ট্যানারি বন্ধের আদেশ আপিলেও বহাল
সাভার
শিল্পাঞ্চলে স্থানান্তরে ব্যর্থ হাজারীবাগের সব ট্যানারির কার্যক্রম বন্ধে
হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছেন আপিল বিভাগ। রোববার প্রধান বিচারপতি
এসকে সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের তিন সদস্যের বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই
সঙ্গে ট্যানারি কারখানাগুলোর গ্যাস, বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ বিচ্ছিন্নের
হাইকোর্টের আদেশও বহাল রেখেছেন আদালত। এর ফলে হাজারীবাগে আর কোনো ট্যানারি
কারখানা থাকতে পারছে না। গত ৬ মার্চ হাইকোর্ট ট্যানারিগুলো বন্ধের নির্দেশ
দিয়েছিল। হাইকোর্টের আদেশ স্থগিত চেয়ে আবেদন করে ট্যানারি মালিকদের সংগঠন
ফিনিশড লেদার গুডস অ্যান্ড এক্সপোর্টার অ্যাসোসিয়েশন। আবেদনের পক্ষে শুনানি
করেন ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস। সরকার ১৯৮৬ সালে ৯০৩টি
শিল্পকারখানাকে পরিবেশ দূষণকারী হিসেবে চিহ্নিত করেন। এর মধ্যে হাজারীবাগের
চামড়া শিল্পগুলো ছিল অন্যতম। এর পরিপ্রেক্ষিতে বেলা ১৯৯৪ সালে রাজধানীর
পরিবেশ দূষণ রোধে দূষণকারী শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধের দাবিতে হাইকোর্টে একটি
রিট মামলা দায়ের করে। ওই মামলার চূড়ান্ত শুনানি শেষে ২০০১ সালের ১৫ জুলাই
হাইকোর্টের একটি ডিভিশন বেঞ্চ রায় প্রদান করেন। রায়ে পরিবেশ সংরক্ষণ
বিধিমালা ১৯৯৭-এর বিধি ৭-এর আলোকে ‘লাল’ শ্রেণীভুক্ত শিল্প কারখানাগুলো যেন
এক বছরের মধ্যে এবং ‘কমলা-ক’ এবং ‘কমলা-খ’ শ্রেণীভুক্ত শিল্প কারখানাগুলো
যেন দুই বছরের মধ্যে দূষণরোধে কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।
আদালত উল্লিখিত সময়ের মধ্যে এই নির্দেশ কার্যকর করে গৃহীত পদক্ষেপ আদালতকে
জানাতে নির্দেশ দিয়েছিল। কিন্তু দীর্ঘ সাত-আট বছর অতিবাহিত হলেও হাইকোর্টের
নির্দেশ মোতাবেক কোনো পদক্ষেপ না নেয়ায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর
বাংলাদেশের পক্ষে একটি আদালত অবমাননার মামলা দায়ের করা হয়। এ মামলার
পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্ট ২০০৯ সালের ২৩ জুন,
২০১০ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের
মধ্যে হাজারীবাগের সব ট্যানারি সরিয়ে নেয়ার জন্য দ্বিতীয় দফায় নির্দেশ দেন। স্থানান্তরে ব্যর্থ হলে পরিবেশ অধিদফতরকে ট্যানারি কারখানাগুলো বন্ধের
নির্দেশ দেন। পরে শিল্প মন্ত্রণালয় সিইটিপি নির্মাণের জন্য দফায় দফায়
আদালতের নির্ধারিত সময়সীমা বাড়ানোর আবেদন করে। আদালত সর্বশেষ ২০১০ সালের ৩০
অক্টোবর ছয় মাসের সময় বৃদ্ধি করেন। কিন্তু বর্ধিত সময়ের মধ্যে কাজ না
হওয়ায় হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের পক্ষে ২০১৪ সালে আবারও
একটি আদালত অবমাননার মামলা করা হয়। এ আবেদনের শুনানি নিয়ে শিল্প সচিব ও
ট্যানারি মালিকদের হাইকোর্টে তলব করা হয়। সর্বশেষ হাজারীবাগের সব
ট্যানারিকে প্রতিদিন ১০ হাজার টাকা করে জরিমানার আদেশ দেয়া হয়। জরিমানার
আদেশ বহাল থাকাবস্থায় শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব একতরফাভাবে আদালতের অনুমতি
ছাড়া হাজারীবাগ থেকে ট্যানারি স্থানান্তরের সময়সীমা ২০১৭ সালের মার্চ মাস
পর্যন্ত বৃদ্ধির ঘোষণা দেন। এ ঘোষণার আইনগত বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে বেলা গত ৩
জানুয়ারি একটি আবেদন দায়ের করে। বেলার আবেদনের শুনানি নিয়ে ৬ মার্চ
হাজারীবাগের সব ট্যানারি বন্ধের আদেশ দেয়া হয়। শিল্প মন্ত্রণালয়ের তথ্য
অনুযায়ী, সাভারে প্লটপ্রাপ্ত ১৫৪টি ট্যানারির মধ্যে কেবলমাত্র ৪৩টি
ট্যানারি সাভারে স্থানান্তর হয়েছে। বাকি ১১২টি ট্যানারি হাজারীবাগে থেকেই
কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছে।
No comments