কালের আয়নায়-সত্যাগ্রহ বনাম অসত্যাগ্রহ এবং হরতাল বনাম ভয়তাল byআবদুল গাফ্ফার চৌধুরী
বিএনপির ডাকা ২২ সেপ্টেম্বরের হরতাল সম্পর্কে মানুষের আশা ও আশঙ্কা দুটিই সত্য হয়েছে। শান্তিকামী মানুষ আশা করেছে, হরতাল জনসমর্থনের অভাবে সফল হবে না। ব্যাপক অরাজকতা সৃষ্টি, ভাংচুর ও গাড়ি পোড়ানোর মাধ্যমে হরতালকে ভয়তালে পরিণত করার সুযোগ দুর্বৃত্তরা পাবে না। পুলিশ শক্ত অবস্থান নেবে।
তাদের সেই আশা অনেকটাই পূর্ণ হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার প্রাইভেট গাড়ির মালিকরা অবশ্যই ঢাকার রাস্তায় গাড়ি বের করেননি ভয়ে। কিন্তু অন্যান্য গাড়ি, ঘোড়া, ট্রেন, বাস, লঞ্চ মোটামুটি চলেছে। এই শিথিল হরতালকেই বিএনপি সফল হরতাল বলে চালিয়ে আত্মতৃপ্তি পাবে।
আবার ঢাকায় মানুষের আশঙ্কাও সত্য হয়েছে। তারা অনুমান করেছিল, পুলিশ যতই সতর্ক থাকুক, প্রস্তুত থাকুক, বিএনপি ও জামায়াতের পেছনে যে সন্ত্রাসী মৌলবাদী গ্রুপগুলো আছে, তাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত ক্যাডাররা ভাংচুর ও গাড়ি পোড়ানোর সন্ত্রাসে লিপ্ত হবেই। তারা সেই চেষ্টা করেছে। মিরপুর ও শ্যামপুরে তারা দুটি বাসে অগি্নসংযোগ করেছে। তবে পুলিশ সতর্ক থাকায় তারা ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবারের জামায়াতি তাণ্ডব সৃষ্টি করতে পারেনি।
জনসমর্থন ছাড়া কোনো গণআন্দোলন সফল হয় না। দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জমি প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি যে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না তার মূল কারণ, তাদের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম কোনোটাই সঠিক নয়। দেশে খাদ্যমূল্য, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, প্রায় প্রাত্যহিক সড়ক অথবা নৌদুর্ঘটনা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে সরকারের ব্যর্থতা এবং অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ একশ্রেণীর মন্ত্রীকে অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বিএনপি সংসদ ভবন গরম করে তুলতে পারত, রাজপথেও শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণের বিপুল অংশকে তাতে যুক্ত করতে পারত।
কিন্তু বিএনপি সে পথে যায়নি। বিএনপি নেত্রী তার দলের একাংশের আপত্তি ও অসন্তোষ সত্ত্বেও লন্ডনে পলাতক পুত্রের নির্দেশে চালিত হচ্ছেন এবং জামায়াতের উদ্দেশ্যমূলক সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখে দলের ও দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির গুরুতর ক্ষতি করছেন।
দেশের মানুষ ধরে ফেলেছে, তাদের দাবি-দাওয়া আদায় ও সমস্যা মোচন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের লক্ষ্য নয়। বিএনপির লক্ষ্য তারেক ও কোকোকে গুরুতর দুর্নীতির মামলা ও সম্ভাব্য সাজা থেকে উদ্ধার করা এবং জামায়াতের লক্ষ্য '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো। এ জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার তারা প্রধানমন্ত্রীর দেশে অনুপস্থিতির সুযোগে একটি সহিংস বেসামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। বৃহস্পতিবারে (২২ সেপ্টেম্বর) বিএনপি সোমবারের নির্বাপিত ভস্মে আবার অগি্নকণা জ্বালানো যায় কি-না তার ব্যর্থ চেষ্টা চালাল। কিন্তু ২৭ সেপ্টেম্বরের ডাকা 'ভয়তাল' তড়িঘড়ি করে ২২ তারিখে এগিয়ে এনে কোনো লাভ হয়নি।
হরতাল ও ভয়তালের মধ্যে পার্থক্য এই যে, জনগণের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে জনসমর্থনপুষ্ট গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি প্রক্রিয়ার নাম হরতাল, ধর্মঘট বা বন্ধ। আর সৎ অথবা অসৎ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জনসমর্থনবিহীন এবং সন্ত্রাসযুক্ত প্রক্রিয়ার বর্তমান নাম ভয়তাল। অর্থাৎ জনগণকে ভয় দেখিয়ে ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখে যে অরাজক অবস্থা সৃষ্টির দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা তার নাম ভয়তাল।
অবিভক্ত ভারতে হরতালের সফল প্রয়োগ করেছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী। পাকিস্তান আমলে বাঙালির দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে এই হারতালকে ব্যবহার করেছেন মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু। তারা জনসমর্থন নিয়ে এই হরতাল করেছেন। জনগণকে ভয় দেখিয়ে করেননি। পাবলিক প্রোপার্টি ধ্বংস করেননি। হরতালে বাধ্য করার জন্য গরিব রিকশাওয়ালা বা কোনো তরুণ ব্যবসায়ীকে পুড়িয়ে মারেননি। গান্ধী, ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর ডাকা হরতালে রক্তপাত ঘটিয়েছে পুলিশ। জনতা বাধ্য না হলে সহিংস হয়নি।
মহাত্মা গান্ধী তার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনকে নাম দিয়েছিলেন সত্যাগ্রহ। এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে আইন অমান্য করে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার বরণ করত। হিংসাত্মক পন্থা গ্রহণ করত না। কখনও কখনও আন্দোলন সরকারের নির্মম দমন নীতির মুখে হিংসাত্মক হয়ে উঠলে গান্ধীজি সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দিতেন। লবণ কর আন্দোলনে চৌরিচেরির ঘটনায় তিনি তা করেছেন। বঙ্গবন্ধু '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিলেন অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন দ্বারা। পাকিস্তানি হানাদাররা বর্বর গণহত্যা শুরু না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন ছিল দেশবাসীর সমর্থনপুষ্ট শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে খুন, জখম, গুপ্তহত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রথম শুরু করে তখনকার চীনপন্থি বামদের স্পিল্গন্টার্স গ্রুপগুলো, যাদের মধ্যে সর্বহারা পার্টি ছিল প্রধান। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যায় সহযোগী হওয়ার পর স্বাধীনতা-উত্তর দেশে রগকাটা, শিরকাটা, গুপ্তহত্যা ও অন্যান্য সন্ত্রাসের কর্মকাণ্ড শুরু করে। জামায়াতের রাজনৈতিক সহযোগী হওয়ার শেষে বিএনপি নিজেকে একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে দাবি করার পরও এই সন্ত্রাসের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। হাওয়া ভবন হয়ে ওঠে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি দুইয়েরই হেডকোয়ার্টার।
জামায়াত 'ইসলামী আদর্শের' মুখোশ ধারণ করলেও মিথ্যাচার ও শঠতা তার রাজনীতির প্রধান মূলধন। '৭১-এর যুদ্ধাপরাধ এখন তারা কেবল প্রচারের জোরে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চলি্লশের দশকের নাৎসি যুদ্ধাপরাধীরাও যে চেষ্টা চালানোয় নির্লজ্জতা দেখায়নি। এই মিথ্যাচার বিএনপি রাজনীতিতেও অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে। ফলে বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা আন্দোলনগুলোকে আর গান্ধীর ভাষায় সত্যাগ্রহ বলা চলে না। বলা চলে অসত্যাগ্রহ এবং তাদের ডাকা হরতালও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ভয়তাল ছাড়া আর কিছু নয়।
গান্ধীর ডাকা লবণ কর আন্দোলন খুবই ব্যাপক হয়ে উঠেছিল অবিভক্ত ভারতে। কিন্তু একটিমাত্র সহিংস ঘটনার জন্য তিনি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে কংগ্রেস দলের ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল, গান্ধীজি এত ব্যাপক ও সফল আন্দোলনটিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিলেন কেন? গান্ধীজি জবাবে বলেছিলেন, 'আমার লক্ষ্য ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ। ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করে সেখানে সন্ত্রাস ও হিংসার শাসন প্রতিষ্ঠা আমার কাম্য নয়।'
মহাত্মা গান্ধীর এই উক্তিটি বিতর্কমূলক। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপির বর্তমান রাজনীতির দিকে তাকালে এর সারবত্তা বোঝা যায়। বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ্য হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিধান মেনে গণতান্ত্রিক পন্থায় আওয়ামী লীগকে শাসন ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নিজেদের সেখানে বসানো। তার লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত নয়, যেখানে অগণতান্ত্রিক পন্থায় এবং সন্ত্রাসী চক্রগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে তাড়াতে গিয়ে তারা নিজেরা যতটুকু লাভবান হবেন, তার চেয়ে সহস্রগুণ লাভবান হবে জামায়াত এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম নেওয়া সন্ত্রাসী মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো।
২০০১ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় বসতে গিয়ে বিএনপি প্রকারান্তরে দেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করে নিয়েছিল। এ সময়ই বাংলাদেশে হিজবুত তাহ্রীর, হুজি, জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠা পায়। বাংলাভাইদের মতো সন্ত্রাসীদের অভ্যুদয় ঘটে। শুরু হয় আহসান উল্লাহ মাস্টার, কিবরিয়া হত্যা, অস্ত্রবাহী দশটি লরির বাংলাদেশে ধরা পড়া, আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি অসংখ্য ঘটনার। এর প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একাংশের যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে।
এই যোগাযোগ থেকে যে বিএনপি এখনও মুক্ত হয়নি এবং অতীতের ভুল থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি, তার প্রমাণ মেলে জামায়াতের ডাকা ১৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ দিবসে সমর্থন দিতে বিএনপির তড়িঘড়ি এগিয়ে যাওয়া থেকে। এ সম্পর্কে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক (সকালের খবর) ২২ সেপ্টেম্বর তারিখেই খবর দিয়েছে, 'রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে।... বিরোধী দলের আজকের (২২ সেপ্টেম্বর) হরতাল এবং এ ধরনের কর্মসূচিকে কাজে লাগিয়ে হিজবুত তাহ্রীর, হুজি এবং জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো মাঠে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।... এর আগে কয়েকটি আন্দোলনের ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা কোনো কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করছে। এর আগে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও জামায়াতের আন্দোলনেও জঙ্গিরা মাঠে নেমে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।'
সবচেয়ে মারাত্মক খবর হচ্ছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি দল এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়নি এমন কিছু ধর্মীয় দলের ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গিরা বিএনপি ও জামায়াতের ক্যাডারদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এবং একটি গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীতে হরতালের আগের রাতকে টার্গেট করে যানবাহনে আগুন দিতে এই জঙ্গিদের ব্যবহার করা হয়। জঙ্গিরাই বড় বড় সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো ঘটায়। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জামায়াতের মিছিল থেকে প্রকাশ্য ও গুপ্ত হামলা চালিয়ে ৩৮ জন পুলিশ সদস্যকে গুরুতরভাবে আহত করা হয়। তাদের তাণ্ডবে পুলিশ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। কারণ, তারা এই ধরনের সশস্ত্র হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
১৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ দিবসে জামায়াত যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার একটির ছবি ছেপেছে আরেকটি জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ। এই অস্ত্র গ্যাস নির্মিত দেশি গ্রেনেড। এটি একটি ভয়াবহ অস্ত্র। ব্রিটিশ আমলে ভারতের টেরোরিস্টরা একটি রুটির ঝুড়ির আকৃতির বোমা তৈরি করেছিল। সেটির নাম দেওয়া হয়েছিল মলোটডের রুটির ঝুড়ি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে ব্যবহৃত রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটডের নামে তৈরি ককটেল বোমার অনুকরণে ভারতের টেরোরিস্টরা এই বোমা তৈরি করেছিল। ঢাকায় জামায়াতিদের দ্বারা ব্যবহৃত গ্যাসচালিত গ্রেনেড মলোটডের রুটির ঝুড়ির চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী।
বিএনপির আন্দোলনের আড়ালে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে, সে সম্পর্কে বিএনপির সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিত। তারা যেন বাংলাদেশকে বর্তমান পাকিস্তানের মতো একটি ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত দেশ না বানান। এখনও সময় আছে। আওয়ামী লীগের দেশ শাসনের মাত্র আড়াই-তিন বছরের মাথাতেই প্রশাসনে যে ঘুণ ধরেছে, তাতে জনগণের প্রকৃত দাবি-দাওয়া ভিত্তি করে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনে নামলে বিএনপির জনসমর্থন লাভে, এমনকি তাদের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতেও দেরি হবে না। কিন্তু বিএনপির বর্তমান নীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতি জামায়াত ও সহিংস মৌলবাদকে শক্তি জোগাবে এবং কালক্রমে পাকিস্তানের অবস্থার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বিএনপির পক্ষে তখন ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা শুধু দলটির জন্য নয়, দেশের জন্যও উদ্বেগজনক। প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা এখন খুবই দুর্বল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও শক্তিও দেশে মৌলবাদী চক্রান্ত এবং সম্ভাব্য অভ্যুত্থান ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পাচ্ছেন। তাতে দেশের সংকট ঠেকানো যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এখনও সময় আছে। মৌলবাদী সন্ত্রাস দমানো ও গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা ও ভিজিলেন্স বাড়ানো দরকার। দরকার একটি সংগঠিত দল, অভিজ্ঞ, দক্ষ মন্ত্রিসভা ও প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী সময় থাকতে হুশিয়ার হোন, এটাই দেশবাসীর কামনা।
লন্ডন, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১, শুক্রবার
আবার ঢাকায় মানুষের আশঙ্কাও সত্য হয়েছে। তারা অনুমান করেছিল, পুলিশ যতই সতর্ক থাকুক, প্রস্তুত থাকুক, বিএনপি ও জামায়াতের পেছনে যে সন্ত্রাসী মৌলবাদী গ্রুপগুলো আছে, তাদের ট্রেনিংপ্রাপ্ত ক্যাডাররা ভাংচুর ও গাড়ি পোড়ানোর সন্ত্রাসে লিপ্ত হবেই। তারা সেই চেষ্টা করেছে। মিরপুর ও শ্যামপুরে তারা দুটি বাসে অগি্নসংযোগ করেছে। তবে পুলিশ সতর্ক থাকায় তারা ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবারের জামায়াতি তাণ্ডব সৃষ্টি করতে পারেনি।
জনসমর্থন ছাড়া কোনো গণআন্দোলন সফল হয় না। দেশে সরকারবিরোধী আন্দোলনের জমি প্রস্তুত হওয়া সত্ত্বেও বিএনপি যে আন্দোলন গড়ে তুলতে পারছে না তার মূল কারণ, তাদের উদ্দেশ্য ও কার্যক্রম কোনোটাই সঠিক নয়। দেশে খাদ্যমূল্য, জ্বালানির দাম বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ, প্রায় প্রাত্যহিক সড়ক অথবা নৌদুর্ঘটনা ইত্যাদি সমস্যা সমাধানে সরকারের ব্যর্থতা এবং অযোগ্য ও দুর্নীতিপরায়ণ একশ্রেণীর মন্ত্রীকে অপসারণে প্রধানমন্ত্রীর অনিচ্ছা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে বিএনপি সংসদ ভবন গরম করে তুলতে পারত, রাজপথেও শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনের ডাক দিয়ে জনগণের বিপুল অংশকে তাতে যুক্ত করতে পারত।
কিন্তু বিএনপি সে পথে যায়নি। বিএনপি নেত্রী তার দলের একাংশের আপত্তি ও অসন্তোষ সত্ত্বেও লন্ডনে পলাতক পুত্রের নির্দেশে চালিত হচ্ছেন এবং জামায়াতের উদ্দেশ্যমূলক সন্ত্রাসী রাজনীতির সঙ্গে নিজেদের জড়িয়ে রেখে দলের ও দেশের গণতান্ত্রিক রাজনীতির গুরুতর ক্ষতি করছেন।
দেশের মানুষ ধরে ফেলেছে, তাদের দাবি-দাওয়া আদায় ও সমস্যা মোচন বিএনপি-জামায়াতের আন্দোলনের লক্ষ্য নয়। বিএনপির লক্ষ্য তারেক ও কোকোকে গুরুতর দুর্নীতির মামলা ও সম্ভাব্য সাজা থেকে উদ্ধার করা এবং জামায়াতের লক্ষ্য '৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ঠেকানো। এ জন্য তারা মরিয়া হয়ে উঠেছে। গত ১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার তারা প্রধানমন্ত্রীর দেশে অনুপস্থিতির সুযোগে একটি সহিংস বেসামরিক অভ্যুত্থান ঘটানোর চেষ্টা করেছিল। বৃহস্পতিবারে (২২ সেপ্টেম্বর) বিএনপি সোমবারের নির্বাপিত ভস্মে আবার অগি্নকণা জ্বালানো যায় কি-না তার ব্যর্থ চেষ্টা চালাল। কিন্তু ২৭ সেপ্টেম্বরের ডাকা 'ভয়তাল' তড়িঘড়ি করে ২২ তারিখে এগিয়ে এনে কোনো লাভ হয়নি।
হরতাল ও ভয়তালের মধ্যে পার্থক্য এই যে, জনগণের দাবি-দাওয়া আদায়ের লক্ষ্যে জনসমর্থনপুষ্ট গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একটি প্রক্রিয়ার নাম হরতাল, ধর্মঘট বা বন্ধ। আর সৎ অথবা অসৎ কোনো রাজনৈতিক উদ্দেশ্য পূরণের জন্য জনসমর্থনবিহীন এবং সন্ত্রাসযুক্ত প্রক্রিয়ার বর্তমান নাম ভয়তাল। অর্থাৎ জনগণকে ভয় দেখিয়ে ঘরে অবরুদ্ধ করে রেখে যে অরাজক অবস্থা সৃষ্টির দ্বারা উদ্দেশ্য হাসিলের চেষ্টা তার নাম ভয়তাল।
অবিভক্ত ভারতে হরতালের সফল প্রয়োগ করেছেন ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে মহাত্মা গান্ধী। পাকিস্তান আমলে বাঙালির দাবি-দাওয়া আদায়ের আন্দোলনে এই হারতালকে ব্যবহার করেছেন মওলানা ভাসানী ও বঙ্গবন্ধু। তারা জনসমর্থন নিয়ে এই হরতাল করেছেন। জনগণকে ভয় দেখিয়ে করেননি। পাবলিক প্রোপার্টি ধ্বংস করেননি। হরতালে বাধ্য করার জন্য গরিব রিকশাওয়ালা বা কোনো তরুণ ব্যবসায়ীকে পুড়িয়ে মারেননি। গান্ধী, ভাসানী ও বঙ্গবন্ধুর ডাকা হরতালে রক্তপাত ঘটিয়েছে পুলিশ। জনতা বাধ্য না হলে সহিংস হয়নি।
মহাত্মা গান্ধী তার হরতাল ও অসহযোগ আন্দোলনকে নাম দিয়েছিলেন সত্যাগ্রহ। এই সত্যাগ্রহ আন্দোলনে কর্মীরা শান্তিপূর্ণভাবে আইন অমান্য করে স্বেচ্ছায় গ্রেফতার বরণ করত। হিংসাত্মক পন্থা গ্রহণ করত না। কখনও কখনও আন্দোলন সরকারের নির্মম দমন নীতির মুখে হিংসাত্মক হয়ে উঠলে গান্ধীজি সঙ্গে সঙ্গে তা বন্ধ করে দিতেন। লবণ কর আন্দোলনে চৌরিচেরির ঘটনায় তিনি তা করেছেন। বঙ্গবন্ধু '৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সূচনা ঘটিয়েছিলেন অহিংস-অসহযোগ আন্দোলন দ্বারা। পাকিস্তানি হানাদাররা বর্বর গণহত্যা শুরু না করা পর্যন্ত এই আন্দোলন ছিল দেশবাসীর সমর্থনপুষ্ট শান্তিপূর্ণ অসহযোগ আন্দোলন।
বাংলাদেশে স্বাধীনতা-পরবর্তী যুগে রাজনৈতিক কর্মসূচির নামে খুন, জখম, গুপ্তহত্যা, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগের সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড প্রথম শুরু করে তখনকার চীনপন্থি বামদের স্পিল্গন্টার্স গ্রুপগুলো, যাদের মধ্যে সর্বহারা পার্টি ছিল প্রধান। জামায়াত মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদারদের গণহত্যায় সহযোগী হওয়ার পর স্বাধীনতা-উত্তর দেশে রগকাটা, শিরকাটা, গুপ্তহত্যা ও অন্যান্য সন্ত্রাসের কর্মকাণ্ড শুরু করে। জামায়াতের রাজনৈতিক সহযোগী হওয়ার শেষে বিএনপি নিজেকে একটি গণতান্ত্রিক ও অসাম্প্রদায়িক দল হিসেবে দাবি করার পরও এই সন্ত্রাসের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়ে। হাওয়া ভবন হয়ে ওঠে সন্ত্রাস এবং দুর্নীতি দুইয়েরই হেডকোয়ার্টার।
জামায়াত 'ইসলামী আদর্শের' মুখোশ ধারণ করলেও মিথ্যাচার ও শঠতা তার রাজনীতির প্রধান মূলধন। '৭১-এর যুদ্ধাপরাধ এখন তারা কেবল প্রচারের জোরে মিথ্যা প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে। চলি্লশের দশকের নাৎসি যুদ্ধাপরাধীরাও যে চেষ্টা চালানোয় নির্লজ্জতা দেখায়নি। এই মিথ্যাচার বিএনপি রাজনীতিতেও অনুপ্রবিষ্ট হয়েছে। ফলে বিএনপি ও জামায়াতের ডাকা আন্দোলনগুলোকে আর গান্ধীর ভাষায় সত্যাগ্রহ বলা চলে না। বলা চলে অসত্যাগ্রহ এবং তাদের ডাকা হরতালও শেষ পর্যন্ত দেখা যায় ভয়তাল ছাড়া আর কিছু নয়।
গান্ধীর ডাকা লবণ কর আন্দোলন খুবই ব্যাপক হয়ে উঠেছিল অবিভক্ত ভারতে। কিন্তু একটিমাত্র সহিংস ঘটনার জন্য তিনি আন্দোলন প্রত্যাহার করে নেন। ফলে কংগ্রেস দলের ভেতর থেকেই প্রশ্ন উঠেছিল, গান্ধীজি এত ব্যাপক ও সফল আন্দোলনটিকে মাঝপথে থামিয়ে দিয়েছিলেন কেন? গান্ধীজি জবাবে বলেছিলেন, 'আমার লক্ষ্য ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ। ব্রিটিশ শাসন উচ্ছেদ করে সেখানে সন্ত্রাস ও হিংসার শাসন প্রতিষ্ঠা আমার কাম্য নয়।'
মহাত্মা গান্ধীর এই উক্তিটি বিতর্কমূলক। কিন্তু বাংলাদেশে বিএনপির বর্তমান রাজনীতির দিকে তাকালে এর সারবত্তা বোঝা যায়। বিএনপির রাজনৈতিক লক্ষ্য হওয়া উচিত, গণতান্ত্রিক রাজনীতির বিধান মেনে গণতান্ত্রিক পন্থায় আওয়ামী লীগকে শাসন ক্ষমতা থেকে হটিয়ে নিজেদের সেখানে বসানো। তার লক্ষ্য এমন হওয়া উচিত নয়, যেখানে অগণতান্ত্রিক পন্থায় এবং সন্ত্রাসী চক্রগুলোর সঙ্গে হাত মিলিয়ে আওয়ামী লীগকে ক্ষমতা থেকে তাড়াতে গিয়ে তারা নিজেরা যতটুকু লাভবান হবেন, তার চেয়ে সহস্রগুণ লাভবান হবে জামায়াত এবং তাদের পৃষ্ঠপোষকতায় জন্ম নেওয়া সন্ত্রাসী মৌলবাদী গোষ্ঠীগুলো।
২০০১ সালে জামায়াতকে সঙ্গে নিয়ে ক্ষমতায় বসতে গিয়ে বিএনপি প্রকারান্তরে দেশে মৌলবাদী ও সাম্প্রদায়িক শক্তিকে শক্ত ঘাঁটি প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করে নিয়েছিল। এ সময়ই বাংলাদেশে হিজবুত তাহ্রীর, হুজি, জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো শক্তিশালী প্রতিষ্ঠা পায়। বাংলাভাইদের মতো সন্ত্রাসীদের অভ্যুদয় ঘটে। শুরু হয় আহসান উল্লাহ মাস্টার, কিবরিয়া হত্যা, অস্ত্রবাহী দশটি লরির বাংলাদেশে ধরা পড়া, আগস্টের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা ইত্যাদি অসংখ্য ঘটনার। এর প্রত্যেকটি ঘটনার সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের শীর্ষ নেতাদের একাংশের যোগাযোগের অভিযোগ রয়েছে।
এই যোগাযোগ থেকে যে বিএনপি এখনও মুক্ত হয়নি এবং অতীতের ভুল থেকে কোনো শিক্ষা নেয়নি, তার প্রমাণ মেলে জামায়াতের ডাকা ১৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ দিবসে সমর্থন দিতে বিএনপির তড়িঘড়ি এগিয়ে যাওয়া থেকে। এ সম্পর্কে ঢাকার একটি জাতীয় দৈনিক (সকালের খবর) ২২ সেপ্টেম্বর তারিখেই খবর দিয়েছে, 'রাজনৈতিক কর্মসূচির আড়ালে নিষিদ্ধ সংগঠনের প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা গুপ্ত হামলা চালাচ্ছে।... বিরোধী দলের আজকের (২২ সেপ্টেম্বর) হরতাল এবং এ ধরনের কর্মসূচিকে কাজে লাগিয়ে হিজবুত তাহ্রীর, হুজি এবং জেএমবির মতো জঙ্গি সংগঠনগুলো মাঠে নামতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন গোয়েন্দারা।... এর আগে কয়েকটি আন্দোলনের ভিডিও ফুটেজ দেখে পুলিশ নিশ্চিত হয়েছে যে, প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত জঙ্গিরা কোনো কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের সঙ্গে মিশে গিয়ে কাজ করছে। এর আগে ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন ও জামায়াতের আন্দোলনেও জঙ্গিরা মাঠে নেমে পুলিশের ওপর হামলা চালিয়েছে।'
সবচেয়ে মারাত্মক খবর হচ্ছে, নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি দল এবং নিষিদ্ধ ঘোষিত হয়নি এমন কিছু ধর্মীয় দলের ট্রেনিংপ্রাপ্ত জঙ্গিরা বিএনপি ও জামায়াতের ক্যাডারদের সঙ্গে মিশে যাচ্ছে এবং একটি গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়েছে, বিরোধী রাজনৈতিক সংগঠনের কর্মসূচি সফল করতে রাজধানীতে হরতালের আগের রাতকে টার্গেট করে যানবাহনে আগুন দিতে এই জঙ্গিদের ব্যবহার করা হয়। জঙ্গিরাই বড় বড় সন্ত্রাসী ঘটনাগুলো ঘটায়। গত সোমবার (১৯ সেপ্টেম্বর) জামায়াতের মিছিল থেকে প্রকাশ্য ও গুপ্ত হামলা চালিয়ে ৩৮ জন পুলিশ সদস্যকে গুরুতরভাবে আহত করা হয়। তাদের তাণ্ডবে পুলিশ হতভম্ব হয়ে গিয়েছিল। কারণ, তারা এই ধরনের সশস্ত্র হামলার জন্য প্রস্তুত ছিল না।
১৯ সেপ্টেম্বরের বিক্ষোভ দিবসে জামায়াত যেসব অস্ত্র ব্যবহার করেছে তার একটির ছবি ছেপেছে আরেকটি জাতীয় দৈনিক জনকণ্ঠ। এই অস্ত্র গ্যাস নির্মিত দেশি গ্রেনেড। এটি একটি ভয়াবহ অস্ত্র। ব্রিটিশ আমলে ভারতের টেরোরিস্টরা একটি রুটির ঝুড়ির আকৃতির বোমা তৈরি করেছিল। সেটির নাম দেওয়া হয়েছিল মলোটডের রুটির ঝুড়ি। দ্বিতীয় মহাযুদ্ধকালে ব্যবহৃত রুশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী মলোটডের নামে তৈরি ককটেল বোমার অনুকরণে ভারতের টেরোরিস্টরা এই বোমা তৈরি করেছিল। ঢাকায় জামায়াতিদের দ্বারা ব্যবহৃত গ্যাসচালিত গ্রেনেড মলোটডের রুটির ঝুড়ির চেয়েও অনেক বেশি শক্তিশালী।
বিএনপির আন্দোলনের আড়ালে দাঁড়িয়ে বাংলাদেশে যে ভয়াবহ জঙ্গিবাদ আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে চাইছে, সে সম্পর্কে বিএনপির সতর্ক ও সচেতন হওয়া উচিত। তারা যেন বাংলাদেশকে বর্তমান পাকিস্তানের মতো একটি ব্যর্থ ও বিপর্যস্ত দেশ না বানান। এখনও সময় আছে। আওয়ামী লীগের দেশ শাসনের মাত্র আড়াই-তিন বছরের মাথাতেই প্রশাসনে যে ঘুণ ধরেছে, তাতে জনগণের প্রকৃত দাবি-দাওয়া ভিত্তি করে শান্তিপূর্ণ গণআন্দোলনে নামলে বিএনপির জনসমর্থন লাভে, এমনকি তাদের ক্ষমতায় প্রত্যাবর্তনের সম্ভাবনা সৃষ্টি হতেও দেরি হবে না। কিন্তু বিএনপির বর্তমান নীতি, প্রতিহিংসার রাজনীতি জামায়াত ও সহিংস মৌলবাদকে শক্তি জোগাবে এবং কালক্রমে পাকিস্তানের অবস্থার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশেও ঘটতে পারে। বিএনপির পক্ষে তখন ক্ষমতায় যাওয়া না যাওয়া অর্থহীন হয়ে দাঁড়াবে।
আওয়ামী লীগের বর্তমান অবস্থা শুধু দলটির জন্য নয়, দেশের জন্যও উদ্বেগজনক। প্রমাণিত হয়েছে, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা এখন খুবই দুর্বল এবং আওয়ামী লীগ সরকারের প্রশাসনিক অভিজ্ঞতা ও শক্তিও দেশে মৌলবাদী চক্রান্ত এবং সম্ভাব্য অভ্যুত্থান ঠেকানোর মতো পর্যাপ্ত নয়। প্রধানমন্ত্রী বিদেশে অসংখ্য পদক ও সম্মাননা পাচ্ছেন। তাতে দেশের সংকট ঠেকানো যাবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের জন্য এখনও সময় আছে। মৌলবাদী সন্ত্রাস দমানো ও গণতন্ত্রকে বিপদমুক্ত করার জন্য আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক শক্তি এবং প্রশাসনিক ক্ষমতা ও ভিজিলেন্স বাড়ানো দরকার। দরকার একটি সংগঠিত দল, অভিজ্ঞ, দক্ষ মন্ত্রিসভা ও প্রশাসন। প্রধানমন্ত্রী সময় থাকতে হুশিয়ার হোন, এটাই দেশবাসীর কামনা।
লন্ডন, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১১, শুক্রবার
No comments