স্মরণ-এম এ জি ওসমানী : মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক by বিশ্বজিৎ পাল বাবু
মহম্মদ আতাউল গনি ওসমানী। যিনি জেনারেল এম এ জি ওসমানী নামেই পরিচিত। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক। ফেঞ্চুগঞ্জ-বালাগঞ্জ-বিশ্বনাথ আসন থেকে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্যও নির্বাচিত হয়েছিলেন। তিনি বাংলাদেশের প্রথম মন্ত্রিসভার সদস্যও হয়েছিলেন।
১৯৭৬ সালে গঠন করেন 'জাতীয় জনতা পার্টি' নামে একটি নতুন রাজনৈতিক দল। তিনি ১৯৩৯ থেকে ১৯৪৭ সাল পর্যন্ত ব্রিটিশ-ভারতীয় সেনাবাহিনী এবং ১৯৪৭ থেকে ১৯৬৭ সাল পর্যন্ত পাকিস্তান সেনাবাহিনীতে কর্মরত ছিলেন। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ১১ এপ্রিল এম এ জি ওসমানীকে সেনাবাহিনীর প্রধান ও ১৭ এপ্রিল মুক্তিবাহিনীর সর্বাধিনায়ক ঘোষণা করা হয়। মুক্তিযুদ্ধে জেনারেল ওসমানীর রণকৌশল ছিল খুবই তীক্ষ্ন। তাঁর নির্দেশনা অনুযায়ী সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টরে ভাগ করা হয়। বিভিন্ন সেক্টর ও বাহিনীর মধ্যে সমন্বয় সাধন, রাজনৈতিক নেতৃত্বের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা, অস্ত্রের জোগান নিশ্চিত করা, গেরিলা বাহিনীর প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা ইত্যাদি কাজ তিনি করেছেন সাফল্যের সঙ্গে। ১৯২৩ সালে ১৯৩৮ সালে। বিশ্ববিদ্যালয় জীবন শেষ করে ওসমানী ১৯৩৯ সালে রয়্যাল আর্মড ফোর্সে ক্যাডেট হিসেবে যোগ দেন। দেরাদুনে ব্রিটিশ-ভারতীয় মিলিটারি একাডেমীতে প্রশিক্ষণ নিয়ে ১৯৪০ সালে ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর কমিশনড অফিসার হিসেবে যোগ দিয়ে ব্যাটালিয়ন কমান্ডার হিসেবে বর্মা (মিয়ানমার) সেক্টরে কাজ করেন। তিনি মেজর পদে উন্নীত হন ১৯৪২ সালে। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যে তিনি ছিলেন সর্বকনিষ্ঠ মেজর। ১৯৫১ সালে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের প্রথম ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক নিযুক্ত হন। বিভিন্ন দায়িত্ব পালনকালে ১৯৫৬ সালে তিনি কর্নেল পদমর্যাদা লাভ করেন এবং সেনাবাহিনীর হেডকোয়ার্টারের জেনারেল স্টাফ অ্যান্ড মিলিটারি অপারেশনের ডেপুটি ডাইরেক্টরের দায়িত্ব পান। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত যুদ্ধে তিনি পাকিস্তানের হয়ে যুদ্ধ করেন। অবসরকালীন ছুটি শেষে ১৯৬৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ১৯৭১ সালের ২৬ ডিসেম্বর তাঁকে বাংলাদেশ আর্মড ফোর্সের জেনারেল পদে নিয়োগ দেওয়া হয়। ১৯৭২ সালে দায়িত্ব থেকে অবসর নিয়ে যোগ দেন নৌ-যোগাযোগ, জাহাজ ও বিমান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে। ১৯৭৩ সালের সাধারণ নির্বাচনে ৯৪ শতাংশ ভোট পেয়ে অভাবনীয় সাফল্য লাভ করেন। বাকশাল কায়েম হলে ১৯৭৫ সালে তিনি জাতীয় সংসদ ও আওয়ামী লীগ থেকে পদত্যাগ করেন। খন্দকার মোশতাক আহমেদের সরকারে প্রতিরক্ষা উপদেষ্টা নিয়োগ পাওয়ার পর জেলহত্যার ঘটনা ঘটলে তিনি পদত্যাগ করেন। এম এ জি ওসমানীর জন্ম ১৯১৮ সালের ১ সেপ্টেম্বর সুনামগঞ্জে। বাবা মফিজুর রহমান সুনামগঞ্জ সদর মহকুমার সাব-ডিভিশনাল অফিসার হিসেবে নিয়োজিত থাকার সুবাদেই তাঁদের সেখানে থাকা। তাঁদের পিতৃপুরুষের বাড়ি সিলেটের বর্তমান ওসমানীনগর থানার দয়ামীর গ্রামে। তাঁর মায়ের নাম জোবেদা খাতুন। দুই ভাই, এক বোনের মধ্যে তিনি ছিলেন সবার ছোট। ক্যান্সার আক্রান্ত হয়ে লন্ডনে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ১৯৮৪ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি তিনি মারা যান। সিলেটে পূর্ণ সামরিক মর্যাদায় তাঁকে সমাহিত করা হয়। ঢাকায় তাঁর স্মরণে গড়ে উঠেছে 'ওসমানী উদ্যান'। বাংলাদেশ সচিবালয়ের বিপরীতে রয়েছে 'ওসমানী মেমোরিয়াল হল'। সিলেটে তাঁর নামে রয়েছে হাসপাতাল। এছাড়া এম এ জি ওসমানীর সিলেটের বাসভবনকে জাদুঘরে পরিণত করা হয়েছে।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
বিশ্বজিৎ পাল বাবু
No comments