রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের উপায়
কোলেস্টেরল
রক্তের এক রকম উপাদান, যা রক্তে মিশে থাকে এবং রক্তের সঙ্গে রক্তনালি দিয়ে
সারা শরীরে চলাচল করে। শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ রক্ত থেকে কোলেস্টেরল সংগ্রহ
করে বিভিন্ন রকম হরমোন ও প্রয়োজনীয় জিনিস তৈরি করে থাকে। সুতরাং কোলেস্টেরল
শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় চর্বিজাতীয় রক্তের উপকরণ, যা নির্দিষ্ট মাত্রা
পর্যন্ত প্রয়োজন, কিন্তু মাত্রাতিরিক্ত হলে তা রক্তনালিতে জমে যায়।
রক্তনালিতে জমে গেলে রক্তনালি সরু হয়ে যায় এবং রক্ত চলাচলে বাধা সৃষ্টি
করে। ফলে শরীরে অনেক রকম সমস্যা দেখা দেয়। হার্টের রক্তনালিতে জমলে বুকে
ব্যথা, হার্ট অ্যাটাক; মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমলে স্ট্রোক, কিডনির
রক্তনালিতে জমলে কিডনি ফেইলর এ রকম অনেক সমস্যা দেখা দিতে পারে।
কোলেস্টেরলের আবার ভাগ আছে, যেমন- এলডিএল, এইচডিএল, ট্রাইগ্লিসারাইড।
এলডিএল শরীরের জন্য সবচেয়ে খারাপ কোলেস্টেরল। এই কোলেস্টেরল রক্তনালিতে জমে
বেশি।
এইচডিএল শরীরের জন্য ভালো কোলেস্টেরল, রক্তনালিতে চর্বি জমতে বাধা
দেয়, আর ট্রাইগ্লিসারাইড রক্তে বেশি থাকলে অগ্ন্যাশয়ে সমস্যা সৃষ্টি করে,
আবার হার্টেও সমস্যা করতে পারে। অনেক ক্ষেত্রেই রক্তের বেশি কোলেস্টেরল
পারিবারিকভাবে পেয়ে থাকে, কখনও কখনও জীবনযাপন পদ্ধতি এর জন্য দায়ী। রক্তের
বিভিন্ন কোলেস্টেরলের নিরাপদ মাত্রা আছে। যেমন, সর্বমোট কোলেস্টেরলের
মাত্রা প্রতি ডেসিলিটারে ১৭০ মিলিগ্রামের নিচে, এলডিএল কোলেস্টেরল
ডেসিলিটারে ১০০ মিলিগ্রামের নিচে, আর ট্রাইগ্লিসারাইড ডেসিলিটারে ১৫০
মিলিগ্রামের নিচে। ভালো কোলেস্টেরল এইচডিএলের মাত্রা ডেসিলিটারে ৪০
মিলিগ্রামের ওপরে রাখা ভালো। আমরা কীভাবে রক্তের চর্বির মাত্রা নিয়ন্ত্রণে
আনতে পারি, তা জানা এবং নিয়ন্ত্রণে রাখার চেষ্টা অত্যন্ত জরুরি। প্রথমত,
আমাদের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের মাধ্যমে; দ্বিতীয়ত, ওষুধ
সেবনের মাধ্যমে আমরা কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করতে পারি। জীবনযাত্রার অভ্যাস
পরিবর্তন খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তন
* খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। খোসাসহ সবজি খাওয়া ভালো।
* খাদ্যতালিকা থেকে প্রাণিজ চর্বি বাদ দিতে হবে, যেমন খাসির মাংস, গরুর মাংস, মুরগির চামড়া, কলিজা, মগজ, মাছের ডিম, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ প্রভৃতি।
* রান্নায় কম তেল দিতে হবে। তেলে ভাজা খাবার কম খেতে হবে। ভাপে সিদ্ধ, গ্রিলড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
* ঘি, মাখন, পনির, মেয়নেজ, সালাদ, ড্রেসিং খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
* রিফাইন্ড খাবার বাদ দিয়ে খাবার খেতে হবে (যেমন- জুসের বদলে ফল, ভুসিসহ লাল আটা)।
শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
* প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন জোরে জোরে হাঁটতে হবে।
* বাসার টুকটাক কাজ নিজের হাতে করার অভ্যাস করতে হবে।
* কাছাকাছি জায়গায় রিকশা না নিয়ে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
* ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। তামাক বাদ দিতে হবে।
* ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের দু-তিন মাস পরও যদি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যাদের পারিবারিকভাবে রক্তে অধিক কোলেস্টেরলের প্রবণতা আছে, তাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অন্যদের চেয়ে অনেক কঠিন। তাই তাদের অনেক বেশি চেষ্টা করতে হবে। বাজারে তিন-চার রকমের কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার জন্য যেটা উপযোগী, তা খেতে হবে। ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলোকেও মানতে হবে। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ও কিডনি ফেইলরের ঝুঁকি এড়াতে পারেন। মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ সব সময়ই প্রতিকারের চেয়ে ভালো।
লেখক : কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা
* খাদ্যতালিকায় শাকসবজি, ফলের পরিমাণ বাড়াতে হবে। আঁশযুক্ত খাবার খেতে হবে। খোসাসহ সবজি খাওয়া ভালো।
* খাদ্যতালিকা থেকে প্রাণিজ চর্বি বাদ দিতে হবে, যেমন খাসির মাংস, গরুর মাংস, মুরগির চামড়া, কলিজা, মগজ, মাছের ডিম, ডিমের কুসুম, চিংড়ি মাছ প্রভৃতি।
* রান্নায় কম তেল দিতে হবে। তেলে ভাজা খাবার কম খেতে হবে। ভাপে সিদ্ধ, গ্রিলড খাবার খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে।
* ঘি, মাখন, পনির, মেয়নেজ, সালাদ, ড্রেসিং খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে।
* রিফাইন্ড খাবার বাদ দিয়ে খাবার খেতে হবে (যেমন- জুসের বদলে ফল, ভুসিসহ লাল আটা)।
শারীরিক পরিশ্রম করতে হবে
* প্রতিদিন কমপক্ষে ৪০ মিনিট করে সপ্তাহে অন্তত পাঁচ দিন জোরে জোরে হাঁটতে হবে।
* বাসার টুকটাক কাজ নিজের হাতে করার অভ্যাস করতে হবে।
* কাছাকাছি জায়গায় রিকশা না নিয়ে হেঁটে যাওয়ার অভ্যাস করা যেতে পারে।
* ধূমপান ছেড়ে দিতে হবে। তামাক বাদ দিতে হবে।
* ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ ভালোভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। জীবনযাত্রার অভ্যাস পরিবর্তনের দু-তিন মাস পরও যদি রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণে না আসে, তাহলে ওষুধ খেয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। মনে রাখতে হবে, যাদের পারিবারিকভাবে রক্তে অধিক কোলেস্টেরলের প্রবণতা আছে, তাদের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণ করা অন্যদের চেয়ে অনেক কঠিন। তাই তাদের অনেক বেশি চেষ্টা করতে হবে। বাজারে তিন-চার রকমের কোলেস্টেরল কমানোর ওষুধ আছে। চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী আপনার জন্য যেটা উপযোগী, তা খেতে হবে। ওষুধ খাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জীবনযাত্রার অভ্যাসগুলোকেও মানতে হবে। রক্তের কোলেস্টেরল নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে হৃদরোগ, ব্রেইন স্ট্রোক ও কিডনি ফেইলরের ঝুঁকি এড়াতে পারেন। মনে রাখতে হবে, প্রতিরোধ সব সময়ই প্রতিকারের চেয়ে ভালো।
লেখক : কনসালট্যান্ট কার্ডিওলজি, ইউনাইটেড হাসপাতাল, গুলশান, ঢাকা
No comments