সদরে অন্দরে-শিক্ষার্থীর সাফল্যে উৎফুল্ল সবাই by মোস্তফা হোসেইন
এইচএসসি এবং সমমানের পরীক্ষায় এক-চতুর্থাংশ পরীক্ষার্থীর অকৃতকার্য হওয়ার তালিকা সামনে নিয়েও হাসছে বাংলাদেশ। যুক্তি আছে এই উল্লাসের। কারণ, উত্তীর্ণ হওয়ার সংখ্যা ও হার রেকর্ড তৈরি করেছে বাংলাদেশে। রেকর্ড সৃষ্টি হয়েছে জিপিএ ৫ প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও।
একসময় যেখানে এক-তৃতীয়াংশ পরীক্ষার্থীও পাস করত না, সেখানে এখন এক-চতুর্থাংশ মাত্র অকৃতকার্য হচ্ছে। এটি একটি ভালো সূচক। আবার, সামগ্রিক বিষয় চিন্তা করলে এতটা উৎফুল্ল হওয়ার সময় এখনো আসেনি। কারণ, বাংলাদেশের মতো গরিব একটি দেশে বাবা-মাকে তাদের সন্তানের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে, সেই ব্যয়ের অনুপাতে সুফল তাদের হাতে যাচ্ছে কি না, তা তলিয়ে দেখা দরকার। সামগ্রিক ফল পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, আমাদের শিক্ষার্থীদের পেছনে যে অর্থ ব্যয় করতে হয়, তার এক-চতুর্থাংশই কাজে লাগে না। যত ক্ষুদ্রই হোক না কেন, এই ব্যয় জাতীয় ক্ষতি হিসেবেই চিহ্নিত হতে পারে। তাই নটর ডেম কলেজের অধ্যক্ষ ফাদার ডি কস্তার সুরে সুর মিলিয়ে বলার ইচ্ছা জাগে, আমরা নিশ্চয়ই আশা করতে পারি, এ দেশের শতভাগ পরীক্ষার্থীই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হবে। আর আমরা যাঁরা অভিভাবক আছি, তাঁদের সামনে ভবিষ্যৎগুলো অবশ্যই জ্বলজ্বল করে জ্বলতে থাকবে। যেদিন ৯০ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হবে, সেদিনই আমরা বলতে পারব, জাতীয় অপচয় কমেছে।
শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরও দেশের কলেজগুলোতে অনার্স ও পাসকোর্সের আড়াই লাখ আসন খালি ছিল। সেই হিসাব অনুযায়ী এ বছর ৪০ হাজার ৮৯২ জন অতিরিক্ত পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দুই লক্ষাধিক আসন খালি থাকবে। ফলে অধিক পাস করার কারণে শিক্ষার্থীদের আরো পড়াশোনার সুযোগ কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এটা ঠিক, উত্তীর্ণদের সবাই নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। বুয়েট, পাবলিক মেডিক্যাল কলেজ কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই ভর্তির সুযোগ পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি হবে_এমন প্রত্যাশা করার সময় এখন এসে গেছে।
অধিক হারে জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভালো শিক্ষার্থীদের এখন কম নামি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ভর্তি হতে হবে। অর্থাৎ, ভালো ফল বেশি করায় ভালো শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়ন নিয়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি সহজেই নজরে আসে। একসময়কার নামি সরকারি কলেজগুলোর ফল দেখে মনে হয়, তারা যেন বিপর্যয়মুখী হতেই পছন্দ করে। কিংবা পরীক্ষায় ভালো ফল করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। যেমন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দিকেই নজর দেওয়া যাক। এখানকার সেরা ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, হলিক্রস কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। লক্ষ করার মতো হচ্ছে, সরকারি কলেজগুলো প্রথম-২০-এ স্থান পেয়েছে খুবই কম। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছে না_এটা প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এসএসসিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ৯৩৩ জন শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় মাত্র ২৫১ জন জিপিএ ৫ সহ উত্তীর্ণ হয়েছে (যদিও কলেজটি সেরা কুড়িতে স্থান করে নিতে পেরেছে)। এমন চিত্র সারা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পরীক্ষায় সুফলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রাম-শহরের বিভক্তিও আগের তুলনায় কমে গেছে। আগে যেখানে ভালো ফল করার ক্ষেত্রে শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোই একচেটিয়া থাকত, এবার তার পরিবর্তন হয়েছে। এবার সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৫টিই গ্রামাঞ্চলের। এতে প্রমাণিত হয়, ভালোর তালিকা এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামের দিকে যেতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তনকে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে মান নির্ণয়ের যে সূত্র অনুসরণ করা হয়, এ ব্যাপারে অনেকেরই মন্তব্য আছে। তাদের মতে, এই সূত্র মফস্বলের কলেজগুলোকে প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এই মানদণ্ডে অধিক বিনিয়োগকে অধিক সুবিধা দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেশের ক্যাডেট কলেজগুলোর প্রসঙ্গ আসে। ক্যাডেট কলেজগুলোর ৯৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে। এখানে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়, সেই পরিমাণ বিনিয়োগ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান নির্ধারণের সময় ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর যে নিবন্ধন, তাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষার্থী নিবন্ধিত হয়েছে, আর কতজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, সেই হিসাব কষে প্রতিষ্ঠানের স্থান বিবেচনা করা হয়। গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া মেয়েদের কেউ কেউ পরীক্ষার আগেই স্বামীর ঘরে চলে যায়। গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলো থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এটা প্রধান কারণ। যে কারণেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ুক না কেন, প্রতিষ্ঠানের স্থান নির্ধারণের জন্য এই কারণটি কাল হয়ে দাঁড়ায়। শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিয়ের কারণে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার উদাহরণ খুবই কম। অর্থনৈতিক কারণেও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধনের পরও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, যা শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ পরিস্থিতিতে গ্রামের কলেজগুলো অনেক সময় ভালো ফল করেও ভালো স্থান অর্জন করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা বোর্ডের অধীন শশিদল আবু তাহের কলেজের পরীক্ষার ফলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল কাইউম জানান, তাঁর কলেজ থেকে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরও সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় কলেজটি স্থান করে নিতে পারেনি। সেখানে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীর হিসাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে, এমন মাত্র দুজন শিক্ষার্থী তাঁর প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে পাঁচজন। এই বিবেচনায়ও তাঁর কলেজটি এগিয়েছে। কিন্তু সেই ঝরে পড়ার কারণে তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন।
তাই স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীদের যদি অন্তর্ভুক্ত করা না হয়, তাহলে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করা যায়। ক্যাডেট কলেজগুলো ভর্তির সময়ই জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের বেছে নেয়। তারা শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে সাফল্য দাবি করতে পারে তুলনামূলকভাবে কম। এর পরও তারা সাধারণ কলেজগুলোর চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় সেই একই কারণে। আবার, তাদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতাও নেই। মৃত্যু কিংবা অলঙ্ঘনীয় কোনো কারণ ছাড়া ক্যাডেট কলেজগুলো থেকে ঝরে পড়ে না সাধারণত। এ পরিস্থিতিতে মূল্যায়নের পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন।
এর পরও আশার কথা, আমাদের ছেলেমেয়েরা আগের চেয়ে অনেক মনোযোগী হয়েছে। নকলমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে সারা দেশে। এই অর্জনকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
mhussain_71@yahoo.com
শিক্ষামন্ত্রীর ভাষ্য অনুযায়ী, গত বছরও দেশের কলেজগুলোতে অনার্স ও পাসকোর্সের আড়াই লাখ আসন খালি ছিল। সেই হিসাব অনুযায়ী এ বছর ৪০ হাজার ৮৯২ জন অতিরিক্ত পরীক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরও দুই লক্ষাধিক আসন খালি থাকবে। ফলে অধিক পাস করার কারণে শিক্ষার্থীদের আরো পড়াশোনার সুযোগ কমে যাওয়ার কোনো কারণ নেই। তবে এটা ঠিক, উত্তীর্ণদের সবাই নামি-দামি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি হতে পারবে না। বুয়েট, পাবলিক মেডিক্যাল কলেজ কিংবা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে সবাই ভর্তির সুযোগ পাবে না, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু সুষ্ঠু প্রতিযোগিতার পরিবেশ সৃষ্টি মাধ্যমে শিক্ষার মান বৃদ্ধি হবে_এমন প্রত্যাশা করার সময় এখন এসে গেছে।
অধিক হারে জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমরা দেখতে পাচ্ছি, ভালো শিক্ষার্থীদের এখন কম নামি প্রতিষ্ঠানগুলোতেও ভর্তি হতে হবে। অর্থাৎ, ভালো ফল বেশি করায় ভালো শিক্ষার্থীদের ভাগাভাগি করার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর মানোন্নয়ন নিয়ে। এ ক্ষেত্রে সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পিছিয়ে পড়ার বিষয়টি সহজেই নজরে আসে। একসময়কার নামি সরকারি কলেজগুলোর ফল দেখে মনে হয়, তারা যেন বিপর্যয়মুখী হতেই পছন্দ করে। কিংবা পরীক্ষায় ভালো ফল করার কোনো ইচ্ছা তাদের নেই। যেমন, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের দিকেই নজর দেওয়া যাক। এখানকার সেরা ২০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ঢাকার ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ, নটর ডেম কলেজ, ঢাকা সিটি কলেজ, আব্দুল কাদির মোল্লা সিটি কলেজ, হলিক্রস কলেজ, শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ, আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, খিলগাঁও ন্যাশনাল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, এসওএস হারম্যান মেইনার কলেজ, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম কলেজ, ক্যামব্রিয়ান কলেজ, ঢাকা কমার্স কলেজ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠান স্থান করে নিয়েছে। লক্ষ করার মতো হচ্ছে, সরকারি কলেজগুলো প্রথম-২০-এ স্থান পেয়েছে খুবই কম। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো শিক্ষার্থীদের মানসম্পন্ন শিক্ষা দিতে পারছে না_এটা প্রমাণিত। এ ক্ষেত্রে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। এসএসসিতে জিপিএ ৫ প্রাপ্ত ৯৩৩ জন শিক্ষার্থী ওই প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। তাদের মধ্যে এইচএসসি পরীক্ষায় মাত্র ২৫১ জন জিপিএ ৫ সহ উত্তীর্ণ হয়েছে (যদিও কলেজটি সেরা কুড়িতে স্থান করে নিতে পেরেছে)। এমন চিত্র সারা দেশের ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। পরীক্ষায় সুফলপ্রাপ্তির ক্ষেত্রে গ্রাম-শহরের বিভক্তিও আগের তুলনায় কমে গেছে। আগে যেখানে ভালো ফল করার ক্ষেত্রে শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোই একচেটিয়া থাকত, এবার তার পরিবর্তন হয়েছে। এবার সেরা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ৬৫টিই গ্রামাঞ্চলের। এতে প্রমাণিত হয়, ভালোর তালিকা এখন শহর ছাড়িয়ে গ্রামের দিকে যেতে শুরু করেছে। এই পরিবর্তনকে শিক্ষার সামগ্রিক উন্নয়নের লক্ষণ হিসেবে গণ্য করা যায়। তবে মান নির্ণয়ের যে সূত্র অনুসরণ করা হয়, এ ব্যাপারে অনেকেরই মন্তব্য আছে। তাদের মতে, এই সূত্র মফস্বলের কলেজগুলোকে প্রতিযোগিতা থেকে দূরে সরিয়ে দিতে পারে। এই মানদণ্ডে অধিক বিনিয়োগকে অধিক সুবিধা দেওয়ার পথ প্রশস্ত হয়েছে। উদাহরণ হিসেবে দেশের ক্যাডেট কলেজগুলোর প্রসঙ্গ আসে। ক্যাডেট কলেজগুলোর ৯৫ দশমিক ৭৯ শতাংশ জিপিএ ৫ পেয়েছে। এখানে যে পরিমাণ বিনিয়োগ করা হয়, সেই পরিমাণ বিনিয়োগ করা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর পক্ষে প্রায় অসম্ভব। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্থান নির্ধারণের সময় ওই প্রতিষ্ঠানে ভর্তি হওয়ার পর যে নিবন্ধন, তাও অন্তর্ভুক্ত করা হয়ে থাকে। একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কতজন শিক্ষার্থী নিবন্ধিত হয়েছে, আর কতজন পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে, সেই হিসাব কষে প্রতিষ্ঠানের স্থান বিবেচনা করা হয়। গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলোতে ভর্তি হওয়া মেয়েদের কেউ কেউ পরীক্ষার আগেই স্বামীর ঘরে চলে যায়। গ্রামাঞ্চলের কলেজগুলো থেকে শিক্ষার্থী ঝরে পড়ার এটা প্রধান কারণ। যে কারণেই শিক্ষার্থী ঝরে পড়ুক না কেন, প্রতিষ্ঠানের স্থান নির্ধারণের জন্য এই কারণটি কাল হয়ে দাঁড়ায়। শহরের প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিয়ের কারণে শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার উদাহরণ খুবই কম। অর্থনৈতিক কারণেও গ্রামের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে নিবন্ধনের পরও শিক্ষার্থী ঝরে পড়ে, যা শহরের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। এ পরিস্থিতিতে গ্রামের কলেজগুলো অনেক সময় ভালো ফল করেও ভালো স্থান অর্জন করতে পারে না। এ প্রসঙ্গে কুমিল্লা বোর্ডের অধীন শশিদল আবু তাহের কলেজের পরীক্ষার ফলের কথা উল্লেখ করা যেতে পারে। অধ্যক্ষ সৈয়দ আব্দুল কাইউম জানান, তাঁর কলেজ থেকে ৯৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হওয়ার পরও সেরা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তালিকায় কলেজটি স্থান করে নিতে পারেনি। সেখানে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীর হিসাব বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। অন্যদিকে, এসএসসিতে জিপিএ ৫ পেয়েছে, এমন মাত্র দুজন শিক্ষার্থী তাঁর প্রতিষ্ঠানে এইচএসসিতে ভর্তি হয়েছিল। কিন্তু এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে পাঁচজন। এই বিবেচনায়ও তাঁর কলেজটি এগিয়েছে। কিন্তু সেই ঝরে পড়ার কারণে তাঁরা পিছিয়ে পড়েছেন।
তাই স্থান নির্ধারণের ক্ষেত্রে নিবন্ধনকৃত শিক্ষার্থীদের যদি অন্তর্ভুক্ত করা না হয়, তাহলে গ্রামাঞ্চলের প্রতিষ্ঠানগুলোর অবস্থান আরো এগিয়ে যাবে বলে মনে করা যায়। ক্যাডেট কলেজগুলো ভর্তির সময়ই জিপিএ ৫ প্রাপ্তদের বেছে নেয়। তারা শিক্ষার্থীদের উন্নয়ন করার ক্ষেত্রে সাফল্য দাবি করতে পারে তুলনামূলকভাবে কম। এর পরও তারা সাধারণ কলেজগুলোর চেয়ে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায় সেই একই কারণে। আবার, তাদের মধ্যে ঝরে পড়ার প্রবণতাও নেই। মৃত্যু কিংবা অলঙ্ঘনীয় কোনো কারণ ছাড়া ক্যাডেট কলেজগুলো থেকে ঝরে পড়ে না সাধারণত। এ পরিস্থিতিতে মূল্যায়নের পদ্ধতিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা প্রয়োজন বলে অনেকেই মনে করেন।
এর পরও আশার কথা, আমাদের ছেলেমেয়েরা আগের চেয়ে অনেক মনোযোগী হয়েছে। নকলমুক্ত পরিবেশ তৈরি হয়েছে সারা দেশে। এই অর্জনকে ধরে রাখার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
mhussain_71@yahoo.com
No comments