২৩ দিনে মৃত ৮৭- সর্বনিম্ন ডিগ্রী
নিখিল মানখিন দেশে তাপমাত্রা নেমে রেকর্ড ৫ ডিগ্রীতে দাঁড়িয়েছে। দেশের বেশকিছু অঞ্চলে বইছে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ। এ অবস্থা আরও দুই থেকে তিন দিন অব্যাহত থাকবে।
মঙ্গলবার মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়েছে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলে। গত তিন বছরে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। আর গত ৫ বছরের রেকর্ড ভেঙ্গে ২৩ দিন ধরে একটানা বইছে শৈত্যপ্রবাহ। তীব্র শীত, ঘন কুয়াশা ও ঠা-া বাতাসে বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে জনজীবন। কয়েকদিন বিরতির পর কনকনে শীত ও শীতজনিত রোগে আক্রানত্ম ও মৃতু্যর সংখ্যা ফের বৃদ্ধি পেয়েছে। গত দু'দিনে নীলফামারী, কুড়িগ্রাম ও বগুড়ার সানত্মাহারে নতুন করে ৯ জনের মৃতু্য হয়েছে। এ নিয়ে গত ২৩ দিনে শীতে ৮৭ জনের মৃতু্য হলো। ঘন কুয়াশায় জল, স্থল ও আকাশপথে যান চলাচলে মারাত্মক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। জিয়া বিমানবন্দরের সকাল দশটার আগের ফাইটগুলো পিছিয়ে নতুন সিডিউল তৈরি করা হয়েছে। মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে গোল আলু, বোরো বীজতলাসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসলের আবাদ। তাপমাত্রা আরও কমতে পারে বলে আবহাওয়া অফিস জানিয়েছে। শীতের তীব্রতায় গ্যাসের ব্যবহার বহুগুণ বেড়ে গেছে রাজধানীতে । নগরীর অনেক এলাকায় গ্যাসের সঙ্কট দেখা দিয়েছে।আবহাওয়া অফিস জানায়, শ্রীমঙ্গল ও চুয়াডাঙ্গা অঞ্চলসমূহে তীব্র শৈত্যপ্রবাহ এবং রাঙ্গামাটি, কুমিলস্না, চাঁদপুর, ফেনী, সন্দ্বীপ ও বরিশাল অঞ্চলসহ রাজশাহী, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের ওপর দিয়ে মৃদু থেকে মাঝরি শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে এবং তা অব্যাহত থাকতে পারে আজ বুধবারও। সারাদেশে মাঝারি থেকে ঘন কুয়াশা পড়তে পারে।
দেশে শৈত্যপ্রবাহ হয়েছে গত ২১ ডিসেম্বর থেকে। দীর্ঘ ২২ দিন ধরে বয়ে আসছিল মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। ওই সময় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমে আসে ৬ ডিগ্রী সেলসিয়াস পর্যনত্ম। মৃদু শৈত্যপ্রবাহেই বিপর্যসত্ম হয়ে পড়ে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা। সোমবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৭ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। বেশ কয়েকদিন ধরেই দেশে মাঝারি থেকে তীব্র শৈত্যপ্রবাহের পূর্বাভাস দিয়ে আসছিল আবহাওয়া অফিস। অবশেষে মঙ্গলবার তা বাসত্মবে রূপ নেয়। এ দিন সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শৈত্যপ্রবাহের সীমানায় প্রবেশ করে। এ দিন দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড হয়। গত তিন বছরে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ২০০৮ সালের ১৫ ফেব্রম্নয়ারিতে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ৫ দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস শ্রীমঙ্গলে। ২০০৭ সালের ১৭ জানুয়ারি সর্বনিম্ন তাপমাত্রা শ্রীমঙ্গলে রেকর্ড করা হয়েছিল ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। গত ১০ বছরের মধ্যে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩ দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছিল ২০০৩ সালে রাজশাহীতে। মঙ্গলবার দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা সোমবারের তুলনায় ছয়টি বিভাগের মধ্যে ৫টিতেই কমেছে। অর্থাৎ সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ঢাকা বিভাগে শূন্য দশমিক ৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস, চট্টগ্রামে ২ দশমিক ২, খুলনায় ২ দশমিক ৫, বরিশালে ৩ ডিগ্রী সেলসিয়াস ও সিলেট বিভাগে শূন্য দশমিক ২ ডিগ্রী সেলসিয়াস হ্রাস পায়।
শৈত্যপ্রবাহের থাবা থেকে রেহাই পাচ্ছে না রাজধানীবাসীও। শীতের তীব্রতার পাশাপাশি ঠা-া হিমেল বাতাসের গতিও বেড়েছে। মঙ্গলবার সারাদিন ঘন কুয়াশা ও শীতের দখলে থাকে নগরীর আকাশ। সকাল সাড়ে এগারোটা পর্যনত্ম বিরাজ করে কনকনে শীত। দিনভর গরম কাপড় ব্যবহার করতে দেখা গেছে লোকজনকে। দুপুরে কিছু সময়ের জন্য শীতের তীব্রতা কমে আসলেও কুয়াশা কেটে যায়নি। বিকেল সাড়ে চারটার পর নগরীতে বইতে থাকে ঠা-া বাতাস। বেড়ে যায় শীতের তীব্রতা। জিয়া বিমানবন্দর সূত্র জানায়, ঘন কুয়াশায় জিয়া বিমানবন্দরের উড়োজাহাজগুলো আকাশে উড়তে নির্ধারিত সময়ের আড়াই থেকে দুই ঘণ্টা বেশি সময় নেয়। প্রতিদিন ৭ থেকে ৮টি ফাইট বিলম্বের শিকার হতে থাকে। এমন পরিস্থিতি থেকে রেহাই পেতে কয়েকদিন আগে সিডিউল পরিবর্তনের সিদ্ধানত্ম নেয় কর্তৃপ। সকাল দশটার আগের সব ক'টি ফাইটের সিডিউল পিছিয়ে দেয়া হয়। এর পর দুর্ভোগের মাত্রা অনেকটা কমেছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নীলফামারী থেকে জানান, শীতজনিত রোগে আক্রানত্ম হয়ে গত দু'দিনে চার বৃদ্ধের মৃতু্য হয়েছে। মঙ্গলবার সকালে দণি বালাপাড়া গ্রামের বৃদ্ধ জাইয়ার (৮০) এবং সোমবার রাতে দণি খড়িবাড়ী গ্রামের ওয়াহেদ আলী (৮০), ছাতনাই বালাপাড়া গ্রামের মনির উদ্দিন (৯৫) ও দণি খড়িবাড়ী গ্রামের নছিরন (৭৫) মারা যান। ডিমলার পূর্ব ছাতনাই ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ জানান, শীতবস্ত্রের অভাবে মানুষজন নিদারম্নণ কষ্টভোগ করছে। এদিকে নীলফামারীতে প্রশিকার প থেকে শীতার্তদের মধ্যে ৮শ' কম্বল বিতরণ করা হয়। বিকেলে এই শীতবস্ত্র বিতরণ করেন জেলা প্রশাসক ফরহাদ হোসেন। এ সময় উপস্থিত ছিলেন জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাডভোকেট মমতাজুল হক।
সংবাদদাতা শ্রীমঙ্গল থেকে জানান, মঙ্গলবার শ্রীমঙ্গলে দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ৫ ডিগ্রী সেলসিয়াস। চলতি বছরে এটাই সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বলে আবহাওয়া অফিস সূত্রে জানা গেছে। শৈত্যপ্রবাহের ঠা-া বাতাস শ্রীমঙ্গলের সর্বত্র অব্যাহত রয়েছে। ঘন কুয়াশার চাদরে ঢাকা ছিল এলাকা। সকাল থেকে বিকেল পর্যনত্ম সূর্যের আলো দেখা যায়নি। কনকনে শীতে বিপর্যসত্ম হয়ে পড়েছে জনজীবন।
স্টাফ রিপোর্টার কুড়িগ্রাম থেকে জানান, অব্যাহত শৈত্যপ্রবাহে কুড়িগ্রামের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা হয়ে পড়েছে বিপর্যসত্ম। শীতবস্ত্রের অভাবে দরিদ্র মানুষ অবর্ণনীয় দুর্ভোগে পড়েছে। শীতজনিত রোগের প্রকোপ বেড়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় শীতজনিত রোগে আক্রানত্ম হয়ে কুড়িগ্রাম সদরের নয়াগ্রামের নবীন উদ্দিন (৮০), রাশেদ ( ১০ মাস) ও আব্দুস সাত্তার (৫৫) মারা যায়। সদর হাসপাতালের কে কে পাল জানান, প্রচ- শীতের কারণে সর্দি, কাশি, শ্বাসকষ্ট, চর্মরোগ, ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া রোগের প্রকোপ বেড়েছে। এ সব রোগে আক্রানত্ম হয়ে প্রতিদিন ৩ শতাধিক রোগী হাসপাতালের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিচ্ছে। মঙ্গলবার সারাদিন সূর্যের মুখ দেখা যায়নি। কুড়িগ্রাম শহর ছিল একেবারে ফাঁকা। স্কুলে ছাত্রছাত্রীদের উপস্থিতি ছিল কম। ঘন কুয়াশায় ঢাকা ছিল চারদিক। শৈত্যপ্রবাহের কারণে বোরো বীজতলায় 'কোল্ড ইনজুরি' ও আলু েেত 'লেট ব্রাইট' মোড়ক দেখা দিয়েছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা নওগাঁ থেকে জানান, মেঘাচ্ছন্ন আকাশ এবং শৈত্যপ্রবাহে শীতের তীব্রতা বেড়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে বিপর্যসত্ম জনজীবন। বোরো বীজতলা চরমভাবে ব্যাহত হচ্ছে। বীজতলার চারাগাছগুলো হলুদে হয়ে পড়েছে। শীতের তীব্রতা এবার যেন অতীতের সকল রেকর্ড ভেঙ্গেছে।
নিজস্ব সংবাদদাতা সানত্মাহার থেকে জানান, কয়েকদিন বিরতির পর আদমদীঘি উপজেলাসহ পশ্চিম বগুড়ায় ফের শৈত্যপ্রবাহ হানা দিয়েছে। হাড় কাঁপানো শীতে মানুষসহ সকল প্রাণিকুল কাহিল হয়ে পড়েছে। শীতজনিত রোগে গত দু'দিনে আদমদীঘি উপজেলা সদরের হারম্ননুর রশীদ (৬৫) ও সানত্মাহার ইউনিয়নের প্রসাদখালী গ্রামের ইসমাইল হোসেন (৭৫)। প্রচ- শীতে খেটে খাওয়া মানুষ কাজে নামতে পারছে না। শনিবার থেকে সূর্যের দেখা মেলেনি। ঘন কুয়াশা ও হিমেল হাওয়ায় অতি প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছে না লোকজন। শীতজনিত রোগে আক্রানত্মের সংখ্যা বেড়েছে।
No comments