উলফারা পালাচ্ছে, তাদের বিক্রি করা অস্ত্র কিনছে জঙ্গীরা

গাফফার খান চৌধুরী উলফার অস্ত্র চলে যাচ্ছে বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোর কাছে। সম্প্রতি রোহিঙ্গারাও তাদের অস্ত্র বিক্রি শুরম্ন করেছে। এসব অস্ত্রের বড় ক্রেতা বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলো। এতে নতুন করে জঙ্গী সংগঠনগুলোর শক্তিমত্তা বাড়ছে।
উলফার বহু অস্ত্র এখন বাংলাদেশের জঙ্গী সংগঠনগুলোর কব্জায়। দু'শতাধিক হালকা ও ভারি অস্ত্র এবং বেশ কিছু বিস্ফোরক জঙ্গী সংগঠনগুলোর কাছে চলে গেছে। জঙ্গীরা এসব অস্ত্রে বলীয়ান হয়ে বঙ্গবন্ধুর খুনীদের ফাঁসির রায় কার্যকরের আগে মারাত্মক কিছু করে বসতে পারে। এ বিষয়ে জঙ্গীরা মদদ পাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের কাছ থেকে। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার আগে জঙ্গীদের গ্রেফতারে সারাদেশে যৌথ অপারেশন চালানো হবে।
প্রভাবশালী গোয়েন্দা সূত্র বলছে, বাংলাদেশে উলফার ঘাটি ভেঙ্গে যাচ্ছে। চট্টগ্রাম, শেরপুর, ময়মনসিংহ, শেরপুরের গজনী সীমানত্মে থাকা উলফা সদস্যরা দ্রম্নত পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছে। অনেকেই পাকিসত্মানের পথ ধরেছে। উলফা চেয়ারম্যান অরবিন্দ রাজখোয়াসহ ১০ জন ভারতীয় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পর এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে বর্তমান সরকার উলফার বিপৰে অবস্থান নেয়ায় উলফার বাংলাদেশের চেন অব কমান্ড ভেঙ্গে পড়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিলস্নী সফরে বাংলাদেশে উলফা সদস্যদের অবস্থান নিয়ে বড় ধরনের সমঝোতা হওয়ার সম্ভবনা রয়েছে। এ বিষয়ে সামগ্রিকভাবে একটি চুক্তিও হয়েছে। এ কারণে বাংলাদেশ থেকে উলফা সদস্যরা তাদের অবস্থান গুটিয়ে নিচ্ছে। দিন দিন অবস্থানকারী সীমানত্ম এলাকা উলফা শূন্য হয়ে যাচ্ছে। শেরপুর, জামালপুর, চট্টগ্রাম ও ময়মনসিংহ সীমানত্মে থাকা উলফা সদস্যরা দ্রম্নত তাদের অস্ত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। রাজখোয়া গ্রেফতার হওয়ার পর অনেক উলফা সদস্য ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করছে। অস্ত্র নিয়ে পালিয়ে যেতে পারছে না তারা। এজন্য উলফা সদস্যরা তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র বিক্রি করে দিচ্ছে। অনেকটা সসত্মায় এসব ভারি অস্ত্র বিক্রি হচ্ছে। এ সুযোগটিকে কাজে লাগাচ্ছে বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন। জঙ্গীরা সসত্মায় ভারি অস্ত্র কিনে নিচ্ছে। উলফার বহু অস্ত্র এখন বাংলাদেশী জঙ্গী সংগঠনগুলোর কব্জায়। এছাড়া বেশ কিছু ভারি অস্ত্র সন্ত্রাসীদের হাতেও পড়েছে।
সম্প্রতি মিয়ানমার সরকার বাংলাদেশে থাকা রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফিরিয়ে নিতে রাজি হয়েছে। এমন খবরে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারে থাকা রোহিঙ্গারাও অস্ত্র বিক্রি শুরম্ন করেছে। রোহিঙ্গাদের অনেকেই পালিয়ে বা নিজ দেশে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এজন্য রোহিঙ্গারাও তাদের ব্যবহৃত অস্ত্র সসত্মায় বিক্রি করে দিচ্ছে। এসব অস্ত্রেরও বড় ক্রেতা বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠন। গোয়েন্দাদের ধারণা অনত্মত দু'শতাধিক হালকা ও ভারি অস্ত্র এবং বেশ কিছু বিস্ফোরক এখন বাংলাদেশের বিভিন্ন জঙ্গী সংগঠনগুলোর হাতে। এসব অস্ত্রের মধ্যে হালকা অস্ত্রের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এমনকি উলফা ও রোহিঙ্গাদের বেশ কিছু বিস্ফোরক চলে গেছে জঙ্গীদের কাছে। এসব বিস্ফোরকের মধ্যে হালকা ও ভারি গ্রেনেড থাকার সম্ভাবনা রয়েছে।
এদিকে নতুন করে জঙ্গী সংগঠনগুলো শক্তি অর্জন করায় রীতিমতো আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। এ কারণে জঙ্গী সংগঠনগুলোর নেতৃত্ব বদল হচ্ছে। সাংগঠনিক কার্যক্রম চালানোর ৰেত্রেও এসেছে নতুনত্ব। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠনের প্রশিৰিত কমান্ডোরা পিঠ বাঁচাতে এখন জামায়াতে ইসলামীর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হওয়ার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গী সংগঠনগুলোকে একত্রিত করতে দাদার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ ইসলামী দল। বড় ধরনের নাশকতা চালানোর ৰেত্রে তুরম্নপের তাস হিসেবে সদ্য নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গী সংগঠন হিযবুত তাহরীরকে ব্যবহার করা হতে পারে। হামলা কার্যকর করতে সংশিস্নষ্ট জায়াগায় নিজেদের লোক সেট করার প্রক্রিয়া চলছে। ধর্মীয় অনুভূতিকে কাজে লাগিয়ে জঙ্গীদের উস্কে দেয়ার চেষ্টা অব্যাহত আছে। সম্প্রতি তারা ধর্মীয় রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি নিষিদ্ধ করার বিষয়ে নানা বুলি আওড়াচ্ছে। যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গঠিত দলটি মুক্তিযুদ্ধকালের বৈরী একটি দেশের সঙ্গে লিয়াজোঁ করে যাচ্ছে।
একটি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্রটি বলছে, হিযবুত তাহরীর নতুন করে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। এছাড়া হিযবুত তাহরীরের তেমন কেউ গ্রেফতারও হয়নি। হিযবুত তাহরীরের বিদেশী অর্থ প্রবাহ সম্প্রতি দ্বিগুণ হয়েছে। এসব অর্থ দিয়ে উলফা ও রোহিঙ্গাদের বিক্রি করে দেয়া অস্ত্র কেনা হতে পারে। বিশ্বের কয়েকটি প্রভাবশালী দেশ বাংলাদেশে নিষিদ্ধ এ দলটির কার্যক্রম চালাতে দ্বিগুণ অর্থ দিচ্ছে। তারই ধারাবাহিকতায় হরকত-উল-জিহাদ ও জেএমবি সম্প্রতি হিযবুত তাহরীরের সঙ্গে একত্রিত হয়েছে। তদারকির দায়িত্ব পালন করছে যুদ্ধাপরাধীদের নিয়ে গঠিত একটি বিশেষ ইসলামিক দল। জঙ্গী সংগঠনগুলোকে এক কাতারে আনতে কাজ করে যাচ্ছে যুদ্ধাপরাধীরা।
জঙ্গীদের বেশভুষায় পরিবর্তন এসেছে। একেবারেই আধুনিক পোশাক পরছে জঙ্গীরা। এটি মানুষকে ধোঁকা দেয়ার বাড়তি কৌশল। কয়েক হাজার হিযবুত তাহরীরের কর্মী রয়েছে সারাদেশে। এর মধ্যে অর্ধশত প্রশিৰিত কমান্ডো রয়েছে। এসব কমান্ডোদের সঙ্গে যোগ দিয়েছে হরকত-উল-জিহাদ, জেএমবি ও লস্কর-ই-তৈয়বার কমান্ডোরা। বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার আগে শেষ মরণকামড় দিতে পারে জঙ্গীরা। চালানো হতে পারে মারাত্মক হামলা। দ্রম্নত জঙ্গীদের কাছে থাকা অস্ত্র গোলাবারম্নদ উদ্ধার সম্ভব না হলে যেকোন সময় বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে দু'টি প্রভাবশালী গোয়েন্দা সংস্থা একমত পোষণ করেছে। গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর তরফ থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার রায় কার্যকর করার আগে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়কে সারাদেশে যৌথ অভিযান চালানোর প্রসত্মাব দেয়া হয়েছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় তাতে সম্মতি দিয়েছে। তবে কবে থেকে এ অভিযান চালানো হবে তার দিনৰণ জানানো হয়নি।

No comments

Powered by Blogger.