অভিমত- তেলে-জলে মিশ খায় না- পরেশ বাঙালী
একই পাত্রে রেখে যত খুশি ঝাঁকানো হোক না কেন, তেলে আর জলে কোনদিন মিশ খাবে না। এক বোতলে রাখলেও তেল আলাদা হয়ে জলের ওপর ভাসতে থাকবে। বিএনপি আর আওয়ামী লীগের চরিত্রও ঠিক তেল আর জলের মতো।
বিএনপি আর আওয়ামী লীগের আদর্শ, চিনত্মা-চেতনা, জন্ম, বেড়ে ওঠা সবকিছুতেই আকাশপাতাল ফারাক। যতই সভা-সেমিনার হোক, দেশী-বিদেশী চাপ বা প্রচেষ্টা থাকুক, এই দুটি দলকে কখনও মিলানো যাবে না, মিলানোর চেষ্টা করা উচিতও হবে না। কেউ কেউ বলেন আওয়ামী লীগ ও বিএনপি একই চরিত্রের দল। একই মুদ্রার বা টাকার এপিঠ-ওপিঠ। এই মত যারা প্রচার করেন, পোষণ করেন তারা নিঃসন্দেহে নির্বোধ। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দল দু'টির পার্থক্যের সূক্ষ্ম বিশেস্নষণাত্বক বর্ণনায় না গিয়েও মোটা দাগের পার্থক্যগুলো তুলে ধরা যায়। মূলত দল দু'টির মধ্যে কি আকাশপাতাল ফারাক!প্রথমেই আলোচনা করব দল দু'টির জন্ম নিয়ে। আওয়ামী লীগ ও বিএনপি এ দল দু'টির জন্মের মধ্যেই বিশাল পার্থক্য রয়েছে। আওয়ামী লীগের জন্ম জনগণের অধিকার আদায়ের ল্যে, গণতান্ত্রিক আন্দোলনের মাধ্যমে। আর বিএনপি নামক দলটির জন্ম সামরিক শাসক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ইচ্ছায়, সামরিক ছাউনিতে। বিএনপি নামক রাজনৈতিক সংগঠনটির লুটপাট, সুবিধাবাদ আর মতার লোভ ছাড়া কোন মহৎ আদর্শ নেই। এই দলের তারেক, বাবর, মামুন, লালু, দুলু, বুলু, পটল, মওদুদ আহমদ, মান্নান ভূঁইয়া প্রমুখ নেতার আমলনামা ঘাঁটলে এ কথার সত্যতা জলের মতো পরিষ্কার হয়ে ওঠে। তবে এ দলে যে ভাল, প্রগতিশীল মানুষ নেই তা কিন্তু নয়। এদের সংখ্যা হাতেগোনা। মঈন খান, মেজর আখতারম্নজ্জামান রঞ্জন, বদরম্নদ্দোজা চৌধুরী প্রমুখ ভাল মানুষও এ দলে ছিলেন। তাঁরা হয়ত দল থেকে বহিষ্কৃত, নতুবা দলে কোণঠাসা। প্রতিটি দলেরই একটা আদর্শ থাকে যা তারা জনগণের সামনে তুলে ধরে। এ েেত্র বিএনপির আদর্শ হচ্ছে ইসলামের বিকৃত প্রয়োগ, ধর্মান্ধতা, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী চেতনা, পশ্চাৎপদতা আর উগ্র সাম্প্রদায়িকতা। এবং এটাকেই তারা 'বাংলাদেশী জাতীয়তাবাদী' আদর্শের মুখোশ পরিয়ে নিজেদের ধারক ও বাহক বলে জনসম েপ্রচার করে। অপরপ েআওয়ামী লীগের আদর্শ হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, ধর্মনিরপেতা ও প্রগতিশীল, মুক্তচিনত্মার 'বাঙালী জাতীয়তাবাদ'।
আওয়ামী লীগের শক্তি হচ্ছে দেশের সাধারণ জনগণ। জনগণের ভালবাসা আর অকুণ্ঠ সমর্থনই দলটির চালিকাশক্তি। দেশী-বিদেশী নানান ষড়যন্ত্র, কূটনৈতিক চাল আর নির্মম আঘাতে যতবারই দলটি মুখ থুবড়ে পড়েছে, ততবারই দেশের আপামর জনগণের ভালবাসা, সমর্থনে, আন্দোলন-সংগ্রামে গা-ঝাড়া দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। জনগণের প্রাণের দল, ভালবাসা ও বিশ্বাসের ভরসাস্থল এ দলটিকে জনগণই আন্দোলনের মাধ্যমে, ভোটের মাধ্যমে মতায় বসিয়েছে। আর বিএনপি নামক দলটির শক্তি হলো দেশী-বিদেশী চক্রানত্ম, ভারত বিরোধিতা, দেশী-বিদেশী লুটেরা, ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক শক্তির সমর্থন আর হত্যা ও ধ্বংসের জঙ্গী প্রেতাত্মারা। ১৯৯০ আর ২০০১ সালে দলটি এভাবেই মতায় গেছে। হয়ত বিএনপি ও দেশী-বিদেশী চক্রানত্মকারী সাম্প্রদায়িক লুটেরা মহল ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে জনগণকে ভুল বুঝিয়ে বিভ্রানত্ম করেছে নতুবা জনগণের দেয়া ভোটের রায় ছিনতাই করেছে। ১৯৯০ সালে বিএনপি জনগণকে ভারতের ভয় দেখিয়েছে। বলেছে, আওয়ামী লীগে ভোট দিলে দেশটা ভারতের তাঁবেদার রাষ্ট্রে পরিণত হবে। বেগম খালেদা জিয়া বলেছেন, আওয়ামী লীগ মতায় গেলে মসজিদে মসজিদে উলুধ্বনি শোনা যাবে। চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ভারত নিয়ে যাবে। ২০০১ সালে সাজানো, পাতানো সালসা (সাহাবুদ্দিন, লতিফুর, সাইদ গং) নির্বাচনে তো জনগণের রায়কে ছিনতাই করেই বিএনপি মতায় গেছে। ২০০৭ সালেও এমন একটি প্রহসনমূলক নির্বাচনের জন্য বিএনপি এবং তাদের পা-চাটা বুদ্ধিজীবী, প্রশাসনিক মহল আপ্রাণ চেষ্টা করেছে। কে.এম হাসান নাটক, আজিজ নাটক, ইয়াজউদ্দিন নাটকের অনেক মহড়া দেশবাসী দেখেছে। কিন্তু ২২ জানুয়ারির সেই সর্বনাশা চক্রানত্মের রক্তাক্ত সাজানো, পাতানো নির্বাচনী নাটক মঞ্চস্থ হবার আগেই ১১ জানুয়ারির ঐতিহাসিক ঘটনায় বিএনপির সেই নাটকের অপমৃতু্য ঘটেছে।
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর একটি সুষ্ঠু, নিরপে, অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পেরেছে। সেই নির্বাচনে জনগণের রায়ের প্রকৃত প্রতিফলন ঘটেছে এবং সঙ্গতকারণেই বিএনপির ভরাডুবি ঘটেছে। আওয়ামী লীগ যদি বিএনপি এবং তাদের পা-চাটা বুদ্ধিজীবী মহল কতর্ৃক জনগণকে বিভ্রানত্ম করা, ভুল বুঝানো প্রতিরোধ করতে পারে এবং জনগণের রায় ছিনতাই করাকে ঠেকাতে পারে, তবে আমার দৃঢ় বিশ্বাস পরবর্তী নির্বাচনেও দলটি মতায় যেতে পরবে।
দল দু'টির চরিত্রেও আকাশ-পাতাল প্রভেদ। যতসব স্বাধীনতাবিরোধী, যুদ্ধাপরাধী, রাজাকার, আলবদর, চরিত্রহীন, সুবিধাবাদী, প্রতারক, লুটেরা, সন্ত্রাসী, ক্রিমিনালরা তাদের আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিয়েছে বিএনপিকে। রাজাকার, যুদ্ধাপরাধী, চোর, বাটপাড়-সন্ত্রাসী, প্রতারক যাই হোক না কেন, আওয়ামী লীগবিরোধী আর স্বাধীনতাবিরোধী হলেই বিএনপি নামক দলটির দ্বারা তাদের জন্য চিরদিনের জন্য খোলা। যে যত বেশি চরিত্রহীন, ভ-, যে যত স্বাধীনতাবিরোধী, ষড়যন্ত্র বিশারদ, ক্রিমিন্যাল বিএনপিতে সে তত যোগ্য নেতা। বিএনপির কাছে সে ততই সম্মানের, আদরের। এইতো কিছুদিন মাত্র আগে বিএনপির সম্মেলনে দেশের কোটি কোটি টাকা আত্মসাতকারী, লুটেরা তারেক রহমান এবং যুদ্ধাপরাধী সাকা চৌধুরীকে পবিত্র বিজয়ের মাসে দেশবাসীর প্রতি খালেদা জিয়া তথা বিএনপির উপহার! তারেক রহমান দলটির কো-চেয়ারম্যান আর সাকা চৌধুরী প্রেসিডিয়াম সদস্য হয়েছেন। আর পানত্মরে আওয়ামী লীগের চরিত্র হলো স্বাধীনতার চেতনা, মুক্তিযুদ্ধ, দেশপ্রেম আর সাধারণ মানুষের কল্যাণ আওয়ামী লীগ জনগণকে নিয়ে আন্দোলন করে, গণতান্ত্রিক আন্দোলন আর জনকল্যাণের আলোচিত পথে তার কানত্মিহীন পথচলা। অন্যদিকে বিএনপি হাঁটে ষড়যন্ত্র, হত্যা, সন্ত্রাস আর ধর্মান্ধতার অন্ধকার পথে। আওয়ামী লীগ মতায় যায় গণতান্ত্রিক আন্দোলনের আলোকিত পথে, জনতার রায় নিয়ে আর বিএনপি মতায় যেতে চায় সন্ত্রাস, প্রতারণা, ষড়যন্ত্র আর হত্যা সন্ত্রাসের রাজনীতির অন্ধকার গলির পেছনের দরজা দিয়ে। আর তাইতো বিএনপি আমলে ট্রাক ট্রাক অস্ত্র সাসে, কিবরিয়া, আহসানউলস্নাহ মাস্টাররা জীবন দেন, একুশে আগস্টে গ্রেনেড হামলা হয়। আকাশপাতাল পার্থক্য রয়েছে দল দু'টির উদ্দেশ্যেও। আওয়ামী লীগের উদ্দেশ্য একটি অসাম্প্রদায়িক, ধর্মনিরপে, গণতান্ত্রিক, সুখী, সমৃদ্ধ বাংলাদেশ। পানত্মরে বিএনপির উদ্দেশ্য একটি ধর্মান্ধ, মধ্যযুগীয়, পশ্চাৎপদ, সাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ। বাংলাদেশটাকে তো আর পুরোপুরি পাকিসত্মান বানানো যাবে না, তাই বিএনপি চায় বাংলাদেশটাকে পাকিসত্মানী মডেলে সাজাতে। তাই তো পাকিসত্মানপন্থী যুদ্ধাপরাধী জামায়াত আর গোলাম আযম, নিজামীরা বিএনপির এত পেয়ারের, মহব্বতের দিল-দোসত্ম। তবুও যেসব জ্ঞানপাপী, সুবিধাবাদী, ভ--প্রতারকরা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে এক করে দেখাতে চায়, এক পালস্নায় মাপতে চায় সেই সব মুখোশধারী ক্রিমিনালদের থেকে দেশবাসী সাবধান।
No comments