সিডনির মেলব্যাগ- দেশ এগুচ্ছে ॥ প্রবাসীদের সঙ্গে রাখা জরুরী by অজয় দাশ গুপ্ত
আমাদের দেশ যে এগুচ্ছে তা নিয়ে এখন তর্কের অবকাশ নেই। মহাজোট যাঁদের চক্ষুশূল বা জাতির জনকের কন্যা শেখ হাসিনাকে যাঁরা পছন্দ করেন না, তাঁরাও এ বিষয়ে দ্বিমত বা ভিন্নমত পোষণ করতে পারছেন না।
পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কিছু মানুষ থাকে যাঁরা গুণে, কর্মে, ঔজ্জ্বল্যে অতূলনীয়, বিতর্কের উর্ধে। এই জায়গা বা স্থানটুকু দখল করে নিতে যে শ্রম ও মেধা তার গুণেই তাঁরা উদ্ভাসিত। অর্মত্য সেন তারই মূর্ত প্রতীক। নোবেল পুরস্কার বিশ্বের আর দশটি পুরস্কারের চেয়ে গুণে-মানে বড় বা শ্রেষ্ঠ হলেও এখন আর অবিতর্কিত কিছু নয়। আমাদের দেশের একমাত্র নোবেল জয়ী হিমালয় সমান প্রিয়তা আর জনসমর্থন পাবার পরও জেদ, একগুঁয়েমি বা অন্য কারণে নিজেকে যথাস্থানে রাখতে পারেননি। অন্যদিকে অর্মত্য সেন অর্থনীতিতে নোবেল জয়ী এবং সেটাই তাঁর চারণভূমি। বাঙালীর জীবনে, বাঙালীর ইতিহাসে চির উজ্জ্বল এই ব্যক্তিত্ব যখন বাংলাদেশের প্রশংসা ও অগ্রগতিকে ভারতের চেয়ে শ্রেয়তর মনে করেন তখন শত্রুর মুখও ম্লান হয়ে যায়। জীবন বা জনগোষ্ঠীর ভবিষ্যত কেবল সূচকের ওপর নির্ভরশীল কিছু নয়। সাধারণ মানুষ সূচক গড়েন আবার ভাঙ্গেনও। যাঁরা রাজনীতি বা ক্ষমতার নিয়ন্ত্রক তাঁদের মূল কাজ এই প্রক্রিয়াকে পজেটিভ খাতে প্রবাহিত করা। কাজটি উন্নয়নশীল নামে পরিচিত জনসংখ্যার চাপে অস্থির, সামাজিক-রাজনৈতিক দুর্নীতিগ্রস্ত পরিবেশে সহজ কিছু নয়। আমাদের বেলায় অবস্থা আরও জটিল। বিরোধী দল বরাবর অসহিষ্ণু, উগ্র আর ক্ষমতান্ধ। তারা দেশে অরাজকতা কায়েম করে হলেও উন্নয়ন ব্যাহত করতে আগ্রহী। সঙ্গে যোগ হয়েছে লবিংয়ের নামে ভিনদেশী মদদ ও ষড়যন্ত্র। এত প্রতিকূলতার ভেতরও বাংলাদেশের সূচক ও জীবন উন্নয়ন নিয়ে অর্মত্য সেনের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা সমালোচকদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। তিনি না জেনে না বুঝে কথা বলার মানুষ নন। ফলে ঘোর বিরোধীও মুখ খুলতে পারছেন না। সেদিন এক সন্ধ্যার আড্ডায় প্রবাসী বিএনপি নেতার কথায় তারই প্রতিধ্বনি শুনতে পেলাম। আমি তাঁকে ধন্যবাদ জানাতে বাধ্য। এবং এও বলি আমাদের আদর্শিক লোকজন বা আওয়ামী লীগের নেতা-সমর্থকরা এভাবে বলেন না। ভদ্রলোক বলছিলেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে চান না বিএনপি ক্ষমতায় ফিরে আসুক। চমকে ওঠার মতো কথা। তাও বিএনপি নেতার মুখে। ক্ষমতা বা প্রভাবের দৃষ্টিকোণে যতই গুরুত্বহীন হোক না কেন, দেশ-বিদেশে জাতীয় রাজনৈতিক দলগুলোর শাখা-প্রশাখা বাড়ছে বই কমছে না। উপযোগিতা বা প্রয়োজনীয়তা থাক বা না থাক এ গুলো আছে, এদের দেশীয় কানেকশন, লবিং, ক্ষমতাও কিছু কম নয়। ফলে তাঁর এই বোধোদয় আমাকে যুগপৎ বিস্মিত ও কৌতূহলপ্রবণ করে তুলেছিল। বিরোধী দলের গণতান্ত্রিকতা বা বিচারবোধ লোপ পেলেও দু’চারজন ভিন্ন চিন্তা করছেন। এই ভিন্ন চিন্তা বা গঠনমুখী মনোভাব শেখ হাসিনার শাসনামলে আরও পাওয়া উচিত ছিল। হতে দেয়নি অনাচার আর একশ্রেণীর স্বার্থান্বেষী মহলের খাই খাই মনোভাব। সম্প্রতি আর্থিক খাতের কেলেঙ্কারি ও ব্যাংকিং দুর্নীতি দেখে প্রবাসীরাও স্তম্ভিত। কার্যকালের ব্যাংকিং পেশার অভিজ্ঞতায় এতে বিস্মিত না হয়ে উপায় নেই। আমাদের দেশের ক্ষমতাবান বা কর্তারা মাঝে মধ্যেই বিদেশ সফর করেন। তাঁরা যা দেখে যান বা দেখে শিখে অভিজ্ঞতা বয়ে ফিরে যান তার কোন প্রয়োগ দেখা যায় না। বাংলাদেশ এখন প্রযুুক্তি ও কারিগরি দিক থেকে অনেক অগ্রসর একটি দেশ। দেশে বেড়াতে গেলে আমজনতার হাতে হাতে যে মোবাইল সেট, ল্যাপটপ বা অন্যান্য ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী তা অনেক উন্নত দেশের কাছেও চোখ ধাঁধানো। সে দেশের ব্যাংকিং বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান কেন কাগুজে দুর্নীতি, অর্থ আত্মসাতের শিকার হবে? এ লেখা যখন লিখছি, দেশের বৃহত্তম বাণিজ্যিক ব্যাংকের কর্মচারী ইউনিয়ন নেতাদের সংবর্ধনা নিয়ে মিডিয়া তখন মুখর। কেন এই সংবর্ধনা? ঐ কর্মচারীরা কর্মকর্তা হবার পর আইনের আশ্রয় নিয়ে ফের কর্মচারী পদে ফিরে এসেছেন তাই। এ কথা কোন পাগলেও কি বিশ্বাস করবে; চাকরি পাবার পর কেউ উচ্চপদে যেতে চায় না? আর যাবার পর ফের নিম্নপদে ফেরার আনন্দে সংবর্ধিত হয়? এর ভেতর যে গলদ সেখানেই অনেক প্রশ্নের উত্তর লুকিয়ে আছে। অস্ট্রেলিয়া বা স্বচ্ছতার দেশগুলোয় কি দেখছি আমরা? ইউনিয়ন মানে কর্মহীনতা, কাজে ফাঁকি বা ক্ষমতার দম্ভ নয়। নিরীহ কর্মচারীদের ট্রান্সফার-পোস্টিংও নয়। এখানে ইউনিয়ন মানে সংহতি আর সত্যিকারের বিপদে সাহায্যকারী সংগঠন। আমাদের দেশে তারুণ্যের জয়যাত্রা চলছে, প্রজন্মের পর প্রজন্ম শিক্ষা শেষ করে বেরিয়ে আসছে, এরা গতানুগতিক বা মান্ধাতা আমলের কর্মচারী হবার জন্য জন্মায়নি। হবেও না, এদের কাছেই এর সমাধান আছে, ব্যাংকিং পেশায় দ্রুত তারুণ্যের নিয়োগ আর কর্মচারী দাপটের নামে ইউনিয়নবাজি রুখলেই এ সরকারের ভাবমূর্তি উজ্জ্বলতর হয়ে উঠবে। কমে আসবে দুর্নীতি ও অর্থ আত্মসাতের ঘটনা। আর মাত্র একটি বছর সময় গণনায় ৩৬৫ দিনেরও কম। কঠোর হবার এখনই সময়। এ বিষয়ে একটি সুস্পষ্ট পরামর্শ দেয়াও অন্যায় বিবেচনা করি না, দেশ-বিদেশের কৃতী বাংলাদেশী ব্যাংকারদের প্যানেল গঠন করে তাঁদের পরামর্শ নেয়া যেতে পারে, দরকার পড়লে স্বল্প সময়ের জন্য তাঁরা সরেজমিনে মাঠ পর্যায়েও সহায়তা দিতে পারেন। আমি নিশ্চিত সরকারী অর্থায়ন ছাড়াও তাদের অনেকে নিজ খরচে দায়িত্ব পালনে এগিয়ে আসবেন। অর্মত্য সেনের মতো জহুরীর চোখ এড়ায়নি বাংলাদেশের সাফল্য। তাঁর চোখে পড়েছে সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা, নারীর ক্ষমতায়ন আর জীবনমুখী স্বদেশ। আমরাই শুধু দেখছি না। উজানের তরীকে পেছনে টানছে স্বার্থপরের দল। এই প্রতিকূলতা রুখে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আবারও কি ঘুরে দাঁড়াবে রাজনীতি? তার প্রয়োজন পরিমার্জন ও ঘষা মাজা। এখনই তার চূড়ান্ত সময়।dasguptaajoy@hotmail.com
No comments