উত্তরপ্রদেশে কেন মোদি ঝড়
নজিরবিহীন
ঝড় তুলে উত্তরপ্রদেশ দখলের পথে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও তার দল
ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)। এক মাস ধরে ৭ ধাপের নির্বাচন শেষে শনিবার
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সব পূর্বাভাস
ভুল প্রমাণিত করে রাজ্যের ৪০৩ আসনের মধ্যে ৩ শতাধিক আসনে জয় নিশ্চিত করেছে
মোদি-অমিত শাহর দল। উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ডে রেকর্ড গড়ে অমিত শাহর দৃষ্টি
এখন হিমাচল ও প্রধানমন্ত্রীর নিজের রাজ্য গুজরাটের দিকে।
হিন্দুস্থান টাইমস
এক প্রতিবেদনে বলেছে, উত্তরপ্রদেশে বিজেপির এ জয় ভারতীয় গণতন্ত্রের এক
তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা। কেননা, গত ২৫ বছরে কোনো দলই ক্ষমতাকেন্দ্র দিল্লি ও
উত্তরপ্রদেশে একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ নিতে পারেনি। ভারতীয় রাজনীতির
প্রাণকেন্দ্র এবং ২০ কোটি নাগরিকের আবাস এই উত্তরপ্রদেশে বিজেপির মতো আর
কোনো দলই এত কম সময়ে সামাজিক ভিত্তি বিস্তার করতে সক্ষম হয়নি। জাতীয়
রাজনীতির ক্ষেত্রে বর্তমানে বিজেপি যে প্রভাব-প্রতিপত্তির চর্চা করছে, বিংশ
শতাব্দীর ৬০-এর দশকের পর থেকে কোনো দলের ক্ষেত্রে তা কমই দেখা গেছে।
ভারতের পশ্চিমাংশে বিজেপির অবস্থান আগের থেকেই বেশ শক্তিশালী এবং তা
পূর্বাঞ্চলের দিকে বিস্তৃত হচ্ছিল। তবে ভারতীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র
উত্তরপ্রদেশে তেমন অবস্থান ছিল না বিজেপির। তাহলে উত্তরপ্রদেশ কীভাবে জয়
করল বিজেপি?
মোদি সরকারের জনপ্রিয়তা : মোদি সরকারের জনপ্রিয়তা
উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনে বিজেপিকে ব্যাপক জয় পেতে সহায়তা করেছে।
মোদির নোট বাতিলের সিদ্ধান্ত সাময়িক সমস্যা তৈরি করলেও মোদি সরকারের প্রতি
বিশ্বাস হারায়নি জনগণ। বেরেলি থেকে বালিয়া, মিরুত থেকে গোরখপুর, শ্রাবস্তী
থেকে কাশী পর্যন্ত ভোটাররা কেন ও কাকে ভোট দিয়েছে সে ব্যাপারে একটা স্পষ্ট
বক্তব্য দিয়েছে। কেউ কেউ বলেছেন, মোদি একজন দৃঢ়চেতা নেতা। কেউ বলেছেন,
বিদেশে ভারতের ভাবমূর্তিকে উজ্জ্বল করেছেন মোদি। কেউ বলেছেন, মোদি হচ্ছেন
মা ও মাটির নেতা। কেউ বলেছেন, অর্থনৈতিক উন্নয়ন ফিরিয়ে আনছেন মোদি। ভোটাররা
বলেছেন, মোদি যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, তা তিনি বাস্তবায়ন করছেন। তিনি
ধনী ও দুর্নীতিপরায়ণদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছেন। উত্তরপ্রদেশে ব্যাপক
প্রচারণা চালিয়েছেন মোদি। জনগণকে তিনি প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন, কেন্দ্র ও
রাজ্যের সরকার এক হলে, তারা বেশি বেশি সুযোগ-সুবিধা ভোগ করতে পারবে। মোধির এ
প্রতিশ্রুতিতে ব্যাপকভাবে সাড়া দিয়েছে উত্তরপ্রদেশের জনগণ।
৬০ শতাংশ ভোটার
ফর্মুলা : উত্তরপ্রদেশের বারানসিতে বিজেপির একজন শীর্ষ নেতা হিন্দুস্থান
টাইমসকে বলেন, ভাই সাহেব, মোদির ৬০ শতাংশ ভোটার ফর্মুলা কাজে দিচ্ছে। তিনি
বিষয়টা ব্যাখ্যা করে বলেন, বিজেপি জানত যে, মুসলিমরা ও যাদব সমর্থক এবং জাট
সম্প্রদায়ের বেশিরভাগ ভোটার বিজেপিকে ভোট দেবে না। এজন্য মুসলিম ও জাট
সম্প্রদায়ের ৪০ শতাংশ ভোট বাদ রেখে অবশিষ্ট ৫৫-৬০ শতাংশ ভোটব্যাংককে
টার্গেটে নিয়ে প্রচারণা চালায় বিজেপি। এ উদ্দেশেই হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ
এলাকায় সামাজিক ভিত্তি গড়ে তোলে দলটি। এভাবে ১৯৯১ সালে বিধানসভা নির্বাচনেও
উত্তরপ্রদেশে সবচেয়ে ভালো ফল করেছিল বিজেপি। নিরংকুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে
মুখ্যমন্ত্রী হয়েছিলেন কল্যাণ সিং। উচ্চ বর্ণের হিন্দুদের নিয়ে গঠিত একটি
জোট নজিরবিহীন এ সাফল্য এনে দেয়। হিন্দুত্বের তাস : মোদি সরকারের
জনপ্রিয়তা, মোদির নিজের ব্রান্ড এমনকি বহু বর্ণের জোট গঠন সম্ভবত বিজেপির
জয়ের জন্য যথেষ্ট ছিল না, আর এজন্যই বিজেপি সতর্কতার সঙ্গে হিন্দুত্বের তাস
ব্যবহার করেছে।
মনিপুরে ইরম শর্মিলার শোচনীয় পরাজয়
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরেছেন আলোচিত অধিকারকর্মী ইরম শর্মিলা। এর মধ্য দিয়ে কার্যত শেষ হয়ে গেল ‘লৌহমানবী’ হিসেবে পরিচিত শর্মিলার অধিকার আদায়ের টানা ১৬ বছরের লড়াই। কেননা তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন- নির্বাচনে হারলে রাজনীতি ও আন্দোলনের মাঠ দুটোই ছেড়ে সংসারজীবন শুরু করবেন। খবর এনডিটিভির। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে শর্মিলা দীর্ঘদিনের অনশন ভাঙেন। গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল পিপলস রিসার্জেন্স অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স (পিআরজেএ)। স্থানীয় থৌবল কেন্দ্র থেকে অংশ নেন নির্বাচনে। শনিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী ও রাজ্যের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিংহের কাছে হেরেছেন তিনি। শর্মিলা পেয়েছেন মাত্র ৯০ ভোট।
মনিপুরে ইরম শর্মিলার শোচনীয় পরাজয়
ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য মনিপুরে বিধানসভা নির্বাচনে শোচনীয়ভাবে হেরেছেন আলোচিত অধিকারকর্মী ইরম শর্মিলা। এর মধ্য দিয়ে কার্যত শেষ হয়ে গেল ‘লৌহমানবী’ হিসেবে পরিচিত শর্মিলার অধিকার আদায়ের টানা ১৬ বছরের লড়াই। কেননা তিনি আগেই ঘোষণা দিয়েছেন- নির্বাচনে হারলে রাজনীতি ও আন্দোলনের মাঠ দুটোই ছেড়ে সংসারজীবন শুরু করবেন। খবর এনডিটিভির। এবারের বিধানসভা নির্বাচনে অংশ নিতে শর্মিলা দীর্ঘদিনের অনশন ভাঙেন। গঠন করেন নতুন রাজনৈতিক দল পিপলস রিসার্জেন্স অ্যান্ড জাস্টিস অ্যালায়েন্স (পিআরজেএ)। স্থানীয় থৌবল কেন্দ্র থেকে অংশ নেন নির্বাচনে। শনিবার প্রকাশিত ফলাফলে দেখা যায়, কংগ্রেসের হেভিওয়েট প্রার্থী ও রাজ্যের তিনবারের মুখ্যমন্ত্রী ওকরাম ইবোবি সিংহের কাছে হেরেছেন তিনি। শর্মিলা পেয়েছেন মাত্র ৯০ ভোট।
অন্যদিকে ওকরামের
প্রাপ্ত ভোট ১০ হাজার ৭৪০। রাজ্যে ৬০টি আসনের মধ্যে শর্মিলার দল পিআরজেএ
১টি আসনেও জয় পায়নি। ২০০০ সালে মনিপুরে বিতর্কিত সেনা আইন ‘আফস্পা’
প্রত্যাহারের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শর্মিলা। আন্দোলনের ভাষা হিসেবে
বেছে নেন অনশন। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০১৬ সালে তিনি
স্বেচ্ছায় অনশন ভাঙেন এবং নির্বাচনে অংশ নেয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু
পিআরজেএ অর্থাভাবে প্রচারণা চালাতে পারছিল না। এ সময় শর্মিলার পাশে দাঁড়ান
দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী ও আম আদমি পার্টির নেতা অরবিন্দ কেজরিওয়াল। তিনি
শর্মিলার নির্বাচনী তহবিলে ৫০ হাজার রুপি দান করেন।
No comments