছে লালন মেলা। যেখানে একতারা, দোতারা থেকে শুরু করে ঘর
গৃহস্থালির নানা জিনিস পাওয়া যায়। বাদ নেই মিষ্টান্ন দ্রব্যও। মরমি সাধক
লালনের জীবনকর্ম, জাতহীন মানব দর্শন ও চিন্তাচেতনার আদর্শিক বিষয়গুলো নিয়ে
সোমবার পর্যন্ত চলবে আলোচনার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। লালন শাহ তার
জীবদ্দশায় ছেঁউড়িয়ার এই আখড়াবাড়িতে প্রতি বছর চৈত্রের দোলপূর্ণিমা রাতে
বাউলদের নিয়ে সাধুসঙ্গ উৎসব করতেন। ১২৯৭ বঙ্গাব্দের পহেলা কার্তিক তার
তিরোধানের পর থেকেও প্রতি বছর এ উৎসব পালন করে আসছেন সাধু গুরুভক্ত আশেকান ও
বাউল অনুসারীরা। তিন দিনের এই লালন উৎসব শেষ হবে ১৩ মার্চ রাতে। উৎসব পালন
ও উপভোগকে নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর
নিরাপত্তা ব্যবস্থা। বাউলভক্তদের নিরাপত্তার জন্য আইনশৃংখলা বাহিনী তৎপর
রয়েছে বলে জানান পুলিশ সুপার এসএম মেহেদী হাসান।
No comments